স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম বিশ্বাসঘাতক হিসেবে খন্দকার মোশতাক আহমদের নাম পরিচিত। ১৯১৮ সালের ৫ মার্চ কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির দশপাড়া গ্রামে তার জন্ম। সাধারণ লেখাপড়া শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্ররাজনীতিতে তার বিচরণ ছিল। পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগের ছাত্র শাখার নেতৃত্ব শেষে যোগ দেন মূল মুসলিম লীগে।
পরে ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর হাত ধরে তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন উদীয়মান তরুণ এবং ক্যারিশমেটিক নেতা। এ সময় বঙ্গবন্ধুর নজরে আসেন মোশতাক। বঙ্গবন্ধু তার স্বভাবসুলভ ঔদার্য আর ভালোবাসা দিয়ে বুকে তুলে নেন পরবর্তীতে তারই ঘাতক মোশতাককে।
ু১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মোশতাক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর তিনবার জেল খেটে বঙ্গবন্ধুর আরও কাছে আসেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মোশতাক অন্যদের মতো ভারতে পাড়ি জমান এবং মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু সরকার গঠন করলে সেখানেও বিদ্যুৎ, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয় খন্দকার মোশতাককে। ১৯৭৫ সালে মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করে তাকে করা হয় বাণিজ্যমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ভারত নীতিতে মোশতাকের সমর্থন ছিল না। তবুও বঙ্গবন্ধু তার স্বভাবজাত মহানুভবতায় তাকে নবগঠিত বাকশালে ঠাঁই দেন।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল। রাতের অাঁধারে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের অভ্যুত্থানে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শোকাহত জাতিকে পরদিন শোকের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিল, যখন জানা গেল এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিলেন বঙ্গবন্ধুরই স্নেহধন্য মন্ত্রী এবং নিজ হাতে গড়া নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ।
ওই দিনই মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর অপর চার সহচর তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকপাল তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে বন্দী করে জেলে পাঠান। শুধু জেলে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হননি খন্দকার মোশতাক। তার নির্দেশে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় হত্যা করা হয় এই চার নেতাকে। এত কিছুর পরও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি খন্দকার মোশতাক।
ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ২৩ দিনের মাথায় খালেদ মোশারফের পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন মোশতাক।
৬ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে তাকে বন্দী করা হয়।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করলে প্রথমে বন্দী থাকলেও পরে ১৯৭৮ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্ত হয়ে ডেমোক্রেটিক লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে গিয়ে ব্যর্থ হন মোশতাক। পরবর্তী ১৮ বছর রোগ-শোক আর একাকিত্বে দিন কাটাতে হয় তাকে। ১৯৯৬ সালের ৫ মার্চ ৭৮ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন খন্দকার মোশতাক আহমদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।