আমাদের প্রধান সমস্যাসমূহ কি আমরা কস্মিনকালেও বুঝিতে পারি নাই। ইহা আমাদের ব্যর্থতা। এই প্রেক্ষাপটে, আমাদের সমস্যাসমূহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থা এবং দাতা সংস্থাসমূহ গভীরভাবে অনুধাবন করিবার ইজারা লইয়াছেন। তাহারা আমাদের জানাইয়া দেয় কখন কি লইয়া আমাদের চিন্তিত হইতে হইবে। আমরা সেই সকল নির্ধারিত বিষয়ে সকলে মিলিয়া চিন্তিত হই।
বিভিন্ন মিডিয়া, এনজিও, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনী সংস্থাসমূহ সেই সকল চিন্তাকে সফলভাবে দু:শ্চিন্তাতে পরিনত করিয়া থাকে। সেই দু:শ্চিন্তাকে সরল সাধারন মানুষের মাঝে ছড়াইয়া দেয়। ফলে সীমাবদ্ধ আতংক সার্বজনীন আতংকে রুপান্তরিত হয়। ইহার পরে তাহারাই সার্বজনীন দু:শ্চিন্তা ও আতংক হইতে আমাদের উদ্ধারের জন্য আহার নিদ্রা ভুলিয়া ঝাপাইয়া পড়ে। বর্তমান সময়ে সার্বজনীন আতংক ও দু:শ্চিন্তার জন্য নির্ধারিত বিষয় হইতেছে ’ভূমিকম্প’।
আজ যুব সংগঠন সমূহের সমন্বয়কারী একটি সংস্থার সভায় উপস্থিত থাকিতে হইয়াছিল। সভায় দেখিলাম সকলে ভুমিকম্প হইতে জাতীকে রক্ষার জন্য অত্যন্ত ব্যকুল। একটি এনজিও দাতাদের সহযোগিতায় ভূমিকম্প হইতে মানুষকে সচেতন করিবার মহত উদ্দেশ্যে লিফলেট, কার্ড, পোস্টারসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছে। উক্ত সংস্থার প্রধান জানাইলেন হাজার হাজার কপি ছাপাইয়া তাহারা ফেলিয়া রাখিয়াছেন। কেহ বিতরন করিতে চাহিলে তাহারা ঐ সকল আকর্ষনীয় লিফলেট, পোস্টার ও কার্ড আনন্দের সহিত সরবরাহ করিবেন।
বিভিন্ন সরকারী দপ্তরেও দেখিয়াছি বর্তমানে তাহারা ভূমিকম্প বিষয়ক কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার প্রদান করিবার জন্য উন্মুখ হইয়া থাকেন। অবস্থা এমন যে, ভূমিকম্প ব্যতীত অন্য কোন বিষয় নিয়া ভবিবার মতন সময় হাতে নাই। অন্য বিষয়ে ভাবনা রীতিমতন হারাম।
ভূমিকম্প লইয়া অবশ্যই ভাবিতে হইবে এবং জনগনকে সচেতন করিতে হইবে। ইহাতে দ্বিমত করিবার অবকাশ নাই।
কিন্তু ভূমিকম্প বিষয়ে আতংক ছড়াইয়া জনজীবন বিশেষত নগরজীবনকে কেন আতংকিত করিয়া রাখিতে হইবে তাহা আমার মতন স্বল্প বুদ্ধির মানুষের নিকট বোধগম্য নহে। আতংকগ্রস্থ করিবার কথা বলিলাম পূর্বের কিছু ঘটনার অভিজ্ঞতার আলোকে।
নিকট অতীতে জাতির মূল সমস্যা ছিলো আর্সেনিক। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর আর এনজিও সংস্থাগুলির বদৌলতে আর্সেনিক আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যহত করিয়াছিলো। পানি পান করিবার সময় মনে হইত গ্লাস ভর্তি আর্সেনিক পান করিতেছি।
মিডিয়ায় আর্সেনিকের বিষয়টি এমন ফলাও করিয়া প্রচার করা হইয়াছিল যে আর্সেনিক হইতে মুক্তি না পাইলে জাতি ধ্বংস হইয়া যাইবে। এই দেশে কেহই আর বাঁচিয়া থাকিবেনা। কিন্তু আকস্মাত আর্সেনিক হইতে জাতিকে উদ্ধারের আগ্রহ সংশ্লিষ্ট এনজিও ও সরকারী দপ্তরসমূহ হারাইয়া ফেলিল। মিডিয়া নিশ্চুপ হইয়া গেল। যাহারা বিষয়গুলি পর্যালোচনা করিয়া থাকেন বা খোঁজ খবর রাখেন তাহারা জানেন আর্সেনিক বিষয়ে এখন আর বিশাল ফান্ড বা অনুদান নাই।
সংশ্লিষ্ট এনজিও, সরকারী ও আধাসরকরী দপ্তর ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনী সংস্থাসমূহের দেশাত্ববোদ ও জনগণের প্রতি কল্যাণবোধ এতই প্রখর যে ফান্ড বা অনুদানের আকার সীমিত হইবার সাথে সাথে তাহারা নীরব হইতে দ্বিধা বোধ করেনা। জাতিকে আর্সেনিক গ্রাস করিলে এখন আর কাহারো কিছু যায় আসেনা। আর্সেনিক পরিস্থিতি কতখানি ভয়ংকর ছিল আর জাতিকে আতংকিত করিয়া আর্সেনিক মুক্তি অভিযানে সামগ্রীক পরিস্থিতির কতখানি উন্নতি হইয়াছে তাহার কোন পরিসংখ্যান নাই। যে সকল এনজিও আর্সেনিক খেদাও আন্দোলনে ভুমিকা রাখিতে পারে নাই তাহারা সুযোগপ্রাপ্ত এনজিওসমূহ, তাহাদের কনসালন্টেট ও এনজিও মালিক তথা কর্মকর্তরা যে কত প্রকার উপায়ে লাভবান হইয়াছে তাহা প্রকাশ করিতে কুণ্ঠিত হয় না।
আর্সেনিকের পূর্বে ছিলো এইডস।
বর্তমানে এইডস-এর বাজার মন্দা। কারন দাতাদের ফান্ড বা অনুদান নাই। এইডস-এর পূর্বে ছিলো গণশিক্ষা। উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষার লেবেলে জাতিকে শিক্ষিত করিবার জন্য সে কি অক্লান্ত প্রচেষ্টা। জাতিকে শিক্ষিত করিবার অভিযানে একজন ছাত্রকে তিনটি উপ আনুষ্ঠানিক বিদ্যালয়ে পড়িতে দেখিয়াছি।
কারন এই সকল বিদ্যালয়ে পড়িলে নানারুপ সহযোগিতা পাওয়া যাইত। উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সেই রমরমা ভাব এখন আর নাই। কারন দাতাদের ফান্ড বা অনুদান নাই। উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পূর্বে ছিলো ডায়রিয়া। ডায়রিয়ার পূর্বে ছিলো পরিবার পরিকল্পনা।
ভূমিকম্প অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভূমিকম্পের মতনই ভয়ংকর বিষয় অগ্নিকান্ড। প্রতিটি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা একটি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু সামষ্টিক হিসেবে অগ্নিকান্ডে বার্ষিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেক বেশী। কিন্তু অগ্নিকান্ডের বিষয়ে সচেতনতা সৃস্টিতে ফায়ার সার্ভিস ব্যতীত অন্য কাহারো আগ্রহ দেখা যায়না।
সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে কত লোক প্রান হারান তাহার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নাই। এই সকল দূর্ঘটনার অন্যতম কারন চালকদের অসর্তকতা। চালকদের নিরাপদ চালকে পরিণত করিতে এবং সড়ক দূর্ঘটনার হার হ্রাসের জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের ’নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন আর বুয়েটের একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যতীত অন্যান্য এনজিও ও সরকারী দপ্তরগুলির কোন কর্মযজ্ঞ নাই। কারন দাতারা এই সকল বিষয়ে অর্থায়নে আগ্রহী নহে। ইহাছাড়া এইখাতে বিশাল ফান্ড বা অনুদান নাই।
বর্তমানে পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে লোভনীয় ফান্ড রহিয়াছে। ভূমিকম্প বিষয়টি পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন কার্যক্রমের সহিত সম্পৃক্ত করা যায়। যতদিন ফান্ড আছে ততদিন সাধারন মানুষকে ভূমিকম্প বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি অপেক্ষা আতংকগ্রস্থ করিবার ধারা অব্যাহত থাকিবে। ফান্ড শেষ হইলে ভূমিকম্প বিষয়টি স্তিমিত হইয়া যাইবে। তখন মনে হইবে এই দেশে ভূমিকম্প হইবার কোন সম্ভবনা নাই বা কোনকালেই ভূমিকম্প বিষয়ে আতংক সৃষ্টির কার্যক্রম ছিলনা।
ভূমিকম্প উন্মদনা একদিন শেষ হইবে। তারপর আসিবে নতুন কোন বিষয়। এই চক্র চলিতেই থাকিবে। এই চক্র ভাঙিবার শক্তি সাধারন জনতার নাই। তাহারা শুধু আতংকগ্রস্থ হইতে পারে।
তাহারা সরল আর নিরাপদ জীবন যাপনে মহান সৃষ্টিকর্তার আকুল করুনা কামনা করিতে পারে। মহান সৃষ্টিকর্তা ছাড়া তাহাদের কথা শুনিবার আর কেহ নাই। ইহাই সত্য, ইহাই বাস্তব।
পূর্বে পোস্ট করা অক্ষমের মন্তব্য প্রতিবেদন-এর লিংক
অক্ষমের মন্তব্য প্রতিবেদন// সেনানীবাসের বাসস্থান : আপোষহীন নেত্রীর পক্ষে আপোষ প্রস্তাব আর সার্কাস চক্র
Click This Link
অক্ষমের মন্তব্য প্রতিবেদন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিই বিষয়টি মিমাংসা করিয়া দিন
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।