আমার আকাশ ছোয়াঁর ভীষণ ইচ্ছে...কিন্তু পারিনা!!! তাই মনের আকাশে রং বেরংয়ের ঘুড়ি উড়াই...প্রতিনিয়ত!
ছ্ন্নছাড়া ডায়েরী-২
মাঝেমধ্যে নয়। আব্বাস আলী সাহেব প্রায় প্রতিদিনই আসতে লাগলেন। সেই একই জায়গায় কর্ণারের চেয়ারটা মোটামুটি নিজের দখলেই নিয়ে নিছেন। চুপচাপ বসে থাকেন। যখন দেখেন আমি একটু ফ্রী বা কাজের চাপ কম তখনই কথা তুলেন।
নানান কথা। তার নিজের কথা, অতীতের কথা, এ প্রজন্মের কথা। লোকটা বিরক্তি উদ্দীপক টাইপের নয় বলেই হয়ত আমিও প্রশ্রয় দেই। ফাঁকে ফাঁকে কথা বলি। অনেক অজানা আবিষ্কার করি।
আব্বাস আলী সাহেব ষ্টুডেন্টদের উপর মহাবিরক্ত। তার ভাষায় এরা আসার ফলেই আজ এই দুরঃবস্তা। তিনি কাজ পাচ্ছেন না। আমি হাসলাম। তিনি বলেই চললেন, তিনি অভিজ্ঞ মানুষ, পুরাতন লোক।
রেষ্টুরেন্টের মালিকরা তাকে রাখলে যে টাকা দিতে হবে তার অনেক কম মূল্যে ষ্টুডেন্টদের খাটাচ্ছে। ব্যবহারও করতে পারছে যাচ্ছেতাই। সেদিন নাকি তার সামনেই এক রেষ্টুরেন্ট মালিক তার কর্মচারী ষ্টুডেন্টকে সামান্য ভুলের জন্যে পা তুলে সজোরে লাথি মারে। এদেশে এমন ঘটনা আমাকে অবাক করে। তিনি নিজের কথাও বলেন।
দেশে তার এক ছেলে। যাকে দেখেননি আজও । সেই ছেলের কথা ভেবেই পড়ে আছেন এদেশে। যার ভবিষ্যৎ তিনি নিজ হাতে গড়ে দিয়ে যেতে চান। সামনে এসএসসি পরীক্ষা দিবে ছেলেটি।
দিনে দিনে অনেক কিছুই জানা হলো। আব্বাস আলী সাহেবের জীবন যুদ্ধের গল্প। প্রবাসীদের জীবন সম্পর্কে যে ধারণা সবাই পোষন করে এ গল্প তেমন নয়। সম্পূর্ণ বিপরীত।
নিজ দেশে কি ছিল না আব্বাস সাহেবের।
অবস্থাশালী গৃহস্থ ঘরের ছেলে ছিলেন। তার ভাষায় সেই দিনগুলোই ছিল সুখের। যার সাথে আজকের কোনো তুলনাই হয় না। শুধু টাকার জন্য এ উন্নত দেশে নিম্নতর কাজ করে যাচ্ছেন। রেষ্টুরেন্টের কিচেনে কাটিয়ে দিলেন জীবন।
কিচেনের নোংরা পলিটিক্স আর অমানুষিক কষ্ট সয়ে উঠেছেন অনেক আগে। তিনি জানালেন প্রবাসীরা এ কষ্টের কথা চেপে যায় স্বজনদের কাছে। তাই দেশে স্বজনরা কখনো জানে না তার প্রিয় মানুষটির ইতিবৃত্ত। তার ছেলেটাও এদেশে আসার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। কিন্তু তিনি তার জীবনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না ছেলের জীবনে।
...চলবে...
ছ্ন্নছাড়া ডায়েরী-৩
দেশে এসেছি সপ্তাহখানেক হলো। গ্রীষ্মের ছুটিতে। ভালো লাগছে ভীষণ। ঘোরে বেড়াচ্ছি সব আত্নীয়ালয়ে। ছোট খালার বাড়ী এসেছি গত সন্ধ্যায়।
দিনদুয়েক থাকার ইচ্ছে। আজ খালাত ভাই শিমুলকে নিয়ে বেরিয়েছি। এলাকাটা ঘুরে দেখার ইচ্ছে। অনেক বদলে গেছে এদেশ। পাড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সেই বদলে যাওয়ার ছোঁয়া।
মন্দ না, ভালোই। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস আমি ঠিক মেলাতে পারছিনা। ঠিক যেন খাপ খায় না। যেমন কিছুক্ষন আগে আমাদের পাশ কাটিয়ে গেলো চারজনের একদল কিশোর। আপাদমস্তক অত্যাধূনিক।
হাতে চূড়ী, কানে দুল, কালার করা চুল। সিগারেট টানতে টানতে আর উঁচ্চস্বরে হাসাহাসি করতে করতে যাচ্ছিল তারা।
আমি শিমুলকে বললাম, কিরে তোদের তো দেখি অনেক উন্নতি। কচি পুলাপানেরাও সিগারেট টানা শুরু করেছে।
জবাবে শিমুল স্বর নীচু করে জানালো, এরা পুরাপুরি বখে যাওয়া ছেলে।
হাতের ইশারায় সে দেখাল, ঐ যে লম্বা করে ছেলেটা, সেই হলো নেতা। এদের যন্ত্রণায় সবাই অতিষ্ঠ। ঐ ছেলেটার বাবা লন্ডনে থাকে তো...অঢেল টাকাকড়ি ওদের। কিন্তু আব্বাস চাচা অনেক ভালো মানুষ। তার ছেলেটা যে এমন হলো...আক্ষেপ ঝরে শিমুলের কন্ঠে।
আব্বাস নামটা শুনতেই আমার মনে পড়ল আব্বাস আলী সাহেবের কথা। হ্যা সব ঠিকই আছে। এই সেই আব্বাস আলী। একদিন কথা প্রসঙ্গে জেনেছিলাম আমার খালার বাড়ি যে গ্রামে তিনিও সে গ্রামের বাসিন্দা।
আমি শিমুলকে ডাকি, বাড়ি চল, আর হাটঁতে ভালো লাগছে না।
....শেষ....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।