আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবিগুরুর সাথে আমার পথচলা...

জীবনের জন্যই এই সব কথামালা
আক্ষরিক অর্থে রবীন্দ্রনাথকে জানা শুরু করি কখন? ঠিক মনে করতে পারছিনা। শৈশবের পড়া ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতা দিয়েই হয়তো। পাশাপাশি পড়া সহজ কথার রসালো ছড়া আর কবিতাগুলোই বেশি টানলো। আর পুরো মুখস্থ থাকলেও রবীন্দ্রনাথ ঠিক মন ভরাতে পারনি। যাই হোক, রবীঠাকুরের সাথে পরিচয় পর্ব তো হয়ে গেলো! পরবর্তীতে পাঠ্যবইয়ের নানা কবিতা মুখস্থ করার বাধ্যবাধকতা আর শিক্ষকের এক আধটু বুঝানোর কারণে কবিতা বিষয়টি বুঝা শুরু করলাম।

অনেকের একটি কবিতাই তাকে আমার প্রিয় কবি করে তুলছিলো। পরবর্তীতে আরেকজনের আরেকটি মজার কবিতা প্রিয় কবির নাম বদলে সহায়তাও করতো। কিন্তু কোন ভাবেই রবীন্দ্রনাথ প্রিয় নয়! রবীন্দ্রনাথ মানেই সকল দূর্বোধ্য কবিতাগুলোর এক কবি। তার কবিতায় রস নেই, সহজে বুঝা যায়না এসব কারণে রবীন্দ্রনাথ টানেনা। কিছু ছোট গল্প ও পড়া হলো, কিন্তু ভালোলাগাটা কোন ভাবেই আসেনা।

কি কারণে যে উনি নোবেল প্রাইজ পেয়ে গেলেন, ভাবতে ভাবতে হয়রান। বাসায় টেপরেকর্ডারে গান শুনতো বড়ভাইরা। ডলি, রবি, তপনের গান একটার পর একটা বাজতো। মোহাম্মদ রাফি, কিশোর কুমার আর লতার কতো ক্যাসেট। শুনতে খারাপ লাগতোনা।

কিন্তু নিজে টেপ রেকর্ডারটি ধরার সুযোগ পেলেই রেডিও মুডে নিয়ে যেতাম। কতোগান বারবার শুনেছি, তারপর ও ভালোই লাগত। তখন রেডিওতে আমার কাছে বিরক্তিকর একটি বিষয় ছিলো “রবীন্দ্র সংগীত”। উপস্থাপক যখনি ঘোষণা দিতেন ‘রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে আসছেন অমুক’ তখনি রেডিওটা বন্ধ করে রাখতাম। আর গাল দিতাম রেডিও কর্তাদের।

মনে প্রশ্ন জাগতো, যে গান কেউ শুনেনা, রেডিও বন্ধ করে দেয় তা বাজানো হয় কোন যুক্তিতে! হাইস্কুলের শেষদিকে পড়লাম ‘সোনার তরী’। পাঠ্যবই আর পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেই হয়তো। এমনিতে পড়ার জন্য আগ্রহ জন্মাতো কি? রবীঠাকুর নাম অন্তত তার পক্ষে কথা বলেনা। কিন্তু এই একটি কবিতায় নিজের পছন্দে আমুল পরিবর্তন আনলো। মনে হলো রুপক অর্থে জীবনের ভাবার্থ এমন করে যিনি লিখেন , নিশ্চয় তিনি খারাপ কবি নন।

একটা আগ্রহের জন্ম হলো। প্রিয় কবিতায় ‘সোনার তরী’ অন্তর্ভূক্ত হলো। পাশাপাশি সময়ে পাঠ্যবইয়ে আরেকটা গল্প পড়লাম ‘ছুটি’। গল্পের নায়ক ফটিক কান্নায় ভাসালো আমায়। রবীন্দ্রনাথে আগ্রহ বাড়তেই থাকলো।

নিজ হাত খরচের পয়সায় এবার কিনলাম উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’। সবাই এর গুনকীর্তণ করে কিনা! প্রথমবার বুঝি নাই, মনে হলো ‘সোনার তরী’ কবিতার ক্ষেত্রে ও প্রথম এমন হয়েছে। আবার পড়লাম এবং তৃতীয়বার। শিলং বেড়ানোর শখ জন্মালো। লাবণ্যের প্রেমে পড়লাম।

মানবী’র প্রতি আকর্ষিত হবার প্রথম ঘটনা। এরপর আমার সেলফে এলো ‘গীতাঞ্জলি’। প্রথম কবিতাই মন কেড়ে নিলো। ‘অন্তর মম বিকশিত করো’। মনে হলো এ প্রার্থনা তো আমার নিজের।

আমার ডায়রি কিংবা স্কুল খাতার সূচনা হতে শুরু করলো এই কবিতার প্রথম চার লাইন দিয়ে। রবীন্দ্রনাথে মজে গেলাম! পড়লাম ‘হঠাৎ দেখা’। মনে হলো কোন রোমান্টিক সিনেমার আবেগঘন অংশ দেখছি। রবীন্দ্রনাথ তখন সারাক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকলো। ।

একজন কেমন করে এতো আবেগী গল্প লিখে, জীবনকে ভাবিয়ে তোলা কবিতা লিখে আবার সবাইকে প্রেমে ও মজায়। ভাবনা আজো চলছে। তার মধ্যে কবিতা সংগ্রহ ‘সঞ্চয়িতা’ হয়ে উঠলো ঘুম পাড়ানিয়া গানের মতো। কৈশোরে পদার্পনে মন যেন কেমন উড়ু উড়ু। চাওয়া পাওয়ার তালিকায় অনেক কিছুই যুক্ত হতে থাকলো।

হৃদয়ে বাজতে থাকলো ‘আমার ও পরাণ যাহা চায়, তুমি তাই’। তুমিটা কি লাবণ্য? এই ভাবনার সাথেই রবীন্দ্রনাথের গানের সাথেও পথচলার শুরু। সম্ভবত স্কুল ছাড়ার পর আরেকটা গান বিরাটভাবে আন্দোলিত করলো ‘আগুনের পরশমণি ছোয়াও প্রাণে’। কিন্তু তার সব গান ভালো লাগেনা। কি সব সূক্ষ্ম কথা।

বুঝার ক্ষমতা নাই আমার। এর মধ্যেই ইরাক, আফগানিস্থান পরিস্থিতি নিয়ে ভাবনার শুরু। নিজের কিছুই করার নাই। কানে বাজলো ‘সকাতরে ওই কাদিছে সকলে, শোন শোন পিতা’। পুরো গানে যাবার দরকার নাই।

এই গান হয়ে উঠলো নিত্য দিনের সংগী, কি প্রার্থনা! শৈশবের বন্ধুদের মিস করার পালা শুরু হলো। সবাই যার যার মতো ব্যস্ত। একদিন নির্জনে কানে বাজলো ‘পুরানো সেই দিনের কথা...... আয়, আরেকটিবার আয়রে সখা’। কি অদ্ভুত! রবীন্দ্রসংগীত আমার মনের কথা বলে! মনে হলো শৈশব ও কৈশোরের সময়গুলোতে কি যেন ফেলে এসেছি। কানে বাজতে থাকলো ‘তুই ফেলে এসেছিস কারে, ও মন মন রে আমার’।

গানের অর্থ ও প্রকাশ যাই হোক আমার কাছে একান্তই আমার নিজের কথা মনে হতে থাকলো। এখন রবীন্দ্রনাথই যেন সব। রবীন্দ্রনাথই যেন ঠিক আমার মনের কথা গুলিই বলেন তার কবিতায়, গানে। আমার পিসি, আর সেলফোনে ‘রবীন্দ্রসংগীত’ নামে আলাদা ফোল্ডার থাকে এখন। প্রতিদিনই যার লেখা গান একবার হলে ও শুনি সে রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দনাথের সঞ্চয়িতা আর গল্পগুচ্ছ থাকে আমার বিছানায়, বালিশের পাশে। এর চাইতে আপন কি আছে! আমার মন খারাপের বেলাগুলো কাটে রবীন্দ্রনাথ পড়ে, রবীন্দ্রনাথ শুনে। মন ভালো থাকলে এই বিশ্রী কন্ঠে, ভূল উচ্চারণে রবীন্দ্রনাথ আওড়াই। সংকোচ ঠেকেনা, মনে হয় নিজের কথাই তো বলছি। কি আবেগ, প্রার্থনায় সব কিছুতেই রবীন্দ্রনাথ খুজে পাই।

আর উৎসব, উপলক্ষ্যে? রবীন্দ্রনাথ ছাড়ার উপায় আছে? বৈশাখে সারাদিন ‘এসো হে বৈশাখ’, বৃষ্টিদিনে কানে আলোড়িত হবেই ‘আজি ঝড় ঝড় বাদল দিনে’ কিংবা ‘এমন দিনে তারে বলা যায়!’ কোথায় রবীন্দ্রনাথ নাই? এমনি করে আমার জীবনের সবকিছু হাসি কান্নায়, কারণ অকারণে রবীন্দ্রনাথের বিচরণ এখন। যার সাথে নিয়তই পথ চলা, যে কিনা সর্বক্ষণের সংগী সে প্রিয় না হয়ে যায় কোথায়? আমার প্রিয় বিশ্বকবি, আমার কবি “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর”। তুমি জন্মেছিলে বলেই প্রতিটি মুহুর্তে বেচে থাকার মানে খুজে পাই.........।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.