ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা শহরের স্বর্গ বললেও কম বলা হবে। চারদিকের তীব্র নগরায়নের মাঝে এক সুবিশাল সবুজ শ্যামলিমা, ছিটেফোটা কতেক স্হাপনা (অপরিকল্পিত যদিও), তথাপি এখানের বাতাসে একটি মাইক্রোক্লাইমেট বিরাজ করে। শীতকালে, শাহবাগের রাস্তা দিয়ে ক্যাম্পাসে আসার অভিজ্ঞতা থাকলে, যে কেউ এর সত্যতা মানবেন।
এককালে কোন এক কবি, শহরের মাঝে এই একচিলতে গ্রামটিকে "ডাকাতদের গ্রাম"-এর মত একটি মোহন কাব্যিক নামে অভিহিত করাতে এখানকার কুলীন জাতকুলোদ্ভব কুশীলবদের সবিশেষ গাত্রদাহ হয়েছিলো, তা খুব মনে আছে। আসলে কবি মানুষতো, তাই এখানকার ছাত্ররূপী কতিপয় বিবেকবোধহীন দ্বিপদ (জানোয়ার বলে জানোয়ারদের অবমাননা করতে চাচ্ছি না) প্রাণীর নীচতার সঠিক ওজনদার শব্দ চয়ন হয়তো করতে পারেননি।
কিংবা দেশব্যাপী নিজের শত্রু বাড়াতে চাননি...
আজ সেরূপ একগাদা দ্বিপদ প্রাণী, প্রবল তান্ডবে তাদের পাশব ক্ষমতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। ভাগ্যক্রমে রক্তপানি করা শ্রমের পয়সায় কেনা বাহনটি নিয়ে সে তান্ডব প্রকাশের কিছুটা আগেই চলে গিয়েছি অফিসে। তারপর রাতে যখন বাসায় ফিরছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার লাগানো আছে বলে ঘুরিয়ে না দিয়ে ঢুকতে দিয়েছে ক্যাম্পাসে। চাকার নীচে মাড়িয়ে ফিরেছি এমন আরো অনেক দূর্ভাগা বাহনের কাঁচের টুকরাগুলো।
অবাক অবাক মানি, আপনি এসব দ্বিপদের সাথে কথা বলুন, তাদের বিশ্বাস তারা যথার্থ কাজটিই করেছে... তারা অপমানের শোধ নিয়েছে, তারা ক্ষমতার প্রকাশ ঘটিয়েছে, তারা তাদের কোন এক সহপাঠির সাথে করা অন্যায়ের যথাযোগ্য জবাব দিয়েছে।
তবে কিনা উত্তেজিত ছিলোতো, তাই কার অন্যায়ের শোধ কার উপরে নিয়েছে সেটা ঠিক বলতে পারছে না। আর যে সমস্ত লোকজন তাদের যানবাহন নিয়ে হাতের কাছে ছিলো, তারা "ভিকটিম অফ সারকামস্টেনসেস", ঘটনাপ্রবাহের শিকারমাত্র, সে সময় ভুল জায়গায় থাকার খেসারত তারা দিয়েছে...
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সফেদ সাদা দেয়ালে শৈল্পিক রুচিহীনতার তীব্র নিদর্শন হিসেবে বিপ্লবের দেয়াল লিখন আঁকা হয়। আবুবকর আর ফেলানীর উদাহরণ দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় প্রতিবাদের ভাষা না জানার ফলাফল। আর তাই হয়তো, প্রতিবাদ যে করতে হবেই, প্রতিশোধ যে নিতে হবেই, ঘিলুতে এর চেয়ে বেশী সুক্ষ্ণ নীতিবাক্য ঢোকে না...
শৈশব, কৈশোর এবং যৌবন পার করেছি এ ক্যাম্পাসে (বাবার অধ্যাপনার সুবাদে) এবং এখনো আছি। হলফ করে বলে দিতে পারি, কিছু কিছু মানুষের সাথে গাদা খানেক জানোয়ারও পয়দা হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গর্ব করার মত আজ আর কিছু বাকী নেই এর, একমাত্র সাইজ আর নামের খোলসটা ছাড়া। স্বায়ত্বশাসনের নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে যাচ্ছেতাই করার সার্টিফিকেট যেদিন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে, সেদিন এর ধ্বংসের বীজ বপন করা হয়েছে। অতি বড় প্রাণশক্তির বলে, আজো এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু রত্নসম মানুষ বের হয়, এছাড়া এক বিপুল পরিমাণ মেধাবীদের দূরদৃষ্টিহীন অগভীর গোমূর্খ বানানোর অপরাধে এ প্রতিষ্ঠান অপরাধী। আর, দালালীর পান্ডা না হলে কিংবা বড়মাত্রায় অন্যায় করতে না পারলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট পদগুলো কেউ অলংকৃত করতে পারেনা। হাইকোর্টে মাদ্রাসা ছাত্রদের রিটের পর রিটকে চেম্বার জজের মদদে ঠেকিয়ে রেখে যারা প্রগতিশীলতার বুলি আওড়ান, তাদের শিষ্যদের কেউ কেউ, হয়তো বেশিরভাগই, যে কি করে মানুষই থেকে যায়- তা এক বিপুল বিস্ময়...
অক্ষমের কিছুই করার ক্ষমতা নেই, তাই ব্লগ লিখে এসব দ্বিপদদের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানিয়ে যাচ্ছি।
ভাংচুর করাকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে যারা মানেন, সে সমাজতন্ত্রী কি পুঁজিবাদী, শোষক কি শোষিত, নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কিংবা ইসলামপন্হী, তাদের মৃত বিবেকের জন্য করুণা করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে, আমার সাথে একমত হইতে না পারাটাকে না জানার ফসল হিসাবে এডভান্স ক্ষমা করে দিলাম!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।