নাজমুল ইসলাম মকবুল
বিশ্বনাথে গত বছর রেমিট্যান্স আসে দুই হাজার কোটি টাকা
ইসলামী ব্যাংক শীর্ষে
বৈদেশিক রেমিটেন্স আদায়ের েেত্র দেশের প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলাগুলোর মধ্যে বিশ্বনাথের অবস্থান শীর্ষে রয়েছে। গত এক বছরে বিশ্বনাথে বৈদেশিক রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। আশীর্বাদের বরপুত্র হিসেবে খ্যাত প্রবাসীরা প্রতি বছর অনুরূপহারে কিংবা ততোধিক হারে রেমিট্যান্স পাঠালেও সেগুলো উৎপাদনশীল কোন খাতে ব্যয় করা হচ্ছেনা। অধিকাংশ েেত্র ভোগ বিলাসসহ অন্যান্য অনুৎপাদনশীল খাতে অপচয় করা হচ্ছে। এমনকি প্রবাসীদের প্রেরীত অর্থের সিংহভাগ জায়গা জমি ক্রয়সহ বিশাল বিশাল সুরম্য অট্টালিকা নির্মাণসহ মামলা মোকদ্দমার কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।
বিশ্বনাথে কর্মরত বিভিন্ন ব্যাংক ম্যানেজারর সাথে আলাপকালে জানা যায় বৈদেশিক রেমিট্যান্সের প্রবাহ দিন দিন কমতে শুরু করেছে। তারা বলেন বিশ্ব মন্দাসহ পাউন্ড ডলারের বাজার মূল্য হ্রাস পেতে থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। আবার কেউ কেউ দ্বিমত পোষন করে বলেন রেমিটেন্স’র প্রবাহ দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বনাথ উপজেলায় সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন ব্যাংকের ২০টি শাখা বিদ্যমান রয়েছে। এই ২০টি ব্যাংকের আরো ৫টি উপশাখা মিলিয়ে সাকুল্য ২৫টি শাখায় ব্যাংক ড্রাফট ও অনলাইনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র ইসলামী ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখায় রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক রেমিট্যান্স এসেছে। শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ এনায়েত উল্লাহ জানান গত বছর এই শাখায় রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৯৭০ কোটি টাকা। প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপক তাজ উদ্দিন আহমেদ জানান এই শাখায় বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মতো রেমিট্যান্স আসে। অগ্রণী ব্যাংকের তিনটি শাখায় গত বছরে বৈদেশিক রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ছয় কোটি টাকারও বেশী। তন্মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখায় এসেছে প্রায় ২ কোটি টাকা এবং বৈরাগী বাজার শাখায় এসেছে ২কোটি ৪৯লাখ ১৮হাজার টাকা।
কালীগঞ্জ বাজার শাখায় এসেছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জানান এই শাখায় প্রতি বছর অর্ধ কোটি টাকার মতো বৈদেশিক রেমিট্যান্স এসে থাকে। অপরদিকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখার ব্যবস্থাপক এ প্রতিবেদককে জানান এই শাখায় প্রতি বছর ১০ কোটি টাকারও বেশী বৈদেশিক রেমিট্যান্স আসে। জনতা ব্যাংকের বিশ্বনাথ শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান জানান গত বছর এই শাখায় বৈদেশিক রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। পুবালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৯ হাজার টাকা।
তন্মধ্যে বিশ্বনাথ শাখায় এসেছে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। দশপাইকা শাখায় এসেছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। সিঙ্গেরকাছ শাখায় এসেছে ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। কৃষি ব্যাংকের একটি মাত্র শাখায় রেমিট্যান্স এসেছে ৫ কোটি ১৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মৌখিকভাবে জানান এই শাখায় মাসে আনুমানিক চার থেকে পাচ লাখ টাকার মতো আসে।
সে হিসেবে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো আসে। ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মৌখিকভাবে জানান এ শাখায় প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো রেমিট্যান্স আসে। অনুরূপ হারে রেমিট্যান্স আসার কথা উল্লেখ করেছেন ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। সোনালী ব্যাংকের দুটি শাখায় গত বছর রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। তন্মধ্যে বিশ্বনাথ শাখায় এসেছে ১৫ কোটি ৬৩ লাখ ৩ হাজার টাকা।
পীরের বাজার শাখায় এসেছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখায় গত বছর রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা। ষ্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখার মেয়াদ এখনও ৬ মাস পুর্ণ হয়নি। শাখাটি সবেমাত্র নতুন হিসেবে কাজ শুরু করেছে। এই ছয় মাসে তাদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৭৮ হাজার ৩২ টাকা।
পাশাপাশি এক্সিম ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখা মাত্র কয়েক মাস পুর্বে যাত্রা শুরু করেছে। ওই শাখায় রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি। সাউথইস্ট ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখায় গত বছর রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১৮ কোটি টাকার মতো। ডাচ বাংলা ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখায় গত বছর রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় তিন কোটি টাকা। সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জানান প্রতি মাসে এই শাখায় ২ থেকে আড়াই কোটি টাকার মতো রেমিট্যান্স এসে থাকে।
সে হিসেবে বছরে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার মতো রেমিট্যান্স আসে। রূপালী ব্যাংক হাবড়া বাজার শাখায় গত বছর ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা রেমিট্যান্স এসেছে বলে শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান।
এদিকে ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়াও ডাক বিভাগের ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে বিশ্বনাথ উপজেলার প্রধান ডাকঘর সহ প্রায় ১৪টি শাখা মিলিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ টাকা রেমিট্যান্স আসছে। ডাক বিভাগের মাধ্যমে এই প্রবাহ দিন দিন বাড়ছে বলে বিশ্বনাথ উপজেলা ডাকঘরের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান।
এছাড়াও হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমেও প্রবাসীদের মধ্যে কেহ কেহ স্বদেশে অর্থ প্রেরণ করে থাকেন।
সে হিসেবটি আজও অলিখিত রয়ে গেছে। আবার অনেক প্রবাসী স্বদেশ ফেরার পথে সাথে করে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসেন।
এ প্রসঙ্গে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হারুনুর রশীদ বলেন, দেশে লিখিত বৈদেশিক রেমিট্যান্স এর চেয়ে অলিখিতভাবে রেমিট্যান্স আসছে বেশি। উদাহরন হিসেবে তিনি বলেন বহির্বিশ্ব থেকে প্রতিদিনই কেউ না কেউ স্বদেশ ফিরছেন। প্রবাসীরা স্বদেশ ফেরার পথে সাথে করে নিয়ে আসেন বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
বিশ্বনাথে বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স আসলেও এখানে শিল্প কল কারখানা গড়ে না উঠা প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ এনায়েত উল্লাহ বলেন বিশ্বনাথে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ মুলত জমি ক্রয় ও দৃষ্টিনন্দন ইমারত নির্মাণেই ব্যয় করা হয় বেশি। তাই দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বিশ্বনাথে জায়গা জমির দাম বেশি।
এ প্রসঙ্গে মাদানিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে’র সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী কমিউনিটি নেতা আলহাজ্ব রইছ আলী বলেন, বিশ্বনাথের অগণিত প্রবাসী যুক্তরাজ্যে বিশাল অংকের বিনিয়োগ করে আসছেন। প্রবাসীরা সব সময়ই নিজের দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কিন্তু বিনিয়োগের অনুকুল পরিবেশের অভাবের জন্যই তারা নিজ দেশে বিনিয়োগের ভরসা পাচ্ছেননা।
তিনি বিশ্বনাথে গ্যস, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন, পৌরসভা, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন সাধিত হলে বিশ্বনাথে প্রবাসী বিনিয়োগ বাড়বে এবং আরও অনেক রেমিট্যান্স আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশ্বনাথ পৌরসভা বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক যুক্তরাজ্য প্রবাসী কমিউনিটি নেতা আলহাজ্ব সুনু মিয়া বলেন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করলে আমরা প্রবাসীরা নিজ দেশে আরও বেশি করে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবো। এতে রেমিট্যান্সের পরিমাণও বাড়বে, দেশেরও উন্নতি হবে।
বিলেতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার প্রতিকৃৎ, যুক্তরাজ্য প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মোঃ আব্দুস সহিদ চৌধুরী বলেন, সরকারী বেসরকারী পর্য্যায়ে প্রতিযোগিতামুলক ও অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসীরা হুন্ডির পরিবর্তে এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে অধিক পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রেরণ করছেন। তিনি আরও বলেন রেমিট্যান্স অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বনাথ অঞ্চল দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।