আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপাতত আমি ক্লান্ত, নিজের জন্যই ক্লান্ত

ভালো লাগেনা,ভালো লাগাতাম,লাগাতে লাগাতে এখন সব ভালো লাগাই! মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে গেলে মনে হয় থাকুক আর কটা দিন,পরে ফেলা যাবে। থেকে যায়,অথবা রেখে দেই।

জীবনে যে ক'টা মোড় নেয়,তার মাঝে বন্ধুদের সাথে physical distance হওয়াটা একটা। প্রাইমারি স্কুলের সহপাঠিদের আমার মনে পড়েনা, একাই বসতাম পেছনে। সবাই খেলতে যেতো, আমি বসে থাকতাম, মাঝে মাঝে একটা মেয়ে বসে বসে বাইরের বাকিদের খেলা দেখতো, আমি পেছনে বসে দেখতাম তাকে।

তার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকা,আমার সাথে কেউ কথা বলতোনা, তাই নাহয় আমি বাইরে খেলতে যাইনা,কার সাথেইবা খেলবো! ওর তো বান্ধবী আছে,যাদের সাথে বসে,পাশে জায়গা রাখে,তবে কেন খেলেনা? একটা সময় ওর সাথে পরিচয় হলো,কথা হলো,পাশাপাশি বসতাম, একসময় আরো একটা ছেলের সাথে কথা হলো- এই দুইজন বন্ধু আমার। বাসায় নিজের ভাইবোন ছাড়া কারোর সাথে খেলার অনুমতি ছিলোনা,গেটের বাইরেই যেতে পারতামনা! পাড়ার নিজের বয়েসীদের তো চেনার কোন উপায় নেই। হাইস্কুলে এসে সেই যেই সেই! এক কাজিনের সাথে যেতাম,সে স্যার বের হওয়ার সাথে সাথে বের হতো খেলতে,আমি ক্লাসে বসে থাকতাম। মাঝে মাঝে বাইরে গিয়ে দেখতাম। আমার পুরোন বান্ধবী আরেকটা সেকশানে,আর বন্ধু গেলো ছেলেদের স্কুলে।

একটা দিনের আমার একঘরে স্বভাবের মাঝে এসে একটা মেয়ে জানতে চাইলো,তুমি এখানে একা কেন? আমি স্বভাবমতো উত্তর দেইনি,আবার জানতে চাইলো, তুমি কি সেই? আমি বললাম, হুম। তারপর আবার পাশফিরে অন্যদিকে দেখতে লাগলাম। চলে গেলে আমার শান্তি লাগলো! আরেকদিন আবার এলো কথা বলতে! প্রায়ই অসুস্থ থাকতাম,ও তো জানতোনা,তাই একবার অসু্স্থ হয়ে বেশ ক'দিন স্কুলে যাওয়া হলোনা, ও আমার বাসার খোঁজে ঘুরে ফিরে এলো! চিঠি দিলো আমার সেই কাজিনের কাছে। স্কুলে ফিরলে সে তার এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না,বুঝতেই চাইলাম না সে চিন্তা করেছে! একসময় চিঠি আদান প্রদান, বন্ধুতা! আরো ক'জন হলো, তার সাথেই আমার সখ্যতা বেশি হলো। আর সেই সখ্যতায় একটা বাধা এলো - কলেজে ভর্তি হওয়ার সময়।

দুইজনের দুই শহর,দুই কলেজ। আর সেই বন্ধুতা হলোনা কারোর সাথে। কিভাবে যে কলেজ শেষ হলো,জানিনা। ভর্তি হলাম ভার্সিটি তে। একলা একলা লাগে,ক্লাসের ছেলেমেয়েরা ক্লাস শেষে টং এ আড্ডা দেয়,চা খায়, আমার বাইরে আড্ডা দেওয়ার অভ্যাস নেই, সবার সামনে চা খেতে লজ্জা লাগে।

রুমে আসি, রুমমেট দের সাথেও সেরকম সখ্যতা হয়নি তখনও। একটা একলা লাইফ ছিলো এক বছরের মতোন,তারপর দুইজন ছেলে, একটা মেয়ে- কেমন করে জানি ওদের সাথে মিলে গেলাম, বন্ধুতা। আমার মনে হলোনা আর আমি একলা! ওদের সাথে আমার বিশাল একটা সময় পার করে আসলাম,ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলো,আমার বন্ধুরা চলে যাবে তাদের দেশে, একজন বাকি রইলো,হয়তো এরকম করেই সেও তার লাইফটা গুছিয়ে নিবে,আমার বন্ধুতার এখানেও একটা মোড়- আর একসাথে চা খাওয়া হবেনা, ওরা আমার লজ্জা নিয়ে হাসাহাসি করবেনা, সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আর আরো কতগুলো জিনিস আমার উপর চাপিয়ে দিবেনা, আমাদের মাঝে আর মান অভিমান হবেনা, আমি প্রবলেম এ পরলে একজন বলবেনা আমি দেখছি,অথবা কাল দেখিয়ে দিবো। কেন এরকম হয়?কেন? বন্ধুরা চলে যায়, না,আমিও তো যাই। কেন এই দূরত্ব হয়?কেন? সময়টা কেন থেমে থাকেনা? আরো কতোবার একলা একটা সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে? আজকাল বড়ো ক্লান্ত মনে হয়, কিন্তু এখন মাত্র শুরু, কোন দিকে যাবো তাও জানিনা।

কে জানে! স্বপ্ন গুলোও আজকাল ধূসর হয়ে এসেছে। একদিনেই মনে হচ্ছে বৃদ্ধা হয়ে গেলাম!


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।