আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিখাটা এত ভালো লাগলো যে কি বলবো.. নির্মলেন্দু গুণ বলে কথা.. এক কথায় দারুন..

আমি এক ভাঙ্গা বাড়ীর ভাঙ্গা ঘরের ভাঙ্গা বারান্দা। আমি পথের মাঝে খুঁজে পাওয়া টাকা আধখানা, আমি বিদ্যাসাগর মাইকেলেরই মস্ত বড় ভূল। আমি কিশোরীর ওই হারিয়ে যাওয়া মুক্ত গাথা দুল।
স্মৃতির ইশকুল ~অকূল সাগরে তখন আমি একা~ -নির্মলেন্দু গুণ, কবি আমাদের বাড়ির সামনের স্কুলঘরটি ঝড়ে ভেঙে পড়েছিল। সেটি দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় আমার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়াটা শিখতে হয়েছিল বাড়িতে বসেই! বারহাট্টা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হই।

স্কুলটির আসল নাম করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইনস্টিটিউশন। প্রাইমারি সেকশনের প্রধান শিক্ষক রাজেন্দ্রবাবু বাবার বন্ধু ছিলেন বলে অনিবার্যভাবেই বাবা তাঁর হাতে আমাকে সঁপে দেন। স্কুলে ভর্তি করিয়ে বাবা বাড়িতে চলে যান। অকূল সাগরে তখন আমি একা। ক্লাসের ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে ভয়ে কবুতরের মতো আমার বুক কাঁপে! সাহস সঞ্চয় করে ক্লাসের পেছনের দিকে বসি।

স্যার নাম ডাকা শুরু করেন। বুঝতে পারি একটু পরেই আমার পালা। সাহসে বুক বেঁধে সে ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। হঠাৎ মোহনগঞ্জগামী একটি ট্রেন আমার দৃষ্টিকে অলৌকিক জাদুবলে পশ্চিমের জানালা দিয়ে স্টেশনের দিকে টেনে নিয়ে যায়। হঠাৎ অনুভব করলাম, আমার চুলের মুঠোতে একটি হাত।

ওই হাত চুলের মুঠো ধরে হ্যাঁচকা টানে আমাকে ক্লাসের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দিল। ক্লাসের সবার অট্টহাসি! এতক্ষণে কারণ বুঝলাম। হাজিরা দিতে ভুলে গেছি! নিজেকে স্বাস্থ্যবান রাজেন্দ্র স্যারের বজ্রমুষ্টির ভেতরে ঝুলন্ত অবস্থায় আবিষ্কার করলাম। ক্লাসের পুরো সময়টা দুহাতে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। আমার স্কুুলজীবনের শুরুর দিনটি যে এমন করুণ হবে, তা কে জানত? প্রতিটি স্কুলে দু-একজন আদু ভাই থাকে।

আমাদের আদু ভাইয়ের নাম ছিল রফিজ। আমি যখন তৃতীয় শ্রেণীতে, তখন রফিজ ছিল সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। যখন পঞ্চম শ্রেণীতে উঠলাম, রফিজ তখনো সপ্তম শ্রেণীতে। আমরা তাকে ভীষণ ভয় পেতাম। একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে রেলস্টেশনে রফিজ আমাদের গতিরোধ করে স্কুলে না গিয়ে মোহনগঞ্জে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

রফিজের নির্দেশ অমান্য করার সাহস আমাদের কারোরই ছিল না। রফিজের বদৌলতে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণের স্বপ্ন পূরণ হলো! ট্রেন থেকে নামার পর রফিজ আমাদের কয়েকটি স্লোগান শেখাল। এর একটি হলো_'বারহাট্টা স্কুলের হেডমাস্টারের পদত্যাগ চাই, পদত্যাগ চাই'। রফিজ আমাদের নিয়ে বিভিন্ন দোকানে ঢুকছে এবং তার আন্দোলনের কর্মসূচি ব্যাখ্যা করছে। শেষে এল আসল কথাটি; আন্দোলনের জন্য অর্থ সাহায্য চাই।

ব্যবসায়ীরা রফিজের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে দোকানের সামনে দণ্ডায়মান ঝামেলা বিদায় করছিলেন। এমন সময় ঘটল বিপদ। এক বেয়াড়া ব্যবসায়ী 'আমাদের নেতা'কে ধরে ঘরের ভেতর আটকে ফেললেন। একপর্যায়ে তিনি দোকান কর্মচারীদের নির্দেশ দিলেন লাঠিপেটা করে আমাদের বাজারছাড়া করতে। সত্যি সত্যিই লোকটি লাঠি নিয়ে তাড়া করল।

আমরা স্টেশনের উদ্দেশে প্রাণপণে দৌড়াতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরই দেখলাম, ছাড়া-পাওয়া পকেটমারের মতো ঊর্ধশ্বাসে ছুটতে ছুটতে রফিজ স্টেশনের দিকে আসছে! ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে বাবাকে বললাম ঘড়ি কিনে দিতে। না দিলে পরীক্ষা দেব না। বাবা একটা ধানিজমি বন্ধক দিয়ে টাকা সংগ্রহ করলেন। ঘড়ি পেয়ে আমার খুশির অন্ত নেই।

বাষট্টিতে ম্যাট্রিক পাস করি। আমাদের স্কুল থেকে মতি, হেলাল এবং আমি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হই। বারহাট্টা স্কুল থেকে একসঙ্গে তিনজন প্রথম বিভাগ এর আগে কখনো পায়নি। * গ্রন্থনা : জোহরা চৌধুরী সেতু ref: Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.