আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনার খণ্ডিত অংশের দোহাই দিয়ে নুরকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না!



নতুনদেশ ডটকম কানাডার সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনার খণ্ডিত অংশ অজুহাত হিসেবে দাড় করিয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী নুর চৌধুরী কানাডায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সরকারও ওই খন্ডিত অংশ উদ্ধৃত করেই নুর চৌধুরীকে ‘বের করে দেওয়া যাচ্ছে না’ বলে বক্তব্য দিচ্ছে। একজন মার্কিন নাগরিককে হত্যা মামলায় দণ্ডিত এক ব্যক্তিকে কানাডা থেকে বের করে দেওয়ার প্রশ্নে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনাটি সম্পর্কে খোদ নুর চৌধুরীর আইনজীবী বারবারা জ্যাকম্যান বলেছেন,’সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে - বিশেষ ব্যতিক্রম পরিস্থিতি ছাড়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন কোনো দেশে কোনো ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানো যাবে না। মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ ব্যতিক্রম পরিস্থিতি’ কি তার কোনো ব্যাখ্যা কানাডার সুপ্রীম কোর্ট দেন নি। তবে কানাডার সুপ্রীম কোর্ট বরাবরই ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি বা জাতীয় জরুরী অবস্থা’কে বিশেষ পরিস্থিতি হিসেবে উল্লেখ করে আসছে।

’ নুর চৌধুরীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন,’এ ব্যাপারে কানাডা সরকার অন্যকিছুও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সেটা আমি জানি না। ’ বঙ্গবন্ধুর খুনী নুর চৌধুরীকে কানাডায় আশ্রয় দেওয়া নিয়ে কানাডার মূলধারার মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রভাবশালী পত্রিকাগুলো এ ব্যাপারে সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে প্রশ্ন তুলেছে, ঠাণ্ডা মাথার একজন খুনীকে আশ্রয় দিয়ে কানাডা কি একটি জাতীর অনুভূতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে না? ’পরাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সফরের সময় কানাডার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ম্যাকলিন্স বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড, নুর চৌধুরীর ভূমিকা ও তার কানাডায় অবস্থান নিয়ে ৬ পাতার একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। একই সময় কানাডার প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকা দ্যা টরন্টো স্টার এ নিয়ে মূল প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই মুল ধারার পত্রিকাগুলোতে এ নিয়ে খবর, কলাম এবং মন্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে।

চলতি সপ্তাহে সিবিসি রেডিও এ নিয়ে দীর্ঘ একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। সিবিসি নুর চৌধুরী, তার আইনজীবীর সাক্ষাতকার ছাড়াও কানাডা সরকারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রচার করে। তবে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের কোনো বক্তব্য ছিলো না। সিবিসি রেডিও বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য চাওয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তারা কোনো সাড়া পান নি। কানাডা সরকারের পক্ষে ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক সেফটি এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এক লিখিত বক্তব্যে সিবিসি রেডিওকে বলেছে, সুপ্রীম কোর্টের একটি সিদ্ধান্ত নুর চৌধুরীকে বহি:ষ্কার করা থেকে আমাদের বিরত রেখেছে।

ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, ভয়ানক সহিংস কোনো বিদেশি নাগরিকও যদি নিজ দেশে ফিরে গেলে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকে তবে তাকে বহি:ষ্কার করা যাবে না। কানাডার আইন এবং যথাযথ পদ্ধতি অনুসরন করেই নুর চৌধুরীর বিষয়টি দেখা হচ্ছে । ’ খুনী নুর চৌধুরীকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কানাডার মিডিয়ায় হৈ চৈ হলেও এ ব্যাপারে কানাডা সরকারের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় নি। ‘গোপনীয়তা আইনের দোহাই দিয়ে বরাবরই কানাডা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নুর চৌধুরীর ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করে। তবে এবারই প্রথম কানাডা সরকার সংক্ষিপ্ত হলেও আনুষ্ঠানিক একটি বক্তব্য দিয়েছে এ ব্যাপারে ।

সিবিসি রেডিও ফেডারেল সরকারের একজন মুখপাত্র বা প্রতিনিধির সাক্ষাতকার চেয়েছিলো। সাক্ষাতকারের বদলে ফেডারেল সরকারের পক্ষে ‘ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক সেফটি’ একটি বক্তব্য সিবিসি রেডিওকে পাঠায় যেটি সিবিসি রেডিও প্রচার করেছে। নুর চৌধুরীর ডিপোর্টেশন আদেশ ও রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে তার আইনজীবী বারবারা জ্যাকম্যান সিবিসি রেডিওকে বলেছেন,নুর চৌধুরী কানাডায়ই থাকবে বা থাকতে পারবে – এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ২০০০ সাল থেকে ডিপোর্টেশন অর্ডার নিয়ে নুর চৌধুরী কানাডায় বসবাস করছেন। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে সে প্রি রিমোভাল এসেসমন্টে এর জন্যে কানাডা সরকারের কাছে আবেদন করেছে।

তিনি বলেন, তার এই আবেদনের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়ে বার বার চিঠি লিখেছি। সিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে বারবারা জ্যাকম্যান বলেন, প্রি রিমোভ্যাল এসেসমেন্ট হচ্ছে কোনো ব্যক্তিকে কোনো দেশে ফেরত পাঠালে সেখানে তার নির্যাতিত হওয়ার বা প্রাণনাশের আশংকা আছে কী না তা খতিয়ে দেখা। নুর চৌধুরীর আইনজীবী বলেন, ‘একটা বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, নুর কানাডায়ই থাকবে বা থাকতে পারবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ’ কানাডার সুপ্রীম কোর্টের ‘মৃত্যদন্ডের আশংকা থাকলে কোনো ব্যক্তিকে সে দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না’ বলে দেওয়া নির্দেশনাটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে বারবারা জ্যাকম্যান সুপ্রীম কোর্টের ওই রায়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন,ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশেষ ব্যতিক্রম পরিস্থিতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না যেখানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সম্ম্ভাবনা আছে।

মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ ব্যতিক্রম পরিস্থিতি’ কি তার কোনো ব্যাখ্যা কানাডার সুপ্রমি কোর্ট দেন নি। তবে কানাডার সুপ্রীম কোর্ট বরাবরই ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি বা জাতীয় জরুরী অবস্থা’কে বিশেষ পরিস্থিতি হিসেবে উল্লেখ করে আসছে। ’ বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি বা জাতীয় জরুরী অবস্থা নেই। তাছাড়া নুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। কাজেই সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনার অজুহাতে তাকে কানাডায় থাকতে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

টরন্টোর প্রভাবশালী ট্যাবলয়েড দৈনিক পত্রিকা ‘দ্যা সানের’ কলামিষ্ট জেরি আগার তাঁর কলামে মন্তব্য করেছেন, নুর চৌধুরী মার্কিন কোনো নাগরিকের হত্যাকারী হলে অনেক আগেই সরকার তাকে সীমান্তের ওপারে রেখে আসতো । তাহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমাদের এমন কি ক্ষোভ আছে?’ তিনি বলেন, কানাডার নৈতিক অবস্থান মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে। মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থান নেওয়া এক বিষয়,আর ঠাণ্ডা মাথার একজন খুনীর নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া আরেক জিনিস। ’ মূলধারার মিডিয়ায় নুর চৌধুরীকে নিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিলেও কানাডার আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে সংগঠিত কোনো উদ্যোগ নেয় নি। তবে ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বড় একটা অংশই কানাডা সরকারের উপর এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে।

জানা গেছে,আগামী মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডায় সফরে আসছেন। সে সময় নুর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গটি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে দেনদরবার করবেন। http://www.notundesh.com/shirshokhobor.html

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.