১ মে রোববার অপরাহ্ণ। প্রেসিডেন্ট ওবামা তার সামরিক কমান্ডারদেরকে নিয়ে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে। হোয়াইট হাউসের মাটির নীচের
(বেসমেন্ট ) সেই রুমটি তখন কাঁপছে উত্তেজনায়। তার পাশে হিলারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ডিফেন্স সেক্রেটারি রবার্ট গেইটস, জয়েন্ট চীফ অব স্টাফ চেয়ারম্যান মাইক মুলান।
মুহুর্ত পার হচ্ছে যেন একেকটি দিন ! হোয়াইট হাউসের কাউন্টারটেরর চীফ
জন ব্রেনান সাংবাদিকদের জানান, এটা ছিল উপস্থিত সকলের জন্য চরম
উৎকন্ঠার মুহুর্ত!
ওপারেশ চলছে পাকিস্তানে।
আর হোয়াইট হাউসে বসে তা দেখছেন স্বয়ং
প্রেসিডেন্ট ! জন ব্রেনান বলেন, আমরা খুব সতর্কতার সাথে গভীরভাবে
পর্যবেক্ষণ করছিলাম। সাধারণ পোশাকে বসে থাকা প্রেসিডেন্ট প্রায় ছিলেন
নির্বিকার !
ব্রেনান বলেন, আমরা সকলেই রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় ছিলাম। ওবামার মূল লক্ষ্য ছিল কোনো আমেরিকান 'সীলস' যেন হতাহত না হন। তিনি বলেন,
এই সবুজ সংকেত ছিল স্মরণ কালের কোনো প্রেসিডেন্টের সাহসী আদেশ।
তিনি আরও বলেন, মধ্যমার্চ থেকেই বারাক ওবামা এই বিষয় নিয়ে সিনিয়র
গোয়েন্দাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছিলেন।
গেল সপ্তাহে তিনি সর্বশেষ বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন।
জন ব্রেনান বলেন, গত শুক্রবার তিনি ফাইনাল অর্ডারটি প্রদান করেন।
তিনি বলেন, দুটো কালো হেলিকপ্টার ঐ বাড়ীর ছাদে ১২ জন নেভি সীলস
কে নামিয়ে দিল। ! এক একরের বাড়িতে ওরা দ্রুত ঢুকে পড়লো।
আমরা দেখছি ! ওদের হ্যালমেটে সুক্ষ রেকর্ডার সবকিছু ঠিকঠাক মতো
রিলে করছে ।
একজন কমান্ডো কিছুটা অসুবিধা অনুভব করলেন। তৃতীয় হেলিকপ্টার
খুব দ্রুত তাকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে গেল। ব্রেনান বলেন, আমাদের একটা
চিন্তা ছিল - পাকিস্তান সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি । যদি পাক বাহিনী
আক্রমণে লিপ্ত হয় । কিন্তু যেভাবেই হোক, ওরা কিছু টেরই পেলো না !এর মধ্যেই সীলস রা বিন লাদেনের ঘরে ঢুকে পড়েছে।
গোলাগুলি চলছে !
সবকিছু খুব দ্রুত ঘটে গেলো। সময় লাগলো প্রায় ৪০ মিনিট।
অবশেষে ম্যাসেজ এলো - 'জেরোনিমো' অর্থাৎ শত্রুকে পাওয়া গেছে।
এর পর পরই ম্যাসেজ এলো - '' ই-কে.আই.এ '' অর্থাৎ এনিমি কিলড ইন
এ্যাকশন !
জন ব্রেনান বলেন, আমরা একে অপরের মুখের দিকে তাকালাম। হিলারি
তখনও ছিলেন নির্বাক ! প্রেসিডেন্ট নীরবতা ভঙ্গ করে বললেন- ' উই গট
হিম ! '
আমরা এর পরের ম্যাসেজের অপেক্ষায় ছিল।
বলা হলো , বিন লাদেনের
মরদেহ নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে সীলস রা ফিরে গেছে।
এরপরই প্রেসেডেন্ট ওবামা ফোন করেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও
বিল ক্লিনটনকে।
জন ব্রেনান জানান, প্রথম সংবাদটি দেয়া হয় অপারেশনে অংশগ্রহণকারী
একজন সীলস এর পিতাকে লস এন্জেলেসএ।
ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই , একটি বড় আমেরিকান পতাকা নিয়ে সামরিক কর্মকর্তারা হাজির হন ঐ সীলস কমান্ডো, রুবেন মেইজা এর
বাড়ীতে। ম্যাক্সিকান ইমিগ্র্যান্ট ঐ পিতা সামরিক বাহিনীর লোকজন দেখে
কেঁদে দেন।
তা দেখে তাকে আশ্বস্থ করা হয়, তার ছেলে নিরাপদেই আছেন। তাকে বলা হয়, বিন লাদেন অপারেশনে তার ছেলে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তাই ধন্যবাদ দিতেই সামরিক কর্মকর্তারা এসেছেন প্রেসিডেন্টের বিশেষ নির্দেশে। ঐ কমান্ডোর পিতা মার্টিন মেইজা তখন
আনন্দে আরেকদফা কেঁদে ফেলেন। তিনি লস এন্জেলেস রেডিওকে বলেন , আমার ছেলে এমন একটা মিশনে অংশ নিয়েছে জেনে আমি খুবই খুশি।
অবশেষে মিডিয়ায় খবর প্রচার শুরু হয় নিউইয়র্ক সময় রাত পৌনে এগারোটা থেকে। রাত ১১: ৩৬ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ভাষণ দেন জাতির উদ্দেশে। #
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।