বাংলার আলো-জলে ধূলো মেখে বেড়ে ওঠা মুক্তি
আজ আর কবিতা লিখব না । একটা গল্প বলব। কাছে থেকে দেখা এক অভিশপ্ত জীবনের গল্প।
আলোর নিচে যে আঁধার খেলা করে তার খবর কি কেউ রেখেছে....!!!!
কেউ জানে নি ... কেউ জানবেও না কোন দিন.....
অন্ধকারে হারিয়ে যাবে এক অদ্ভুত জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড, যার নেভার কথা ছিল না এত তাড়াতাড়ি....
তারপরও নিভে যাচ্ছে..... অচিরেই নিভে যাবে চিরতরে। ।
ব্যাপারটা খুব দুঃখজনক কিন্তু কিছু করার নেই। আমার খুব কষ্ট হয় কিন্তু আমার কিছুই করার নেই..........
..............................................................................................................
জমিদার দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীর প্রতাপের সাথে পার করে দিয়েছেন তার জমিদারি। জমিদারি প্রখা রদ হওয়ার কারণে তার ছেলে আর জমিদার হতে পারলেন না। তবে পারিবারিক খ্যাতির জোরে হয়ে গেলেন সংসদ সদস্য। এখন পর্যন্ত তিনি নির্বাচিত সাংসদ।
তার মেয়ে সেতারা চৌধুরী।
..............................................................................................................
আরেক প্রভাবশালী জোতদার খোরশেদ আলম প্রধান। তার বাবাও ছিলেন প্রভাবশালী জমিদার। আর তার বড় ছেলে হায়দার প্রধান। ....
.............................................................................................................
একদিন নাটকীয়ভাবে বিয়ে হলো প্রভাবশালী দুই পরিবারের মধ্যে।
এলাকার সেরা সুন্দরী সেতারা ও রাজকুমারের মত সুদর্শন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা হায়দার........
হায়দার তখন এক খ্যাতনামা এনজিও তে মোটা বেতনে চাকুরী নিল। আর সেতারা চৌধুরী হলেন শিক্ষিকা। কিছুদিন পরে তাদের ঘর আলো এলো এক ফুটফুটে সন্তান। দুই অভিজাত পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের প্রথম সন্তান। খুশির বান ডেকে গেল দুই পরিবারে।
......
নানা কারণে পারিবারিক ব্যক্তিত্যের দ্বন্দ থেকে কিছুদিন পর শুরু হল ছোট্ট পরিবারটিতে পারিবারিক দ্বন্দ্ব.....
বিলাসবহুল পারিবারিক জীবন ছেড়ে ক্লাস থ্রি তেই ছোট্ট বাবুকে চলে যেতে হলো আবাসিক স্কুলে।
তারপর শুরু হয় একাকী জীবন। অতপর মাঝে সেভেন থেকে এইচ.এচ.সি পর্যন্ত কঠিন নিয়মের মধ্যে আরেকটি আবাসিক জীবন। এর মাঝেই ছোট্ট বাবুটি ক্রমশ বড় হয়ে ওঠে, বেড়ে ওঠে অনেক মেধাবী ও দুরন্ত হয়ে। মেডেল আর পুরস্কারে ভরে যায় বাসার শোকেস।
তারপর ঢাকায় চলে আসা এবং শুরু হয় মাদকাসক্ত জীবন। অভিজাত পরিবারের একক উত্তরাধিকার বসে বসে মদ পান করে সারা রাত ধরে। মধ্য দুপুরে ঘুম থেকে উঠে জীবনকে খুব অস্থির মনে হয় তারকাছে। এর মাঝে অজস্র প্রেমের সুযোগ আসে কিন্তু ভালো লাগার মতো মেলে না পুরোপুরি..... দেখতে দেখতে ক্রমশ মুগ্ধতা শুরু হয় এক কাছের বন্ধুতে.....কিন্তু নানাবিধ কারণে তা আর হয়ে ওঠে না। ভার্সিটি জীবন চলে যায় এভাবে........
............................................................................................................................................................................................................................
ধুপ করে একদিন চাকুরী ছেড়ে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল দুরন্ত ছেলেটি।
বাবা-মা চোখের পানি ফেলল অনেক। কাছের বন্ধুরাও কষ্ট পেল.... অনেকে আবার বলেই ফেলল , যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে.... ওর কাছে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করিনি কখনো।
কিন্তু ছেলেটিকে আর খুজে পাওয়া গেল না। অসাধারণ ভালো মনের ছেলেটিকে আর কেউ খুজে পেল না। ...সে হয়তো এখনো বেচে আছে, তবে আগের মত সততা নিয়ে বেচে নেই হয়তো।
কারণ সে নষ্ট হয়েই জীবনটাকে ভোগ করতে চেয়েছিল.....উম্মাদ হয়েই কাটাতে চেয়েছিল জীবনের বাকি কয়েকটা দিন। তাই আর খুজতে যাই না। ....... আমি আমার বন্ধুর সততা ও আপোষহীন স্বভাবের কথা ভাবলে এখনো গর্ব বোধ করি........আর কখনো বোধ করি অসীম শূণ্যতা। ।
মাঝে মাঝে খুজে পেতে চাই সেই পরম বন্ধুটিকে ..... তবে মাঝে মাঝে খুজে পেতে চাই না।
কারণ আমার বন্ধুটি আমার আজীবন অনুপ্রেরণা...... তার নষ্ট জীবন আমাকে খুবই কষ্ট দিবে...
খুবই কষ্ট.........
ভালো থেকো বন্ধু.... অনেক ভালো। ।
............................................................................................................................................................................................................................
নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে সে আমায় প্রশ্ন করেছিল....
-জমিদার জোতদার পরিবারের পাপের দায়টা কি আমাকেই শোধ করতে হচ্ছে? আমার কোন পাপ ছিল না। এমন হওয়ার কথা না। ও.কে পূর্বসুরীদের দায় শোধ করতে আমার আপত্তি নেই।
আমি মেনে নিলাম আমার ভাগ্য।
আমি ভালো থাকব.. তুই ভালো থাকিস। পারলে ভূলে যাস.....সেটাই ভালো ।
..............................................................................................................
আজও আমাকে ভাবিয়ে তোলে এক উল্কাপিন্ডের নিরুদ্দেশ যাত্রার গল্প.......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।