আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবাদ ও পাঠক বিভ্রান্তির সূত্র

কবিতা/ গল্প/ উপন্যাস/ প্রবন্ধ/ অন্যান্য

সম্প্রতি সময় পেশাগত কারণে কিছু বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখামুখি হয়ে সাংবাদিকতার মুখস্ত সূত্র সমুহ আবিষ্কার করেছি। এমন এক উদ্ভট সূত্র কোন পুস্তক থেকে সংগ্রহ করা হয়নি। হয়তো লিপিবদ্ধ হয়নি কোন লেখনীতেও। ছাত্রজীবনে সবচেয়ে কঠিন সূত্র ছিল বীজ গণিতের সূত্র সমুহ। আমার অনেক সহকর্মী বন্ধু ছিল যারা এরূপ সূত্র মুখস্ত করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখামুখি হতে হয়েছে।

কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিক্রম করে আজ দ্বিধাহীন বলতে পারি ওই বীজ গণিতের সূত্র মুখস্ত করার বৃথা শ্রম এবং মেধা প্রয়োগের বিষয়টি। আমার মতো যারা বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন তার এক বাক্য স্বীকার করছেন বীজ গণিতের সূত্র বাস্তব জীবনে প্রয়োগের জন্য নয়। একটি বিশেষ ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ হলেও আমাদের বন্ধুদের মধ্য কেউ ওই পেশায় যাননি। ফলে আমাদের ক্লাসের শতাধিক বন্ধুর কাছে বীজ গণিতের সূত্র মুখস্ত করার বৃথা মেধা প্রয়োগের অনুশোচনা রয়েছে। এ অনুশোচনাবোধের ভেতরেই সম্প্রতি আবিষ্কার করা হয়েছে সাংবাদিকতার মুখস্ত সূত্র সমুহ।

যদি এরূপ সূত্র আবিষ্কারের কৌশল ছাত্রজীবনে শেখানো হত তবে উপকৃত হতাম। কিন্তু তা শেখতে হল অনেক বছর পরে। আর এ সূত্র সমুহ নিয়ে আমি নিজেই পাঠক হিসেবে বিভ্রান্ত হয়েছি। আমার মতো যে সব পাঠক বিভ্রান্ত হয়েছেন তাদের জন্য লেখাটি শুরু করেছি। শুরুতে সাংবাদিকতার মুখস্ত সূত্র সমুহ উল্লেখ করা প্রয়োজন রয়েছে।

পাঠকের কাছে পরিষ্কার করার জন্য তা উল্লেখ করা জরুরীও। সূত্র এক. কপি-পেস্ট এটা র্নিলজ্জ সংবাদ পরিবেশন বা চুরি বিদ্যার মহাকৌশল বলা যাবে। বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম রয়েছে। শুধু মাত্র কক্সবাজার জেলা কেন্দ্রিক অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের জয়জয়কার। কক্সবাজার শহর থেকে যেমনি নিয়মিত দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা বেশি তেমন অনলাইনও।

এ অনলাইন মাধ্যমকে ব্যবহার করে চলছে সাংবাদিকতা মহাসূত্র কপি পেস্ট। কোন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে একটি সংবাদ পরিবেশনের সাথে সাথে তা কপি করে পেস্ট করার প্রবণতা লক্ষ্য করেছি ব্যাপকভাবে। এমনকি পরের দিন পত্রিকায় অন্য জনের পরিবেশিত সংবাদ কপি করে নিজের নাম উল্লেখ্য করে পরিবেশেনে প্রমাণও আমার কাছে রয়েছে। একই সঙ্গে একটি অনলাইন থেকে কপি করে অন্য আনলাইনে সূত্র বিহীন পরিবেশেনের মতো র্নিলজ্জ বেহায়াপনাও দেখেছি আমি। এ সূত্রটির কারণে খুব সহজ হয়ে উঠেছে সাংবাদিকতার কক্সবাজারের মানও।

বাংলাদেশে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে সংবাদ পরিবেশনকারি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের একটিতে আমি কাজ করি। অপর একটিতে কাজ করে আমার অপর এক নিকটজন। ফলে খুব নিকট থেকে উপলব্ধী করছি বিষয়টি। আমি দেখেছি এর র্নিলজ্জতা কিভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। উদাহরণ হিসেবে সম্প্রতি প্রশাসনের একটি অনুষ্ঠানের কথা বলা যেতে পারে।

যে অনুষ্ঠানে স্বাভাবিক কারণে সাংবাদিক হিসেবে আমন্ত্রণ পাওয়া হইনি বাংলাদেশের আলোচিত ২ টি আনলাইন সংবাদ মাধ্যমে ২ জন জেলা প্রতিনিধি। যার একজন আমি নিজেইও। আমন্ত্রণ পাইনি, অনুষ্ঠানে যায়নি। এ নিয়ে আমার কোন ভাবনা ছিল না। কিন্তু রাত ১০ টার দিকে ভাবনার সৃষ্টি হল তখন যখন এক সাংবাদিক ফোনে আমাকে বললেন, ভাই আমুক অনুষ্টানের সংবাদটি বাংলানিউজে পরিবেশন হয়নি কেন? তাকে বলেছি, অনুষ্ঠান সম্পর্কে তো ভাই আমি জানি না।

এর পর বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের জেলা প্রতিনিধি শংকর বড়–য়া রুমি আমার অফিস কক্ষে এসে বললেন, খুব সম্ভবত এ অনুষ্ঠানের সংবাদটি কাল কোন পত্রিকায় আসবে না। কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, তাকেও কয়েকজন ফোন করে সংবাদটি পরিবেশন না হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছে। আমার অগ্রজ সহকর্মী শংকরের কথাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে পরের দিন। কোন পত্রিকায় ওই অনুষ্ঠানের সংবাদটি পরিবেশন হয়নি। এটা আমার কাছে বিব্রতকর মনে হয়েছে।

এবং যারা অনুষ্ঠানে সাংবাদিক পরিচয়ে অংশ নিয়েছেন তাদের বেহায়া মনে হয়েছে। শুধু মাত্র কপি-পেস্ট সূত্রটি এর জন্য দায়ী বলে আমার মনে হয়। সূত্র দুই. প্রচলিত ধারণা লালন আমি দেখেছি প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে আমরা কেউ সংবাদ পরিবেশন করতে রাজী নয়। প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত অনুষ্ঠান নিয়ে একই ধরণের সংবাদ পরিবেশন আমি লক্ষ্য করেছি। এতে যুগের পর যুগ একটি ভূূল তথ্য আমরা পাঠকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।

যা গত ২০ জুলাই আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। ১৯ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ির এক স্কুল শিক্ষক (মারমা উপজাতী) আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন সৈকতে বর্ষা উৎসবে যাওয়ার জন্য। আমি ওখানে গিয়েছিলাম। গিয়ে তাকে সাথে নিয়ে অনেকের সাথে আলাপ করেছি। এর মধ্যে আমি লক্ষ্য করেছি ওখানে রাখাইন, মারমা, চাকমা সহ বেশ কয়েকটি উপজাতি রয়েছে।

ওই স্কুল শিক্ষক আমাকে জানিয়েছিলেন, সাংবাদিকতা প্রচলিত ধারণা লালনের সূত্রটি। প্রতিবছর বর্ষা আসলেই আমরা এ উৎসবকে রাখাইনদের বর্ষা উৎসব বলে সংবাদ পরিবেশন করি। অথচ একটি কেবল রাখাইনরা পালন করেন না। বৌদ্ধ ধর্ম পালনকারি কয়েকটি উপজাতির উৎসব এটি। আর এটা পালনের ধর্মীয় কোন সর্ম্পক না থাকলেও ধর্মীয় একটি আচরণের পালনের পূর্ব প্রস্তুতি এটি।

আমি আমার পরিচিত ওই স্কুল শিক্ষককে এটি উপজাতির বর্ষা উৎসব হিসেবে সংবাদ পরিবেশনের পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু তা রক্ষা হয়নি। পরের দিন রাখাইনদের বর্ষা উৎসব বলেই সংবাদ পরিবেশন হয়েছে। একই সূূত্রের প্রয়োগটি ছিল দূর্যোগকালিন ফিশিং ট্রলারের সাগরে যাওয়া না যাওয়া, কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণের কাজ, কক্সবাজারের টি-২০ বিশ্বকাপের ভেন্যু তৈরীর কাজ সহ নানা বিষয়ে লক্ষ্য করা গেছে। গত এক মাস আগে কক্সবাজারের ২ টি দৈনিক পত্রিকায় ২টি স্ব বিরোধী সংবাদ পরিবেশন হয়েছে প্রধান শিরোনামে।

যার একটিতে বলা হয়েছে পুরোদমে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাজ চলছে। অপরটি বলা হয়েছে, থমকে আছে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাজ। এর কোন সত্য ছিল তা নিয়ে পাঠকরা স্বাভাবিকভাবে বিব্রত হয়েছেন। একটি দূর্যোগকালিন সময় সাগরে ফিশিং ট্রলার যাচ্ছে কি যাচ্ছে না এমন একটি প্রতিবেদন তৈরীর নিদের্শনা ছিল আমার কাছে। আমি কক্সবাজার ফিশারী ঘাটে গিয়ে দেখলাম একটি ফিশিং ট্রলারও নেই।

তার কারণ হল, সাগরে মাছ ধরা পরছে। তাই জেলেরা লোভে সাগরে গেছে। ওখানে কিছু ছবি সংগ্রহ করে পরের দিন একটি সংবাদ আমি পরিবেশন করে ছিলাম। যার শিরোনাম ছিল ‘৩ নং সংকেতেও সাগরে মাছ ধরতে গেছে জেলেরা। ’ কিন্তু একই দিন অপর একটি দৈনিককে বলা হয়েছে, দূর্যোগকালিন সময়ে সাগরে যাচ্ছে না জেলেরা।

। আবার এমন সংবাদও দেখছি একটি সরকারি প্রকল্পের বাজেট ছিল ৬ লাখ, অথচ এ প্রকল্পটিতে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার সংবাদ পরিবেশন হয় আমাদের শহরে। তার কোনটি সত্য ছিল পাঠকরা বিভ্রান্ত হয়েছেন স্বাভাবিকভাবে। আর এ বিভ্রান্ত করার সূত্রটি নাম প্রচলিত ধারণা লালন। পাঠকের জন্য : এ ২ টি সূত্রের বাইরেও আরো কয়েকটি সূূত্র আমি আবিষ্কার করেছি।

পরে এক সময় এসব সূত্র পাঠকের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। আর এ সূূত্রে বিভ্রান্তের কবলে যে সব পাঠক আটকে গেছেন তার কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থী স্বাভাবিকভাবে। লেখক : কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.