ফ্রান্সের সংসদের অধিবেশনে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদদের ভোটে প্রকাশ্যে হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। এই অপরাধে বেশ কয়েকজন অভিযুক্তাকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। বিষয়টা দুঃখজনক, মানুষের পোশাক পরিধান করবার স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হয়েছে এই ঘোষণায়।
যেকোনো ব্যক্তিকে কোনো ধর্মীয় চিহ্ন ধারণ করতে বাধ্য করা, তার ধর্ম পালন এবং ধর্ম না পালন করবার অধিকার কোনো ধর্মীয় অনুশাসনের বাধ্যবাধকতায় যখন আক্রান্ত হয়, যখন অতিধার্মিক কিংবা ধর্মোন্মত্ত কেউ তাকে তার অনিচ্ছায় কোনো ধর্মীয় বিধান পালনে বাধ্য করে কিংবা গোষ্টীবদ্ধ হয়ে তার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে সেটাকে যে বিবেচনায় নিন্দনীয় বলা যায়, সেই একই রকম ভাবে রাষ্ট্রীয় আইনে কারো ধর্মপালনের স্বাধীনতাহরণ নিন্দনীয়।
রাষ্ট্র নিজের প্রয়োজন আইন প্রণয়ন করে, ফ্রান্সের সাংসদেরা তাদের আইন প্রণোয়নের পেছনেও যুক্তি প্রদান করেছেন, সেসব যুক্তি অধিকাংশ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি গ্রহন করেছেন এবং হিজাব পরিধানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
ফ্রান্সের আদালত যদি অভিযুক্তাদের যুক্তি মেনে নিয়ে এই আইনের বিরোধিতা করেন কিংবা যদি ব্যক্তিস্বাধীনতাকে রাষ্ট্রের কল্পিত নিরাপত্তাহীনতার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তাহলে এ আইন বাতিল হতে পারে।
অমানবিক আখ্যা দিয়ে কিংবা অবমাননাকর আখ্যা দিয়ে মানুষের ধর্মীয় আবেগ প্রশমিত করা যায় না। মানুষ সম্পূর্ণ যুক্তিহীন ভাবেই ধর্মের কাছে নিজেকে সমর্পন করে, তাদের আচরণের যৌক্তিকতা কিংবা অযৌক্তিকতা তাদের কাছে কখনই মুখ্য নয়, ধর্মীয় বিধান ও অনুশাসন অক্ষরে অক্ষরে মেনে শুদ্ধ এবং স্রষ্টানিবেদিত জীবনযাপনের আকাঙ্খা তাদের কাছে মুখ্য। পার্থিব প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির তুলনায় তাদের ইশ্বরের সন্তুষ্টি তাদের কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে যেকোনো ব্যক্তির ধর্মপালনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা কিংবা তাদের ধররমীয় স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো রাষ্ট্রীয় বিধান গ্রহনের আগে এ বিধান যে ধর্ম নিরপেক্ষতার ভুল ব্যাখ্যা হিসেবে গৃহীত হতে পারে এ সম্ভবনাটুকু যাচাই করে দেখবার প্রয়োজনীয়তা ছিলো।
অনেকে প্রত্যক্ষ সংঘাতের পথ গ্রহন করবে, হয়তো অন্তর্জালে ইতমধ্যেই এমন অনেক গ্রুপ তৈরী হয়েছে, যাদের প্রতিবাদের লক্ষ্য হবে ফ্রান্সে গিয়ে হিজাব পরিধান করা। এরা হয়তো অন্য কোনো দেশের নাগরিক, ফ্রান্সের নাগরিকের জন্য অবশ্যপালনীয় বিধানগুলো যারা ফ্রান্সের নাগরিক নয় তাদের জন্য কতটুকু প্রযোজ্য এইসব আইনী জটিলতাও সেখানে দেখা দিবে অচিরেই।
রাষ্ট্রীয় বিধানকে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিহত করা কিংবা এর প্রতিবাদ জারি রাখবার সাথে সাথে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত বিধানকে মান্য করে চলাও এক ধরণের নাগরিক কর্তব্য, ফ্রান্সের হিজাবধারীনিদের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধান এবং রাষ্ট্রীয় বিধান একই সাথে মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না।
রাষ্ট্র যদি সাম্প্রতিক বিচারের রায়ে রাষ্ট্রীয় বিধানকে অবশ্যমান্য ঘোষণা করে তাহলে এইসব ধর্মপ্রাণ নাগরিকের কর্তব্য কি হবে,
যদি তারা মনে করে এমন ধর্মবিদ্বেষী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব তাদের আদর্শের প্রতি অবমাননাকর, তারা অন্য কোনো দেশে বসতি স্থাপন করতে পারে, যেসব দেশে এখনও হিজাব পরিধানে কোনো আইনী বাধা নেই, সেসব রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহন করতে পারে তারা, ধর্মকে জলাঞ্জলি দিয়ে উন্নত বিশ্বের নাগরিকত্ব ধরে রাখবার ভেতরে এক ধরণের পার্থিব উন্নত জীবনযাপনের লালসা বিদ্যমান,
ফ্রান্সের ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের সামনে দুটো পথই খোলা, তারা রাষ্ট্রের এই অন্যায্য বিধানের বিরোধিতা করতে পারেন, তারা তাদের ধর্মপালনের অধিকারকে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন এবং তারা এই রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে অন্য কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহন করতে পারেন যেখানে তার ধর্মপালনের স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হবে না।
তারা অদুর ভবিষ্যতে কোন পন্থা অবলম্বন করবেন আমি জানি না, তবে যুক্তির সাথে আবেগের কোনো লড়াই চলে না ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।