আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের ওবামা-রা

...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা, যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...

কয়েকদিন আগেই যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেল। স্যাটেলাইটের কল্যানে সারা বিশ্বের মত আমরাও মেতে ছিলাম ওবামা ম্যাককেইনকে নিয়ে। ওবামা যখন নির্বাচনি বক্তৃতা দিতে ডায়াসে উঠতো আর মুখে স্মিত হাসি নিয়ে হাত নাড়তো, তার চোখে মুখে আসলেই যেন নতুন কিছু করার, পুরনোকে মুছে ফেলে নতুন দিনের সূচনা করার একটা অঙ্গীকার ফুটে উঠতো, মনে হতো, নাহ কোন একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য মনে হয় এমন একজন লোকই দরকার, এমন ব্যক্তিত্বই দরকার। তার নির্বাচনি বক্তৃতা শুনে আর দেখে মনের ভেতর অদ্ভুত শ্রদ্ধাবোধ জাগতো, মনে হতো এমন একজন মানুষই তো পারে সবকিছু বদলে দিতে, নেতৃত্ব দিতে। যাই হোক মার্কিনীরা তাদের রায় জানিয়েছে, হেরে গিয়েও ম্যাককেইন ঠিকই ওবামাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন যুক্তরাস্ট্রকে এগিয়ে নেয়ার জন্য মার্কিনীরা সঠিক রায়টিই দিয়েছেন।

সে যাই হোক দেখতে দেখতে আমাদের নির্বাচনও এসে গেল, আর মাত্র তিন দিন, পুরো দেশই এখন নির্বাচনী জ্বরে কাঁপছে। কারন এবার তো আর ভিনদেশী নির্বাচন না, একদম আমাদের নিজের দেশের নির্বাচন, এবার যে আমাদেরকেই খুঁজে নিতে হবে আমাদের আগামী দিনের নেতৃত্বকে, যে পুরনোকে মুছে ফেলে নতুন দিনের সূচনা করবে, হবেন আমাদের ওবামা। তাহলে চলুন দেখে আসি আমাদের ওবামারা কিভাবে জনগনের সামনে আসেন, কিভাবে জনগনকে আশা দেখান- আমাদের ওবামারা কতটা আমাদের স্বপ্নের কাছাকাছি। প্রথমেই আসি সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে। তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় এদেশের প্রধানমন্ত্রী থেকেছেন।

তিনি এমন একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, যিনি কিনা এদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনটি প্রধান ফোর্সের একটির(জেড ফোর্স) প্রধান ছিলেন, এদেশের স্বাধীনতার একজন ঘোষক ছিলেন। জিয়াউর রহমানের শাসন দেখিনি, কিন্তু বি.এন,পির প্রচারনার কারনে তার কিছু ভাষন দেখেছি- থেমে থেমে কথা বলা, প্রতিটি শব্দে স্পষ্ট দৃঢ়তা, তীক্ষন দৃষ্টি, আগামীর স্বপ্নের কথা বলা, কৃষকের কথা বলা, দেশের কথা বলা- কি নেই জিয়াউর রহমানের বক্তব্যে?অথচ তারই স্ত্রী, তারই তৈরী করা দলের প্রধান কি বলেন? বক্তব্য শুরুই করেন আওয়ামী লিগ কি কি অনাচার করেছে তা দিয়ে। প্রথমেই মনে হয় দলটা বি.এন,পি না, দলটা হলো আওয়ামী লিগ এর বিপক্ষ দল!! সেখানে স্বপ্নের কথা কই? বি,এন,পি নির্বাচনে জিতলে কি কি দেয়া হবে তার ফিরিস্তি। আর বি.এন,পি না জিতলে দেশ যে রসাতলে যাবে এমন কি স্বার্বভৌমত্বও থাকবে না, তার হুমকি। ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ – যেন দেশ বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত, মানুষের ওপর প্লেন থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে, তাদেরকে বাঁচাতে হবে।

আর তার চারপাশে উকি দেয় নিজামী, সাকা চৌধুরীদের চেহারা। কিভাবে সম্মান করি তাকে? কিভাবে মনে হবে, তিনি তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে দেশকে একটা পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাবেন? কষ্ট হয় তাকে আমাদের নেতা, আমাদের ওবামা ভাবতে। এরপর বলি আর এক সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার কথা। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। বঙ্গবন্ধু- তাকে দেখিনি, কিন্তু যখন থেকে বুঝতে শিখেছি-আমি স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক, এই বিশ্বে আমার নিজের একটা দেশ আছে, নিজের একটা পরিচয় আছে যেটা গর্ব করার মতো, তখন থেকেই আমি বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি।

কারন একটা মানুষ কিভাবে সাত কোটি মানুষের রক্তে কাঁপন তুলতে পারে, কিভাবে সাত কোটি মানুষকে একই স্বপ্ন দেখাতে পারে তার সবচেয়ে বড় উদাহরন সম্ভবত বঙ্গবন্ধু। তাই তিনি সর্বস্রেষ্ট বাঙ্গালী আর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতাদের একজন। শেখ হাসিনা, যিনি সেই বঙ্গবন্ধুর ই কন্যা, তার জায়গাটি কিছুটা অন্যরকম হওয়া উচিৎ না? অথচ, দেখুন, গন্ডায় গন্ডায় ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়েও তার বক্তব্য গুলো কেমন? খালেদা জিয়ার নির্বাচনী সভার এলাকায় গ্রেনেড পাওয়া গেছে এই খবরের প্রতিক্রিয়া এক নির্বাচনী সভায় তিনি যেভাবে দিলেন, তা শুনে মনে হলো তিনি গ্রাম্য বাজারে ঝগড়া করছেন। খালেদা জিয়া নাকি পুরোটাই ঘটনা সাজিয়েছেন!! এটা কি একজন শিক্ষিত মানুষের মার্জিত কথা? তার আরও কিছু বক্তব্য শুনেছি। সবগুলোই এক ধরনের ।

সত্যি বলি আমি এখনো তার কথা বার্তায় সম্মান করার মতো বা তাকে অনুসরন করার মতো কিছুই পাইনি। আওয়ামী লিগ যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন তাদের বঙ্গবন্ধু বিষয়ক অতি প্রচারের মাঝে বঙ্গবন্ধুর কিছু অসাধারন সাক্ষাৎকার দেখেছিলাম। বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলোকে দেয়া। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কি অসাধারন ব্যাক্তিত্ব।

চোখে কি অদ্ভুত সপ্ন! তখন বুঝেছিলাম কেন এই মানুষটির কথায় ছেলে মাকে ফেলে যুদ্ধে যায়, পিতা কোলের শিশুটিকে ফেলে অস্ত্র হাতে দেশ স্বাধীন করতে ঝাপিয়ে পড়ে। মনে হয়েছিলো এই মানুষটির জন্য সব করা যায়, সব। অথচ সেই আওয়ামী লিগ, তারই কন্যা সেই বঙ্গবন্ধুকে বিক্রি করে এখন ক্ষমতায় যাবার জন্য ভোট চায়,যেখানে সেখানে বঙ্গবন্ধুকে টেনে আনে। কি করে সম্মান করি তাকে? কি করে সে হবে আমাদের ওবামা? তৃতীয় যিনি আছেন তিনি নির্বাচনী এই ডামাডোলে সম্ভবত সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাক্তি আর আমোদের উৎস। জাতীয় পার্টির হু.মু.এরশাদের কথা বলছি।

হঠাৎ করে সবাইকে ডেকে বললেন, আওয়ামী লিগের সাথে কোন জোট নয়, আবার পরের দিনই জোট করে ফেললেন, দুইদিন পরে শেখ হাসিনার ভাই হয়ে গেলেন! আবার বললেন ছয় মাসের জন্য প্রেসিডেন্ট হতে চান। দেশকে নাকি আটটি প্রদেশে ভাগ করে ফেলবেন। তার কথা বার্তা শুনে মনে হয় মি: বিনের পর তিনিই হলেন বিশ্বের দ্বিতীয় জীবিত সবচেয়ে কৌতুককর ব্যাক্তি। এই লোক কিভাবে নয় বছর দেশ চালিয়েছে জানি না। তিনি আর যাই হোক আমাদের নেতা হতে পারেন না।

এদেশের রাজনীতিতে চতুর্থ শক্তিশালী দলটি আমাদের জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা, সবচেয়ে বড় কলন্ক। নব্বইয়ের আগে কে কি করেছে জানি না, কিন্তু আমার মন হয় জামাতে ইসলামীর এই জায়গাটা দখল করার পেছনে আওয়ামী লিগ আর বি,এন,পি দুই দলই দায়ী। অন্তত নব্বইয়ের পর থেকে তাই দেখে আসছি। এবং এজন্য এই দুই দলকেই হয়তো অনেক অনেক বেশী মূল্য দিতে হবে। হীরক রাজার দেশে মুভিটাতে একটা সংলাপ আছে-“এরা যত বেশী পড়ে, তত বেশী জানে, তত কম মানে..”।

মাদ্রাসা শিক্ষাটাকে অনুন্নত রেখে মূলত জামাতে ইসলামীর ভোট ব্যাংক বাড়ানো হয়েছে আর জঙ্গীবাদদের আক্রমনের জন্য জিহাদের নামে বুকে গ্রেনেড বেধে ঝাপিয়ে পরার জন্য গিনিপিগ তৈরীর কারখানা বানানো হয়েছে। এজন্য যতটা না দায়ী আত্মঘাতী জিহাদিরা তার চেয়ে অনেক বেশী দায়ী আওয়ামী লিগ আর বি,এন,পি। কারন তারা গত পনের বছর দেশ শাসন করেছে। চেস্টা করলে মাদ্রাসা শিক্ষাটাকে কি আধুনিক করা যেত না? যাই হোক নিজামীদের যেখানে সংসদেই দেখতে চাই না ,সেখানে তাদের নেতা ভাবার তো কোন কারন ই নেই। অদ্ভুত লাগে, পনের কোটি মানুষের দেশে একজন নেতা নেই?একজন ওবামা আমরা খুজে পাব না? যে আমাদের স্বপ্ন দেখাবে? আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু দেশটাকে কিছু একটা দিতে চাই তারা ঝাপিয়ে পড়তে পারবো যার কথায় দেশটাকে গড়তে? একজন ওবামা-র আমাদের বড়ই অভাব।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।