পরীক্ষায় আরেকবার রেজাল্ট খারাপ।
এইবারও ম্যাথ।
মেজাজটা দিনের শুরু থেকেই খারাপ ছিল, কিন্তু সাধারন মানুষের একটা ট্যালেন্ট আছে, সেটা হল অন্যদের মেজাজ না বুঝে নিজের মেজাজ অনুসারে কাজ করা, তাই অন্যান্য সকলবারের মতো এইবারও আমার আম্মা আমার মনের অবস্থা বুঝতে ব্যর্থ হল এবং পোষ্ট-রেজাল্ট চিল্লাপাল্লা শুনতে হল।
দুপুরে যথারীতি ভিপি স্যারের রুমে অডিশনের জন্য কলেজ গেলাম। যেয়ে দেখি অডিশনের জন্য লাইন।
আধাঘন্টা অপেক্ষা করার পর অডিশনের চান্স পেলাম। সেখানেও বিপত্তি।
ম্যাথ ১ম পত্রের নাম্বার আছে, ২য় পত্র নাই।
আবার দৌড়াদৌড়ি।
ডিপার্টমেন্ট থেকে নাম্বার নেওয়া, স্যারদের সাইন নেওয়া, ভিপি স্যারের কাছে রিটার্ন, ভিপি স্যারের লেকচার সবকিছু মিলে টাইম লাগলো দেড় ঘন্টা।
দৌড়াদৌড়িটা হয়তো রেজাল্ট খারাপের শাস্তি হিসেবে ধরে নেওয়া যায়, কিন্তু কোনো ফল মিললো না।
১:৩০ এ কোচিং।
আশা করেছিলাম অডিশনে বেশি টাইম লাগবে না, তাই নাস্তা না খেয়ে বের হয়েছিলাম। আবার আমার বাড়ি থেকে কলেজ যেতে টাইম লাগে আধা ঘন্টা।
পরলাম মহা ফ্যাসাদে।
যদি কোচিং করি তাহলে বিকাল পর্যন্ত খালি পেটে থাকতে হবে, আবার কোচিং না করলে ভিপি স্যারের রুমে রিটার্ন ব্যাক।
শেষ পর্যন্ত প্রথমটাই বেছে নিলাম। সো বিকাল পর্যন্ত খালি দুইটা সিঙ্গারা আর কোল্ড ড্রিংকস।
বাড়িতে রিটার্নের পর আরেক ঝামেলা।
ছবি দরকার।
একটু খাওয়া-দাওয়ার পর আবার দৌড়াদৌড়ি।
ছবি নিয়ে আসার পর বিছানায় শুয়ে আছি। পাঁচ মিনিট পর শ্রদ্ধেয় আম্মাজানের রিটার্ন এবং আরেকদফা চিল্লাপাল্লা।
চিল্লাপাল্লার পুরো সময়টুকু শুয়ে ছিলাম একটা কথা বা নড়াচড়া ছাড়াই। রেটিনার ফোকাস টেবিলের পেনদানির উপর।
কিছুক্ষন পর আম্মা বিদায় নিলেন। তখনও শুয়ে আছি। বিরক্তি বা রাগ বা দুঃখ কোনো কিছুই নেই। তিন মিনিট পর চোখ থেকে চশমা খোলার জন্য হাত দিলাম। সাথে সাথেই রিমলেস গ্লাসের যয়েন্ট ভেঙ্গে গেল।
রাগ বা চশমা ভাংতে ভালো লাগা বা অন্য কারনেই হোক, পরবর্তী চার সেকেন্ডের মধ্যে বাকি যে অংশগুলো আস্ত ছিল সবকয়টাই ভেঙ্গে ফেললাম। সবকটা গ্লাস ভাঙ্গার পর উপরে তাকিয়ে দেখি আম্মাজান দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর কিছু কথা বললেন, যা আমার এখন ঠিক মনে আসতেছে না। তখনও আমার মধ্যে রাগ বা বিরক্তি বা দুঃখ কিছু নাই। এরপর আম্মা চলে গেলেন।
তখন পাশ ফিরে শুইতেই গালে কি একটা খোঁচা লাগলো। বিছানা থেকে ওঠার সময় হাতে আরেকটা খোঁচা। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম গ্লাসের কিছু ভাঙ্গা টুকরা। বাথরুমে আয়নায় দেখলাম চোখের নিচে কেটে গেছে। রুমে এসে চশমাটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম।
প্রথমবারের মত চশমাটার জন্য দুঃখ হল। চশমাটা অনেকদিন ধরেই আমার সাথে ছিল। হয়তো ওইটাই আমার জন্য শেষ উপহার।
প্রথম ও শেষ প্রতিশোধ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।