ব-দ্বীপ মানে বদ্ দের দ্বীপ না কিন্তু। দয়া করে কেউ ভুল বুঝবেন না। যদিও বাংলাদেশের অবস্থা দেখে ভুল বোঝা স্বাভাবিক।
অমিত কর্মকার, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর মধ্যে একজন। সেই ছোটকাল থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব।
২০০২ সাল। ভারতের গোধরায় ট্রেনে আগুন। ফলশ্রুতিতে হিন্দু-মুসলিম দাংগা। আমি একজন মুসলিম, মুসলিমদের আমি ভাই মনে করি। ঠিক হয়ত তেমনি অমিতেরো হিন্দুদের প্রতি দুর্বলতা থাকা অস্বাভাবিক না, বিশেষ করে তীর্থযাত্রীদের প্রতি।
ঘটনার প্রাথমিক সাসপেক্ট ছিল মুসলমানেরা। কিন্তু অমিতের মনে কি আমার প্রতি কোন ঘৃনা ছিল? না ছিল আমার প্রতি তার কোন রাগ। ছিল না। কারন সে জানত যারা এইসব ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউ মানুষের কাতারে পরে না। আর তাই কিছু অমানুষের জন্য তার মানুষ বন্ধুকে ঘৃনা করার কোন কারন নেই।
ঠিক তেমনি ঘটনার পরে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মুসলমান নিধনের সব দোষ আমি নরেন্দ্র মোদীকেই দেই, তাকে ঘৃনা করি, কিন্তু ঘৃনা করিনা অমিতকে। কারন সে আমার মত এই পুরো ঘটনায় খুবই মর্মাহত, একজন ভাল মানুষ।
আসলে আমাদের কি করা উচিত ছিল? দুইজন দুই ধর্মকে চরমভাবে ঘৃনা করে পরস্পরকে চির শত্রু ঘোষনাশ করা? নাকি আমাদের এই উপলব্ধিই সঠিক “যারা ঐ কাজ করেছে তারা মানুষ নামের অমানুষ, তাদের জাতী, ধর্ম সবই এক, আর তা হল তারা সবাই অপরাধি, অমানুষ”।
একাত্তরের নির্যাতনের কথা যখন শুনি গায়ের সমস্ত লোম দারিয়ে যায়, মনে হয় যদি পারতাম ঐ সব জারজগুলোকে নিজ হাতে হত্যা করতে তাহলেই মনের এই দুঃখ মিটত। একাত্তরে যখন পাক মুসলিম (!) আর্মি এদেশে কাফের(!) হত্যা করতে আসল তখন তারা কাফেরদের চাইতেও নিকৃস্ট পাপী মুনাফেকের আচরন করে গেল।
ওই কাজ যারা করল, যারা সাপোর্ট করল এবং যারা এখনো তা সাপোর্ট করে তাদের সবাই অমানুষ, তারা সবাই নিকৃস্ট জীব। তাদের আমরা ঘৃনা করি। কিন্তু যেসব পাকিস্তানি এই ঘটনাগুলোতে আমাদের মতই ব্যাথিত, দুঃখিত, তাদেরও কি আমরা ঘৃনা করব?
সীমান্তে হত্যা, সঙ্ঘর্ষ, উজানে বাধ দেয়ার কারনে মড়া নদীগুলোকে যখন দেখি ভারতকে নিয়ে কখনো ভাল কোন অনুভুতি মনে আসে না। ফেলানি হত্যা, ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া মায়ের নিজের ছেলের সামনে ধর্ষিত হওয়ার খবর শুনে একাত্তরের নির্যাতনের চেয়ে কোন অংশে খারাপ কোন অনুভুতি হয় না। কিন্তু তাই বলে এখন সব ভারতীয়কে আমার ঘৃনা করা লাগবে? যখন শুনতে পাই একাত্তরে আমার আত্নীয় স্বজনদের কোলকাতার বিভিন্ন লোক কিভাবে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করেছিল, সেই কথা মনে করার পরেও?
২০০৮ সালে পিলখানায় বাংলাদেশী বিডিআর দের দ্বারা যেভাবে আর্মি অফিসারদের স্ত্রী-সন্তানেরা নির্যাতিত হয়েছিল, যেভাবে আর্মি অফিসারদেরকে মারা হয়েছিল এ ঘটনাকি কোনভাবেই পাকিস্তান বা ভারতের দ্বারা কৃত হত্যাকান্ডের চাইতে কোন ভিন্ন জিনিস? হত্যা হত্যাই, নির্যাতন নির্যাতন নির্যাতনই।
যে বাচ্চাটি তার জন্মের আগেই পিতাকে হারাল সে এখন কি করবে? বুকের মধ্যে একরাশ দুঃখ নিয়ে সমস্ত বিডিআর সহ বর্তমান বর্ডার গার্ডের সদস্যদের সে আজীবন ঘৃনা করে যাবে? ঐ বিডিয়ার সদস্যদের সমস্ত আত্মিয়-স্বজন বা ওই সদস্য যে জেলার, থানার অধিবাসি তাদের সবাইকে সে ঘৃনা করা শুরু করবে। সে কি একবারো বুঝবে না ওই হত্যাকান্ড কিছু অমানুষের কাজ, আমরা ওই অমানুষদের কাতারের কেউ নই?
কিংবা রাস্ট্রপতির দ্বারা ক্ষমাপ্রাপ্ত খুনের ও ফাসির আসামী যার বাবার, ভায়ের, ছেলের হত্যাকারি সে কি করবে? ঘৃনা করে যাবে সমস্ত বাংলাদেশীকে আমরন। বাংলাদেশী প্লেয়ার হিসেবে আমার খেলা দেখলেই ঘৃনায় বিকৃত হয়ে উঠবে তার মন? কিন্তু সে কি একবারো বুঝবে না তার মতও আমার বুকে ঘৃনা ঐ সব নীতি নির্ধারকদের প্রতি
সম্প্রতি ব্লগে শুরু হওয়া পাকিস্তান-ভারত বিতর্ক নিয়ে দেখেছি পাকিস্তান বা ভারতের সাপোর্টাররা একে অপরকে কদর্য, নোংরা, অশালীন ভাষায় গালাগাল করছে। এই ব্যাপারটা যখন ভারতীয় বাঙ্গালী কিংবা কোন পাকিস্তানি জানতে পারছে তখন ঐ গালিদাতা আর গালিগ্রহিতার দুইজনেরই সন্মান কত নিচে নেমে গেল তা কি তারা একবারো খেয়াল করেন না?কেউ যখন একজনকে আরেকজনের জারয বলে, লজ্জাটাকি জারজ যাকে বলা হয় তার না তার কথিত পিতার?সেই হিসেবে কি আমরা সবাই জারয হয়ে গেলাম না?
আর যারা ভারত বা পাকিস্তানের নাম শুনলেই ভয়াবহ রেগে যাই, দেশপ্রেমের শৌর্য বীর্য দেখাতে গিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে না রেখে হিতাহিত জ্ঞান হারাই বাস্তবে আমরা নিজেরা কতটুকু দেশপ্রেমিক? সত্যি যদি আমরা দেশপ্রেমিক হতাম তবে আজকে দেশের অবস্থা এত খারাপ থাকত না, আমেরিকার সাহসও হত না আমাদেরকে চোখ রাঙ্গানির। জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই আমরা স্বার্থপর, অথচ কথা বলার সময় কত নীতি কথা!
অফটপিকঃ
যে কোন কিছুই অতিরিক্ত ভাল না, যেমন ভালনা কদর্য, অশালীন, নোংরা ভাষার ব্যাবহার।
কারন উপরের দিকে থুতু মারলে তা নিজের গায়েই পরে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।