আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এসিড

প্রথম দৃশ্য ”মেম্বার ও তার ছেলে বক্কর আলী-র কথপোকথন” বক্কর আলী ঃ বাজান··· ও বাজান··· মেম্বার ঃ উঁ বক্কর আলী ঃ একখান কথা আছিল মেম্বার ঃ একখান কে? হাজার খান কথা কও। তুমি কইবানা তয় কে কইব? তুমি হইলা আমার পাঁচ খান বউ এর একখান মাত্তর (মাত্র) পোলা। তোমার জন্য তো সাত খুন মাফ। বক্কর আলী ঃ মোর দিলে হাওয়া লাগছে। মেম্বার ঃ ভাল।

আর বেশি কইরা হাওয়া লাগা। আর হাওয়া সহ্য না হইলে তোর দিল-টারে পুসকনিত ফালায়া দে। বক্কর আলী ঃ বাজান! (রাগত স্বরে) মেম্বার ঃ আচ্ছা ক কি হইছে? বক্কর আলী ঃ বাজান আমি বিয়া করমু। একখান মাইয়ারে আমার খুব মনে ধরছে। আমি তারে বিয়া করমু।

মেম্বার ঃ তোর মায়েরা কইরে? বক্কর আলী ঃ হেরা হগ্গলে গোছলে গেছে, পুসকনিতে। বাজান··· তুমি কিন্তু আমার কতার উত্তর দিলা না। মেম্বার ঃ ঐ বেক্কল, তুই বিয়ার কি বোঝছ? তোরে বিয়া করব কেডা? বেক্কলে হুগনা রাস্তায় পিছলায়া পরে! হেই নাকি আবার বিয়া করব, হুঁহ। ··············· বক্কর আলী ঃ বাজান ওমনে কতা কইও না। দিলে চোট লাগে।

তয় কইতাছি, এইবারও যদি আমারে বিয়া না দেও তাইলে কিন্তু আবারও··· মেম্বার ঃ থাক থাক বহুত হইছে··· তয় মাইয়া কেডা? বক্কর আলী ঃ উত্তর পাড়ার মাষ্টার চাচার মাইয়া, ময়না। মেম্বার ঃ কেন, দশ গেরামে আর কোন মাইয়া নাই, সব ছাইড়া মাষ্টারের মাইয়া কে? যাউকগা মাইয়া দেখতে কেমন? সুন্দরী নাকি বান্দরী? কারে না কারে পছন্দ করছে আল্লায় জানে··· বক্কর আলী ঃ হুনো (শোন) বাজান, মাইয়া সুন্দরী নাকি বান্দরী এইডা লইয়া তোমার চিন্তা করন লাগবনা। আমার পছন্দ যে খারাপ না এইডতো তুমি ভাল কইরাই জান! মেম্বার ঃ (কৃত্রিম কাশি দিয়ে ওঠে) ঠিক আছে, ঘটকের লগে কথা কমুনে। বক্কর আলী ঃ তার আগে কও এইবার কোন পেজগি লাগাইবা না। দ্বিতীয় দৃশ্য ”মেম্বার ও ঘটকের কথপোকথন” ঘটক ঃ কি খবর মেম্বার সাব? কিরাম আছেন? আমারে খবর দিছিলেন।

মেম্বার ঃ তোমারে মাইনষে কেন খবর দেয় হেইডা বুঝনা? ঘটক ঃ বুঝিতো ঠিকই, শেষ পর্যন্ত তাইলে ছয় নাম্বার··· মেম্বার ঃ আরে দুর, আমার পোলা, বক্কর আলী, হেই উত্তর পাড়ার মাষ্টারের মাইয়ারে পছন্দ করছে। কি জানি নাম টিয়া নাকি বুলবুলি··· ঘটক ঃ হ চিনছি চিনছি, ময়না। মাইয়া কইলাম দেখতে ভালই। তয় আপনের পোলায়ত পাগলা কিছিমের, হুগনা রাস্তায় হেই পিছলা খায়। মেম্বার ঃ তয় কি হইছে? আমার কি কুন কিছুর অভাব আছেনি? তুমি দেহ মাইয়া দেখতে কেমন? না জানি পাগল পোলায় আমার এইবার কি ঘটায়? ঘটক ঃ ঠিক আছে, ঠিক আছে আমি যতদিন আছি আপনে কুন চিন্তা কইরেন না, তয় কিছু খরচা পাতি··· মেম্বার ঃ (পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা বের করে ঘটককে দিবে) তৃতীয় দৃশ্য ”মাষ্টার ও ঘটকের কথপোকথন” ঘটক ঃ মাষ্টার সাব বাড়িত আছেন নি? মাষ্টার ঃ ঘটক সাহেব আপনে? ঘটক ঃ কে আমি কি আইতে পারিনা? একটা ভাল প্রস্তাব আছিল তাই··· মাষ্টার ঃ বসেন।

কি প্রস্তাব? ঘটক ঃ আপনের মাইয়া, ময়নার জন্য একটা ভাল বিবাহের প্রস্তাব আনছিলাম। মাষ্টার ঃ আমার ময়নার বিয়ে? এই বয়সে? ওত সবে ক্লাশ টেন এ পড়ছে, সামনের বছর এস· এস· সি· পরীক্ষা দিবে। এই বয়সে ওকে কেমনে বিয়ে দিই? ঘটক ঃ হুনেন মাষ্টার সাব প্রস্তাবটা আগে ভাল কইরা হুনেন। পোলা হইল আমগো মেম্বার সাবের একমাত্র পোলা বক্কর আলী। দেখতে হুনতে ভালায়।

রাণী কইরা রাখব আপনের মাইয়ারে। মাষ্টার ঃ তা কি করে হয়? ছেলেটিরতো বুদ্ধি-সুদ্ধি তো একেবারেই নেই। একই ক্লাশে দুবার তিনবার করে আটকে থাকে, তাও কমিটির জোরে পাশ করে করে এখন ক্লাশ নাইনে পড়ে। ঠিকমত পড়াশোনা করলে ২০০০ সালে তারতো এস· এস· সি· পাশ করার কথা ছিল। তার উপর লোকে বলাবলি করে ঐ ছেলে নাকি সুকনো রাস্তায় পিছলিয়ে পরে।

ঘটক ঃ এই গুলান কি কইতাছেন? পোলায় একটু সহজ সরল কিসিমের। আর পুরুষ মাইনষের আবার দোষ কিহের? টেকা পয়সার তো আর অভাব নাই। মাইয়া আপনের ধরেন গিয়া··· মাষ্টার ঃ শোনেন ঘটক সাহেব কিছু মনে করবেন না। প্রথমত মেয়ের এই বয়সে আমি তার বিয়ে দিব না তার পরও এমন এক ছেলের প্রস্তাব আপনি নিয়ে এসেছেন যা ভবিষ্যতের জন্যও ভেবে দেখা সম্্‌ভব না। ঘটক ঃ তার পরও একবার ভাইবা দেইখেন।

চতুর্থ দৃশ্য ”মেম্বার ও ঘটকের ময়নাকে দর্শন” মেম্বার ঃ কি ঘটক তোমার খবর ঠিক আছেতো? ঘটক ঃ ঠিক মাইনে? ময়না পরতেক দিন এই পথ দিয়াই ইসকুল থেইকা বাড়িত আহে। একটু সবুর করেন। মেম্বার ও ঘটক মিলে ময়নার পথের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। ঘটক ঃ ঐ··· ঐতো ময়না আইতাছে। এই দিকেই আইতাছে।

ময়না ঃ ্লামালিকুম চাচা। মেম্বার ঃ (কেশে) অয়ালাইকুম, কিরাম আছ? ভাল তো? ময়না ঃ জ্বি চাচা। (ময়নার প্রস্থান) মেম্বার ময়নার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঘটক ঃ কি মেম্বার সাব কেমন দেখলেন? মেম্বার ঃ (ময়নার পথের দিকে তাকিয়ে থাকেই) পোলায় তো এইবারও··· ঘটক ঃ কি কইতাছেন?··· মেম্বার ঃ তুমি চিন্তা কইরনা। যত টেকা লাগে লাগুক।

তুমি ব্যবস্তা কর। ঘটক ঃ মাইয়ার বাপেতো রাজিনা, তয় সৎ মায়েরে টেকা পয়সা দিয়া যদি··· মেম্বার ঃ কেমনে হইব হেইডা তোমার বেপার। আমি অত কিছু বুঝি না। পঞ্চম দৃশ্য ”ময়নার সৎমাকে ঘটকের অর্থের প্রলোভন” সৎ মা ঃ (টাকা গুনে নিতে নিতে) হুনেন ঘটক সাব, মেম্বার সাবেরে চিন্তা করতে না কইরেন। আমি যহন আছি তহন আর কুন চিন্তা নাই।

ময়নায়ে বিয়া বইবনা হের বাপে বিয়া বইব। ঘটকের ও সৎমায়ের হাসি ষষ্ঠ দৃশ্য ”বক্কর আলী ও ঘটক মুখোমুখি” বক্কর আলী ঃ ঘটক চাচায় না? কই যাইতাছেন? আমারে চিন্তাছেন না? ঘটক ঃ চিনুম না কে? তোমারে না চিননের কি আছে? তোমার মাথার অবস্তা এহন কিরাম? বক্কর আলী ঃ চাচা বজানে কইতাছি কামডা ঠিক করতাছে না। ঘটক ঃ কেন বাজান কি হইছে? বক্কর আলী ঃ কি হইছে? আমারে আর জিগায়েন না। হেরে খালি কইয়েন··· এইবার··· সপ্তম দৃশ্য ”বক্কর আলী ও মেম্বর মুখোমুখি” বক্কর আলী ঃ বাজান মেম্বর ঃ কি বাবা বক্কর, তোমার শরির ভালা তো? বক্কর আলী ঃ আমার শরির তো ভালই আছে? তোমার কি হইছে?··· আগে দশ ডাক দিলেও হুনতানা ওহনে এক ডাকেই কাইত? মেম্বর ঃ না বাজান হোন, পাগলামী করিস না। হইছে কি··· বক্কর আলী ঃ না বাজান, আমি আর কিছুই হুনতে চাইনা।

গেলোবার আমি কুসুমরে পছন্দ করলাম··· কিয়ের কি? হেসে (শেষে) দেহি তুমি তারে আমার পাঁচ লম্বার (নাম্বার) মা বানাইলা··· এইবার কইলাম ছয় লম্বার হইতে দিমুনা··· মেম্বর ঃ হোন বাজান হোন, আর পাগলামী করিস না। ময়নার চাইতেও সুন্দরী মাইয়া দেইখ্‌া তোর লগে··· বক্কর আলী ঃ না বাজান, আর না··· গেলবার ঘরের দরজা না লাগাইয়া গলায় ফাঁশ দিছিলাম··· তাই আমারে নামাইয়া আনছিলা··· এবার আর··· (বলতে বলতে প্রস্তান) মেম্বর ঃ বক্কর··· বাবা বক্কর আলী··· আল্লা তুমি পাগলডারে দেইখ··· আল্লায় জানে বেক্কলডা এবার না জানি কি করে?··· কি আর করব, যেই বেকুবে ঘরের দরজা খোলা রাইখা গলায় দরি দেয়, হুগনা রাস্তায় যে পিছলা খায়··· হেই আর কদ্দুর কি করব?·· অষ্টম দৃশ্য ”বক্কর আলীর পিতৃ প্রতিশোধ” বক্কর আলী বোতল হাতে রাস্তায় পায়চারি করছে। ময়না স্ড়্গুল থেকে ফিরছে। বক্কর আলী বোতল থেকে তরল পদার্থ ময়নার মুখের দিকে ছঁুরে মারে। ময়না আর্তনাদ করে মুখে হাত দেয়।

সাথে সাথে মঞ্চের সব কি স্থির হয়ে যাবে। ব্যাকগ্রাউন্ডে নিচের বাণী উচ্চারিত হবে। ”এভাবে আর কতদিন? আর কতদিন এভাবে ময়নারা ধংশ হবে? আর যারা এসিড ছোঁড়ে, শুধু কি তারাই দায়ি? এসব এসিড সন্ত্রাসীরা কিভাবে এসিড হাতে পায়? কিভাবে তারা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসে? আমাদের কি কিছুই করার নেই, শুধু শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া” ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.