অস্থির এই সময়ে কিছু স্বস্তির সুবাতাস ছড়াতে চাই, আমি ক্রমঃশ আপনারে বিলিয়ে যাই তুমি সুখী হবে বলে...
রাসেলের ফোনের ওয়ালপেপারে একটা মজার ছবি! একটা ক্যাপসুল, তাতে অনেকগুলো ভালবাসার দানা দেয়া আছে। এমন যদি হত- যাদের ভালবাসার বোধ কমে গেছে, তারা নিয়ম করে এইসব ভালবাসার ক্যাপসুল খেয়ে পুনরায় ভালবাসার বোধ অর্জন করতে পারতেন। আহা, কতই না ভালো হত!
ভালবাসা, লজ্জা, ঘৃণা, ভয় ইত্যাদি মানবিক বোধগুলো দিন দিন যেমন কমতে শুরু করেছে তাতে অচিরেই এসমস্ত গবেষণা জরুরী হয়ে পড়ছে। ল্যাবরেটরিতে অন্যান্য ওষুধের মতো মানুষের মানবিক বোধ জাগ্রত করার ওষুধ তৈরি করা দরকার। এখনকার সমাজে মানবিক বোধ হ্রাসের মতো যে ভয়াবহ সামাজিক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে তা কোনমতেই তুচ্ছ করে দেখার সুযোগ নেই।
এই সংকট মোকাবেলায় অতিসত্বর ব্যাবস্থা না নিলে যেকোনো মুহূর্তে তা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যা প্রচলিত সমাজ ব্যাবস্থার জন্য বিরাট রকম হুমকি স্বরূপ।
ডিজিটালের এই যুগে ভালবাসা-প্রেম-বিশ্বাস এসব তো অনেকটা হালকা হয়ে গেছে। একটু উদাহরণ দেই- কাদের মতিঝিলে বাসের মধ্যে বসে মোবাইলে অন্য প্রান্তে জানাচ্ছে- 'আরে মিয়া বিশ্বাস করেন না কেলা? আমি তো মাগার আপনের কামেই গুলসান আছি'। একটু পর বাসের পেছন থেকে যখন সেই 'অবিশ্বাসী' ভদ্রলোক এসে তার পিঠে হাত রাখে- 'ভাই এই জাগার নাম গুলসান অইলো কবে?' কাদেরের মুখটা যদি তখন দেখতেন! দেখার মতো একটা দৃশ্য! লিখে বোঝানো সম্ভব না।
মুনিয়া'র পুরো এক হালি ফেসবুক প্রোফাইল আছে, এমন না যে একটা আসল তিনটা নকল, সে চারটাই একই সাথে ব্যাবহার করে। সুতরাং আসল নকলের প্রশ্নই আসে না, সবই তার ব্যাক্তিগত প্রোফাইল। কেন তাকে তিনগুন বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে? উত্তর খুবই সরল- 'বারে, আমি কেন ওদের ডিপ্রাইভ করবো, ওরাই তো আমার ফেসবুক পাসওয়ার্ড চায়! আমি সবার জন্যই ফেসবুকে লিখে রাখছি- তুমি আমার প্রথম ও শেষ প্রেম, ওরা আমার ফেসবুক দেখে কি যে খুশি হয়, আপনি যদি জানতেন'। মুনিয়ার মতো এরকম অনেক মুনিয়া-মুনির আছে, এবং ভীতিকর বিষয় হচ্ছে- এদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে।
একের পর এক বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে, দিনকে দিন সেই সংখ্যা বাড়ছে।
আমরা দেখতে দেখতে অভ্যাস করে ফেলেছি; এখন আর সংবাদমাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে খুনের কথা জেনে আর প্রতিক্রিয়া হয় না। অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধের খবর শুনলে এখন আর কান সেটা আলাদাভাবে নেয় না। সম্প্রতি লিমনের ঘটনা আমরা সবাই জানি, তার প্রতি একটি সরকারী বাহিনী যেভাবে নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে তা আমাদেরকে হতবাক করেছে। একাত্তরে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর যে নিষ্ঠুরতম বর্বরতা দেখানো হয়েছিল, লিমনের ঘটনা আমাদেরকে সেই বর্বরতার কথা মনে করিয়ে দেয়। যে চঞ্চলপ্রাণ কিশোরের এখন পড়াশুনা শিখে- ভবিষ্যতে নিজেকে, পরিবারকে এবং সমাজকে কিছু দেয়ার কথা ছিল, সে এখন পঙ্গু, সাজানো মামলার আসামি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগকে অসংখ্য ধন্যবাদ, র্যাবের গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির কিশোর লিমনকে তাঁরা ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। ধন্যবাদ র্যাবের মহাপরিচালককে, যিনি গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন- 'আমরা তো আর লিমনকে ধরতে যাইনি। তার অপরাধ খুঁজতেও যাইনি। র্যাবর গুলিতে পা হারানো লিমন হোসেন সন্ত্রাসী নয়। সে ঘটনার শিকার'।
আমরা লিমনের পাশে থাকতে পারি, অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলতে পারি, তবু লিমনকে সারা জীবন পঙ্গু থাকতে হবে! সমাজ বা রাষ্ট্র যখন কারো প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখায়, তখন বাস্তবতার তাকে দরদ দেখানোর সুযোগ নেই। নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে- তাকে নিজের কাছে, পরিবারের কাছে, সমাজের কাছে বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। এই দায় আমাদের সবার, এই লজ্জা আমাদের সবার, এই সমাজের, এই রাষ্ট্রের। এমন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিকারে অবশ্যই স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত।
এই দুর্ঘটনার পর আজ অব্দি দেড় মাসেও সরকারের কোন মুখপাত্র; এমনকি দায়ী বাহিনীপ্রধানও বিষয়টি নিয়ে কোনরকম দুঃখবোধ করেননি! আমাকে মাফ করো লিমন, আমি দুঃখিত, লজ্জিত, ব্যার্থ; আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারিনি!
রাষ্ট্রযন্ত্র কি পাষাণেরা চালায়? তারা কি দুঃখবোধহীন? দুঃখবোধ জাগ্রত হয় এমন ক্যাপসুল দরকার, খুব দরকার, অনেক জরুরী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।