বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসমগ্র চীনা ভাষায় অনুবাদের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার বাংলা একাডেমী মঞ্চে চীনে রবীন্দ্রসাহিত্য বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা জানিয়েছেন।
সকাল ১১টায় একাডেমীর মূল মঞ্চে প্রফেসর আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রতিনিধি ও ঢাকায় সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাস রুমের চীনা পরিচালক ইয়াং ওয়েইমিং স্বর্ণা। চীন থেকে আসা পেইচিং বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক চীনের রবীন্দ্রসমগ্র অনুবাদক কমিটির প্রধান প্রফেসর তোং ইয়ৌছেন ও পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর ওয়েই লিমিং ছাড়াও চীনা দূতাবাসের রাজনৈতিক কাউন্সিলর ওয়াং ইয়ূ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক ড.বেগম জাহানারা এবং ফিরোজ মাহমুদ প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন।
ইয়াং ওয়েইমিং স্বর্ণা তার প্রবন্ধে বলেন, “বিশ্বকবির অনন্য লেখার ইংরেজী অনুবাদের হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে চীনের পাঠকদের আনুষ্ঠানিক পরিচয় ঘটেছে বিশ শতকের গোড়ার দিকে।
রবীন্দ্রনাথ ১৯২৪ আর ১৯২৯ সালে চীন সফর করেছিলেন। তার লেখা আর ভাষণ চীনা পাঠকদের মাঝে তুমুল আলোড়ন তোলে। আর সরাসরি বাংলা থেকে রবিন্দ্রসাহিত্যের চীনা ভাষায় রূপান্তর শুরু হয় গত শতকের সত্তুরের দশকে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলাভাষী চৈনিকদের অনুবাদকর্মের মধ্যে দিয়ে”।
তিনি আরো বলেন, “চীনের প্রধান রবীন্দ্র অনুবাদকদের মধ্যে কবিগুরুর বন্ধু প্রয়াত কবি শ্যু জিমো ও লিন হুয়েই ইন, প্রয়াত প্রফেসর লি ইউয়ানশান ও তার স্ত্রী প্রফেসর লিও আই হাও, প্রফেসর পাই খাই ইউয়ান, প্রফেসর শি চিং উ, প্রফেসর তোং ইয়ৌ ছেন, মাদাম চুং শাওলি, মাদাম ফোং সিও ছিয়েন প্রমূখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মূলত: তাদের অনুবাদকর্মে রবীন্দ্রনাথের অসামান্য সাহিত্যকীর্তির সঙ্গে চীনা পাঠকদের পরিচয় ঘটে এবং চীনে দ্রুত সমাদৃত হয়”।
তোং ইয়ৌছেন বলেন, “মোট ২৪ খন্ডে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, চিঠিপত্র, দিনলিপি ইত্যাদি নিয়ে ২০০’র বেশি বই প্রকাশের দায়িত্বে নিয়োজিত অনুবাদক কমিটিতে ১৭জন অনুবাদক ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। আশা করা যায়, নির্ধারিত সময়ের আগেই সমগ্র রবীন্দ্রনাথ চীনা ভাষার পাঠকদের কাছে পৌছেঁ যাবে”।
শান্তিনিকেতন থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার ও সাহিত্যে ডক্টরেট ডিগ্রী পাওয়া প্রফেসর তোং বলেন, “এটি আমার জন্যে খুব বড় একটি চ্যালেঞ্জ। অন্য অনুবাদকরা নানা কাজে ব্যস্ত থাকলেও রবীন্দ্রনাথকে ভালবেসে এই বড় কাজে আত্ননিয়োগ করেছেন। সমগ্র রবীন্দ্রনাথকে চীনা ভাষায় চীনাদের উপহার দিতে পারার চেয়ে আনন্দ আর কোন কিছুতেই হতে পারে না”।
প্রফেসর তোং আরো বলেন, “রবীন্দ্রসাহিত্য চীনা পাঠকের মনে প্রশান্তি এবং আত্নিক প্রশস্ততা এনে দেয়”।
চীনা দূতাবাসের রাজনৈতিক কাউন্সিলর ওয়াং ইয়ূ বলেন, “চীন সরকার রবীন্দ্রনাথকে চীন ও চীনা জনগন এবং বাংলাদেশ ও ভারতের জনগনের মধ্যেকার বর্ণময় সেতুবন্ধ মনে করে এবং এই সম্পর্ককে আরো সামনে এগিয়ে নেবার জন্যে কাজ করে যাবে”।
প্রফেসর ওয়েই লিমিং বলেন, “পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর বাংলা সাহিত্য নিয়ে গবেষণা শুরু হবে। বাংলাভাষী চীনা গবেষকদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হবে, যাতে বাংলা সাহিত্যের গবেষণা আরো উন্নয়ন করা যায়”।
সেমিনারে বাংলা একাডেমীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার দুইশতাধিক দর্শক উপস্থিত ছিলেন।
সান্তা মারিয়াম ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আবু জুবায়েরসহ চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাবেক বিদেশি ভাষা বিশেষজ্ঞ ও সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাস রুমের কনসালটেন্ট এবং শিক্ষক মহিউদ্দিন তাহের, বাংলাদেশ প্রতিনিধি মাহমুদ হাশিম, কনফুসিয়াস ক্লাস রুমের শিক্ষক চাউ চিং ইয়ে এবং চীন আন্তর্জাতিক বেতারের শ্রোতাবন্ধুরাও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ-চায়না রেডিও লিসেনার্স ক্লাবের চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম বেলাল, মহাসচিব জিল্লুর রহমান জিলু, সিআরআই-সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের পরিচালক দিদারুল ইকবাল, ক্লাবের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন, নিয়াজ আহমেদ হাসিব, সারোয়ার-এ-আলম, নাটোরের শ্রোতাবন্ধু ওমর ফারুক, ঢাকা নবাবগঞ্জের শ্রোতা এ.কে.এম নাসির উদ্দিন, ফরিদপুরের শ্রোতা আফজাল আলি খান, ময়মনসিংহের শ্রোতা লুৎফর রহমান প্রমূখ।
উল্লেখ্য এবার নতুন আঙ্গিকে এবং আন্তর্জাতিক আবহের মধ্য দিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হয়েছে। এবারের মূল ভাবনা হচ্ছে, ‘রবীন্দ্রনাথ’। রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে প্রতিদিন আলোচনা হচ্ছে মেলামঞ্চে।
আরো বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে গত বছরও বাংলা একাডেমী ‘বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ: চীনা ভাষায়- শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে এবং তখনও সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রতিনিধি ও ঢাকায় সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাস রুমের চীনা পরিচালক ইয়াং ওয়েইমিং স্বর্ণা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।