সে যেদিন আমার বুকে মুখ গুঁজিয়া কাঁদিতেছিল,সেদিনকার কথা আমি ভুলি নাই। ঘরময় সুচীভেদ্য অন্ধকার। তাহার মাঝে আমি আর সে। আমাকে জড়াইয়া ধরিয়া তাহার কি কান্না ! সমস্ত বুকটাই আমার ভিজিয়া গেল।
আমি নির্বাক।
আর একদিনের কথা। সেদিন আর অন্ধকার নয়। ফিনিক জ্যোস্নায় সমস্ত পৃথীবিটাকে অপার্থিব মনে হইতেছিল। যতদুর চোখ যায় শুধূই আলো। সেদিন আমাকে বুকে জড়াইয়া সে যে উচ্ছাস প্রকাশ করিয়াছিল,তাহা বর্ণনার ভাষা আমার নাই।
তাহার স্পন্দিত বুক আমার সর্বাঙ্গে অসহ্য যাতনার ঢেউ তুলিতেছিল।
অথচ তাহাকে কিছুই বলি নাই। বলিলেও সে বুঝতো না। সব কথা কি আর লোকে বোঝে ?
আর একদিনের কথা।
সে উপর হয়ে শরৎ পাঠ করিতেছিল।
আমি ছিলাম ঘোরের মাঝে। কি অবর্ণনীয় সুন্দরই না সে ! ওই তুচ্ছ শাড়ীটা তাহার দুধে-আলতা রাঙ্গা গায়ে জড়িয়ে অহম সইতে না পেরে আমায় কি ঠাট্টাই না করিতেছিল। কি অপুর্ব তাহার দেহখানি। বিধাতা তাহার সমস্ত কারুকলা দিয়া গড়িয়াছেন তাকে। যেন প্রস্ফুটিত শতদল।
শাড়ীখানির চওড়া লাল পাড়ের চেয়েও মর্মান্তিক রকমের লাল তার অধরযুগল। অন্যমনষ্ক হইয়া সে যখন তাহার হাতটা আমার উপর রাখিল,হায়! তখন আমায় উদ্ধার করে কে ? সমস্ত অঙ্গে যেন বিদ্যুৎ খেলিয়া গেল। তাহার কিছুই সে টের পায় নাই।
আসলে বুঝিল না। আমারও বলিবার মতো অবস্থা ছিল না।
কোনদিন তাহাকে কিছুই বলি নাই। অথচ বর্গাকৃতির এই ঘরখানিতে আমি তাহার নিত্য সহচর। তাহার সুখ,দুঃখ,উত্তেজনা-সবই অনুভব করিতাম। সমস্ত প্রাণ দিয়া বুঝিতে চাইতাম। কিন্তু কোনদিন কৃপা করিয়াও সে আমার কথা ভাবিত না-ইহা আমি শপথ করিয়া বলিতে পারি।
মানবী ছলনাময়ী।
অবশেষে সে তাই করিল,যাহা করিবার জন্য তাহার মন ছটফট করিত।
যাকে পাওয়ার আশায় সে সমস্ত দিনরাত্রি আমার সঙ্গে কাটাইতো,যার বিরহে সে আমার বুকে চোখের জল জমাইতো,যাকে পাওয়া না পাওয়ার দোলাচলে সে এতদিন বিনিদ্র রজনী পার করিতেছিল,যার মাঝে-মধ্যে রাগ করিয়া সে আমার বুকে খোন্দল করিত,অবশেষে সেই ব্যক্তিটিই একদিন মাথায় টোপর পড়িয়া তাহাকে অধিকার করিল !
আমি তখনো নির্বাক। আমারই বুকে চাপিয়া তাহারা মাতিয়া উঠিল রসলীলায়।
পৃথীবিতে এমনই হইয়া থাকে।
আমি দেখিতে কেমন জানিনা,কোনদিন সে সুযোগও পাই নাই। কিন্তু বিশ্বাস করুন,আমারও প্রাণ আছে,আমিও অনুভব করি। হ্যাঁ, আমার শরীরটা তেল চিটচিটে,দুগর্ন্ধময় গায়ে শতচ্ছিন্ন মলিন জামা। কেন ? তাহার উত্তরে আমি এতটুকুই বলিতে পারি,আমি অক্ষম।
হায় ! আমি যে একখানি ক্ষুদ্র বালিশমাত্র।
কতদিন তাহার দুঃখের অশ্রুজলে আমায় স্নান করিতে হইয়াছে, তাহার দেহের তলে আমার সমস্ত শরীর কতবারই না পিষ্ট হয়েছে,তাহার গোপন প্রেমলীপি আমারই বুকের খোন্দলে স্থান পেয়েছে,তাহার অন্তরের সমস্ত নিগুঢ় বার্তাই আমি জানিতাম। তবুও সে আমায় হেলায় ত্যাগ করিয়া বিবাহ করিল একজন মানুষকে।
তাহার কতটুকু সে চেনে !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।