প্রথম চশমাটা প্রথমবার ভেঙেছিল ছোট ভাইয়ের সাথে মারামারি করতে গিয়ে, এটা আগেই বলেছি । এরপরও বেশ কয়েকবার এই চশমাটা ভেঙেছে। তার মধ্যে বেশির ভাগই ঘটেছিল দিনের বেলা চশমা চোখে ঘুমাতে গিয়ে।
একবার আজব একটা কান্ড হয়েছিল। পরীক্ষা চলছিল কোন।
সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে গেলেও হারিকেন কিংবা মোমবাতি জ্বেলে পড়াশোনা চলত। আমার আবার একটা সমস্যা ছিল মোমবাতির আলোয় চশমা চোখে রাখতে পারতাম না, মাথা ধরে যেত। তাই একদিন এরকম মোমবাতির আলোয় পড়ছি, চশমা খুলে রেখেছি টেবিলের উপর। বিদ্যুৎ আসার পর চশমা পরতে গিয়ে দেখি একটা কাঁচ ভেঙে চুরচুর হয়ে আছে। গাড়ির কাঁচে ঢিল ছুড়লে যেভাবে ভাঙে ঠিক ঐরকম।
আমার তো মাথা খারাপ অবস্থা। চশমা তো পড়ে যায়নি, কেউ ধরেও নি, কেউ কিছু ছুঁড়েও মারেনি। তাহলে এমন ভুতুড়ে কান্ড কিভাবে হল? শান্ত হয়ে বসে চিন্তা করলাম কিছুক্ষণ। অবশেষে কাহিনী বের করতে পারলাম। আমি পড়তে পড়তে একটা স্টিলের স্কেল নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম।
সম্ভবত ঐ নাড়াচাড়ার সময় স্কেলটা চশমার উপর গিয়ে পড়েছিল। মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম বলে আর খেয়াল করিনি।
চশমা ভাঙলেও সমস্যা হয়নি কারণ আরেকটা বাড়তি চশমা ছিল। এই চশমাটাও বেশ বড়। আসলে আমার মুখটাই এমন ছোট যে সব চশমাই বড় লাগে।
এই চশমাটা ছিল সোনালী ফ্রেমের। চশমাটা আসলে আমার ছোট বোনের ছিল। সে অনেকটা ঢং করেই নিয়েছিল আমার দেখাদেখি, না নিলেও চলত আর কি। পরে আর ভালো লাগে না পরতে এই ছুতায় আমাকে দিয়ে দিয়েছিল। আমি লেন্স পাল্টে ফটোসান নিয়েছিলাম।
কোথাও ঘুরতে গেলে এটা পরতাম। এটাও অনেক দিন পর্যন্ত পরেছি। আর অনেকবার ভাঙারও ইতিহাস আছে। অবশেষে একদিন এটাকে বিসর্জন দিলাম। ভাঙা ফ্রেমটা এখনও ড্রয়ারে পড়ে আছে।
এক ভাইয়া বলেছিল, এই চশমাটা যেন আমি আর না পরি, কারণ এটা পরলে আমাকে হ্যারী পটারের মত দেখায়।
আরেকটা চশমা এভাবে পেয়েছিলাম ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে। তারও এক কাহিনী। চশমা কয়েকদিন ঢং করে পরে আর ভালো লাগে না। ওর চশমাটা অবশ্য প্রথমবার সে নিজেই ভেঙেছিল, কুরবানীর হাটে গরুর তাড়া খেয়ে।
এই ঘটনায় ছোট ভাই প্রথমে একটু বিব্রত বোধ করলেও পরে চশমার দোকানে গিয়ে যখন দেখল তার মত পাবলিকের অভাব নেই, তখন রসিয়ে রসিয়ে সবাইকে বলে বেড়াতে থাকল।
যা হোক, ভাইয়ের চশমার শখ মিটে যেতেই সে আমাকে ফ্রেমটা দিয়ে দিল। এটা ছিল রিমলেস। আমার আগের গুলোর চেয়ে একটু ছোট, তবে কি না ভাইয়ের বিশাল মুখের সাইজের জিনিস আমার জন্য বড়ই হল। যা হোক, রিমলেস বলে কথা।
ঐ সময়ের হাল ফ্যাশনের একটা চশমা তো হল। এই চশমাটা এখনও আছে। কয়েকবার ভাঙলেও এখন সুস্থ সবল অবস্থায় আছে। তবে পরা হয় না। ইমার্জেন্সী হিসাবে তুলে রাখা আছে।
ইচ্ছা আছে এর লেন্সের আকৃতিটা বদলে নেয়ার। ডিম্বাকৃতির লেন্স এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে।
ঐ সময় ডিম্বাকৃতির লেন্স খুব চলত। আমিও শখ করে একটা কিনে ফেললাম। কালো অক্সিডাইজড ফ্রেমের এই চশমাটা অনেক পরতাম।
খুব আরামের ছিল। হালকা আর ছোট, আমার মুখের সাথে মানানসই। এই চশমাটা মজবুতও ছিল। এটা পরে আরামে ঘুমাতাম, এপাশ ওপাশ করলেও সমস্যা হত না। কিন্তু এমন মজবুত চশমাও একদিন ঘায়েল হল।
তাও কি না আমার জানের জান ভাগ্নের হাতে।
একদিন শুয়ে শুয়ে ভাগ্নের সাথে খেলছিলাম। ভাগ্নের তখন পাঁচ-ছয় মাস বয়স। সে খেলতে খেলতে হঠাৎ করে আমার চশমার উপর আক্রমণ করল। আমি বাধা দিতে না দিতেই সে একটা ডাঁটি টান দিয়ে পটাস করে ভেঙে ফেলল।
এইটুক পিচ্চির হাতে এত শক্তি কোত্থেকে এসেছিল কে জানে। আমি এত রাগ করলাম ওর উপর যে সারাদিনে ওকে আর কোলে নিলাম না। বেচারা কিছু বলতে পারে না, কিন্তু কষ্ট পেয়েছিল খুব এই শাস্তিতে। পরে আর কী করব, মাফ করেই দিলাম, সে তো না বুঝেই করেছে।
চশমাটা নিয়ে দোকানে গিয়েছিলাম।
ঠিক করতে পারেনি ওরা। আমি আবার সেই সুপার গ্লু চিকিৎসা দিয়ে চেষ্টা করলাম। তাও সম্ভব হল না। চশমাটা বিসর্জন দিতেই হল। অনেক দিন ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলাম।
এক সময় মায়া ত্যাগ করে ফেলে দিয়েছি।
এরপর একটা হাফরিম চশমা কিনলাম। লেন্সটা ফটোসান না নিয়ে একটু হালকা বাদামী নিলাম। এটাও সেই ডিম্বাকৃতির। এই আকৃতির প্রতি একটা আকর্ষণ রয়েই গিয়েছিল।
এই চশমাটা অনেক পরেছি। এখনও পরছি। তবে এখন আর বাইরে পরি না। বাসায় এটাই পরে থাকি।
আর বাইরের জন্য আরেকটা চশমা কিনেছি।
হাফরিম, ছোট, আয়তাকার লেন্স। এইটাই নাকি আমার চেহারায় সবচেয়ে বেশি মানায়, এমন লোকে বলে। এই চশমা দুটো এখন পর্যন্ত একবারও ভাঙেনি। দেখা যাক কতদিন টেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।