আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এসিড সহিংসতা প্রতিরোধ জরুরি



সরকারি-বেসরকারি নানা পর্যায়ের প্রচারণা, সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনমত গঠনের প্রচুর কোশেশ সত্ত্বেও এসিড সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নারী ও শিশুসহ নিরীহ নিরপরাধ সাধারণ মানুষ। ক্ষেত্রবিশেষে এই নির্মম নৃশংস সন্ত্রাসের ধরন কিছুটা কমেছে, তবে থামেনি। এই না থামার কারণে আজও এই বাংলাদেশে প্রতি তিনদিনে একটি করে এসিড সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। বিকৃত কিংবা বিকলাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে আমাদের আত্মার আত্মীয়রা, পুড়ছে কপাল, ভাঙছে সংসার, অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যত্। কত স্বপ্ন, কত সম্ভাবনা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে এসিডের নিচে।

নিক্ষিপ্ত এসিডের সৃষ্ট দগদগে ঘা কত জীবনকে বিলীন করেছে অবর্ণনীয় যন্ত্রণার মধ্যে। এসিড সারভাইভারদের জাতীয় সম্মেলন হয়ে গেল রাজধানীতে ক’দিন আগে। জাতীয় এসিড নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল এবং এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন ছিল উদ্যোক্তা। বক্তৃতার কাতারে মন্ত্রী-আমলাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। যদিও কাজের বেলায় এসব লোকের অংশগ্রহণ প্রায় থাকে না বললেই হয়।

স্রেফ কিছু আনুষ্ঠানিকতার জন্য এদের গালভরা বাণীর স্বাদ অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও গলাধঃকরণ করতে হয়। তারপরও এদের কেউ যখন বলে, দুর্ঘটনাজনিত কারণেই হোক বা সমাজের হিংস্র শ্রেণীর অসভ্য মানুষের দ্বারাই হোক, এসিড দগ্ধ মানুষই কেবল বোঝে এর যন্ত্রণা কতটুকু, তখন এসিড দগ্ধদের সেবা নিশ্চিত করা এবং এসিড সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারি সেবাদানকারী সংস্থাকে আরও এগিয়ে আসার অনুরোধ তাই অন্তঃসারশূন্য কিংবা অযথার্থ বলে মনে করা যায় না। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর কারণেই এসিড সন্ত্রাসের অনেক দিক এখন পরিষ্কারভাবে আমরা বুঝতে পারছি। যদিও সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর গাফিলতির কারণে অনেক সময় অপরাধী পগারপার হয়ে যায়। আবার এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার কাজ ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার বিধান থাকলেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে পার পেয়ে যায় অপরাধী।

এই পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগের উপস্থিতির কারণেই যে এসিড সহিংসতা নির্মূল করা যাচ্ছে না, তাও বলাইবাহুল্য। এসিড সহিংসতার দুটি দিক স্পষ্ট। একটা হলো এর প্রতিরোধ, অন্যটি এসিড সারভাইভারদের সেবা নিশ্চিত করার প্রসঙ্গটি। প্রতিরোধের দিকের প্রধান সমস্যা আলোচিত হয়েছে। সেবার দিকটি সমস্যাকীর্ণ।

আমাদের দেশে এসিড সহিংসতা ঘটে সাধারণ নারী ও শিশুদের ওপর। আবার এসিড সহিংসতার ৯৬ ভাগ ঘটনাই ঘটে গ্রামাঞ্চলে। নারী ও শিশুদের ওপর এই ভয়াবহ নির্মমতার কারণ হলো তারা অপরাধীর তুলনায় দৈহিক শক্তিতে দুর্বল। অন্য উদ্দেশ্যটি হলো দৈহিক সৌন্দর্য বিনাশ করা। আবার এই হিংস্রতা যেহেতু কম-বেশি গ্রামকেন্দ্রিক, সেহেতু আক্রান্তদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিত্সা দেয়া সম্ভব হয় না।

কখনও যত্সামান্য চিকিত্সা দেয়া গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপর্যাপ্ত। তাছাড়া গ্রামের মানুষের পক্ষে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কিংবা সচেতনতার অভাবের জন্য উন্নত চিকিত্সা নেয়ার জন্য শহরে যাওয়াও সম্ভব হয় না। এ কারণে আক্রান্তকে সারা জীবনের জন্য বরণ করে নিতে হয় বিকৃত চেহারা বা বিকলাঙ্গ দশা। আরও একটি বেদনার দিক আছে। সরকার প্রতিবছর এসিড দগ্ধদের পুনর্বাসনের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এ বরাদ্দের টাকা হতভাগ্য এসিড দগ্ধদের কাছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পৌঁছে না।

এই অর্থ বিতরণের জন্য প্রতি বছর নিয়মমাফিক জেলা প্রশাসকদের কাছে তালিকা চাওয়া হয়, কিন্তু আমাদের জেলা প্রশাসকরা সেই তালিকা প্রেরণ করার ক্ষেত্রে প্রদর্শন করেন উদাসীনতা। অনেক সময় উপর থেকে বার বার তাগাদা দেয়ার পরও তাদের মনোযোগ পাওয়া যায় না। এই উপেক্ষার কারণে সরকারি ফান্ডে টাকা থাকা সত্ত্বেও এসিড দগ্ধরা তার নাগাল পান না। নিতে পারেন না প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিত্সা। কিনতে পারেন না ওষুধ বা পথ্য।

আমরা ও সমস্যা ক্ষেত্রবিশেষে অঙ্গাঙ্গী। অঙ্গাঙ্গী বলেই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া আর অন্য কোনো বিকল্প নেই আমাদের সামনে। সে জন্যই এসিড দগ্ধদের পাশে দাঁড়াতে হবে যথার্থ দায়িত্ববোধ নিয়ে। এসিড সহিংসতার মূলোত্পাটনের জন্য নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।

যে আইন আছে তা যদি পর্যাপ্তবোধ না হয়, তাহলে নতুন আইন তৈরি করতে হবে। কি কি কারণে এই নির্মম হিংস্রতা মানুষের মধ্যে জন্মে তার নিরাময়ও আজ জরুরি। পাশাপাশি অপরাধীকে অবশ্যই আইনের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আক্রান্তদের দিতে হবে প্রয়োজনীয় সেবা, আনতে হবে পুনর্বাসনের আওতায়। দূর করতে হবে গাফিলতি।

তাহলেই হয়তো এক সময় এই বর্বরতা থেকে সমাজ রক্ষা পাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.