সংস্কৃতে সহজ শব্দের অর্থ সহজাত, স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলায় সহজ মানে অনায়াসসাধ্য, সোজা, সুবোধ্য (সহজ কাজ, সহজ কথা, সহজ প্রশ্ন অথবা সহজ উদরে হব না পেটুক, সেইটুকু ভাব হব না পেটুক - নিরুপায়, সুকুমার রায়; সহজ হবি, সহজ হবি/ওরে মন, সহজ হবি - গীতালি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।
সরল অর্থেও বাংলায় সহজ শব্দের প্রয়োগ আছে (সহজ লোক)। একই নিয়মে 'সহজে' মানে অনায়াসে। 'সাধারণত' অর্থেও সহজ শব্দটি ব্যবহৃত হয় (এ জাতীয় ঘটনা সহজে ঘটে না)।
বিশেষ্য ও বিশেষণ পদে 'সহজ' শব্দে অর্থ এক নয়। বিশেষ্যে সহজ অর্থ সহোদর। কারণ সহজ শব্দের গঠন হচ্ছে সহ (সহিত) + জ (জাত) অর্থাৎ এক মাতৃগর্ভোৎপন্ন ভ্রাতা।
জোতিষশাস্ত্রে সহজ অর্থ জন্মলগ্ন হতে তৃতীয় স্থান। তন্ত্রাচারভেদ অর্থেও সহজ শব্দটি চালু (বানের সহিত সদাই সাজিতে সহজের এই রীতি - চণ্ডীদাস)।
মধ্যযুগে প্রেম অর্থেও সহজ শব্দটি চালু ছিল (সহজ সহজ সবাই কহয়ে সহজ জানিবে কে - চণ্ডীদাস)।
বিশেষণে সহজ মানে সহজাত বা স্বাভাবিক। এই অর্থে সাহজিক শব্দটিও প্রচলিত। সুলভ, অনায়াসসাধ্য, অনায়াসসিদ্ধ, অকঠিন, সুবোধ্য, অকৃত্রিম, সরল ও সোজা অর্থেও শব্দটির প্রয়োগ রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, সহজ কথাটি যায় না বলা সহজে।
কথাটি যেমন সত্য, তেমনি সহজ শব্দটির অর্থ মোটেও সহজ নয়। আমাদের সমাজে সহজ শব্দটির রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার।
সংক্ষেপে বলা যায়, আমরা সোজা, অল্পে যা বোঝা যায়, কপটতাহীন, স্বাভাবিক ও বিনাকষ্টে, অনায়াসে, সামান্য কারণে ইত্যাদি বোঝাতে সহজ শব্দটির দ্বারস্থ হই। এটা অকঠিন, শান্ত, সহজাত অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু সহজ শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থটাই বাঁধিয়েছে যত্তো গণ্ডগোল।
সহজ শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে জন্মের সঙ্গে জাত, বংশগত ও স্বাভাবিক। এ তিনটি শব্দের ব্যাখ্যায় বলা যায়, সহজ মানে গর্ভজাত, সহোদর, যমজ ইত্যাদি।
ভাষাবিজ্ঞানীরা এখনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি, সহজ শব্দটি কি করে সোজা বা সরল অর্থ পেল। তবে কেউ কেউ ধারণা করেন, ভাইবোনের সহজ-সরল-স্বাভাবিক সম্পর্কই হয়তো সহজ শব্দটিকে এতো স্বাভাবিক ও সরল বানিয়ে দিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।