লাশ কোলে নিয়ে সার্কাস দেখার অপেক্ষায় । আম্মু ছাদে যাইতে বললে কত প্রকার টালবাহান করি অথচ গত কয় এক দিন দৈনিক ছাদে যাতায়াত করতেছি । খুব আগ্রহ সহ কাজটা করতেছি । কারণ, ছাদে রানী আসার সব আয়োজন সম্পন্ন !!! তাও আবার একজন না ৩জন রানীর আগমন হবে একি সাথে । আলহামদুলিল্লাহ ।
ছোট বেলায় ২/৩ বার পত্রিকার পাতায় রানীর আগমনের ছবি দেখেছিলাম । কি অদ্ভুত সব রহস্য-কথার প্রচলন আছে রানীকে নিয়ে !!! শুনেছিলাম অনেক বছর পর পর নাকি তিনি আসেন ! তাও ১০ বা ১২ বছরে না । ভাগ্যর খুব জোর থাকলে ৪০ ৫০ বছরে একবার আসেন তিনি তার সিংহাসন অলঙ্কিত করতে !!! উনি যেখানে আসেন তাকে দেখার ধুম পড়ে যায় ! অনেক আকর্ষণীয় ভঙ্গিমা তাঁর !!! পত্রিকায় এমনকি বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংবাদেও তাঁর খবর পেয়েছিলাম !!! এমন ভুবন মুগ্ধি রুপ যার তাকে দেখার সাধ হবেনা এমন পাষান প্রাণ খুঁজে পাওয়া ভার । আমার ইচ্ছা হয়েছিলো যদি রানীর একটা আসন পেতাম ? অনেক যত্নে রাখতাম । যদি রানী আসে ???
তখন ভাবিনি এ আশা আল্লাহ মঞ্জুর করে নিয়েছেন ।
যে রানীর দর্শন এতো দুর্লভ তাঁর আসন মুল্যবান হবে বৈকি !!! একদিন 'রাঙ্গাবন' নামে একটা নার্সারিতে রানীর আসন আছে শুনলাম । দামটা যুতসই বটে । হাজারের উপর যতদুর মনে পড়ে ১৭০০/= টাকা চেয়েছিলো !!! আসন মানে গাছের আকার বড়জোর ৫ আঙ্গুল আর পাতা মোটে ২টা !!! দাম শুনে গাছ দেখতে চাইছিলাম আর গাছ দেখে সোজা বাড়ির পথে হাটা দিলাম !!! এই গাছ রানীর আসন বিশ্বা্শ করতে পারিনি !!! ঘটনা ২০০৮ এর দিকে হবে । তাছাড়া তখন আমাদের বাসায় ইন্টারনেট ছিলো না সুতরাং গাছ সম্পরকে জানাতেও পারিনি !!! তাছাড়া গাছের আকার দেখে আমার মনে হইছিলো আমাকে নিদেনপক্ষে আরও ১০০ বছর বাঁচতে হবে ফুল দেখতে চাইলে । নানা চিন্তায় বিফল মুনি !!!
২০০৯ এ শখের বসে পাশের বাসার এক ভাইয়ার ছেলেকে পড়াতে শুরু করলাম ।
আমাদের বাসায় সবার গাছের অনেক শখ । এইটা প্রতিবেশী সবাই জানতো । একদিন দুপুরের দিকে আমার ছাত্র; অর নাম অপু এসে একটা এক আঙ্গুল সমান ছিঁড়া পাতা দিয়ে বললো,
''ফুপি, এইটা নাকি night queen !!! নার্সারির লোকেরা নতুন করে লাগাচ্ছিলো আর আমি চাইলাম আর আমাকে অর্ধেক পাতা দিলো !! আপনাকে তার অর্ধেক দিলাম আর বাকি অর্ধেক ডিনা আপুকে দিছি । ''
আমি পাতার অংশটা নিয়ে এমনি একটা টবে ফেলে দিলাম । ভাব এমন ছিলো, হইলে হবে ।
না হইলে নাই । আমি ভাবছিলাম 'পাথর কুচি' গাছ এর কোন জাত হবে । ভুলে গেছিলাম সেই পাতার কথা । তখন একদিন আমার বোন জানালো, ওই পাতা থেকে ডালের মত বের হচ্ছে । ধীরে দীরে সরু ডাল একটা পাতায় রুপ নিলো ।
যে গতিতে গাছ বাড়তেছিলো ভেবেই নিছিলাম আমার নাতি পুতি হয়ত জানবে কি এই গাছের নাম ? আমার ভাগ্য হবে না !!!
২০১১ তে নেট থেকে জানলাম যে, হ্যাঁ ! ইহাই রানীর আসন । তবে নেট ঘেঁটে যে ছবি পেয়েছিলাম সেই গাছের আকৃতি দেখে ভাব্লাম ফুল আমার নাতির পুতি দেখিতে পাইবে !!! : P
একদিন গাছের পাতায় নাক ফুলের মত কিছু একটা আব্বু বের হতে দেখে জানালো । ভাব্লাম পাতাই হবে !!! ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্য বেশ বড় হয়ে গেলো !!! ওমা !!! কলি আসছে গাছে !!! কি যে আনন্দ হইলো । ২০১২ তে ৫টা ফুল ফুটছে । আর এইবার আজ একি সাথে ৩টা ফুল ফুটছে ।
গাছে কলি আসে অনেক কিন্তু সব টিকে না । তাই যখনি দেখি কোন কলি বড় হচ্ছে চখে পানি চলে আসে !!! অসম্ভব ভালো লাগার অনুভুতি । আসলে লিখে বুঝানো যায়না !!! আল্লাহ খুব কম মানুষকে সুন্দর সুন্দর নেয়ামত দান করেন । আলহামদুলিল্লাহ আমি একজন যার ভাগ্যতে এখন পরযন্ত ৮টা ফুল দেখার ভাগ্য হইলো ।
গত ২ বছর গাছে আকার ছোট ছিলো তাই টব ছোট ছিলো ।
ফুল ফুটবে বুঝলে গাছ ঘরে নিয়ে আসতাম । ফুল ফোটার সাথে সাথে মিষ্টি যে ঘ্রান তৈরী হয় তার সাথে তুলনা কোন সুগন্ধির চলে না । আমি তো ১০/ ১৫ মিনিট পর পর ফুল দেখে দেখে অন্য কাজ করতাম । আজ কি করবো ??? গাছ বড় হয়ে গেছে সাথে টব । তাই এইবার ছাদে গিয়ে ফুল দেখতে হচ্ছে ।
সাম্নের বছর আমি ছাদে ঘর বান্দুম ।
আজ আমার রানী দর্শন পরিস্থিতি ঃ
আগেই অবহিত করেছি আজ তাহাদের অভিষেক হবে ছাদে । অতি উৎসাহী আমি বিকেলে গিয়ে কলি গুলো ভালো করে লকষ্য করে নিশ্চিন্ত হলাম যে আজ ফুল ফুটিবে । মাগরিবের পর ভাবাবেগের বশবর্তী হয়ে মুঠোফোন, লাইট, ক্যামেরা এক হাতে আর এক হাতে ওহি'র হাত ধরে ছাদে গমন করিলাম !!! ফুল ফিটিতে ঢের বাকি তখনও ! কলির ছবি তুলিতে ক্যামেরা তাক করিতেই ক্যামেরা আমাকে বোকা বানিয়ে বন্ধ হয়ে গেল !!! তাহার চার্জ নাই ! ২য় বারের মত ছাঁদ হতে ঘরে ফিরিয়া আসিলাম । রাগে দুখে পিসির সামনে বসিলাম ।
৩০ মিনিটের মত হবে মুখবই দেখিলাম । মুঠোফোনে ছোটবোন পর পর ৩টা মিস্ড কল দিলো । সে ছাদে ছিলো ভাবিলাম রানীরা অবগুন্ঠন তুলেছেন । পড়ি কি মরি করে এক দৌড়ে ছাদে গিয়ে উপস্থিত হলাম । বোন বলিলো, ''মটর ছাড়তে বলার জন্য কল দিছি ।
তুমি ব্যাক না করে ছাদে আসলা কেন ???'' কি আর কহিবো !!! মেজাজ খারাপ করে আবার বাসায় ফিরে আসলাম । তারপর চা বানাইলাম । তারপর ৩ মগ চা নিয়ে ৮টার দিকে ছাদে । তিন বোন গল্প করিতে করিতে ১০টা অব্দি অপেকষা করলাম । ফুল সম্পুরন প্রস্ফুটিত হতে আরও সময় লাগবে বলে তখনকার মত বাসায় ফিরলাম ।
১১টার পর ৫ম বারের মত ছাদে গিয়ে রানীদের দর্শন করলাম ।
ফুল দেখতে এতো বেশি সুন্দর যে ক্যামেরায় এর সৌ্নদরয বেমানান । তাও কয় একটা ছবি দিলাম আপনাদের জন্য । ভালো থাকবেন ।
Never look back, for this is the choice
don't question myself, and keep my mind poised
take a look up, thank god and rejoice
because the truth is, I know I made the right choice
So I follow the path and forget the past
this devotion and emotion, I'll make sure it lasts
with passion so wide and a love so vast
pain and sadness will be things of the past
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।