আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ শতাব্দীর প্রেমিকারা



বৃষ্টি ভেজা একটি বিকাল। টুপটুপ্ করে পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা । জানালার পাশে বসে আছে মিমি। মনটা খারাপ হয়ে আছে। অনার্স ফাস্ট ইয়ারে দুই বিষয়ে ফেল।

পড়াশোনায় মন নেই মিমির। কিন্তু অনার্সটাতো পাশ করতেই হবে। আদিত্যর কথা মনে পড়ছে । ছেলেটা সত্যিই অদ্ভুত । এতকিছু একসাথে সামলায় কিভাবে? টিউশনি, ক্লাশ, আবৃত্তি, গান, বন্ধুত্ব কোথায় নেই ছেলেটা? এত কিছুর পরও ফাস্ট হয়ে গেল সেই আদিত্য।

এই ছেলেটা পুরো ক্লাশ মাতিয়ে রাখে সব সময়। মিমি ভাবে নাহ্ ওর কাছ থেকে দূরে থেকে লাভ হবে না। মনের ভেতর জিদ চেপে যায়। ওকে সবার কাছ থেকে আলাদা করতে হবে। এর পর থেকে মিমি আদিত্যর পেছনে লাগে।

আস্তে আস্তে কাছে আসে ওরা দুজন। আদিত্য প্রথমে এড়িয়ে চললেও শেষ পর্যন্ত নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি নিজেকে। তাছাড়া মনের কোণে মিমির ছবিটাই তো লালন করে এসেছে এতদিন । কিন্তু ভয়ে বলতে পারেনি কথাটা। সেদিন আদিত্যর সাথে দেখা হতেই মিমি বলল - কিরে দোস্ত, কেমন আছিস? অবাক হয়ে তাকায় আদিত্য, উত্তর দেয়ার আগেই মিমি বলতে থাকে- চল, হাইড পার্কে বসি।

আচছা তুই আমাার সাথে কথা বলিস না কেন? আদিত্য মিমির সাথে হাটতে থাকে। নিশ্চুপ থাকা আদিত্যকে ফের প্রশ্ন করে- আচ্ছা তুই কি আমাকে বন্ধু ভাবতে পারিস না? এক চিলতে হাসি ফুটে আদিত্যর ঠোঁটে। না - না, ব্যাপারটা এরখম না মিমি। তাহলে কি রখম? আদিত্য নিশ্চুপ, মিমি হাসে, বাঁকা হাসি। মনে মনে ভাবে- বাছাধনকে তাহলে পাওয়া গেল।

এভাবেই শুরু মিমি আর আদিত্যর পথ চলা। কেমন জানি বদলে যায় আদিত্যর জীবন। আস্তে আস্তে তার গন্ডি সীমিত হয়ে আসে। বন্ধুত্বের সীমাহীন গন্ডি ছেড়ে আদিত্যর স্বপ্নে বিচরণ করছে শুধুই মিমি। তার এই আচরণ বন্ধুরা মেনে নিতে পারে না।

তাই চিরাচরিত বন্ধুত্বের বাধঁনগুলো একে একে খসে যায় আদিত্যর । তার ভাবনা গুলো শুধু মিমি কেন্দ্রিক । মিমিও বুঝতে পারে আদিত্যর এই বদলে যাওয়া। মিমি এই সুযোগগুলো কাজে লাগায় । মিমির নোটপত্র জোগাড়, প্রাকটিক্যাল খাতা আঁকা সবই এখন আদিত্যর কাজ।

একসময় মিমি পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । একটু একটু ভাললাগা বন্ধুত্বের বাধঁন ছিড়ে দুজন মিশে যায় প্রেমের বন্ধনে। আদিত্যর জন্মদিনে মিমির উপহার ছিল সুদীর্ঘ চুম্বন। আদিত্য প্রথম শিহরিত হয় অন্যরখম ভাললাগা আর পাওযার আনন্দে। একটু বেঁটে আর কালো হওয়ায় সবসময় ভয়ে থাকত আদিত্য।

মিমিকে জিঞেগস করে আদিত্য- তুই কি সত্যিই ভালবাসিস আমাকে? মিমির নিরুত্তর হাসিতে আবনা গুলো পাকা হযে যায়। একসময়ের উড়নচন্ডী খামখেয়ালী আদিত্য বুঝতে পারে জীবনের চরম সত্যগুলো। মিমি কথা দিয়েছে- ভালবাসি শুধু তোমাকে, আকাশের সিমান্তের চেয়েও বেশি, সাগরের গভীরতার চেয়েও বেশি। টিউশনি করে টাকা জমাতে থাকে আদিত্য। মিমির শখ পূরণ করাই এখন আদিত্যর একমাত্র কাজ।

ওকে হারালে তার জীবনটা বৃথা হয়ে যাবে। আদিত্য আজকাল নামাজ পড়া শুরু করেছে রাতজেগে প্রার্থনা করে মিমিকে পাবার জন্য। যে কিনা ঈশ্বরে বিশ্বাস করত না সেই ঈশ্বরের কাছেই দিনরাত প্রার্থনা করছে- ঈশ্বর তুমি মিমিকে ভাল রেখ, আমাদের ভাবনা গুলো সত্যি করে দাও। আদিত্যর এই বদলে যাওয়া অন্য সবার মত আমিও মেনে নিতে পারিনি। একদিন মিমির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল আদিত্য।

প্রথম দেখাতেই চমকে গেলাম আমি। মিমি সত্যিই অনেক সুন্দরী। আদিত্যর পাগল হওয়ার পেছনে যুক্তি আছে। দেখতে দেখতে কেটে গেল এই শতাব্দীর পাঁচটি বছর। অদিত্য অনার্স পাশ করে ফেলেছে, সাথে মিমিও।

আদিত্য ভাবে ওদের স্বপ্নগুলো পাখা মেলবে এবার। চাকরীর খোঁজে হন্য হয়ে বেড়ায় সে। বেকার ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবে কেন মিমির বাবা-মা। এদিকে মিমি আস্তে আস্তে দূরে সরে যায় আদিত্যর কাছ থেকে। আদিত্য নিজের অপরাধ খোঁজে।

মিমিকে বোঝাতে চায়। মিমি বলে বাসায় সমস্যা করছে। দিনের পর দিন দেখা হয়না ওদের। মিমিকে একদিন না দেখলে যেখানে আদিত্যর পৃথিবীটাই শুন্য হয়ে যেত, সেই মিমি এখন স্মৃতি হয়ে যাচেছ তার কাছে। দীর্ঘ পাঁচ মাস দেখা নাই।

আদিত্য শেষ পর্যন্ত ওদের বাসায় যায় যদিও মিমি আগেই নিষেধ করেছিল। ওদের বাসা থেকে অপমানিত হয়ে ফেরে সে। পৃথিবীটা ফাঁকা হয়ে যায় তার। চিরাচরিত প্রেমিকের মত সেও ডুবে থাকে নেশার ঘোরে। এতটুকু শান্তি নেই, সান্ত্বনা নেই তার জীবনে।

আদিত্যর বন্ধুরা এগিয়ে আসে, ওকে বোঝাতে চায়। একদিন সব বন্ধুরা মিলে গেল মিমির বাসায়। মিমি খুব সহজেই বলে ফেলে- "আমি ওকে বন্ধুর চেযে বেশি কখনো ভাবিনি, সেটা ভাবা সম্ভবও না"। বিস্মিত চোখে মিমিকে দেখে বন্ধুরা। মিমি বলতে থাকে- আর ভালবাসলেও যে বিয়ে করতে হবে এমন কথা আছে নাকি? তোরা ওর হয়ে দালালী করতে এসেছিস? চলে যা তোরা।

ওকে আমার বাসায় কখনো মেনে নিবে না। বন্ধুরা চলে আসে। জীবনের চরম বাস্তবতা বুঝাতে চায় আদিত্যকে । সব শুনে খুন চেপে যায় তার মাথায়। কিন্তু কাকে খুন করবে সে? হ্যা, সে নিজেকেই খুন করবে সে।

একদিন আমাকে বলে- বন্ধু আমাকে ক্ষমা করে দিস, তোদের সাথে এই জীবনে হয়ত আর আড্ডা দেয়া হবে না, গল্পে গল্পে চায়ের পেয়ালা ঠান্ডা হবে না, রাত জেগে জোসনা দেখা হবে। আদিত্য কাঁদতে থাকে অবিরাম, মাঝরাতে আমার ঘুম ভাঙে আদিত্যর কান্নায়, অন্ধকারের বুক চিরে ভেসে আসে চাপা কান্নার গোঙানি। ওর কান্না দেখে আমি হাসি, অট্রহাসি ! সেই হাসিতে চাপা পড়ে য়ায় আমার কান্নার স্রোত। আদিত্য একসময় শুনেছিল মিমির সম্পর্ক ছিল অন্য একজনের সাথে। মিমিই ওকে বলেছিল- সেই সম্পর্ক চুকে গেছে অনেক আগে।

সব জেনেও আদিত্য মেনে নিয়েছিল ভালবাসার টানে । একদিন শুনে সেই ছেলের সাথে মিমির বিয়ে হয় তিন বছর আগে। ওরা গোপনে বিয়ে করে রেখেছিল। চারদিকের পৃথিবী নীল হয়ে আসে তার। মিমি এতদিন প্রতারণা করেছে তার সাথে।

কিন্তু কেন? কি তার অপরাধ? স্বার্থের জন্য মানুষের একি নিষ্টুর অভিনয়। পৃথিবীতে মানুষই মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছে আদিত্য। আজ পূর্নিমা রাত। ভরা জোছনায় কুৎসিত এই পৃথিবী ছেড়ে যাবে সে।

হারিয়ে যাবে এই নষ্ট পুথিবীর নষ্টাল হাওয়া গর্ভে চিরদিনের মত। জোগাড় করে এক কৌটা বিষ। আমাকে বলেছিল- চললাম রে বন্ধু, ভাল থাকিস। বললাম - কোথায় যাবি? আদিত্য হাসে। সে হাসিতে ছড়িয়ে পড়ে চেপে রাখা নীল কষ্টের স্রোত।

বুঝতে পারি ও কিছু একটা করবে। আমি বলি- যেতে পারিস বন্ধু। কিন্তু কার জন্য এই উৎসর্গ। একজন প্রতারকের জন্য? যাওয়ার আগে একটু স্বরণ করিস তোর বাবা-মাকে, ছোট বোনকে যে তোকে আদর করে ডাকত ’আদি’ নামে । পারলে ভাবিস আমাকে, তোর অন্য বন্ধুদের কথা যাদের অকৃত্রিম ভালবাসায় সিক্ত হয়েছিস আজীবন।

মরার আগে শোধ দিয়ে যাস আমাদের নির্ভেজাল ভালবাসার ঋণ। আদিত্য পারেনি চলে যেতে। ভেসে যেতে পারেনি এই নষ্ট পৃথিবীর নষ্টাল হাওয়ার গর্ভে। আমাদের ভালবাসা ওকে ফিরিয়ে এনেছে, ফিরিয়ে এনেছে ছোট বোনের মিষ্টি কণ্ঠের ডাক। না, আদিত্য মরে নি এখনো, বেচেঁ আছে আমাদের ভালবাসার ঋণ শোধ করতে।

হাইড পার্কের আড্ডাটা আবার জমে ওঠেছে। হাসি-গল্পে জুড়িয়ে যায় চায়ের পেয়েলা, সিগারেটের ধোঁয়া কুন্ডলী পাকায় আকাশে। আদিত্যর ভরাট কণ্ঠে শুনি- ”তখন এখানে কিছু প্রজাপতি উড়ছিল মেঘ ভাঙা ভাঙা রোদ ঘরে পড়ছিল.. . . .

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.