নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
আমাদের ভেতর কে না জেগে ছিল ঐ সব রাত। কোটপরা, কাল ট্রাউজারে লোকটাই নবাগত এখানে, অথবা ব্যস্ত সময় শেষে সে ফিরছে রাত দুপুরে। শুনেছি লবন-বণিকেরা দিন জাগে। দ্বারবন্ধ রেখে সারা রাত অর্থের হিসেব মেলায়। তারপর বহু শতাব্দী শেষে একদিন হয়তো খোলা পথে নেমে আসে।
বড় বড় চোখে আলোকিত রাত্রি দেখে।
আঙুলে তখনও তার জ্বলছে বহুরঙা হীরক। মনে সুখ নেই বলে সেদিন একাই এসে আমাকে ডেকে তুললেন। আপনি না চশমাকার, গড়ে দিন না চন্দ্রগ্লাস। শুনেছি একধরনের চশমা মেলে যেখানে ঘুটঘুটে কালো রাত থাকে ।
ভেবেছিলাম অমাবস্যা পাব আজ। তীব্র জোছনায় সিদ্ধ হচ্ছে চোখ। আমি চুপ থাকতেই তিনি বললেন,
পারবেন দিতে অমাবস্যার দ্যুতি?
আমি টোল ফেলে হেসে বললাম, জনাব, এ তো অভিনব আবদার। সবাই রোদচশমা কিনতে আসে। রোদের উত্তাপে চোখ বাঁচানো স্বাস্থ্যকর।
চাঁদ তো জগতের আশির্বাদ। মেঘ সরে যাবার জন্য অপেক্ষায় থাকে কবি ও গ্রামবাসী। দেখুন কি আশ্চর্য রূপার প্রদীপ জ্বলছে সুনীল মেঘদানীতে। ঐ যে ধানের ময়দান। কিষানীরা বসে দাওয়ায়।
বাচ্চারা দুগ্ধ পেয়ে তুপ্ত ওষ্ঠে মায়ের কোলে নিদ্রা যায়। শুষ্ক বিলের কাদায় দুরন্ত কিশোরেরা তালের নৌকায় ওঠা নামা খেলে নেয় । আর বাতায়ন খুলে তরুনীরা সোমাভিসারে, যেন তাদের যুদ্ধ ফেরত বীর হাঁটু গেড়ে প্রণয়প্রার্থী।
তিনি বেশ অবাক হলেন। অনতিদুরে এক সৌম্য বৃদ্ধার চন্দ্রালোকিত বলীরেখা।
শ্বেতশুভ্র শাড়ীতে তার রজতসূত্রে অঙ্কিত রাতমণির নকশা। আর ক্ষুধার্ত জ্যোতিষীরা তখন রাত্রির আহার সেরে নিচ্ছে পর্বতের ঢালে মাখানো সৌরমাখনে।
তিনি বললেন, না, না, আমি চন্দ্র ক্লান্ত। চোখের বন্ধনী চাই।
তাকে অন্ধ করে দিতে মনে সায় দেয় নি।
মিথ্যে বললাম। কাচহীন চশমা পরিয়ে বললাম চারটি দিন রুদ্ধদ্বারে বিশ্রামে যেতে।
তিনি কথামত ঘুমিয়ে পড়লেন । একটানা ঘুমে জেগে উঠে রাতের অন্ধকারে। তারপর দেয়াল হাতড়ে মইয়ে পা দিয়ে ছাদে মাথা গলালেন।
গন্তব্যের রাত বাতি মাকড়সার কোমড়ের মতো ক্ষীণতর হয়ে গেছে যাচ্ছে। পৃথিবীর পিঠ কোমল আলো আড়াল করেছে। পরীর মেয়েদের গোলাপী লেস দেয়া জামার পকেটে সেই ছায়াসমূহ শীতল হয়ে যাচ্ছে । তখন সদলবলে ঝিঁঝিঁ ডাকছিল। থেমে যাওয়া আড়হড় মটর ক্ষেতের আল দিয়ে শুধুমাত্র একজন ডাকহরকরা চিঠির পুটুলি ঝুলিয়ে ছুটে চলছিল।
মৃদু লণ্ঠনে ধানের সড়ক আলোকিত, কুকুরের শব্দে জোনাকীর সামান্য আলোয় মানুষেরা বাড়ি ফিরছে জরুরী কাজ সেরে । ভদ্রলোক কিছুটা আশ্বস্ত হয় বিষন্নতা দেখে। পরের সপ্তায় ফের আকাশে তাকিয়ে তিনি পেয়ে গেলেন নিকষ আমাবস্যা। অন্ধকারে সীমা মিলিয়ে গেছে। বৃক্ষের শাখা বিলিন হয়েছে, নিভে গেছে চন্দ্রের বলয় রঙধনু, মুছে গেছে বৃত্তের একমাত্র সীমানা।
গল্পকার আমাকে বললেন অভিলাষীরা আলো খুঁজে না পেলে ভয়াবহ বিষন্ন থাকে। তাদের কেউ যদি দরজায় কড়া নাড়তো হয়তো দিতে পারতাম জোছনার মিথ্যে চশমা। কেননা খোলা আকাশে জোছনাটাও বাড়ে নিয়ম করে। এমন কি অমাবস্যা ও চাঁদ মিশে থাকে কিছু কাল। চক্রবৃত্তের ছাতায় পূর্ণিমা ডোবে ভাসে পঞ্জিকার নিয়মে।
নিসর্গের সমীকরণই এমন। প্রত্যেকেই কোন একটি রাতে সর্বসুখী হয়।
---
ড্রাফট ১.২/অর্থহীন মুক্তগদ্য
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।