মতিয়া আপা- হিসাব মিলেনা- দ্বন্দ্ব লাগে
৬৯ এর গণআন্দোলনের অগ্নিঝরা দিন। ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী মতিয়া চৌধুরী সারা দেশে প্রগতিশীল ছাত্র-আন্দোলনের পুরোধা। তখন আমি স্কুলের শেষ ক্লাসের ছাত্র । মতিয়া চৌধুরীকে দেখতাম বিভিন্ন আন্দোলনের মঞ্চে। মতিয়া চৌধুরী মঞ্চে এলেই তাকে দেখে মনে হত যেন খাপ খোলা তরবারি।
তার তিক্ষ্ণ কন্ঠের বক্তৃতা প্রগতিশীল ছাত্র জনতাকে স্বাধীকার আন্দোলনে দারুনভাবে উদ্বেলিত করেছে। ছাত্র জনতা সত্যিকার অর্থেই তাকে খেতাব দিয়েছে বাংলাদেশের অগ্নিকন্যা। তারপর পদ্মা- মেঘনা – যমুনায় অনেক জল প্রবাহিত হয়েছে, গতকাল দেখলাম ময়মনসিংহ শহরের গা ঘেষে প্রবাহিত এককালের প্রমত্ত ব্রহ্মপুত্র জলশূন্য মরা খালে পরিণত হয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে, মতিয়া চৌধুরী ন্যাপ ত্যাগ করে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন। শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভায় সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে সততা এবং দক্ষতা দিয়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ আওয়ামীলীগ সরকারের গৃহিত অনেক প্রকল্প পরবর্তী বিএনপি সরকার বাতিল কিংবা সংশোধন করলেও জানা যায়, জামাত নেতা মতিউর রহমান নিজামী কৃষি মন্ত্রনালয়ে দায়িত্ব নিয়ে মতিয়া চৌধুরী গৃহিত কোন প্রকল্পই বাতিল করেননি। বাম রাজনৈতিক নেত্রী গৃহিত প্রকল্প মৌলবাদী নেতা বাস্তবায়ন করেছেন। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের দুইজন মন্ত্রীর সাফল্য এবং সততা নিয়ে প্রশ্ন নেই তাদের একজন মতিয়া চৌধুরী অপরজন তারই ছাত্র ইউনিয়নের সহযোগী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
তারপরও কিছু বিষয়ে দ্বন্দ্ব লাগে, হিসাব মিলেনা।
১. স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ-বিধ্ধস্ত দেশে স্বাভাবিক ভাবেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু তখন ভারতবিরোধীদের প্রচারনা ছিল ভারতে পাচারের জন্যই জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সেই সময়ে সম্ভবত ’৭৩ সাল, জামালপুর শহরের দয়াময়ী মোড়ের নিকটবর্তী কাচারীমাঠে ন্যাপের জনসভা হয়। সেই জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে রবি নিয়োগীও উপস্থিত ছিলেন। সেই জনসভায় মতিয়া চৌধুরী ভাষন দিতে গিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন “ভারত অন্যান্য জিনিস নিলেও তারা তো গরুর মাংস নেয়না, তাহলে গরুর মাংসের দাম বাড়ছে কেন ?” চাল, ডালের দাম বৃদ্ধি পেলে সাথে সাথে মাছ-মাংস, শাক-সবজীর দামও বৃদ্ধি পায়, এ বিষয়টি আমি বুঝলেও মতিয়া চৌধুরী কেন বুঝতে পারেননি সে হিসাব এখনও আমার কাছে মিলেনা।
২. মতিয়া চৌধুরী ন্যাপ ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। বায়তুল মোকাররম ময়দানে এক জনসভায় মতিয়া চৌধুরী সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন এইভাবে “ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সমজতন্ত্র প্রয়োজন, আওয়ামীলীগ সমাজতন্ত্রের কথা বলছে তাই সমাজতন্ত্র কায়েম করার জন্য আমি আওয়ামী লীগে যযোগদান করেছি।
” চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির পূর্বে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টির উত্তরাধিকার বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি, ন্যাপ দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবেনা- সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে পেটি-বুর্জোয়াদের দল আওয়ামীলীগ! সে কথা মতিয়া চৌধুরী কিভাবে বিশ্বাস করেছিলেন, সে হিসাব এখনো মিলেনা।
৩. সেলিম, দেলোয়ার, ডা. মিলন ও নূর হোসেনের হত্যাকারী স্বৈরাচারি এরশাদের নারী কেলেঙ্কারীর খবর দেশের সকল মানুষই জানে। এই সেদিনও সে তার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, তা নিয়ে এখনো আদালতে মামলা চলছে। সেই এরশাদকে নিয়ে মহাজোট গঠন করে নির্বাচন করে মন্ত্রী হতে মতিয়া চৌধুরী কোন অস্বস্তি বোধ করেছেন তা জানা যায়নি, কিন্তু নোবেলবিজয়ী ডঃ মুহম্মদ ইউনূসের রাশিয়ান বংশোদ্ভুত স্ত্রী স্বেচ্ছায় চলে যাওয়াকে কেন মতিয়া চৌধুরী তাড়িয়ে দেওয়া বলছেন সে হিসাব এখনো মিলেনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।