ছোট গল্প লিখতে পছন্দ করি,লেখাগুলি পড়ে কমেন্ট দিয়েন কিন্তু!
সকালে ঘুম ভাংতেই চিৎকার চেঁচামেচি। বুঝতে দেরি হলোনা, যে চেঁচামেচিটা তাকে নিয়েই। কাল লায়েলা লবণ আনতে বলেছিল, ভুলে গিয়েছিলেন, আর সকালে উঠেই লায়েলা রান্না ঘরে গিয়েই শুরু করে দিয়েছে লায়েলা। নিজাম সাহেব কিছু বুঝে উঠার আগেই লায়েলার হুঙ্কার,
-আচ্ছা, কাল বাজারে গিয়েছিলেন আপনি? আপনাকে আমি কিছু আনতে বলেছিলাম, আপনার মন এ আছে?
-ইয়ে মানে না মানে………
-কি, বলেন?
-আসলে আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।
-না না, আপনার ভুল হবে কেন? ভুল আমারই।
আপনাকে বাজার পাঠিয়ে, মস্ত ভুল করেছি আমি। এর পর থেকে নিজেই বাজারে যাব আমি। আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা, বেশ বুঝেছি আমি।
-আসলে আমি দুঃখিত। ভুল করে ফেলেছি।
আর হবেনা।
-নাহ, ঠিক এ আছে, বেশ করেছেন। এখন লবণ ছাড়া নাস্তা করেন।
নিজাম সাহেব আস্তে আস্তে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে বসেন। লায়েলা লবণ নিয়ে এখনো বকাবকি করছেন।
অথচ, নিজাম সাহেব খেতে গিয়েই দেখেন, সব ঠিক ঠাক, লবণ এর পরিমানও ঠিকই আছে। তাহলে? নিজাম সাহেব মুচকি হাসেন। খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে রান্না ঘরে যেয়ে লায়েলাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেন। লাযেলার হঠাৎ চুপ হয়ে যায়।
নিজাম সাহেব কানে কানে আস্তে আস্তে বলেন,
-ময়না পাখি, তুমি রাগ করো নাকো, আর এমনটা হবেনা, আসো নাস্তা করবে।
তুমি না খেলে আমি কি করে খাই বল সোনা?
অভিমানী লায়েলা নিজাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে,
-থাক! আর পিরিতি করতে হবেনা, বুড়ো হয়েছো, তবুও তোমার ছেলেমানুষি গেলনা। যাও, আসছি।
নিজাম সাহেব চলে আসেন খাওয়ার টেবিলে, লায়েলার ঠোঁটের কোণে মিস্টি একটা হাসি শোভা পায়। লায়েলা বাকি রুটি গুলো শেকে খাওয়ার টেবিলে এসে দেখে, নিজাম সাহেব বসে আছেন।
-আচ্ছা, তুমি কি বলতো? কখন নাস্তা দিয়ে গিয়েছি, খাওনি কেন? আজ অফিসে আবার দেরি হয়ে যাবে।
-তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
-বুঝেছি, বুঝেছি……খুব বুঝেছি, আর পাম মারতে হবেনা। খাও।
লায়েলা, নিজাম সাহেব দুজনই নাস্তা শেষ করেন।
নিজাম সাহেব নিছক ভদ্রলোক, একেবারেই মাটির মানুষ।
লায়েলাকে সে অনেক বেশী ভালবাসে। আজ সকালের মত প্রতিদিনই এমনটা হয়। লায়েলা তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে পুরো বাড়ি মাথায়ে তোলে আর নিজাম সাহেব চুপ করে দেখেন। লায়েলার এমন কান্ড তার মজাই লাগে।
অফিস শেষ করে নিজাম সাহেব বাড়ি ফেরেন।
লায়েলাকে দেখে নিজাম সাহেব বুঝেছেন, আজও মেয়েটা কেঁদেছে, চোখ দু’টো ফুলে আছে। কিছুই বলেনা নিজাম। রাতে খাবারের পর নামাজ সেরে শোবার ঘরে এসে দেখে লায়েলা চুপ করে বসে আছে।
-কি হয়েছে, লায়েলা?
-অবন্তির কথা ভাবছো?
“অবন্তি” নামটা শুনতেই নিজাম সাহেবকে জড়িয়ে কেঁদে ওঠে লায়েলা। লায়েলা আর নিজাম সাহেবের একমাত্র মেয়ে অবন্তি।
আহ্লাদে মানুষ হলেও আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতই বড় হয়েছে। ক’দিন আগে USA চলে গিয়েছে তার খালার ওখানে। মেয়ের কথাই বার বার মনে পড়ছে লায়েলার। নিজাম সাহেব লায়েলার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
-লায়েলা, আর তো ক’দিন অবন্তি ফিরে আসবে, এভাবে মন খারাপ করে থাকলে বলো?
লায়েলা চোখ মুছতে থাকে। নিজাম সাহেব হাতে একটা ছোট Ice Cream এর বাক্স।
লায়েলা Ice Cream খুব পছন্দ করে, আর পিস্তা flavor তার সবচেয়ে প্রিয়। লায়েলা অবাক হয়।
-তুমি এটা কখন আনলে?
নিজাম সাহেব কিছু বলেননা, মুচকি হেসে বলেন, অফিস থেকে ফিরছি তখনি দেখি রাস্তার পাশে Ice Cream এর দোকান। ব্যস, চট করে নিয়ে এলাম।
পূর্ণিমার আলোতে নিজাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
তার চোখ ভিজে যায়। ভালবাসায়ে সিক্ত হৃদয়ে লায়েলা বলেন,
-তুমি আমাকে এতও ভালবাসো? এতো?
নিজাম সাহেব হাসেন। বলেন,
-চল, ঘুমাবে।
**************************************************************
লায়েলা নিজাম দু’জন দু’জনকে যতটা না ভালবাসেন তার চেয়েও বেশী সম্মান করেন। ভালবাসার মাঝে বেঁচে থাকাই জীবনের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা।
ভালবাসুন, প্রতিদিন, প্রতিক্ষণে আপন করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।