ক্রীড়া প্রতিবেদক : বিদেশি কোচ আসেন। মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে চলেও যান। কী দিয়ে গেলেন, যাওয়ার সময় এ প্রশ্ন সামনে রেখে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলানোও চলতে থাকে। জেমি সিডন্সের বিদায়বেলায়ও সেটা থেমে নেই। তাঁর নিজের হিসাব বলছে, বাংলাদেশ দলটাকে উন্নতির পথেই রেখে যাচ্ছেন।
এবং দায়িত্ব পালনের সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশ দল যেখানে পেঁৗছেছে, তা নিয়ে নিজের সন্তুষ্টিও গোপন করেননি এ অস্ট্রেলিয়ান। তবে অন্য চোখের বিচার-বিশ্লেষণ থেকে যা দাঁড়াচ্ছে তার সারমর্মটা এমন_কোচ হিসেবে তিনি খুব সফল যেমন হননি তেমনি ব্যর্থও নন। সিডন্স বাংলাদেশকে কোথায় রেখে যাচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হাবিবুল বাশার বলছেন, 'মিশ্র সময়ই কেটেছে বলব। তাঁর সময়ে দল খুব ভালো যেমন করেছে, তেমনি খুব খারাপও। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে।
' সেজন্যই বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক একটা ক্ষেত্রে সিডন্সের ব্যর্থতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে দ্বিধাহীন, 'অধারাবাহিকতার জন্য খ্যাতি ছিল আমাদের। তাঁর সময়েও কিন্তু আমরা পুরোপুরি ধারাবাহিক হতে পারিনি। ' আর বিবেচ্য যদি হয় ২০০৭ আর সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অবস্থান, সে ক্ষেত্রে উন্নতিটা ধরা পড়ে না ফারুক আহমেদের চোখে। সাবেক এ অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক বলছেন, 'পরিসংখ্যান দিয়ে যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে খুব উন্নতি হয়েছে বলার সুযোগ নেই। গত বিশ্বকাপে তো বাংলাদেশ সুপার এইটে খেলেছিল।
এবার কী করেছে? আর নিউজিল্যান্ডের কথা বাদ দিয়ে যদি বলি, তাহলে আমরা নিয়মিত কোনো টেস্ট দলকেও তো হারাতে পারিনি। 'আর ব্যাটিং বিশেষজ্ঞ সিডন্সের পারফরম্যান্সও খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারেনি ফারুককে। অকপটেই বললেন সে কথাও, 'তিনি তো মূলত ব্যাটিং কোচ। তাঁর সময়ে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং আসলে কতটা জমাট হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্টই অবকাশ আছে। ' জাতীয় দলের সিডন্সের সহকারী হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করা খালেদ মাহমুদেরও একই কথা।
বাংলাদেশ দলের সাবেক এ অধিনায়ক সিডন্সের ব্যর্থতার জায়গা নির্দিষ্ট করে দিচ্ছেন এভাবে, 'টেস্ট বলুন কিংবা ওয়ানডে ক্রিকেট, দুই ধরনের ক্রিকেটেই ব্যাটিং অর্ডারের তিন ও চার নম্বর জায়গাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। টেস্টে ভারতের তিন নম্বরের কথা ভাবলেই আমাদের চোখে ভাসেন রাহুল দ্রাবিড়। অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং কিংবা শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা। কিন্তু সিডন্সের সময়ে তিন কিংবা চারে কেউই স্থির হতে পারেনি। তাহলে তিনি সফল হলেন কোথায়?'তবে ওই সাবেক অধিনায়কদের কাছ থেকে কৃতিত্বও পাচ্ছেন সিডন্স।
সেটা তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও ইমরুল কায়েসের মতো ক্রিকেটাররা তাঁর সময়েই আরো বেশি পরিণত হয়ে উঠেছেন বলে। এবং সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের মেলে ধরছেন বলেও। তবে মোহাম্মদ আশরাফুলের মতো কেউ কেউ আবার ব্যর্থতার ঘূর্ণাবর্তেই পাক খেয়েছেন কেবল। এটার দায়ও তাই সিডন্সকেই নিতে বলছেন মাহমুদ, 'আশরাফুলের কেন উন্নতি হলো না? সিডন্স তাহলে কী করলেন? এমন তো নয় যে সাড়ে তিন বছরে তিনি খুব বেশি ক্রিকেটারকে নিয়ে কাজ করেছেন। এদের মধ্যে তামিম, সাকিব বা ইমরুলের কথা বাদ দিলে বেশির ভাগ ক্রিকেটারই কিন্তু নিজেকে দলে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি।
এটাকে আমি সিডন্সের ব্যর্থতাই বলব। ' আশরাফুল প্রসঙ্গে সিডন্সের দায় কিছুটা দেখছেন গাজী আশরাফ লিপুও। এ বোর্ড পরিচালকই সিডন্সকে বাংলাদেশ দলের হেড কোচ হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বোর্ডের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির ক্রিকেট অপারেশনসের প্রধান থাকাকালীন নতুন কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ শ্রম দেওয়া এ সাবেক অধিনায়ক বললেন, 'আশরাফুলের মতো ক্রিকেটারকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সিডন্সের আরো বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। একই সঙ্গে এটাও বলতে হবে যে আমাদের সিস্টেমেও হয়তো কোনো খুঁত ছিল।
' তবে সিডন্সকে তিনি ঢালাওভাবে ব্যর্থ বলতে রাজি নন কিছুতেই। তিনি অস্ট্রেলিয়ান কোচের সাফল্যগুলো তুলে ধরলেন এভাবে, "ডেভ হোয়াটমোর একটা জায়গায় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে রেখে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে সিডন্সের সময়ে সবগুলো টেস্ট দলকে ওয়ানডেতে হারানোর চক্র পূরণ করেছে বাংলাদেশ। আরেকটু ভালো জায়গায় তিনি রেখে যাচ্ছেন দলটাকে। তাঁর সময়ে বাংলাদেশ 'এন্টারটেইনিং' দলও হয়ে উঠেছে।
আমাদের ব্যাটসম্যানরা এখন শর্ট বলে কাউন্টার অ্যাটাক করাও শিখেছে। '' সেই সঙ্গে ব্যর্থতা নির্দেশক কিছু জায়গার কথাও বলেছেন গাজী আশরাফ, 'আমাদের ব্যাটসম্যানদের কিছু কিছু টেকনিক এখনো ভালো হয়নি। বিশেষ করে আউটগুলো দেখলে খুবই বিরক্ত হই। একই ভুল ওরা বারবার করছে। অন্যান্য দলের ব্যাটসম্যানদের ভালো বলেই আউট হওয়ার হার বেশি।
কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসার প্রবণতা এখনো আছে। তা ছাড়া দলে একাধিক ক্রিকেটার আছেন, যাঁদের অনেক আগেই রিপ্লেস করা যেত। যাঁরা পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েও নিজেদের স্বনামে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রেও সিডন্সের ভূমিকা রাখার ছিল। ' এখন বিদায়বেলায় তো সেসব অপূর্ণতা ঘুচিয়ে দিয়ে যেতে পারবেন না সিডন্স।
তবে আরেকটা জিনিস করে যেতে পারেন, যেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য বেশ সহায়ক হবে বলেই মনে করছেন গাজী আশরাফ, 'উনি বেশ লম্বা সময় ধরে একঝাঁক ক্রিকেটারকে নিয়ে কাজ করেছেন। আশা করব, তাঁদের বিষয়ে সিডন্স তথ্যপূর্ণ দস্তাবেজ রেখে যাবেন, যা পরবর্তী কোচের কর্মপ্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল করবে। ' শুরু২০০৭ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর নিউজিল্যান্ডে ছিল জেমি সিডন্সের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। সেখানে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফেরে বাংলাদেশ। ডানেডিনে প্রথম টেস্টে হার ৯ উইকেটে।
আর অকল্যান্ডে প্রথম ওয়ানডেতে হারটা ৬ উইকেটেরশেষঅস্ট্রেলিয়ান এই কোচের অধীনে বাংলাদেশ শেষ টেস্ট সিরিজ খেলে গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আর সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দিন কয়েক আগে। শুরুর মতো শেষটাও দুটি সিরিজ হার দিয়ে। তাঁর অধীনে বাংলাদেশ ১৯টি টেস্ট খেলেছে এই সাড়ে তিন বছরে। সেখানে জয় দুটিতে।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি তাদের নিয়মিত দলটি খেলাত তাহলে হয়তো সেই দুটি টেস্টও জেতা হতো না। আর তাঁর সময়ে খেলা ৮৪টি ওয়ানডের মধ্যে বাংলাদেশ জেতে ৩১টিতে। পারিবারিক কারণে দেশে ফিরে যাওয়ায় তিনটি ম্যাচে তিনি কোচের দায়িত্ব পালন করেননি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।