সবাইকে শুভেচ্ছা। গাড়িতে যারা চড়ে বেড়ায়, অথবা গাড়িতে চড়ে যাদের অভ্যাস হয়ে গেছে তারা আর কখনো রিক্সা-সিএনজিতে ওঠে কিনা তা বলা মুস্কিল। তবে সেই দিন মনে হয় আবার ফিরে আসছে যখন গাড়ি ফেলে আবার রিক্সা-সিএনজিতেই চড়তে হবে সবাইকে, এই ঢাকা শহরে। অদ্ভুত লাগে যখন দেখি দশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়িতে বসে থাকতে হয় জ্যাম-জটের কারনে! আমি গাড়িতে চলাফেরা করলেও এটা ভাবতে কষ্ট হয় এবং মেনে নিতে পারি না যে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য গাড়িতে বসে আছি কিন্তু গাড়ি চলছে না। গাড়ির নিয়ন্ত্রন যদিও আমার হাতে।
ঢাকা শহরে এখন এক নাগাড়ে এক মিনিটের বেশি গাড়ি চলাটা মনে হয় পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। মোড়ে মোড়ে জ্যাম। আরও দু'চার বছর পর কি অবস্থা হবে এই দুঃশ্চিন্তায় পাগল অবস্থা আমার!
গত দু'চার দিনের ঘটনায় আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি অফিস থেকে ফেরার পথে গাড়ি নেবো না। রিক্সা-বাস এবং দু'পা মিলিয়ে মিশিয়ে ভেঙ্গে-চুড়ে যেভাবে যাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল কোন্ দিক দিয়ে কিভাবে যাবো! আমিতো রাস্তা-ঘাট চিনি না ঠিকমতো।
১৬ বছর দেশের বাইরে কাটিয়েছি, তারও আগে যখন দেশে ছিলাম প্রজেক্ট নিয়ে ঢাকার বাইরেই বেশীর ভাগ থাকতে হয়েছে।
বনানীর অফিসে আসি দু'টো রুট ধরে, তেজগাঁ ডাইভারশান রোড (বর্তমানে তাজউদ্দিন সরণি) ধরে মহাখালি, তারপর এয়ারপোর্ট রোড থেকে ডানে বানানী। আবার কখনো তাজউদ্দিন সরণি থেকে ডানে মোড় নিয়ে নিকেতনের পাশ দিয়ে গুলশান-২ ধরে বনানী। আরেক সমস্যা, রিক্সা চলাচলের অনুমতি নেই বড় রাস্তাগুলোয়। এই জন্যই ভেঙ্গেচুড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা।
অফিসে দু'একজনের কাছ থেকে ধারনা নিলাম। একদিন চালককে নিষেধ করলাম বিকেলে নিতে আসতে। চালক একটু আশ্চর্য হয়ে বললো,"স্যার, যাইবেন ক্যামনে"! "সে তোমাকে ভাবতে হবে না" বলে বিদায় করলাম।
বিকেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে রিক্সা ঠিক করলাম। প্রথমটাকে বললাম, ভাই আমি তেজগাঁ সাতরাস্তা মোড়ে যাবো।
নিকেতনের এমন জায়গায় নামিয়ে দাও যেন আরেকটা রিক্সা ধরে চলে যেতে পারি। কারন আমি জানি বড় রাস্তা ক্রশ করতে হবে বলে একই রিক্সা সোজা সাত রাস্তায় যেতে পারবে না। যদিও পারে তাহলে দূরত্বের কারনে কোন রিক্সাওয়ালা সোজা সাতরাস্তার মোড়ে যাবে না। রিক্সাওয়ালা গুলশান-১ এ নামিয়ে দেওয়ার জন্য যা ভাড়া চাইলো তা মনে হলো না জেনেই চেয়েছে। পাশে দাড়াঁনো আরেক রিক্সাওয়ালা আমার ভাব বুঝে বললো, স্যার, আমি সোজা সাতরাস্তার মোড়েই নামিয়ে দেবো।
আমার খটকা লাগলো। বললাম, বড় রাস্তা পাড় হইবা ক্যামনে? সে হেসে বললো, স্যার, রাস্তা আছে, তয় একশ টাকা লমু। আশি টাকায় রফা করে রিক্সায় উঠে পড়লাম। ভুল করলাম কি না জানিনা, কারন লম্বা জার্নি হবে।
রিক্সা যাচ্ছে ন্যাম ফ্ল্যাটগুলোর পাশ দিয়ে সরু রাস্তা ধরে।
আগে জানতাম না, গায়ে লেখা দেখে জানলাম এগুলো ন্যাম ফ্ল্যাট। বছর দশেক আগে ঢাকায় ন্যাম (NAM) সন্মেলন অনুষ্ঠানের কারনে বিদেশী অতিথিদের থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সারি সারি একই উচ্চতা্য় দলানগুলো দাঁড়িয়ে আছে। মহাখালীর রাস্তাটার মাথায় যেয়ে বাঁ দিকে রিক্সা মোড় নিয়ে বড় রাস্তায় উঠলো। আমার জানা ছিল না যে মহাখালীর এই রাস্তায় রিক্সা চলার অনুমতি আছে।
রিক্সা বেশ ছুটে চললো। এই রাস্তায় রিক্সার সমারোহও চোখে পড়ছে। আমি খোলা হাওয়ায় চারদিক দেখছি আর কিসের যেন গন্ধ পাচ্ছি। এই গন্ধ আর কিছু নয়, স্রেফ স্মৃতির ভিতর ফেলে আসা দিনগুলোর পুরনো গন্ধ। মহাখালীর পানির ট্যাংকটার কাছে আসতেই মনে পড়ে গেল।
হ্যাঁ, এইতো সেই পানির টাংক, যার পেছনেই একটা চাপা রাস্তা, তারও ভিতরে আরেকটি গলির ভিতরে ছিল সেই বাড়িটা। আমার বড় ভাই থাকতেন এক সময়। সেও আজ থেকে ৩০ বছর আগে। খুব সাধারন মানের ছোট বাড়ি ছিল সেটা। দুই কামরার ভাড়া বাড়ি।
তিনি তখন অল্প বেতনের চাকরি করেন। স্ত্রী আর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ছোট্ট সংসার। আমার মেজো ভাইও থাকতেন একটা ঘরে। সকাল বিকাল অফিস করেন। আমি স্নাতক পাশ করা মফস্বলের বেকার ছেলে চাকরির খোঁজে ঢাকায় এলে বড় ভাইর এখানে উঠতাম।
আসা-যাওয়ার মাঝে একদিন ভাল একটা চাকরি সৌভাগ্যক্রমে মিলে যাবার পরও কিছুদিন এই বাড়িতে ছিলাম। মেজো ভাইর ঘরে একই বিছানায় ডাবলিং করে ঘুমাতাম। ঐ তো ওদিকেই টি,বি, গেইটে এসে নামতাম বাস থেকে। পেছনের চাপা রাস্তাটার উপর কয়েকটি রেস্তরাঁ ছিল, ঢাকায় এলে মেজো ভাইর সঙ্গে সন্ধ্যায় রেস্তোরাঁয় বসে চা-সিঙ্গারা খেতাম। কখনো আলুর চপ্।
আমি এই সময়টা বেশ উপভোগ করতাম। একজন বেকার যুবকের জন্য এটা ছিল একটা বাড়তি আকর্ষন। আজ রিক্সার ব্যাপারটা না ঘটলে এইসব জায়গাগুলো হয়তো আমার দেখাই হতো না। এদিকে আসাই হয় না। যদিও বদলে গেছে অনেক কিছুই।
আগে ছিল অনেকটা ফাঁকা, এখন দালানে দালানে ভরে গেছে। দু'একটা পুরনো চিহ্ন না থাকলে বুঝাই যেতো না।
রিক্সা কিছুদুর চলার পর ডানে মোড় নিয়ে বড় রাস্তা ছেড়ে অলি-গলির পথ ধরলো। এবড়োথেবড়ো, পানি জমে যাওয়া রাস্তাটায় উঠলো। তবে এলাকাটা ভদ্রোচিত মনে হলো।
দোকানপাট, বাড়িঘর সবই আছে। ব্যস্ত এলাকা। কোন্ জায়গা এটা! টিএন্ডটি স্কুলের সাইনবোর্ড নজরে পড়লো। গার্মেন্টসের মেয়েরা সারি সারি বাড়ি ফিরছে কাজ সেরে।
লোকালয় ছেড়ে রিক্সাওয়ালা এবার এ কোন্ রাস্তা ধরলো! একেবারেই অজানা, অচেনা! আমার হারিয়ে যাওয়ার পালা।
যেন অন্ধের হারিয়ে যাওয়া! নতুন গজিয়ে ওঠা বস্তির পাশ দিয়ে উঁচু নিচু , ভাঙ্গা-চোরা রাস্তা ধরে চলছে। বোঝাই যাচ্ছে এক সময় এই জায়গাটা বিল কিংবা জলাশয় ছিল, তার উপর দিয়ে নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। রাস্তাটাও মাটি ভরাট করে তৈরি, এবড়োথেবড়ো। স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে এই রাস্তাতেও বেশ লোকজন চলাচল করছে, তবে কোন চার চাকার গাড়ি চলছে না। রিক্সা-মোটর বাইক এই সব চলছে।
এ ছাড়া উপায়ও নেই। রাস্তার অবস্থা করুন। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে রিক্সাওয়ালা কে জানে! কিছু বলতেও পারছি না, যদি মনে করে বসে যে আমি ঘাবড়ে গেছি! বলা তো যায় না কার মনে কি আছে? এরপর আরও কোন্ শুনশান এলাকায় যেয়ে পড়বো কে জানে? চারিদিকের অবস্থা দেখে নিজেকে অসহায়ের মত লাগছে। বেলাটা এখনও পড়ে যায় নি বলে তলানীতে একটু সাহস ছিল। ঝাঁকুনি-চুবানি খেয়ে আরো কিছুক্ষন চলার পর রাস্তার পথিকদের চেহারা-সুরত দেখে যা ভাবছিলাম তাই হলো।
অবশেষে রিক্সা লোকালয়ে এসে উঠলো। হাফ্ ছেড়ে বাঁচলাম।
এবার রিক্সা চললো নির্ঝঞ্ঝাটে, সরল রাস্তায়। একটা বনেদি আবাসিক এলাকার ভিতর দিয়ে রিক্সা চলেছে। আমার ভাল লাগছে।
একটু আগেই যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম তা কেটে গেছে। কিন্তু যে এলাকার পেট চিরে চলেছি তা দেখে কেমন খট্কা লাগলো। জায়গাটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু বুঝতে পারছি না। রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই জায়গাটার নাম কি? সে জবাব দিল, স্যার, নিকেতন। আমি তাজ্জব হয়ে গেলেম! ঘুরে-ফিরে, কোন্ দিক দিয়ে কিভাবে নিকেতনে ঢুকে গেল বুঝতেই পারিনি।
এই এলাকায় আমার এক শ্যালিকা থাকে, এসেছি দু'তিন বার। এবার অন্ততঃ নিশ্চিত হলাম যে আমার গন্তব্যে পৌছুতে পারবো, কারন এর পরই তেজগাঁও এলাকা। কিছুক্ষন চলার পরই তাজউদ্দিন থেকে গুলশানে ঢোকার বড় রাস্তাটা আড়াআড়ি পার হয়ে তেজগাঁওয়ের ভিতরে ঢুকে পড়লাম।
এখন এই তেজগাঁ এলাকাটা দেখে মনে হয় যেন পরিত্যক্ত কোন নগরী। এক সময়ের রমরমা শিল্প এলাকা এখন যেন জবুথবু হয়ে পড়ে আছে।
বুঝতে কষ্ট হয়, এই ঢাকা শহরে কতশত শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলো, সবই নতুন নতুন জায়গায়। এমনকি ধানি জমির উপর বলাৎকার করে। অথচ এই তেজগাঁ এলাকায় এত জায়গা পড়ে আছে, কিন্তু কোন নতুন কারখানাই এখানে গড়ে উঠলো না! সেই পুরনো নাবিস্কো, হক্, তিব্বত, কোহিনুর! এরাই চলছে এখনো! বড় রাস্তা তাজউদ্দিন দিয়ে রিক্সা চলাচল নিষেধ বিধায় রিক্সা চলছে শিল্প এলাকার ভিতর দিয়ে, অলি-গলির মত রাস্তা ধরে। ছোট রাস্তা হলেও একেবারে অচঞ্চল নয়। দু'চারটে গাড়িও চলছে, পথচারি আছে, রিক্সার টুংটাং আছে।
রাস্তার শাখা-প্রশাখা আছে এদিক সেদিক। বেশ ব্যস্ত এলাকাই বলতে হয়। ছোটখাটো দোকান-পাট আছে অনেক, দেখলেই বোঝা যায় নিম্নবিত্তদের জন্য। যেতে যেতেই দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছিল। একসময় দেখলাম দু'পাশে সারি সারি বস্তিঘর।
আমি কি অনুপ্রবেশ করলাম কোন বসতির অভ্যন্তরিন সাম্রাজ্যে! নয়তো কি? দু'দিকের বস্তিঘরের মাঝে যে রাস্তা চলে গেছে সে কি পথচারীর রাস্তা নাকি এই সব বস্তিবাড়ীর উঠান! ফরাসি লেখক ডোমিনিক লাপিয়ের যাদের জন্য কোলকাতা শহরের নাম দিয়েছিলেন-আনন্দ নগর। লিখেছিলেন বই 'City of Joy'। পরে চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছিল। সুখ, শান্তি, আনন্দ এসবের সংজ্ঞা সবার কাছেই একরকম নয়। অভিজাত শ্রেনীর মানুষের কাছে সুখ-শান্তি যেমন করে দেখা দেয়, নিম্নশ্রেনীর বন্ঞ্চিত মানুষের কাছে সেটা অন্য রকম।
আমি দেখলাম আরেকটি 'আনন্দ নগর', এই ঢাকা শহরের। ছোট ছেলেপেলেদের দেখলাম হুটোপুটি করে মেসি-রোনালদোর খেলা খেলছে রাস্তার ধারে, রিক্সার বেল্ বাজিয়ে যাদের সরাতে হচ্ছে। এক তরুন ছেলেকে দেখলাম হাট্ছে আর কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে গান শুনছে। চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। রাস্তার এধারে কিছু বস্তি দেখলাম ছিম্ছাম্, নীল রঙের পলিথিনে ঢাকা ছাদ-সদৃশ্য আচ্ছাদন, আট্সাট্।
বেশ পরিচ্ছন্ন আশপাশ। অন্যদিকে ওধারে বস্তিগুলো ভাঙ্গাচোরা, পড়ো পড়ো। এদেরও কি শ্রেনীবিভাগ আছে? কে কত বন্ঞ্চিত অথবা কতটুকু অভিজাত! আসলে যা কিছুই বলা হোক না কেন শ্রেনীভেদ কিন্তু সব শ্রেনীতেই দৃশ্যমান থাকবে। কিছু কিছু পড়শির অবস্থা দেখলাম তাদের সাংসারিক জিনিসপত্র অন্দর গলিয়ে বাইরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
কিছুদিন আগে আমার ভাতিজা গিয়েছিল কোলকাতা বেড়াতে সড়ক পথে।
রাত ১১টায় গিয়েছিলাম বাসে তুলে দিতে আউটার সারকুলার রোডে, রাজারবাগের উল্টো দিকে। যেখান থেকে কোলকাতার বাস ছাড়ে। বিশ্বাস হতে কষ্ট হচ্ছিল যে শত শত নারী-পুরুষ শুয়ে আছে মার্কেটের বারান্দাগুলোতে, নয়তো ফুটপাতে। এই এদের ঘর, এই এদের বাড়ি, রাতের বেলায়। দিনে ছড়াছড়ি! কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়েছে, কেউ আড্ডা দিচ্ছে তখনো।
এদের বলে ভাসমান নাগরিক! আমি সুঠাম কিছু তরুনকেও দেখেছি ওখানে।
এই যে এইসব বস্তিবাসি, ভাসমান নাগরিক--এরা কি উদ্বাস্তু! নাকি শরনার্থী। এরা কি '৪৭-এর পরিনাম, নাকি '৭১-এর বাস্তুহারা! একটা কথা আছে 'নিজ দেশে পরবাসি। ' এরা কি তবে নিজ দেশে উদ্বাস্তু? এদের পিছনের দিনগুলো কি বলে, এদের কি অতীত আছে? এদের কি কখনই ঘরবাড়ি ছিল না? বাপ-দাদাদের? এরা কি তবে এই দেশকে দেশ বলতে পারে? যদি পারে, তবে এদের নিজেদের জায়গা নেই কেন? এর গবেষণা হওয়া খুব জরুরী। নইলে জানা যাবে না কখনই প্রতিদিন কত মানুষ কিভাবে উদ্বাস্তু হয়।
শুধুই কি নদীর ভাঙন, ঝড়-জলোচ্ছাস এদের এই পরিনামের জন্য দায়ী, নাকি সামন্তশ্রেনীর যথেচ্ছাচার, মাস্তানী-গুন্ডামী, সুদখোর তথা দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারে নিজ দেশে আজ এরা বাস্তুহারা?
চলতে চলতে এরই মধ্যে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এলো। আলো পড়ে যাচ্ছে। মাগরিবের আজান হলো আশপাশের মসজিদে। একটু চলার পর বাঁ দিকের বাঁকানো রাস্তায় ঢুকেই রিক্সা থেমে গেল। সামনেই মুসল্লিরা রাস্তার উপর জামাত করে নামাজে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
মসজিদ উপচে জামাত রাস্তায় এসে ঠেকেছে। রিক্সাওয়ালা ক্যাঁচ্ করে ব্রেক কষে থামিয়ে বললো 'স্যার, একটুর জন্য আইটক্যা গেলাম। ' আমি বললাম, 'কি আর করা'! বসে আছি, একটু পরই রিক্সাওয়ালা বললো 'স্যার, যদি কিছু মনে না করেন। মুসল্লিদের পিছন দিক দিয়া একটু কষ্ট কইরা যদি ঐ পারে যান তাইলেই রিক্সা পাইয়া যাইবেন, মাত্র দশ টাকা নিবো। আইসাই পড়ছিলাম প্রায়।
' আরো বললো, 'আমারে ৭০ টাকা দিয়া যান, তাইলে সমান সমান হয়া যাইবো। ' রিক্সওয়ালার কথা শুনে ভাল লাগলো। ওকে ৮০ টাকা দিয়েই আমি ফাঁক-ফোঁকড় গলিয়ে ওধারে গিয়ে রাস্তায় উঠেই রিক্সা পেয়ে গেলাম এবং ১০ টাকাই। টিম টিম আলোর রাস্তায় রিক্সা চলছে। আলো যা আছে তা কেবল দোকানগুলোকেই আলোকিত করতে পারছে।
আশ-পাশ এবং রাস্তা প্রায়ান্ধকার। আঁধার সব সময় রহস্যময় অর্থ বহন করে। আমি ফের কিছুটা উদ্বিগ্ন হলাম। দুরস্ত্ অবস্থায় রিক্সায় চেপে চলেছি, কেউ সামনে এসে টাকা-পয়সা চেয়ে বসলে কিছু করার নেই। কিন্তু কিছুই হলো না।
এসব ভাবতে ভাবতেই রিক্সা এসে ভিড়লো সাত রাস্তার মোড়ে। আমার উদ্বেগের শেষ এবং যাত্রার সমাপ্তি হলো। প্রায় ৪০ মিনিট লাগলো। এখানে সেই চিরাচরিত গাড়ি-ঘোড়ার ঠেলাঠেলি, মানুষের ছোটাছুটি। এখান থেকে চাইলেও রিক্সায় চেপে মগবাজার বা ইস্কাটন যেতে পারবো না।
রিক্সার অনুমতি নেই।
পায়ে চলা মানুষ সব সময়ই মুক্ত, স্বাধীন। সব থেমে যাবে, কিন্তু ঐ লাল বাতির চোখ রাঙ্গানি কিংবা ট্রাফিক পুলিশের তর্জনী আমার পা দু'টোকে থামাতে পারবে না। আমি জনারন্যে নেমে পড়লাম, পা বাড়ালাম ঘরের পানে। হোম্, সুইট হোম্।
(মার্চের কোনও একদিন, ২০১২) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।