শ্রাবনী খুঁজছে ভাবনার পথ...
এমন আজও আমাদের দেশে অহরহ ঘটে চলেছে যেখানে মেধার চাইতে মেয়েদের রঙ রুপই মুখ্য। যে মেয়ের গায়ের রঙ যত সুন্দর তার কদর তত বেশি। মেয়ে মূর্খ হলেই বা কি যায় আসে! এহেন সমাজে কৃষ্ণকলিরা পরিবারের জন্য বোঝাস্বরুপ তা সে যত গুণেরই অধিকারী হোক। যাহোক বলছিলাম একজন স্মরণীর কথা যেই মেয়েটির দুঃখের দিন বুঝি শেষ হবার নয়। তারপর কি হলো? বলছি-
২।
পরীক্ষা শেষ। কলেজ বন্ধ। স্মরণীর দম বন্ধ হয়ে আসছে বাড়ীতে। সারাটাক্ষণ কাজ কাজ আর কাজ। বই ধরার কোন সুযোগ পাচ্ছে না।
ভাবীর ছোট ভাই বেড়াতে এসেছে। সু্যোগ পেলেই স্মরণীর পিছে লেগে থাকে। এত নোংরা তার দৃষ্টি যে স্মরণীর গা গুলিয়ে বমি পেয়ে যায়। ভাবী যেন দেখেও দেখে না। ভাইকে আরও বেশি ঠেলে দিচ্ছে ওকে উত্যক্ত করার জন্য।
ছেলেটার ভাব ভঙ্গী খুব খারাপ। স্মরণী খুব ভয়ে ভয়ে থাকে সারাটাক্ষণ। ছোট ভাইয়াও নেই বাসায়। বন্ধুদের সাথে কোথায় যেন গেছে। স্মরণী বুঝতে পারছে খুব খারাপ মতলব নিয়ে ভাইকে আনিয়েছে ওর ভাবী।
এইরকম আতংকজনক অবস্থার মাঝে একদিন রিয়া এলো ওদের বাসায়। রিয়াকে দেখে স্মরণী যেন প্রাণ ফিরে পেলো। ছাদে নিয়ে যেয়ে সব বলল বান্ধবীকে। রিয়াও খুব ভয় পেল ওর কথা শুনে। ‘স্মরণী খুব সাবধানে থাকিস।
ছোট ভাইয়ার কোন খবর পেলি?’
‘ নারে। ’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ‘ সেই বুড়োকে বিয়ে করাই মনে হয় উচিত ছিল আমার। অন্তত সম্ভ্রম হারানোর আতংকে তো দিন কাটাতে হতো না। ’
‘ ছিঃ! এসব বলিস না তো। তুই চল আমার সাথে।
আমার বাসায় থাকবি। খালাকে বলে চল। অন্তত যতদিন এই লম্পট বাসায় আছে ততদিন তুই আমার বাসায় থাক। ‘
‘ মা রাজী হবে না রে। মা ভাবীর কথার বাইরে এক পা ফেলে না।
আর ভাবী তো এই অনুমতি কোনদিনই দেবে না। থাক তুই অত ভাবিস না। আমি সাবধানে থাকব। ’
রিয়ার মন তবু মানতে চাইছিল না। বুকের ভেতর চাপা ভয় নিয়ে সেদিনের মত বিদায় নিল।
শীত পড়েছে আজ খুব। রাতের খাবারের পর তাই আজ আর কেউ জেগে নেই। সবাই ঢুকে পড়েছে লেপের তলায়। স্মরণীর রান্নাঘরের কাজ শেষ করতে করতে রাত বারোটা বেজে গেল। রুমে ফিরতেই দেখে বিছানায় লম্পটটা বসে আছে।
ওকে দেখেই গা জ্বালানো একটা হাসি দিল। স্মরণীর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। তবু গলায় জোর এনে রাগত স্বরে বলল ‘ আপনি আমার রুমে কি করেন?’
‘কেন তোমার রুমে কি আসা নিষেধ নাকি?’ আকাশ থেকে পড়ল যেন এমন একটা ভাব করল বদমাশটা।
‘হ্যাঁ নিষেধ। বের হন আমার রুম থেকে!’ রাগে সারা শরীর কাঁপছে ওর।
‘তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো স্মরণী। খুব মাইন্ড করলাম...হেঃ হেঃ...’ হাসতে হাসতে এগিয়ে আসতে লাগল এক পা এক পা করে। স্মরণী এক ছুটে নিচে নেমে গেল রান্না ঘরের দিকে। ওর পেছন পেছন ধাওয়া করে আসতে লাগল মূর্তিমান আতংক। রান্না ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল মেয়েটা।
রান্না ঘরের দরজাটা মজবুত না। একটু জোরে ধাক্কা দিলেই খুলে যাবে। কি করবে স্মরণী বুঝে উঠতে পারছে না। ওদিকে প্রায় পৌঁছে গেছে পশুটা। হঠাৎ চোখ পড়ল মাছ কাটা বটিটার উপর।
বটিটা কাঁপা কাঁপা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রুমের মাঝখানে। ওর কাছে আসার চেষ্টা করলেই ও কোপ দেবে শয়তানটাকে। রান্না ঘরের দরজায় জোর ধাক্কা পড়ছে যেকোন মুহুর্তেই ভেঙ্গে পড়বে পুরোনো মরচে ধরা ছিটকিনি। হঠাৎ করেই ভয়টা নাই হয়ে গেল স্মরণীর। শান্ত ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।
ওর গায়ে টোকা দেবার আগেই খুন করে ফেলবে লম্পটটাকে। এই সিদ্ধান্ত নেবার পর মনটা শান্ত হয়ে গেছে।
দরজার ছিটকিনি ভেঙ্গে গেল ধাক্কার এক পর্যায়। রান্না ঘরের মাঝখানে বটি হাতে স্মরণীর রুদ্রমূর্তি দেখে একটু ভয় পেল লম্পটটা। ভয়ংকর গলায় হিসহিস করে স্মরণী বলে ‘কাছে আসার চেষ্টা করিস না ভুলেও।
একদম দুই টুকরা করে ফেলব। ’
‘ছিঃ! ছিঃ! স্মরণী এইগুলা কি বল। বটি হাত থেকে নামাও। আরে তুমি এত ভয় পাইছো ক্যান? আমি তো তোমার সাথে একটু গল্প করতে আসছিলাম। আর তুমি এমনই ভয় পাইছো যে...’ কথা বলতে বলতেই এক পা এক পা করে এগোতে লাগল।
স্মরণী বটি দিয়ে কোপ দিল সজোরে কিন্তু অল্পের জন্য মাথাটা বাঁচাতে পারল লম্পটটা। বেশ ভয় পেয়ে গেল ছেলেটা। বুঝতে পারল ও ঠাট্টা করছে না। সত্যি সত্যি খুন করে ফেলবে মেয়েটা। পিছিয়ে গেল বেশ কিছুটা।
প্ল্যান আঁটতে লাগল কি করে বটি কেড়ে নেয়া যায় ওর হাত থেকে।
ঠিক সেইসময় কে যেন সদর দরজার কড়া নাড়তে লাগল। কে এলো এত রাতে?! লম্পটের দুই চোখে ভয় বাসা বাঁধল। ভীত গলায় জিজ্ঞেস করল ‘ তুমি কি পুলিশ ডাকছো নাকি?!’
স্মরণী বিস্ময় লুকিয়ে হিসহিস করে বলে ‘আজ তোর খবর আছে!’
ছেলেটার দুই চোখে আতংক বাসা বাঁধতে শুরু করল। উলটো ঘুরে দৌঁড় লাগালো।
স্মরণী বটি হাতে নিয়েই সদর দরজা খুলল। ছোট ভাইয়া দাঁড়িয়ে। ভাইকে দেখে স্মরণীর সব শক্তি যেন এক নিমেষেই উধাও হয়ে গেল। বটি ফেলে ঢলে পড়ে ভাইয়ের গায়ে। ‘ কি হলো! এই এই স্মরণী!’
সেই রাতেই পালালো ভাবীর লম্পট ভাইটা।
ছোট ভাইয়াকে যমের মত ভয় পায় বদমাশটা। স্মরণীর জ্ঞান ফিরে আসার পর সব শুনে ছোট ভাইয়ার মাথায় যেন আগুন ধরে গেল। পারলে ভাবীকেই খুন করে ফেলে। বড় ভাইয়ের সাথে তুলকালাম বাঁধিয়ে আলাদা করে দিল ওদের। আর কঠিনভাবে শাসালো ‘আমার বোনের গায়ে যদি কেউ একটা টোকাও দেয় সবার আগে তোরে আর তোর বউরে খুন করুম।
’
স্মরণী অনার্সে ফার্স্ট হয়েছে। সারা কলেজ মেতে উঠেছে আনন্দে। কৃষ্ণকলির মনে আজ অফুরান আনন্দ। কি ঝলমলে রৌদ্রজ্জল একটা দিন! সাফল্যের আনন্দ অনুরণিত হচ্ছে সারা কলেজ জুড়ে। কালো মেয়ের মুখের হাসিতে উড়ে গেল যেন হাজার প্রজাপতি।
( শেষ অংশ টুকু লেখকের কল্পনা। আসল বাস্তবতা ছিল অন্যরকম। মেয়েটি সেই কনকনে শীতের রাতে ভাবীর লম্পট ভাই কর্তৃক ধর্ষিত হয়। মেয়েটি নরপশুটিকে শেষরাতে মাছ কাটা বটি দিয়ে টুকরো টুকরো করে আর নিজেও ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্নাহুতি দেয়। ঘটনাটির এই নির্মম দিকটি লিখতে বড়ই যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়েছি।
শেষ পরিণতিটুকু বুঝি না লিখলেই ভাল হতো।
যারা এতক্ষণ ধৈর্য ধরে গল্পটি পড়লেন তাদেরকে সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।