আধারে দেখা বৃত্তান্ত আলোয় প্রকাশ
স¤প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র নির্মানের জন্য টেন্ডার নিয়ে বেশ জমজমাট ভাব বিরাজ করছে। কথায় আছে যতগুড় তত মিষ্টি। এক্ষেত্রে বলা যায় যত টাকা তত কৌশল। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের সূত্রে জানাযায়, টেন্ডার টাকা পরিমান প্রায় ৯ কোটি টাকা। যদি কাউকে এ টেন্ডার দেয়া যেতে পারে সে খুশি হয়ে যা দেবে তাতে প্রদানকারীকে টাকার কুমিরে পরিণত করবে।
আর যদি হয় শর্তসাপেক্ষে, তাহলে হিসাবটা মেলানও বেশ কষ্টসাধ্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ টেন্ডারকে হাতে রাখার জন্য প্রশাসনিক শক্তি বহুদিন ধরে বহু কৌশলে কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টেন্ডার সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বর্তমান সময়ের আলোকে সেই নিয়ন্ত্রক শক্তি ছাত্রলীগ। তবে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন, টেন্ডারবাজি বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ঐত্যিহ্যে কোন অপরাধ বলে বিবেচিত হয়না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য টেন্ডারকে নিজ হাতে পরিচালনার জন্য ছাত্রলীগকে পঙ্গু করেছেন ৮ মাস আগেই। ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৩ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে তাদেরকে এবং তাদের অনুসারীদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়ন করেছে। আর সরকারের কাছে নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য গঠন করেছেন আঞ্চলিক ভিসিপন্থী ছাত্রলীগ। প্রধান প্রতিপক্ষ আউট। এখন চুক্তির পালা।
অনিক ট্রেডার্সের সাথে বর্তমান প্রশাসনের সম্পর্ক ভাল। এ টেন্ডারের আগে ৩২ লাখ টাকার কাজ বিনা টেন্ডারে ওই কোম্পানিকে দেয়া হয়েছিল। ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণ কাজের জন্য প্রথমবার টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতার হিসেবে অনিক ট্রেডার্সের স্থান হয় তৃতীয়। অজুহাত দাঁড় করিয়ে প্রথমকে বাদ দিলেও দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানকে ঠেলে তৃতীয় কোম্পানিকে কাজ দেয়া সম্ভব নয়। টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়।
এবারে অনিক ট্রেডার্স কোম্পানির স্থান হয় দ্বিতীয়। কাগজপত্রের অজুহাত দেখিয়ে প্রথম প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত এই কোম্পানিকেই কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতি হয়েছে ৫৩ লাখ টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হলেও ব্যক্তি লাভবান হয়েছে অনেক বেশি।
টেন্ডারবাজির এ খবর বেশ আগেভাগে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে।
পত্র-পত্রিকা থেকে ফোন করে কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হচ্ছে। এমন প্রেক্ষিতে গত ৮ মার্চ রাতে ০১৭৫৬২১০৯৯০ নম্বর থেকে মেসেজ পাঠিয়ে ও ফোন করে উপাচাযর্কে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জনসংযোগ অফিস থেকে জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিসিকে হুমকী প্রদান বিষয়টি উদ্বেগের। থানায় জিডি করা হয়। পরদিন সকালে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল বের করে।
তারপরের দিন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবিতে দীর্ঘ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ভিসি কয়েক সাংবাদিককে ফোন করে ছাত্রলীগের বহি®কৃত নেতা-কর্মীদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, স¤প্রতি সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার দায়ে যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা এর সাথে জড়িত থাকতে পারে। যাহোক সকলের নজর ঘুরে উপাচার্যের দিকে নিবিষ্ট হয়েছে। টেন্ডারবাজির কথার পরিবর্তে এখন ভিসি নিরাপত্তার ব্যাপারে সবাই উদ্বিগ্ন। তবে কথা হচ্ছে আদৌও কেউ হুমকি দিয়েছি কিনা? নাকি কোন ছল-চাতুরির আশ্রয় নেয়া হয়েছে? ফোন করে কি বলা হয়েছে তা জানা নেই তবে মেসেজটি ছিল এরকম- ‘আপনার টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে প্রথম সারির বেশ কয়েকটা পত্রিকা সিরিজ নিউজ করছে।
জানি না কি হয়?’ এটা যদি হুমকির মেসেজ হয় তাহলে তবে সেটা সাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখে। কারণ সে ভিসিকে একটু সাবধান করার চেষ্টা করেছে মাত্র।
আবার প্রশাসনিক ৬টি নতুন পদ সৃষ্টি করে ছাত্রলীগের সাবেক নানা অভিযোগে বহি®কৃত নেতাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার দায়ে কর্তৃপক্ষ আটকে পড়েছে। এসব থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে পাবার জন্য নতুন একটা কৌশল হতে পারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে হত্যার হুমকির ঘটনা।
যাহোক ঘটনা সত্য-মিথ্যা সেটা পরের কথা, কর্তৃপক্ষের সুনাম, মর্যাদা মাঠে মরার হাত কিছুটা হলেও এ কৌশল বড় ফলপ্রদায়ক হয়েছে বলা যেতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।