আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উত্তরাধিকারের ক্ষেত্র্র্রে নারী ও পুরুষের সমানাধিকার ইসলাম সম্মত ?



যারা মন্ত্রী পরিষদে পাশকৃত নারী নীতিমালায় উত্তরাধিকারের ক্ষেত্র্র্রে নারী ও পুরুষের সমানাধিকারের বিরোধীতা করছেন আমি মনে করি, বিষয়টা নিয়ে তাদের আরো ভাববার আছে। তাদের আলোচনায় সুরা নিসার ১১ ও ১৭৬ নম্বর আয়াতসহ মীরাস সম্পর্কীত অন্যান্য আয়াতের রেফারেন্স দিতে দেখি । আমি ইসলাম দরদী সেই সব বন্ধুদের বলতে চাই, কুরআন শরীফ খুলুন এবং দেখুন মীরাস এর আয়াতগুলো অবতীর্ণের সময়। সকল আয়াতই মদীনায় অবতীর্ণ। কেন ? কারণ এগুলো বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র দরকার ।

একটা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল বলেই এই আয়াতগুলো মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। কুরআন অবতীর্ণের পদ্ধতিটিও কিন্তু লক্ষ্যনীয়। অন্যান্য আসমানী কিতাবের মত এক সঙ্গে অবতীর্ণ না হয়ে ধীরে ধীরে অবতীর্ণ হওয়ার কারণ কি ? কারণ হলো- ইসলামী আইনগুলো অনেক বেশি ফ্লেক্সিবল এবং তা অবশ্যই পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ । যখন যে পরিবেশ তৈরী হয়েছে তখনই সে সংক্রান্ত আইন অবতীর্ণ হয়েছে। ইসলাম আপনাকে শুকরের গোস্ত খাওয়ারও অনুমোদন দেয় যদি জীবন বাঁচানোর জন্য অন্য কোন উপকরণ আপনার কাছে না থাকে।

কেন ? কারণ মানবতা। ইসলাম মানবতাকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। মানবাধিকার লংঘন হলে ইসলামের প্রচলিত বিধি-বিধান অবশ্যই শিথিলযোগ্য। যারা মনে করেন, অবতীর্ণ হয়ে যাবার পর কুরআনের সব আয়াত সব জায়গায় পালন করা ফরজ। তাদেরকে বলব, তাহলে আপনার এই মনে করাটাকে ইসলামের আলোকেই আরেকবার যাচাই করে নিন।

ইসলাম কোন কিছুকেই আপনার উপর বোঝা হিসেবে চাপিয়ে দেয়না । এবার আসি ইসলামে নারীর অধিকার এবং মন্ত্রীপরিষদে পাশকৃত নারী নীতিমালা প্রসঙ্গে। ইসলামী রাষ্ট্রে নারীর ভরণপোষনের দায়িত্ব সব সময় পুরুষের উপর ন্যস্ত থাকে। স্বামী-পিতা-ভাই-চাচা-মামা এমনকি শেষ পর্যন্ত যদি তার দায়িত্ব নেয়ার মত কোন পুরুষ জীবিত না থাকে তাহলে রাষ্ট্র সে দায়িত্ব নেয়। এ কারণেই ইসলাম দরদী বন্ধুগণ বলেন, ইসলামে আর্থিক সুবিধা পুরুষের চেয়ে নারীর বেশী।

কিন্তু আমাদের দেশে কি ইসলামী রাষ্ট্র্রের সে ব্যবস্থা বিদ্যমান ? সুরা নিসায় বলা হয়েছে (আয়াত নং-৩৪)"পুরুষগণ নারীর তুলনায় মর্যাদাবান। কেননা আল্লাহ একজন থেকে আরেকজনকে বিশেষায়িত করেছেন (এটা এজন্য করা হয়েছে) যেহেতু পুরুষ নারীর জন্য অর্থ ব্যয় করে। " এই আয়াতাংশে স্পষ্ট করে নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্বের কারণ ব্যাখা করা হয়েছে। ইসলামী রাস্ট্রে নারীর কখনোই অর্থনৈতিক দায় নিতে হবেনা। এটা সবসময় পুরুষকেই বহন করতে হবে।

আর এ কারণেই (ইসলামী রাষ্ট্রে)পুরুষ নারীর চেয়ে মর্যাদাবান। আয়াতাংশে যে শর্তে পুরুষকে নারীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে (অর্থ ব্যয় করা) সে শর্ত যদি পুরুষ পালন না করে তাহলে কি হবে ? আরবীতে একটা কথা আছে " ইজা ফাতাশ-শারতু ফাতাল মাশরুত"। অর্থাৎ শর্ত অনুপস্থিত থাকলে মাশরুত (শর্ত প্রযোজ্য হলে যে কাজ করতে হত) পালনও দরকার নেই। একটা উদাহরণ দেই: নামাজ ফরজ হল সময় (ওয়াক্ত) হওয়া সপেক্ষে। এখানে ওয়াক্ত হল শর্ত আর নামজ পড়া হল মাশরুত।

সুতরাং সময় না হলে নামাজ পড়তে হবেনা। এই আলোচনার পর আমরা কি বলতে পারি যে, পুরষ যদি নারীর জন্য অর্থ ব্যয় না করে তাহলে সে নারীর চেয়ে মর্যাদাবান হতে পারেনা ? একই কথা কিন্তু মীরাসের ক্ষেত্রেও খাটে। আল্লাহ নারীকে কেন পুরুষের চেয়ে অর্ধেক সম্পদ দেবার কথা বলেছেন ? কারণ, ইসলাম দরদী সবাই বলবেন, ইসলামে আসলেই পুরুষের চেয়ে নারীর অর্থনৈতিক সুবিধা বেশী। কিন্তু যে সমাজে/রাষ্ট্রে এই আইন প্রয়োগ করতে চান সেই সমাজে/রাষ্ট্রে যদি নারী পুরুষের চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ না করে ? তাহলেও কি সে অর্ধেক সম্পত্তি পাবে ? আগের প্যারায় আমাদের প্রদর্শিত যুক্তি বলছে পাবেনা । যদি পায় তাহলে কি তা ন্যায় বিচার পরিপন্থী হবেনা ? ঠিক এ কারণেই আমি মনে করি, মন্ত্রী পরিষদ কর্তৃক পাশকৃত নারী নীতিতে নারীকে সম্পদের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্র্র্রে পুরুষের সমান দেয়াটা ঠিকই আছে।

কারণ সমাজ/ রাষ্ট্র যদি ইসলামের অনুসারী না হয় তাহলে সেখানে ইসলামের আইন মানতে গেলে ইসলামের সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হয় তেমনি জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসতে পারে। আমাদের বুঝতে হবে, এই দেশ ইসলামের নিয়মে চলে না। পরিশেষে, আমি ইসলাম দরদী বন্ধুদের বলতে চাই, আপনারা এ সমাজ/রাষ্ট্রকে ইসলামী সমাজ/রাষ্ট্রের সাথে গুলিয়ে ফেলে নারী নীতির বিরোধীতা করে প্রকারন্তরে নারী এবং ইসলাম উভয়েরই ক্ষতি করছেন। আসুন আরো ভালো করে ইসলাম সম্পর্কে জানি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.