আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছুটা ভবিষ্যত কিছুটা কাল্পনিক

জীবনের আলো - অনেকটা বদলে গেছে - হারিয়ে নিজেকে ...

(ছোট গল্প)

নীলা : রাতের আকাশে তারাগুলো ঘুমের দেশে। আকাশে একফোটা আলো নেই। টেবিলের উপর টেবিল ঘড়িটা টিকটিক করে জানান দিচ্ছে সময়ের নদীটাকে। তুমি এখনো জেগে আছো।

বর্ষন: হুম আছি তো ।

তুমি ঘুমাবে না ?

নীলা : হুম আমি তো চাই ঘুমাতে, তো ঠিক আছে, এখন তাহলে রাখি !

বর্ষন: নিশ্চুপ !!! ( কোন উত্তর আসে না ) স্কাইপির সেকেন্ড গুলি একটা একটা করে বেড়েই চলছে। শুনশান নিরবতা।

নীলা : কি ? কথা বলছো না কেন.... আমি এখন রাখবো... সকালে উঠতে হবে.... অনেক রাত হয়েছে ।

বর্ষন : নিশ্চুপ ! ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : আজ বলনতায় গিয়েছিলাম, অনেক মজা করলাম । আবার তোমাকে বললে তুমি অন্য কিছু মনে করবে ।

মজা বলতে মজা করে খেলাম। ভাবি, আমি ভাইয়া, আব্বু আর তোমার ছেলে। আম্মু বিজি ছিলো তাই যেতে পারিনি।

বর্ষন: নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : তুমি কি আমার উপরে রাগ করে আছো....... কি হলো - - বলো না।


আসলে আমি চাইনি এমনটা হোক, তবে যা কিছুই হয়েছে তার জন্য তুমি দায়ী নয়। তোমার ব্যাব্হারটাকে ঠিক করো। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।

শোন না ..... বলতো কোন জিনিসটা খেয়েছি বনলতায়.....গেইজ করো ....

(বালিশ টেনে নেবার শব্দ, মনে হলো পাশ ঘুড়ে শুলো)

তোমার সব চেয়ে পছন্দের জিনিসটা..... শর্মা । তখন বার বার তোমার কথা মনে পরছিলো।

জানো, আমি ঠিক ঐ আগের জায়গায় বসে ছিলাম । তোমাকে অনেক মনে পরছিলো । আর তোমার ছেলে , ওফফ !! এতো জালাইছে আজকে। মনেহয় তুমি ছিলেনা তাই....

খালি তোমার কথা বলতেছিলো।
আসলে ওমনে করেছে তুমি আসবে মনে হয়।

তুমি চলে যাবার পরে আর ওখানে যাওয়া হয়নাই।

ও তোমাকে অনেক মিস করে। যখনি প্লেন যায় বলে আম্মু দেখো আব্বু আসতিছে। আবার যখন প্লেনটা দৃস্টি সীমা ছেড়ে দুড়ে চলে যায় তখন মন খারাপ করে বলে আব্বু তো আসলো না, ঠিক আছে কাল আবার আসবে।

বর্ষন: নিশ্চুপ।

( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : এতো রাগ কেন তোমার ? সেই কখন থেকেই আমি বলেই যাচ্ছি আর তউমি চুপ করে আছো তো আছোই। কি হল কথা বলো !

ঠিক আছে, আমি বলেছি এখন রাখবো। সকালে উঠতে হয়। নাহলে আব্বু রাগ করে । কি হল আমি এখন রাখবো শুনতে পারছো না ।

কাল কথা হবে।

কি রাগ করেছো নাকি ঘুমিয়ে পরেছো আমি তো কিছুই বুজবো না যদি তুমি কথা না বলো। আজ একটা জিনিস কিনেছি। কানের দুল। বাইরে তো যাওয়াই হয় না।

আর যদিও যাওয়া হয় তাহলে সাথে গার্ডিয়ান। কতদিন যে রিকশায় হুট খুলে হাওয়া খাইনি। তুমি নাই বলে যাওয়া হয়নি। এবার ঠিক করেছি তুমি আসলে প্রতিদিনি আমরা হাইওয়েতে রিকশায় ঘুরবো প্রতিটা বিকেল আর সন্ধা। কেমন হবে বলোতো।



বর্ষন: নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : আমি বুজেছি তুমি রাগ করেছো সাদাত মানে ভাস্সর এর ব্যাপারটা নিয়ে। তুমি তো আমাকে বুজতে চেস্টা করো না। আমি একদম একা ছিলাম। আমি চাইতাম তোমাকে ছাড়া বাচতে, তোমাকে ভুলে থাকতে।

তোমার সাথে তো আমি একদমি সুখি ছিলাম না। যখন থেকে তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে ছিলাম তখন থেকেই আমি প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রনায় ভুগতাম। নিজেকে একটু অন্যদিকে নেবার জন্যই সাদাতের সাথে কথা বলতাম। কিন্তু সেই খবর কে তোমাকে আগে জানিয়েছে বলো?

বর্ষন: নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : আমিই তো তোমাকে বলেছিলাম।

আমার ভিতর যদি কোন খারাপি থাকতো আমি তো তোমাকে জানাতামি না। দেখো, আমাকে বুজতে চেস্টা করো।

বর্ষন: নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : আমারি ভুল হয়েছে। আমি সেদিন তোমাকে বলেছিলাম যে সাদাত তোমার নামে খারাপ কথা বলতো সেজন্যে আমি ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করেছি।

হুম এটা মিথ্যা ছিলো। আমি আসলে তোমার কথা ওকে জানাই নাই। একদম অবিবাহিত হিসেবেই কথা বলতাম। কিন্তু তোমাকে যদি এভাবে সত্য বলতাম তাহলে তুমি আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করতে। আর ব্যাপারটা আমি নিজের মাঝে চেপে রাখতে পারছিলাম না।

একটা ভয় আমাকে ঘিড়ে রেখেছিলো। যদি তুমি জানতে পারো তাহলে আমাকে তুমি ছাড়বেনা । তাই আমি নিজেই বলেছিলাম তোমাকে। যাতে তুমি পরবর্তীতে আমাকে কিছু না বলো। যাতে আমি তোমার কাছে ভালো থাকতে পারি।



বর্ষন: নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : আমার আসলেই বলাটাই ভুল হয়েছে। আমি যদি তোমাকে না জানাতাম তাহলে তুমি আজ এব্যাপারে খোজ নিতে যেতে না। আর আমাকেও এভাবে হেনস্তা হতে হত না। আমি আসলেই অনেক বোকা একটা মেয়ে।



এখনো কি চুপ করে থাকবে। চুপ করে থাকা ছাড়া আর কি বা করতে পারো তুমি। এজন্যে তোমাকে আমার একদমি পছন্দ হয় না। একটা কাজ করো তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। প্লিজ তুমি আমাকে ডিভোর্স দাও।

আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দাও।

আমি আর পারিনা। আমি ভুল না করলেও সেটাকেউ তুমি ভুল হিসেবে ধরো। আরে আমারো তো নিজের একটা জগত আছে, সাধীনতা আছে। কেন তুমি আমার নিজের জগতে হাত হাতরে বেড়াও।

আমি তোমাকে চাই না। আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আমি এখন রাখবো ......

বর্ষন : নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : দেখো, মন খারাপ করো না । একটা সময় আমি তোমাকে চাইতাম ।

অনেক বেশী চাইতাম । কিন্তু তুমি আমাকে ছোট করে করে আমার জীবনকে ব্রিতৃষ্নায় ভরে দিয়েছো। তারি ফলাফল ঐ দেড়টা বছর। কিন্তু তারপরে তো আমি নিজে থেকেই তোমার কাছে এসেছি। ডিভোর্স চেয়েছি।

তারপরে কেন এমন করো তুমি ? আমি পারি তোমাকে ডিভোর্স দিতে। কিন্তু আমি দেই নি । তোমাকে সম্মান করে তোমার কাছে চেয়েছি, উত্তর দাও চুপ কেন?


বর্ষন : নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : দেখো ! আমি তোমার সাথে কখনো সুখি হতে পারবো না। প্লিজ আমার উপর দয়া করো।

আমি এ মানসিক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি চাই। আমি এসবের মাঝে আব্বুর দিকে তাকাতে পারি না। এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে আব্বু স্ট্রোক পর্যন্ত করেছে। এখন আমার নিজেকে দায়ী মনে হয়। দেখো বর্ষন আমাকে মুক্ত করো তোমার থেকে।

আমি মুক্তি চাই তোমার থেকে। আমি শান্তি চাই। আমি আমার জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে চাই। তোমার সাথে কখনো আমি ভালো থাকতে পারবো না। তুমি কখনোই আমাকে সুখি করতে পারবে না।

এত গুলো দিনেও যখন পারনি ভবিষ্যতেও পারবেনা। জীবনে তোমার কাছে এতগুলো দিনে আমি কিছুই চাইনি । এখন মাত্র একটা জিনিস চাই সেটা হল তোমার থেকে মুক্তি। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। আমাকে বোঝার চেস্টা করো।

আমি আব্বুর দিকে তাকাতে পারি না। আম্মুর দিকেও না। ভাইয়া তো তোমার কথা শুনলে তেরে আসে । ওরা তোমাকে আর কখনোই মেনে নিতে পারবে না। কথা বলো - - - - -

বর্ষন : নিশ্চুপ।

( কোন উত্তর আসে না ) স্কাইপির সেকেন্ড গুলি একটা একটা করে বেড়েই চলছে। শুনশান নিরবতা।

নীলা : তুমি ভাইয়াকে সব বলে দিবে তাই না। একটা অনুরোধ। এটা করোনা তুমি।

আমি এখন এদের সাথে থাকি। আমর পরিচয় যদি এরা জেনে যায় তাহলে আত্মহত্যা ছাড়া আমার কোন উপায় থাকবেনা।
ঠিক আছে তাহলে আমি তোমার কাছে আসবো। তোমার সন্তানকে নিয়ে আমি বেড়িয়ে আসবো। কিন্তু তুমি আমাকে পাবে না।

তোমার সাথে যখন শুয়ে থাকবো তখন পুতুলকেই পাবে তুমি। আমার ভিতরে তোমার জন্য কোন ভালোবাসা নেই। পুতুল ছাড়া আর কোন কিছুই অনুভুতি পাবে না তুমি।

এখন তো অন্তত কথা বলো। আমি তো বল্লাম তোমার কাছে আসবো।

কথা বলো প্লিজ । । ।

বর্ষন : নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )
--------------------------------------------------------------------

নীলা শুয়ে পরা থেকে উঠে পাশের ঘড়ে যায়।

একটা ল্যাপটপ আর একটা খালি বিছানা, কিছু কাগজ পত্র ছারা আর কিছুই নেই এই ঘড়ে। টেবিলের উপর একটা ডায়েরি।

নীলা ডায়রিটা হাতে নেয়। কয়েকটি পাতা উল্টাতেই মৃত একটা গান্দাফুলের সাথে একটি চিঠি। অনেক পুরোনো ।

দাগ পরেছে পুরোনো দিন গুলোর। মিলে মিশে আছে অনেক গুলোদিন। ল্যাপিটে মানুষ বিহিন সেকেন্ড গুলো উঠে চলেছে। ধীরে ধীরে বারাচ্ছে একটা সেকেন্ড থেকে আরেকটা সেকেন্ডের দুরত্ব। এভাবেই নীলা পাচটা বছর কাটিয়েছে।

দু ঘড়ে দুটো ল্যাপি। দুটো স্কাইপ আইডি। প্রতিটা রাতে যখন খারাপ লাগে এভাবেই বর্ষনের ফেলে আসা ল্যাপি থেকে নীলার ল্যাপিতে কল দেয় নীলা। তারপর নিজের রুমে গিয়ে এয়ারফোন কানে দিয়ে কথা বলতেই থাকে। সুখ দুখ সব কথা বলে সে।

কিন্তু বর্ষন একদম চুপ। কোন উত্তর আসেনা বর্ষনের প্রান্ত থেকে। তারপরেও বর্ষনকে ভালোবাসে । এতটা যে এখন পর্যন্ত নীলা একা। কাউকে গ্রহন করতে পারেনি।

পারবেওনা।

ল্যাপিটাতে স্কাইপ কল কেটে দেয় নীলা। সেই ডায়রীর ভিতর থেকে চিঠিটি হাতে তুলে নেয় -

"অনেক দিনের পরে
আজ যদি কোন কারনে
গানগুলো আমার শুনতে ইচ্ছে করে
হারিয়ে যাবে তুমি
জানবোনা কোনদিনও কি
তবুও রয়ে যাবো আমি
তোমারি ছায়া হয়ে নাওনা

স্বপ্নলোকে অবচেতন মনে
গুনগুন গুনগুন করো
পুরোনো সেই চেনা সুরে
স্বপ্নলোকে অবচেতন মনে
গুনগুন গুনগুন করো
পুরোনো সেই চেনা সুরে

ভাবছো কি কোনদিনও
ফিরে পাবে ওহম
সেই ক্ষনিকেরি
আমাদেরই সার্থকতা

অনেক দিনের পরে
আজ যদি কোন কারনে
গানগুলো আমার শুনতে ইচ্ছে করে
হারিয়ে যাবে তুমি
জানবোনা কোনদিনও কি
তবুও রয়ে যাবো আমি
তোমারি ছায়া হয়ে নাওনা"

- বর্ষন

--------------------------------------------------------------------
সকাল হয়েগেছে। সবাই রওনা হয়েছে। প্রতিটা বছরের মত আজ নীলাও রওনা হয়েছে।

আকাশটা একদম মেঘলা। ঝড় আসবে বলেই মনে হয়। তিনচাকা ওয়ালা ব্যাটারি চালিত রিকশায় নীলা, নীলার সন্তান, আর নীলার মা। পেছনে আরও গাড়ি আছে। সেখানে বর্ষনের বোন, বোন জামাই ও অন্যরা।



আজ নীলার হাতে বর্ষনের এখটা পছন্দের জিনিস আছে। বর্ষন জিনিসটাকে খুবি পছন্দ করতো। লম্বা স্টিকের আগায় একটা ফুল। রজনী গন্ধা। হুম রজনী গন্ধাই বর্ষনের সবচেয়ে পছন্দের ফুল।

এর ঘ্রাণ বর্ষন খবি পছন্দ করতো। পছন্দের ফুলের কথা বলতেই বর্ষন বার বার রজনীগন্ধাকেই সামনে নিয়ে আসতো। কেন জানি আজ নীলারো সব চেয়ে পছন্দের ফুল রজনী গন্ধা। আগে ছিলো গ্যান্দাফুল । এভাবে নীলার অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে গেছে।

সেই আগের অবুজ নীলা আজ আর নেই। সে এখন অনেক বেশী পরিপক্ক। দু:খের কথা হল দোকানে একটি মাত্র রজনী গন্ধার স্টিকই পাওয়া গিয়েছে। যা এখন নীলা প্রচন্ডভালো বাসায় বুকে আকরে ধরে আছে।
গত পাচটা বছর এভাবেই চলছে নীলার।

এভাবেই এইদিনে নীলা বর্ষনের কবরের সামনে যায়। রজনী গন্ধা দিয়ে ভালোবাসা জানায়। কিন্তু কেন যেন এই দিনটি এলে বর্ষনের শেষ দেখাটা মনে পরে যায়। লাশের খাটিয়ায় বা হাত বের হয়ে ছিল। বড় বড় অক্ষরে হাত কেটে লেখা ছিলো - "নীলা, ভালোবাসি বলেই মুক্ত করে দিলাম তোমায় একেবারে, - ভালো থেকো ........."
তার পর থেকেই বর্ষন স্কাইপিতে নিশ্চুপ ।

একে বারে নিশ্চুপ ।

করবের সামনে দারিয়ে নীলা,
হাতে সেই রজনী গন্ধা,
হাটুগেড়ে কবরের সামনে বসে মাথানিচু করে
কাপা কাপা ঠোটে চোখর নোনা জল বেয়ে আসে
আই লাভ ইউ

বর্ষন : নিশ্চুপ। কোন উত্তর আসে না । আসবেও না কোনদিন ।

সমাপ্ত ....।


নীলা : রাতের আকাশে তারাগুলো ঘুমের দেশে। আকাশে একফোটা আলো নেই। টেবিলের উপর টেবিল ঘড়িটা টিকটিক করে জানান দিচ্ছে সময়ের নদীটাকে। তুমি এখনো জেগে আছো।

বর্ষন: হুম আছি তো ।

তুমি ঘুমাবে না ?

নীলা : হুম আমি তো চাই ঘুমাতে, তো ঠিক আছে, এখন তাহলে রাখি !

বর্ষন: নিশ্চুপ !!! ( কোন উত্তর আসে না ) স্কাইপির সেকেন্ড গুলি একটা একটা করে বেড়েই চলছে। শুনশান নিরবতা।

নীলা : কি ? কথা বলছো না কেন.... আমি এখন রাখবো... সকালে উঠতে হবে.... অনেক রাত হয়েছে ।

বর্ষন : নিশ্চুপ ! ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : আজ বলনতায় গিয়েছিলাম, অনেক মজা করলাম । আবার তোমাকে বললে তুমি অন্য কিছু মনে করবে ।

মজা বলতে মজা করে খেলাম। ভাবি, আমি ভাইয়া, আব্বু আর তোমার ছেলে। আম্মু বিজি ছিলো তাই যেতে পারিনি।

বর্ষন: নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : তুমি কি আমার উপরে রাগ করে আছো....... কি হলো - - বলো না।


আসলে আমি চাইনি এমনটা হোক, তবে যা কিছুই হয়েছে তার জন্য তুমি দায়ী নয়। তোমার ব্যাব্হারটাকে ঠিক করো। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।

শোন না ..... বলতো কোন জিনিসটা খেয়েছি বনলতায়.....গেইজ করো ....

(বালিশ টেনে নেবার শব্দ, মনে হলো পাশ ঘুড়ে শুলো)

তোমার সব চেয়ে পছন্দের জিনিসটা..... শর্মা । তখন বার বার তোমার কথা মনে পরছিলো।

জানো, আমি ঠিক ঐ আগের জায়গায় বসে ছিলাম । তোমাকে অনেক মনে পরছিলো । আর তোমার ছেলে , ওফফ !! এতো জালাইছে আজকে। মনেহয় তুমি ছিলেনা তাই....

খালি তোমার কথা বলতেছিলো।
আসলে ওমনে করেছে তুমি আসবে মনে হয়।

তুমি চলে যাবার পরে আর ওখানে যাওয়া হয়নাই।

ও তোমাকে অনেক মিস করে। যখনি প্লেন যায় বলে আম্মু দেখো আব্বু আসতিছে। আবার যখন প্লেনটা দৃস্টি সীমা ছেড়ে দুড়ে চলে যায় তখন মন খারাপ করে বলে আব্বু তো আসলো না, ঠিক আছে কাল আবার আসবে।

বর্ষন: নিশ্চুপ।

( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : এতো রাগ কেন তোমার ? সেই কখন থেকেই আমি বলেই যাচ্ছি আর তউমি চুপ করে আছো তো আছোই। কি হল কথা বলো !

ঠিক আছে, আমি বলেছি এখন রাখবো। সকালে উঠতে হয়। নাহলে আব্বু রাগ করে । কি হল আমি এখন রাখবো শুনতে পারছো না ।

কাল কথা হবে।

কি রাগ করেছো নাকি ঘুমিয়ে পরেছো আমি তো কিছুই বুজবো না যদি তুমি কথা না বলো। আজ একটা জিনিস কিনেছি। কানের দুল। বাইরে তো যাওয়াই হয় না।

আর যদিও যাওয়া হয় তাহলে সাথে গার্ডিয়ান। কতদিন যে রিকশায় হুট খুলে হাওয়া খাইনি। তুমি নাই বলে যাওয়া হয়নি। এবার ঠিক করেছি তুমি আসলে প্রতিদিনি আমরা হাইওয়েতে রিকশায় ঘুরবো প্রতিটা বিকেল আর সন্ধা। কেমন হবে বলোতো।



বর্ষন: নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : আমি বুজেছি তুমি রাগ করেছো সাদাত মানে ভাস্সর এর ব্যাপারটা নিয়ে। তুমি তো আমাকে বুজতে চেস্টা করো না। আমি একদম একা ছিলাম। আমি চাইতাম তোমাকে ছাড়া বাচতে, তোমাকে ভুলে থাকতে।

তোমার সাথে তো আমি একদমি সুখি ছিলাম না। যখন থেকে তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে ছিলাম তখন থেকেই আমি প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রনায় ভুগতাম। নিজেকে একটু অন্যদিকে নেবার জন্যই সাদাতের সাথে কথা বলতাম। কিন্তু সেই খবর কে তোমাকে আগে জানিয়েছে বলো?

বর্ষন: নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : আমিই তো তোমাকে বলেছিলাম।

আমার ভিতর যদি কোন খারাপি থাকতো আমি তো তোমাকে জানাতামি না। দেখো, আমাকে বুজতে চেস্টা করো।

বর্ষন: নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : আমারি ভুল হয়েছে। আমি সেদিন তোমাকে বলেছিলাম যে সাদাত তোমার নামে খারাপ কথা বলতো সেজন্যে আমি ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করেছি।

হুম এটা মিথ্যা ছিলো। আমি আসলে তোমার কথা ওকে জানাই নাই। একদম অবিবাহিত হিসেবেই কথা বলতাম। কিন্তু তোমাকে যদি এভাবে সত্য বলতাম তাহলে তুমি আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করতে। আর ব্যাপারটা আমি নিজের মাঝে চেপে রাখতে পারছিলাম না।

একটা ভয় আমাকে ঘিড়ে রেখেছিলো। যদি তুমি জানতে পারো তাহলে আমাকে তুমি ছাড়বেনা । তাই আমি নিজেই বলেছিলাম তোমাকে। যাতে তুমি পরবর্তীতে আমাকে কিছু না বলো। যাতে আমি তোমার কাছে ভালো থাকতে পারি।



বর্ষন: নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : আমার আসলেই বলাটাই ভুল হয়েছে। আমি যদি তোমাকে না জানাতাম তাহলে তুমি আজ এব্যাপারে খোজ নিতে যেতে না। আর আমাকেও এভাবে হেনস্তা হতে হত না। আমি আসলেই অনেক বোকা একটা মেয়ে।



এখনো কি চুপ করে থাকবে। চুপ করে থাকা ছাড়া আর কি বা করতে পারো তুমি। এজন্যে তোমাকে আমার একদমি পছন্দ হয় না। একটা কাজ করো তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। প্লিজ তুমি আমাকে ডিভোর্স দাও।

আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দাও।

আমি আর পারিনা। আমি ভুল না করলেও সেটাকেউ তুমি ভুল হিসেবে ধরো। আরে আমারো তো নিজের একটা জগত আছে, সাধীনতা আছে। কেন তুমি আমার নিজের জগতে হাত হাতরে বেড়াও।

আমি তোমাকে চাই না। আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আমি এখন রাখবো ......

বর্ষন : নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : দেখো, মন খারাপ করো না । একটা সময় আমি তোমাকে চাইতাম ।

অনেক বেশী চাইতাম । কিন্তু তুমি আমাকে ছোট করে করে আমার জীবনকে ব্রিতৃষ্নায় ভরে দিয়েছো। তারি ফলাফল ঐ দেড়টা বছর। কিন্তু তারপরে তো আমি নিজে থেকেই তোমার কাছে এসেছি। ডিভোর্স চেয়েছি।

তারপরে কেন এমন করো তুমি ? আমি পারি তোমাকে ডিভোর্স দিতে। কিন্তু আমি দেই নি । তোমাকে সম্মান করে তোমার কাছে চেয়েছি, উত্তর দাও চুপ কেন?


বর্ষন : নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )

নীলা : দেখো ! আমি তোমার সাথে কখনো সুখি হতে পারবো না। প্লিজ আমার উপর দয়া করো।

আমি এ মানসিক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি চাই। আমি এসবের মাঝে আব্বুর দিকে তাকাতে পারি না। এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে আব্বু স্ট্রোক পর্যন্ত করেছে। এখন আমার নিজেকে দায়ী মনে হয়। দেখো বর্ষন আমাকে মুক্ত করো তোমার থেকে।

আমি মুক্তি চাই তোমার থেকে। আমি শান্তি চাই। আমি আমার জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে চাই। তোমার সাথে কখনো আমি ভালো থাকতে পারবো না। তুমি কখনোই আমাকে সুখি করতে পারবে না।

এত গুলো দিনেও যখন পারনি ভবিষ্যতেও পারবেনা। জীবনে তোমার কাছে এতগুলো দিনে আমি কিছুই চাইনি । এখন মাত্র একটা জিনিস চাই সেটা হল তোমার থেকে মুক্তি। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। আমাকে বোঝার চেস্টা করো।

আমি আব্বুর দিকে তাকাতে পারি না। আম্মুর দিকেও না। ভাইয়া তো তোমার কথা শুনলে তেরে আসে । ওরা তোমাকে আর কখনোই মেনে নিতে পারবে না। কথা বলো - - - - -

বর্ষন : নিশ্চুপ।

( কোন উত্তর আসে না ) স্কাইপির সেকেন্ড গুলি একটা একটা করে বেড়েই চলছে। শুনশান নিরবতা।

নীলা : তুমি ভাইয়াকে সব বলে দিবে তাই না। একটা অনুরোধ। এটা করোনা তুমি।

আমি এখন এদের সাথে থাকি। আমর পরিচয় যদি এরা জেনে যায় তাহলে আত্মহত্যা ছাড়া আমার কোন উপায় থাকবেনা।
ঠিক আছে তাহলে আমি তোমার কাছে আসবো। তোমার সন্তানকে নিয়ে আমি বেড়িয়ে আসবো। কিন্তু তুমি আমাকে পাবে না।

তোমার সাথে যখন শুয়ে থাকবো তখন পুতুলকেই পাবে তুমি। আমার ভিতরে তোমার জন্য কোন ভালোবাসা নেই। পুতুল ছাড়া আর কোন কিছুই অনুভুতি পাবে না তুমি।

এখন তো অন্তত কথা বলো। আমি তো বল্লাম তোমার কাছে আসবো।

কথা বলো প্লিজ । । ।

বর্ষন : নিশ্চুপ। ( কোন উত্তর আসে না )
--------------------------------------------------------------------

নীলা শুয়ে পরা থেকে উঠে পাশের ঘড়ে যায়।

একটা ল্যাপটপ আর একটা খালি বিছানা, কিছু কাগজ পত্র ছারা আর কিছুই নেই এই ঘড়ে। টেবিলের উপর একটা ডায়েরি।

নীলা ডায়রিটা হাতে নেয়। কয়েকটি পাতা উল্টাতেই মৃত একটা গান্দাফুলের সাথে একটি চিঠি। অনেক পুরোনো ।

দাগ পরেছে পুরোনো দিন গুলোর। মিলে মিশে আছে অনেক গুলোদিন। ল্যাপিটে মানুষ বিহিন সেকেন্ড গুলো উঠে চলেছে। ধীরে ধীরে বারাচ্ছে একটা সেকেন্ড থেকে আরেকটা সেকেন্ডের দুরত্ব। এভাবেই নীলা পাচটা বছর কাটিয়েছে।

দু ঘড়ে দুটো ল্যাপি। দুটো স্কাইপ আইডি। প্রতিটা রাতে যখন খারাপ লাগে এভাবেই বর্ষনের ফেলে আসা ল্যাপি থেকে নীলার ল্যাপিতে কল দেয় নীলা। তারপর নিজের রুমে গিয়ে এয়ারফোন কানে দিয়ে কথা বলতেই থাকে। সুখ দুখ সব কথা বলে সে।

কিন্তু বর্ষন একদম চুপ। কোন উত্তর আসেনা বর্ষনের প্রান্ত থেকে। তারপরেও বর্ষনকে ভালোবাসে । এতটা যে এখন পর্যন্ত নীলা একা। কাউকে গ্রহন করতে পারেনি।

পারবেওনা।

ল্যাপিটাতে স্কাইপ কল কেটে দেয় নীলা। সেই ডায়রীর ভিতর থেকে চিঠিটি হাতে তুলে নেয় -

"অনেক দিনের পরে
আজ যদি কোন কারনে
গানগুলো আমার শুনতে ইচ্ছে করে
হারিয়ে যাবে তুমি
জানবোনা কোনদিনও কি
তবুও রয়ে যাবো আমি
তোমারি ছায়া হয়ে নাওনা

স্বপ্নলোকে অবচেতন মনে
গুনগুন গুনগুন করো
পুরোনো সেই চেনা সুরে
স্বপ্নলোকে অবচেতন মনে
গুনগুন গুনগুন করো
পুরোনো সেই চেনা সুরে

ভাবছো কি কোনদিনও
ফিরে পাবে ওহম
সেই ক্ষনিকেরি
আমাদেরই সার্থকতা

অনেক দিনের পরে
আজ যদি কোন কারনে
গানগুলো আমার শুনতে ইচ্ছে করে
হারিয়ে যাবে তুমি
জানবোনা কোনদিনও কি
তবুও রয়ে যাবো আমি
তোমারি ছায়া হয়ে নাওনা"

- বর্ষন

--------------------------------------------------------------------
সকাল হয়েগেছে। সবাই রওনা হয়েছে। প্রতিটা বছরের মত আজ নীলাও রওনা হয়েছে।

আকাশটা একদম মেঘলা। ঝড় আসবে বলেই মনে হয়। তিনচাকা ওয়ালা ব্যাটারি চালিত রিকশায় নীলা, নীলার সন্তান, আর নীলার মা। পেছনে আরও গাড়ি আছে। সেখানে বর্ষনের বোন, বোন জামাই ও অন্যরা।



আজ নীলার হাতে বর্ষনের এখটা পছন্দের জিনিস আছে। বর্ষন জিনিসটাকে খুবি পছন্দ করতো। লম্বা স্টিকের আগায় একটা ফুল। রজনী গন্ধা। হুম রজনী গন্ধাই বর্ষনের সবচেয়ে পছন্দের ফুল।

এর ঘ্রাণ বর্ষন খবি পছন্দ করতো। পছন্দের ফুলের কথা বলতেই বর্ষন বার বার রজনীগন্ধাকেই সামনে নিয়ে আসতো। কেন জানি আজ নীলারো সব চেয়ে পছন্দের ফুল রজনী গন্ধা। আগে ছিলো গ্যান্দাফুল । এভাবে নীলার অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে গেছে।

সেই আগের অবুজ নীলা আজ আর নেই। সে এখন অনেক বেশী পরিপক্ক। দু:খের কথা হল দোকানে একটি মাত্র রজনী গন্ধার স্টিকই পাওয়া গিয়েছে। যা এখন নীলা প্রচন্ডভালো বাসায় বুকে আকরে ধরে আছে।
গত পাচটা বছর এভাবেই চলছে নীলার।

এভাবেই এইদিনে নীলা বর্ষনের কবরের সামনে যায়। রজনী গন্ধা দিয়ে ভালোবাসা জানায়। কিন্তু কেন যেন এই দিনটি এলে বর্ষনের শেষ দেখাটা মনে পরে যায়। লাশের খাটিয়ায় বা হাত বের হয়ে ছিল। বড় বড় অক্ষরে হাত কেটে লেখা ছিলো - "নীলা, ভালোবাসি বলেই মুক্ত করে দিলাম তোমায় একেবারে, - ভালো থেকো ........."
তার পর থেকেই বর্ষন স্কাইপিতে নিশ্চুপ ।

একে বারে নিশ্চুপ ।

করবের সামনে দারিয়ে নীলা,
হাতে সেই রজনী গন্ধা,
হাটুগেড়ে কবরের সামনে বসে মাথানিচু করে
কাপা কাপা ঠোটে চোখর নোনা জল বেয়ে আসে
আই লাভ ইউ

বর্ষন : নিশ্চুপ। কোন উত্তর আসে না । আসবেও না কোনদিন ।

সমাপ্ত ....।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.