এক সময় নাতা, ন্যাকড়া আর কাপড় এক অর্থে প্রচলিত ছিল। এই অর্থে ওড়িয়া ভাষায় ‘কবটা’ মানে ‘দীর্ঘ ছিন্ন বস্ত্র’। সোজা কথায়, এক কালে যা ছেঁড়া ন্যাকড়া নামে পরিচিত ছিল, তা-ই এখন আমরা কাপড় নামে দিব্যি পরিধান করছি (ওর সন্ধান করতে যাওয়া আর চাঁদের আলোতে কাপড় শুকাতে দেওয়া একই কথা - শব্নম্, সৈয়দ মুজতবা আলী)।
বাংলায় যা কাপড়, হিন্দিতে তা কাপড়া। তবে মারাঠি ভাষায় তা বাংলার মতই কাপড়।
মধ্যযুগের বাংলায়ও কাপড় শব্দের প্রয়োগ ছিল (কাপড় উসাস করে যেন মরায়ের বড় - ককিঙ্কন চণ্ডী)।
তবে বাংলা ও মারাঠিতে 'চোপড়' এখন কাপড়ের সহচর বা অনুচর শব্দে পরিণত হয়েছে। চোপা থেকে চোপড় শব্দটি এসেছে। চোপা মানে খোসা বা ছাল। এই চোপড় বা গাছের ছালও এক সময় মানবজাতির পরিধেয় বস্ত্র ছিল।
মরাঠি ভাষায়ও কাপড়-চোপড় শব্দটি চালু আছে। তবে ওড়িয়া ভাষায় কাপড়-চোপড় মানে লুগা-পটা। লুগা শব্দটি সংস্কৃতে লাঙ্গল, লঙ্গুল থেকে এবং পটা শব্দটি সংস্কৃত পট্ট থেকে এসেছে।
অমরকোষে ত্বক, ফল, কৃমি, রোম - এ চারটিকে কাপড়ের উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অতসী গাছের ছাল হতে এক কালে যে কাপড় হত, তা ক্ষৌমা (ক্ষুমা) নামে পরিচিত ছিল।
কবিকঙ্কণে ‘খুঞা’ শব্দটি তারই প্রমাণ।
তবে কেউ কেউ ক্ষৌমা অর্থে 'তসর 'নির্দেশ করেছেন। এটা সঠিক নয়, দাবি করে যোগেশচন্দ্র রায় তাঁর অভিধানে লিখেছেন, ‘অমরকোষ তা বলে না’।
যাই হোক, কাপড় বলতে এককালে বোঝাতো কার্পাসজাত বস্ত্র। বর্তমানে শুধু কার্পাস কেন পশম, নাইলন ইত্যাদি যে কোনো সুতোয় তৈরি বস্ত্রই কাপড়।
সংস্কৃত ‘কর্পট’ থেকে বাংলায় কাপড় শব্দটি এসেছে। কর্পট মানে ‘অতি জীর্ণ বস্ত্র’। এক সময় নাতা, ন্যাকড়া ও কাপড় একই অর্থে ব্যবহৃত হতো। অমরকোষেও এটার সাক্ষ রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।