যা লিখি, হয়ত কিছুই লিখি না। যা লিখব হয়ত অনেককিছুই লিখব। আসল কথা হলো, গল্প ছাড়া কিছুই লিখতে পারি না
খুব বেশদিন আগের কথা না, যেদিন বোকাসোকা, ভীতু টাইপের ছেলেটা প্রথম তার হোস্টেল জীবন শুরু করল। আগে কোনোদিন বাড়ির বাইরে থাকি নি। আবার ছোট থেকে বড় হয়েছি একা একা।
বন্ধু-বান্ধব ছিল হাতেগোনা। নিরানন্দ শৈশব, নিরানন্দ কৈশোর। মানুষের সাথে মিশতে পারতাম না একদম-ই। অচেনা কারো সাথে পরিচিত হতে গেলে মনে হতো, এর সাথে কথা বলব? আমাকে তো খারাপ ভাববে, আমাকে নিয়ে হাসবে। গুটিয়ে নিতাম নিজেকে সবকিছু থেকে।
তাদের সাথেই মিশতে পারতাম,যারা নিজ থেকে এগিয়ে আসত। এমন একজন মানুষ হোস্টেলে আসার আগে ভয় পাবে, এটাই স্বাভাবিক। আমিও পেয়েছিলাম।
হোস্টেলে আসার পর ধীরে ধীরে বদলাতে থাকি। মানুষের সাথে মিশতে শিখি।
কত ধরনের ছেলে। একেকজন একেকজন থেকে আলাদা। আমার মানসিক পরিপক্কতা এক লাফে বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আজ সাড়ে চার বছর পর চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি কে কোন উদ্দ্যেশ্য নিয়ে কথা বলছে,কার মনে কী আছে।
প্রথম বর্ষের জন্য আলাদা হোস্টেলে আমরা ত্রিশজন বেড়ে উঠছিলাম, একটি পরিবারেরব মতো।
এখন খুব আফসোস হয় ফাস্ট ইয়ারের সেই সম্পর্কগুলো কত’টা কৃত্রিমতার ভাজে জড়িয়ে গেছে, জড়িয়ে যাচ্ছে। এখন ত্রিশজনের পরিবার ভেঙে ছোট ছোট একক পরিবারে পরিণত হয়েছে। আমি চোখ বন্ধ করে রাজনীতিকে দায়ী করতে পারি। ছাত্রদল-ছাত্রলীগ দ্বন্দে ইলেকশনের পর ভাঙন শুরু হলো। থাক সেসব কথা, সেগুলো বলার জন্য পোস্ট লিখছি না।
হোস্টেল লাইফের আনন্দের কথা বলার জন্য কিছু লিখছি না। আমি আজ ভুল করে কিছু গদ্য লিখে ফেলার কথা বলব, আমার কথা। কোনো গোপন কথা, আমার কিছু নিজস্ব কথা।
আমি ডায়েরী লিখতাম, ডায়েরী ভেতর কবিতা লিখতাম। নাহ! কবিতাগুলো কোথাও ছাপা হয় নি।
ওগুলো আদৌ কবিতাও ছিল না। ছিল আমার কথা। আমার বিষণ্ণতার কথা। সবাই যখন আড্ডা দিত, আমাদের দোতলা হোস্টেলের ছাদে বসে, আমি মাঝে মাঝে চুপিচুপি নেমে আসতাম ঘরে। ডায়েরী টেনে নিয়ে দু’একলাইন লিখে ফেলতাম।
কোনো এক ভুল বালিকার কথা লিখতাম, ভুল করেই লিখতাম। বোকা ছিলাম। মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করত। মরে যেতে ইচ্ছে করে, এই কথাটির ভেতর বিশেষ কোনো তাৎপর্য নেই। একমাত্র মৃত্যু কথাটি ছাড়া।
মৃত্যু জিনিষ্টাই এত বিশাল যে আলাদা কোনো তাৎপর্যের দরকার পড়ে না। কিন্তু ব্যাপারটা এত সরল না। বছরের ৩৬৫ দিনের একদিন হলেও পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের মরে যেতে ইচ্ছে হয়। তাই, মরে যেতে ইচ্ছে হয় কথাটি একটি ভ্যালুলেস কথা। পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যহীন কথা।
একদিন রিকশায় চেপে কোথায় যেন যাচ্ছি, রিকশা ওয়ালাকে জিজ্ঞসে করলাম, ভাই আপনার কী কখনো মরে যেতে ইচ্ছে হয়েছে? রিকশাওয়ালাটি আমার দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টি মেলে তাকাল। সে বলল, মাথা খারাপ নি ভাই? মইরা গেলে বউ-বাচ্চা পালব কে? সেদিন বুঝে গিয়েছিলাম সংগ্রামী মানুষেরা মরতে চায় না। তারা বাচঁতে চায়। নিজের জন্য কিংবা পরিবারের জন্য।
আমি রুমে গিয়ে ডায়েরীটা খুলে সব ভুলে গিয়ে একটি ভুল কবিতা লিখতাম।
এখন চার বছর বাদে- বড় হয়েছি। আমার আবেগগুলো বড় হয়ে বাস্তবতার ছোঁয়া পেয়েছে। তাই এখন ডায়েরী খুলে আর নিদোর্ষ কোনো কবিতা লেখা হয় না। ল্যাপটপ খুলে মাঝে মাঝে ভুল করে এখন কিছু গদ্য লিখে ফেলি।
রুদ্র’র এই কবিতাটি সবাই নিশ্চয় পড়েছেন,
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক, জ্যোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই
কিছুটা তো চাই, কিছুটা তো চাই
আসলে কী চাই? কিছু কী চাই? চেয়েও কী হবে? পেয়েও কী হবে?
চন্দ্র আমাকে ঠাঁই দিবে না।
তাই মাঝে মাঝে ভুল করে,অভিমান করে কিছু গদ্য লিখে ফেলি।
আমার সেই অভিমানে চন্দ্র,সূর্য,গ্রহ-নক্ষত্র কারো কিছু এসে যায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।