সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,
নারকীয় নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে ফের নির্যাতনের শিকার হলেন ঈমান আল ওবেইদি নামের এক নারী। বয়স তার ৩০-এর কোঠায়। লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির সেনাদের বন্দিদশা থেকে কোনক্রমে পালিয়ে গিয়েছিলেন ত্রিপোলির রিক্সোস হোটেলে। ওই হোটেলে অবস্থান করেন দেশী-বিদেশী সাংবাদিকরা। রুদ্ধশ্বাসে সেখানে ঢুকেই তিনি সাংবাদিকদের জানালেন, গাদ্দাফির সেনারা তাকে দুই দিন আটকে রেখেছিল।
বন্দিদশায় গাদ্দাফির ১৫ সেনা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। এ কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার দুই চোয়ালে প্রহারের সুস্পষ্ট চিহ্ন। লাল হয়ে আছে আঁচড়ের দাগ। তিনি দেখালেন তার দুই উরুতে একই রকম দাগ।
তিনি বললেন এর চেয়েও নিকৃষ্ট নির্যাতন করেছে গাদ্দাফির সেনারা, যা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা যায় না। তিনি যখন এ কথা বলছিলেন তখন লিবিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা তাকে জাপটে ধরেন। তাকে আরেক দফা অপমান করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিদেশী এক সাংবাদিক ওই কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিতে গিয়ে নিজে প্রহৃত হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে সেসব দৃশ্য সরাসরি সমপ্রচারের কারণে বিভিন্ন দেশের মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পেয়েছেন।
ঘটনার সময় সকালের নাস্তা খাচ্ছিলেন হোটেলে অবস্থানরত সাংবাদিকরা। অকস্মাৎ হন্তদন্ত হয়ে সেখানে হাজির হন বিপর্যস্ত ঈমান আল ওবেইদি। সাংবাদিকদের তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন তার ওপর চালানো নির্মম নির্যাতনের কাহিনী। তিনি বলেন, তাকে একটি চেকপয়েন্ট থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তুলে নিয়ে যায় গাদ্দাফিপন্থি সেনারা। তার হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়।
তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি বন্দিশালায়। সেখানে একটি নির্জন কক্ষে তাকে দুই দিন আটকে রেখে তার ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। ১৫ সেনা তার শরীরটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। এ সময় তিনি ওই হোটেলের সাংবাদিক ও লোকজনের কাছে নিরাপত্তা চান। বলেন- আমাকে ওরা ফের নিয়ে গেলে আবার ওই জেলে ঢোকাবে।
একই কায়দায় নির্যাতন করবে। তার এ বক্তব্যের জবাবে সরকারি কোন বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে তিনি তার মুখে, উরুতে আঁচড়ের যে দগদগে দাগ দেখিয়েছেন, তাতে অনেকটাই আন্দাজ করে নেয়া যায় কি নির্যাতনের শিকার তিনি হয়েছেন। তিনি হোটেলে ওই বর্ণনা দেয়ার সময় সেখানে যে দৃশ্যের অবতারণা হয় তা আরেক নির্যাতনের দৃশ্য। তিনি যখন ওই হোটেলে গিয়ে অবস্থান নেন, সেখানে তাকে ঘিরে ধরে গাদ্দাফিপন্থি লোকজন ও হোটেলের স্টাফরা।
তারা তাকে নির্যাতনের কাহিনী সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশে বাধা দিতে থাকে। তাতে থামেননি ঈমান আল ওবেইদি। তিনি যখন একের পর এক বর্ণনা করে যাচ্ছিলেন ঘটনা, তখন লিবিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা তাকে জাপটে ধরে আপত্তিকরভাবে। এক পর্যায়ে তাকে জোর করে ওই হোটেল থেকে গাদ্দাফিপন্থিরা জোর করে বের করে নিয়ে যায়। তারপর তার ভাগ্যে কি ঘটেছে তা আর জানা যায়নি।
মানব জমিন। ২৮৩১১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।