আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়ের শর্ত পূরণ করে ক্লাসে ফাস্ট হলেও স্বপ্ন পূরণ হয়নি, শেষে আত্মহত্যা!

জীবনও যখনও শুকায়ে যায় করুণা ধারায় এসো..

‘আমার আর বন্ধুরা যহন সাইকেলে চড়ে স্কুলে যায়। তহোন একা পায়ে হাটে স্কুলে যাতি আমার খুব খারাপ লাগে। এ জন্যি মা’রে মেলাদিন ধরে এট্টা সাইকেল কিনে দিতি কচ্ছিলাম। কিন্তু মা খালি সুমায় নিচ্ছিলো। গতবার কইছিলো-কিলাসে ফাস্ট হলি কিনে দিবি।

কত কষ্ট হরে ফাস্ট হলাম। তাও কিনে দিলোনা। এ জন্যিই মরে যাতি ইচ্ছে হলো। মনে হলো মরে গেলি সাইকেলের জন্যিতো আর মারে কওয়া লাগবিনে নে। কিন্তু এহোন বুঝতিছি কাজডা ঠিক হয়নি।

টাহা না থাকায় মা সাইকেল কিনতি পারতিছে না। আমি আর মা’র কাছে সাইকেল চাবো না। এহোনতে আরো ভাল ওরে লেহাপড়া করবো। যাতে মার আর কষ্ট না থাহে। ’ মাগুরা সদর হাসপাতালের তৃতীয় তলার বারান্দায় শুয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার কারণ হিসেবে আঞ্চলিক ভাষায় অবলিলায় এই কথাগুলোই বলছিল সদর উপজেলার সত্যপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র শাকিল।

বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দুরত্বের স্কুলে যাবার সুবিধার্থে বেশ কিছুদিন ধরে সে বাড়িতে একটি সাইকেলের আবদার করে আসছিল। কিন্তু দারিদ্রের কারণে নানা বাড়িতে আশ্রিত তার মায়ের পক্ষে সেটি সম্ভব হচ্ছিল না। উপায়ন্ত না দেখে গত বছর সাইকেল কিনে দেবার জন্য পঞ্চম শ্রেণীতে প্রথম হবার শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন মা আবিদা। নিয়মিত অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে শাকিল সে শর্ত পর্যন্ত পূরণ করে দিয়েছে। কিন্তু তার সাইকেলের স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

যা তার মধ্যে চরম আত্ম অভিমানের জন্ম দেয়। এরই এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে সোমবার মা আবিদা সুলতানার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হলে সে ঘরে থাকা কিটনাশক পান করে। অসুস্থ্য অবস্থায় তাকে ওই সময় মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মা আবিদা সুলতানা এ বিষয়ে জানান, শাকিলের বাবা রেজাউল ইসলাম মালয়েশিয়াতে থাকেন। তিনি তার প্রথম স্ত্রী।

পরে তার স্বামী আরো ৩টি বিয়ে করেছেন। যার মধ্যে এক স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। অন্যজন তালাক দিয়ে চলে গেছেন। বর্তমানে দুই স্ত্রীর মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রী রাবেয়া খাতুন শাকিলের দাদা বাড়ি শালিখার হাটবাড়িয়ায় থাকেন। সতিনের সংসারে টিকতে না পেরে আবিদা অনেক আগেই ভায়ের সংসারে আশ্রয় নিয়েছে।

অনেক কষ্টে কোন রকম শাকিল ও তার ছোট ভাই ইমনকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। শাকিলের বাবা তাদের তেমন একটা খোজ খবর রাখেন না। মাঝে মাঝে ফোনে শাকিলের সাথে কথা বলেন। শাকিল তার কাছেও সাইকেলের আবদার করেছে। কিন্তু তিনি তা না দিয়ে কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন।

হয়তো এসব কারণেই শাকিলের মনে সাইকেল নিয়ে বড় ধরণের কষ্ট ছিল। যার ফলে সোমবার একটু কথা কাটাকাটিতেই সে বিষ খেয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছে বর্তমানে সে অনেকটাই সুস্থ্য। তিনি ছেলেকে অনেক বুঝিয়েছেন। ভবিষ্যতে সে এ ধরণের কাজ আর করবেনা বলে আমাকে কথা দিয়েছে।

কথা প্রসঙ্গে শাকিল আরো বলে-‘মা সাইকেল দিতি চায়ে বারেবারে একথা সেকথা দিয়ে বুঝচ্ছিলো। যে জন্যি আমার খুব রাগ হইছিলো। এক সুমায় মনে হলো মরে যাই। তালিতো আর সাইকেলের কষ্ট থাকপেন না। এজন্যিই বিষ খাইছি।

কিন্তু এহোন বুঝতিছি কাজডা ঠিক হয়নি। টাহা না থাকায় মা সাইকেল কিনতি পারতিছে না। আমি আর সাইকেল চাবো না। এহোনতে আরো ভাল ওরে লেহাপড়া করবো। যাতে মার আর কষ্ট না থাহে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.