আদর্শ আর নীতিহীন রাজনীতি করিতে আমরা যে বিন্দুমাত্র লজ্জিত হইনা তাহার অকাট্য প্রমান দিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবি সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাইয়াছেন যেন দেশ ও গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির বিষয়টি আদালতের বাইরে অতিসত্বর সমাধান করা হয়। একজন নেতার বাসস্থানের সহিত গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থ আর আইনের শাসন কিভাবে জড়িত হইল তাহা খন্দকার মাহবুব হোসেন ব্যাখ্যা করেন নাই । আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকিলে আদালতের রায় মানিয়া লওয়া উচিত। সকলকে আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হইবার আহ্বান জানান উচিত।
অথচ আদালতের বাইরে মিমাংসার কথা বলিয়া তিনি অজান্তেই এই দেশের নোংরা রাজনীতির একটি স্বরুপ প্রকাশ করিয়া ফেলিয়াছেন। গত আওয়ামী সরকারের আমলে আদালতের বাইরে এইভাবে একটা মিমাংসা করিয়াই হোমো এরশাদ একের পর এক জামিন পাইয়াছিলেন। তিনি বর্তমান মহাজোট সরকারের শরীক। আজ এইরুপ মিমাংসার আবদার লইয়া আপনার প্রদানকৃত বক্তব্য গণতন্ত্রের প্রাথমিক স্বার্থ (বৃহত্তর স্বার্থ অনেক পরের বিষয়) এবং আইনের শাসনে প্রতি অবজ্ঞার শামিল। গণতন্ত্রের আপোসহীন নেত্রী কি জানেন না যে, আদালতের রায় না মানিয়া আদালতের বাইরে একটি বিষয়ের মিমাংসা অত্যন্ত লজ্জাস্কর।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসিবার পরেই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে বাসস্থান হইতে উচ্ছদের বিষয়ে উদ্যোগী হয়। ইহা অস্বাভাবিক কিছু নহে। বিগত আওয়ামী সরকার তথা ঐক্যমতের সরকারের আমলের শেষ ভাগে বঙ্গভবনকে গণতন্ত্রের মানসকণ্যা ও তাহার পরিবারের নামে চিরস্থায়ী বরাদ্ধ বাস্তবায়ন এবং নিরাপত্তা সংম্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করিবার জন্য আগ্রহী হইয়া ওঠে। তাহাদের মুল যুক্তি ছিলো প্রধানমন্ত্রীর নিরাপদ জীবনের জন্যই নিরাপদ বাসস্থান প্রয়োজন। তাহারা সংসদে গণতন্ত্রের মানসকণ্যার জন্য গণভবন এবং তাহার বোনের জন্য অন্য আর একটি সরকারী বাসভবন বরাদ্ধ করে।
কিন্তু বিরোধী দল ছিলো বিএনপি। তাহারা ও তাহাদের সমর্থক মিডিয়াগোষ্ঠী বিষয়টি লইয়া নেতিবাচক প্রচারনা চালায়। ভোটের রাজনীতিতে ইহা প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে বর্তমান বিরোধীদল তথা বিএনপি ক্ষমতাসীন হইলে এই বরাদ্ধ বাতিল করে। সুতরাং এইবার ক্ষমতায় আসিয়া গণতন্ত্রের মানসকণ্যা সেনানীবাসের বাসস্থান হইতে গণতন্ত্রের আপোসহীন নেত্রীকে উচ্ছেদ করিবার বিষয়ে আগ্রহী হইবেন না- ইহা আকাশকুসুম কল্পনামাত্র।
প্রকৃতপক্ষে চিরস্থায়ী বরাদ্ধের বিষয়টি হইতেছে গণতন্ত্রেরে মানসকণ্যা এবং গণতন্ত্রের আপোসহীন নেত্রীর বৃহত্তর প্রতিহিংসার রাজনীতি চলমান রাখার নিয়ামক পক্রিয়া।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবি সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন আরও বলিয়াছেন, দেশের আইনজীবী সমাজ জনগণের সহিত একাত্মতা ঘোষণা করিয়া এই বিষয়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হইবে। " দেশের জনগন দলীয় লেজুড়বৃত্তি করিয়া জীবনযাপন করেনা। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রনহীন উর্দ্ধগতি লইয়া আপনারা চিন্তিত নহেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি লইয়া আপনাদের উদ্বেগ নাই।
বিদ্যুত-এর যন্ত্রনা লইয়া আপনার সোচ্চার নহেন। একজন সাধারন মানুষ কিভাবে দিনযাপন করিয়া থাকে তাহা জানিবার প্রয়োজন আপনারা কোন কালেই বোধ করেন নাই। আপনাদের নিকট সকল কিছুর উর্দ্ধে নিজ নিজ দলের নেত্রী। এই দেশে যাহারা লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি করিয়া থাকেন তাহাদের নিকট দুই নেত্রী ঈশ্বরের চাইতেও অধিক ক্ষমতাবান। সাধারন মানুষের কাজকর্ম আছে।
আপনি বলিলেই তাহারা একজন নেত্রীর বাসস্থান উদ্ধারে ঝাপাইয়া পড়িবে ইহা হাস্যকর তথ্যের বেশী কিছু নহে। তবে সাধারন জনগনকে লেজুড়বৃত্তির অংশ বলিয়া অপমানিত করিবার অধিকার আর কতদিন ভোগ করিবেন!
মাহবুব হোসেন আরো বলিয়াছেন, "দীর্ঘ ৩০ বছর পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আক্রোশের বশবর্তী হইয়া বর্তমান সরকার খালেদা জিয়াকে ওই বাড়ি হইতে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়াছে। " সরকার উচ্ছেদের নোটিশ কতদিন পরে দিয়াছে সেই প্রশ্ন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হইল সেনানীবাসের বাসস্থানের বরাদ্ধ সঠিক হইয়াছিল কিনা এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী নিজ আর্থিক সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করিয়া সেনানীবাসের ঐ বাসস্থান রাখিবার মত মৌলিক যুক্তি উপস্থাপন করিতে পারিবেন কিনা। সেনানীবাসের বাসস্থান মানে সেনাবাহিনীর কাছাকাছি থাকা।
আহা ক্ষমতা আর বন্দুকের নলের প্রতি আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের (এরশাদের ক্ষমতা দখলের পরে গণতন্ত্রের মানসকণ্যা অভিনন্দন জানাইয়াছিলেন) যতটা আস্থা তাহা যদি সাধারন জনতার উপরে থাকিত!!
তিনি বলিয়াছেন, "উচ্ছেদের বিষয়টি শুধু অনৈতিক নহে, মানবিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধ। " মানবিক মূল্যবোধ বলিতে কি বুঝাইতে চাহিয়াছেন তাহা ব্যাখ্যা করিলে ভালো হইত। বিরোধী দলীয় নেত্রী বা গণতন্ত্রের আপোসহীন নেত্রী কি অত্যন্ত গরীব। তিনি নিম্ন আয়ের মানুষ!! তাহার সন্তানরা কি বেকার!! যদি তাহাই না হইবে তবে একটি বাসস্থানকে দখলে রাখিয়া মানবিক মূল্যবোধের লংঘন করিয়াছেন তিনি নিজে। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির ধারক বাহক হিসেবে উকিল সাহেব কালো কোটের মতন কালো চশমাও পড়িয়াছেন।
তাই অনেক কিছুই তাহার চোখ এড়াইয়া যাইবে। আদালতের রায়ের আলোকে আপনারা কেন সোচ্চার হইবেন না যে এইরুপ বরাদ্ধ যাহাদের রহিয়াছে এবং যাহারা আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্বেও এইরুপ বরাদ্ধের সুযোগ ভোগ করিতেছেন তাহাদের বরাদ্ধ অতি সত্বর বাতিল করিতে হইবে।
তিনি বলিয়াছেন, "খালেদা জিয়ার বাড়ির বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এটি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত। দেশের মানুষ কোনো অবস্থাতেই খালেদা জিয়াকে বাড়ি হইতে উচ্ছেদ করিতে দিবে না।
আইনের মারপ্যাঁচে অথবা যেকোনো কারণেই হোক হাইকোর্ট ওই আদেশ বহাল রেখেছেন। ফলে দেশে আজ এক ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ’ বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানা বন্ধ, জনজীবন অতিষ্ঠ অথচ বিরোধী দলের নিকট মূল ইস্যু নেত্রীর সেনানীবাসে বরাদ্ধ পাওয়া বাসস্থান। যুক্তি প্রদর্শন করুন। সাধারন জনগন আবেগী দৃশ্য বাংলা চলচিত্রেই উপভোগ করিয়া থাকে।
এই ধরনের আবেগী বক্তব্য দিয়া তাহাদের বিনোদন প্রদান হইতে বিরত থাকিলে শোভন হয়।
তিনি বলিয়াছেন, "আমরা আইনের শাসন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। " আপনারা যে আইনের শাসন আর গণতেন্ত্র বিশ্বাস করেন তাহা আপনাদের আচরন দেখিলেই অনুধাবন করা যায়। আপনাদের নিকট গণতন্ত্র আর আইনের শাসনের জীবন্ত মূর্তি হইল দলীয় নেত্রী। আপনারা আশাহত হইবেন না।
কারন বর্তমান সরকারী দলের নিকটও দেশ, জনগন, গণতন্ত্র আর আইনের শাসনের জীবন্ত মূর্তি হইল তাহাদের নেত্রী। এই দুইমূর্তি অন্ধ অনুগতদের কল্যাণে সকল কিছু উর্দ্ধে। আমরা এক অস্থির আশাহীন সময় অতিক্রম করিতেছি। এই পরিস্থিতি হইতে উত্তরনের পথ আমাদের জানা নাই।
প্রতি পাঁচ বছর পর পর আমরা মেলার মাঠে সার্কাসের দল পরিবর্তন করিযা থাকি।
আমাদের নিয়তি এতই খারাপ যে, দুইটার বেশী সার্কাসের দল আমাদের নাই। বাকী যাহারা আছে তাহারা এই দুইটি সার্কাস দলে ক্লাউন আর অঙ্গসজ্ঝার অস্থায়ী চাকুরীতে নিযুক্ত আছে।
তথ্যসূত্র:
খালেদার সেনানিবাসের বাড়ি/ আদালতের বাইরে সমাধান করার দাবি
Click This Link
অক্ষমের মন্তব্য প্রতিবেদন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিই বিষয়টি মিমাংসা করিয়া দিন
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।