আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘ঈশ্বর কণার’ সন্ধান!

ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই।

সুইজারল্যান্ডের ভূগর্ভস্থ পরীক্ষাকেন্দ্র লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে (এলএইচসি) গবেষণারত বিজ্ঞানীরা ‘ঈশ্বর কণিকা’ বলে পরিচিত ‘হিগস্ বোসন পার্টিকল’ নামের অতি পারমাণবিক (সাব অ্যাটমিক) কণিকা শনাক্ত করতে পেরেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ইন্টারনেটে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ‘হিগস্ বোসন’ বা ‘ঈশ্বর কণা’র মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ঠিক পরের মুহূর্তের অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নের সমাধান মিলবে। পরমাণু গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সার্ন) নামের যে পরমাণু গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধীনে এ পরীক্ষা চলছে।

তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত না করলেও এটিকে সরাসরি নাকচও করেনি। মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে সার্ন ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্ত এলাকায় ২৭ কিলোমিটারের বৃত্তাকৃতির এলএইচসি স্থাপন করে। এটি ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে চালু করা হয়। প্রায় আলোর সমান গতিতে পরস্পর বিপরীতমুখী দুটি প্রোটনস্রোত এর সুড়ঙ্গপথে সক্রিয় করে প্রোটন কণিকার মধ্যে সংঘর্ষ ঘটানো হয়। দুটি স্রোতের সংঘর্ষে প্রোটনের কণাগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে নতুন কণার সৃষ্টি করে।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী পিটার উয়োইট তাঁর ইন্টারনেট ব্লগে একটি নথি জুড়ে দিয়ে সেটিকে এলএইচসিতে কর্মরত চারজন বিজ্ঞানীর লেখা গোপন নথি বলে দাবি করেছেন। নথিতে বলা হয়েছে, এলএইচসিতে স্থাপিত সূক্ষ্ম পদার্থকণিকা শনাক্তকারী অনেকগুলো যন্ত্রের একটিতে নতুন ধরনের একটি অতি পারমানবিক কণিকা ধরা পড়েছে। গবেষকেরা মনে করছেন, ওই অতি পারমানবিক কণিকাটিই হচ্ছে ‘হিগস্ বোসন’। নথিতে আরও বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা হিগস্ বোসনকে যতটুকু বলে ধারণা করেছিলেন, তার চেয়ে এই কণিকাটি ৩৪ গুণ বড়। কয়েকজন বিজ্ঞানী প্রাথমিকভাবে এ নথির বিষয়টিকে ‘ধোঁকাবাজি’ বলে উড়িয়ে দেন।

তবে সার্নের পক্ষ থেকে নথিটি আসল বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু নথিতে হিগস্ বোসন ধরা পড়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, সে বিষয়টি তারা নিশ্চিত করেনি। সার্নের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র জেমস গিলিস বলেছেন, এলএইচসিতে প্রায় তিন হাজার বিজ্ঞানী কাজ করছেন। নিরবচ্ছিন্নভাবে তাঁরা হাজার হাজার নথি ও প্রতিবেদন তৈরি করে যাচ্ছেন। এত নথির মধ্য থেকে একটি নথির বক্তব্যকে হুট করে স্বতঃসিদ্ধ বলে রায় দেওয়া সম্ভব নয়।

নথির বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত অথবা প্রত্যাখ্যান করার আগে বিজ্ঞানীরা সেটিকে কয়েকটি পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করবেন। সমন্বিত বিশ্লেষণ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে সার্নের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে। গত বছরের জুনে এলএইচসির বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, তাঁরা মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য উন্মোচনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছেন। এলএইচসি আগের তুলনায় দ্বিগুণ হারে প্রোটনকণিকা চূর্ণ করছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগির তাঁরা ‘বিগ ব্যাং থিউরি’ বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের প্রামাণ্য ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারবেন।

একই সঙ্গে ‘হিগস্ বোসন পার্টিকল’ও শনাক্ত করা যাবে। তাঁরা জানান ২০১৩ সালের মধ্যে তাঁরা এলএইচসিতে ১৪ ট্রিলিয়ন ইলেক্ট্রোভোল্টের শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এলএইচসি কাজ করলে হিগস্ বোসন শনাক্ত করা যাবে। এ ছাড়া মহাবিস্ফোরণের পর কীভাবে এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল, তার একটি ধারণাও তাঁরা পাবেন। টেলিগ্রাফ ও লাইভ সায়েন্স অনলাইন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।