© শিবলী
স্কুলটা আজ বেশ আগেই ছুটি দিল! সাতটা ক্লাস হয় হল মাত্র তিনটা। প্রাইভেট কোচিং আজ আর কিছুই হবে না। বিশেষ মনে হয় কোন কারণ আছে কারণটা আমার জানা নাই। সত্যি কথা বলতে কি কারণটা জানার ইচ্ছাও নাই। আগে ছুটি যেহেতু হল হাতের কিছু কাজ সারতে সমস্যা কি? তাই স্কুল গেট এর দিকে আগাচ্ছি।
বিশাল ভিড় “ডে শিফট” এর ছাত্র-ছাত্রীরা ঢুকছে একটা গেট দিয়ে আর “মর্নিং শিফট” এর ছাত্র-ছাত্রীরা বেরুচ্ছে আর একটা গেট দিয়ে। “ডে শিফট”এ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা “মর্নিং শিফট” এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। ছাত্র-ছাত্রীরা অলস হয়ে যাচ্ছে সকলে উঠা কি খুব কষ্ট? আসলে সকালে উঠা বেশ কষ্টই বিশেষ করে রাত ১টা পর্যন্ত জেগে যখন সকাল ৬ টায় উঠতে হয়। এত সকলেই বা দেয়ার দরকার কি? ৭টা বাজে স্কুল শুরু করার কোন মানে হয়। আমার বাবার ধারণা “কষ্ট করে লেখাপড়া করলে ভালো রেজাল্ট এর চেয়ে ভালো কিছু শেখা যায়”।
তাই আজ খাগড়াছড়ির মত একটা গর্তে এবং একটা ভাঙ্গা-মচকা অবস্থার স্কুলে পড়ছি। তবে আমি এই পাহাড়ে এবং সুন্দর স্কুলে ভালোই আছি। এখানে অনেক ভালো বন্ধুত্ব পেয়েছি। পেয়েছি সৌরভ এর মত “গুগল”কে মনে হয় না কোন প্রশ্নের উত্তর ওর অজানা আছে। আবার আছে সদ্বিপ এর মত পদার্থবিদ যে কিছু বাস্তব জীবনের সকল উদাহরণ পদার্থের সূত্র দিয়ে উদাহরণ দেয়।
এই সৃতি গুলো মনে করলে মনে হয়, তার মত বাবা আসলেই হয় না!
এই কথা গুলো ভাবতে ভাবতে গেটের কাছে পৌঁছে গেছি। শামুক গতিতে হাঁটতে হয় এখানে। কারও সাথে কথাবলার সুযোগ পর্যন্তু পাওয়া যায় না। হাতের কাজ কিছু সারতে হবে, বার্গারের কয়েটা বন কিন্তুতে হবে। সাথে বই বিতানেও একটু যাবো, সে++ এর ওপর একটা বই আনতে বলেছিলাম।
বইটার . pdf ভার্সন আমার কাছে আছে তবে .pdf পড়ে ঠিক মজা পাই না। বার বার উইন্ডো বদল ভালো লাগে না আর বিদ্যুৎ চলে গেলেও সমস্যা আর এটাতে এমনি শুয়ে শুয়েও পড়া যাবে। ওয়েব প্রোগ্রামিং ইন্টারনেট থেকেই শেখা যায় কিন্তু ডেক্সটপ প্রোগ্রামিং এর সি++ ভাষাটা ভীষণ কঠিন লাগছে।
বই হল না, বার্গারের বন কেনা শেষ। বাসার রাস্তা ধরেছি আর দুইটা টিলা উঠলেই পৌঁছে যাবো।
এই খানে যখন প্রথম প্রথম এসেছিলাম যখন বেশ মাজা লাগতো কত সুন্দর দেখতে জায়গাটা। কিন্তু এখন বিরক্তি এসে গেছে প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ বার ২০০ ফিট উঠা নামা করলে যে কারও বিরক্তি আসতে পারে। আজ আর নামবো না। কম্পিউটার কেনার পর থেকে ক্রিকেট লেখা ছেড়ে দিয়েছি তাই বিকেলেও আর নামতে হয় না। তবে ক্লাস টেনে উঠার পর থেকে আমাদের ক্লাসের খুব কম ছেলেদের মাঠে দেখা যায়।
বাবা-মা সব সময় বইয়ে মুখ গুজে পড়ে থাকতে বলে। আমার অবশ্য এই সব ঝামেলা নাই। আমাকে কেউ পড়তে বসতে বলে না। কারণ আমার বাবা আমাকে কখনও জোর করে পড়তে বসাতেন না, তিনি জানের আমি দায়িত্ববান নিজের প্রয়োজন বুঝতে পারি কোনটা ঠিক করছি আর কোনটা ভুল করছি এইটা বুঝতেও আমার সমস্যা হয় না। না হওয়াটাই স্বাভাবিক কারণ ৪ বছর বয়স থেকে একা একা মানুষ হচ্ছি।
এসে গেছি বাড়িতে। দরজায় বেল টেপার সাথে সাথে দরজা খুলো দিলো দুলাল, যেন দরজার কাছেই দাড়িয়ে ছিল। বয়সে আমার ৫ বছর এর বড় কিন্তু বুদ্ধি একেবারে কম। বহু কষ্ট করে এবার ক্লাস টু’তে উঠেছে। “ভাইজান দেখি পুরা ঘামে গেছে, আমারে কইলেই তো আমি যাই বন গুলা নিয়া আসি ”; এই রকম নানা কথার তুড়ি ছড়ালও।
আমি তেমন গুরুত্ব দেই না, তবে ভীষণ ভালো বাসি আমি ওকে ছোট বেলা থেকেই আমাকে খুবই আদর করতো। যাই গোসলটা সেরে আসি। মনের এই বাঁধ ভাঙা আওয়াজ গুলো নিয়েই আজ একটা পোষ্ট দিবো সামু’তে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।