ধন্যবাদ তোমাকে হে পৃথিবী,তুমি তোমার জঠরে ৯ মাস অসম্ভব জন্ত্রনা নিয়ে জন্ম দিয়েছ আমার মা বাংলাকে! তোমার সেই মেয়ের জঠরে আমি ছিলাম ৯ মাস,ধন্যবাদ আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কে,তার ইচ্ছাতেই সব হয়েছে !!
শেষ চিঠি
মনে হচ্ছে শুন্য বাড়িটা অপ্রসন্ন,
অপরাধ হয়েছে আমার,
তাই আছে মুখ ফিরিয়ে।
ঘরে ঘরে বেড়াই ঘুরে,আমার জায়গা নেই-
হাঁপিয়ে বেড়িয়ে চলে আসি।
এ বাড়ি ভাড়া দিয়ে চলে যাব দেরাদুনে । ।
অমলির ঘরে ঢুকতে পারিনি বহুদিন,
মোচড় যেন দিত বুকে ।
ভাড়াটে আসবে,ঘর দিতেই আসবে সাফ করে-
তাই খুললেম ঘরের তালা।
এক জোড়া আগ্রার জুতো,
চুল বাঁধবার চিরুনি,তেল,এসেন্সের শিশি।
শেল্ফে তার পড়বার বই,
ছোট্ট হার্মোনিয়াম।
একটা এ্যালবাম-
ছবি কেটে জুড়েছে তার পাতায়।
আলনায় তোয়ালে,জামা,
খদ্দরের শাড়ি।
ছোট্ট কাঁচের আলমারিতে
নানা রকমের পুতুল,
শিশি,খালি পাউডারের কৌটো। ।
চুপ করে বসে রইলেম চৌকিতে,টেবিলের সামনে।
লাল চামড়ার বাক্স,
ইশকুলে নিয়ে যেত সঙ্গে-
তার থেকে খাতাটি নিলেম তুলে,
আঁক কষবার খাতা।
ভিতর থেকে পড়ল একটি আখোলা চিঠি,
আমারই ঠিকানায় লেখা
অমলির কাঁচা হাতের অক্ষরে।
।
শুনেছি ডুবে মরবার সময়
অতীত কালের সব ছবি
এক মুহূর্তে দেখা দেয় নিবিড় হয়ে-
চিঠিখানা হতে নিয়ে ঠিক পড়ল মনে
অনেক কথা এক নিমিষে। ।
অমলির মা যখন গেলেন মারা
তখন ওর বয়স ছিল সাত বছর।
কেমন একটা ভয় লাগল মনে
ও বুঝি বাঁচবে না বেশিদিন।
কেননা,বড় করুণ ছিল ওর মুখ,
যেন অকাল বিচ্ছেদের ছায়া
ভাবী কাল থেকে উল্টে এসে পড়েছিল
ওর বড় কালো কালো চোখের উপরে।
সাহস হত না ওকে সঙ্গ ছাড়া করি।
কাজ করছি আপিসে বসে,
হঠাৎ হত মনে
যদি কোন আপদ ঘটে থাকে। ।
বাঁকিপুর থেকে মাসি এলো ছুটিতে-
বললে,’মেয়েটার পড়াশুনা হলো মাটি-
মূর্খু মেয়ের বোঝা বইবে কে
আজকালকার দিনে?’
লজ্জা পেলেম কথা শুনে ,
বললেম,’কালই দেবো ভর্তি করে বেথুনে।
’
ইশকুল তো গেলো,
কিন্তু ছুটির দিন বেড়ে যায় পড়ার দিনের চেয়ে।
কতদিন ইশকুলের বাস্ অমনি যেতো ফিরে।
সে চক্রান্তে বাপেরও ছিলো যোগ। ।
ফিরে বছর মাসি এলো ছুটিতে,
বললে,’এমন করে চলবে না !
নিজে ওকে যাবে নিয়ে,
বোর্ডিংয়ে দেবো বেনারসের ইশকুলে-
ওকে বাঁচানো চাই বাপের স্নেহ থেকে।
’
মাসির সঙ্গে গেল চলে।
অশ্রুহীন অভিমান নিয়ে গেলো বুক ভ’রে
যেতে দিলেম বলে। ।
বেড়িয়ে পড়লাম বদ্রিনাথের তীর্থযাত্রায়,
নিজের কাছ থেকে পালাবার ঝোঁকে।
চার মাস খবর নেই।
মনে হলো,গ্রন্থি হয়েছে আলগা গুরুর কৃপায়।
মেয়েকে মনে মনে সঁপে দিলেম দেবতার হাতে-
বুক থেকে নেমে গেলো বোঝা। ।
চার মাস পরে এলেম ফিরে।
ছুটেছিলেম অমলিকে দেখতে কাশীতে,
পথের মাঝে পেলেম চিঠি........
কী আর বলবো,দেবতাই তাকে নিয়েছে।
।
যাক সে-সব কথা।
অমলার ঘরে বসে সেই আখোলা চিঠি খুলে দেখি,
তাতে লেখা-
তোমাকে দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছে। ’.............
আর কিছু নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।