আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিনদেশী শ্রমিকদের রেখে যাওয়া খাবার আর বৃষ্টির পানি দিয়ে ক্ষুধা-পিপাসা মেটাচ্ছে লিবিয়াপ্রবাসী যশোরের ছেলেরা



যশোর: লিবিয়ায় আটকেপড়া লোকজনকে ফিরিয়ে আনতে সবদেশের সরকার তৎপরতা চালালেও বাংলাদেশের পক্ষে কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করছি না। ভিন দেশের শ্রমিকদের রেখে যাওয়া খাবার আর বৃষ্টির পানি ধরে ক্ষুধা-পিপাসা মেটাতে হচ্ছে আমাদের। শনিবার দুপুরে মোবাইলফোনে দুএক মিনিট কথা বলার মাঝখানে এটুকুই তার মাকে জানাতে পেরেছেন লিবিয়ার কাবাই শহরে আটকেপড়া যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীরামপুরের যুবক মনিরুল। মায়ের কাছে তিনি এ কথাগুলো বলতে বলতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ফোনের। মায়ের সাথে কথাবলার সময়ে ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন মনিরুল।

এপাশে তার মা লাইলি বেগমও ধরে রাখতে পারেননি চোখের নোনাজল। তার কেবল একটিই প্রার্থনা, ছেলে যেন জীবিত ফিরে আসে। লিবিয়ায় আটকেপড়া মনিরুল তার মাকে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তাদের ওখান থেকে চীনা নাগরিকরা দেশে ফিরে গেছে। তাদের রেখে যাওয়া চাল টিফিনবাটিতে রেঁধে তারা কয়েকজন তিনদিন পর খেয়েছেন। ক্যাম্পে পানিও ছিল না।

গতকাল (শুক্রবার) তারা বৃষ্টির পানি ধরে তা পান করেছেন। মনিরুলের মত এই গ্রামের আট যুবক অভিবাসী হয়েছেন লিবিয়ায়। কেউ দুবছর আবার কারো ১১ মাস হয়েছে সেখানে অবস্থানের। ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীরামপুর j¤^vcvovi আবু কালাম খানের ছেলে কবির হোসেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র মানুষ তিনি।

বছরখানেক হল লিবিয়ায় প্রবাসী। বাবা আবু কালাম খান নিজের গোছানো কিছু টাকা, AvZ¥xq-¯^R‡bi কাছ থেকে ধারের কিছু আর বছরে ১২ মণ ধান দিতে হবে-এমন শর্তে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে ছেলেকে পাঠিয়ে দেন লিবিয়ায়। সেখানে কনস্ট্রাকশনের কাজ করেন কবির হোসেন। নিজে ধাতস্থ হয়ে সবেমাত্র বাড়িতে টাকা পাঠানো শুরু করেছিলেন। কিন্তু এরই মাঝে লিবিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।

দিন পনের আগেও তিনি বাবাকে মোবাইলফোনে তার কাজের কথা, সেদেশের নানাকথা জানিয়েছেন। কিন্তু এখন আর কথা বলতে পারছেন না। এপাশ থেকে বাবা আবু কালাম খান চেষ্টা করছেন মোবাইলফোনে তার সোনামানিকের খবর নিতে। ব্যর্থ হচ্ছেন। ষাটোর্ধ্ব এই মানুষটি কোনভাবেই m¤^iY করতে পারছেন না চোখেরজল।

ছেলেটা কেমন আছে- চোখের ভাষায় তাই জানতে চাইছেন বারংবার। তার স্ত্রী শামসুন্নাহার। কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে একটাই আকুতি, আমার ছেলেকে তোমরা ফিরিয়ে আনো বাবা। তিনদিন আগে শেষ কথা হয় ছেলের সাথে। মা কষ্ট পাবে, তাই ছেলে জানিয়েছে, মাগো, আমাদের জন্য দোয়া করো।

আমরা একটা ব্যারাকে পাঁচ-ছয়শ জন আছি। বাইরে বেরুতে পারছি না। খাওয়া-দাওয়াও হচ্ছে না। মা শামসুন্নাহার বিলাপ করছেন আর এসব কথাগুলো বলে যাচ্ছেন। এই গ্রামের আরেক মা, নাম হাওয়া বিবি।

খাওয়া দাওয়া ছেড়ে ছেলে মিন্টুর জন্য পাগলপ্রায়। ঘর থেকে বাইরে বের হন না মিন্টুর বাবা লুৎফর রহমান। মিন্টুর ছোটভাই নজরুল ইসলাম। পাড়ায় ছোট্ট মুদি দোকান চালান। তিনি জানান, ভাইয়ের সাথে দুদিন আগে তার শেষ কথা হয়েছে।

ভাই কান্নাকাটি করেছেন। বন্দী আবস্থায় সেখানে দিনানিপাত করতে হচ্ছে তাদের। সরকার কন্ট্রোলরুম করে কায়েকটি bv¤^vi পত্রিকায় দিয়েছে। আমি কয়েকদফা সেসব bv¤^v‡i রিং দিয়েছি। কেউ ধরে না।

মা হাওয়া বিবি বলেন, আমরা মসজিদে মসজিদে মিলাদ দিচ্ছি। আল্লাহর কাছে বলেছি, ছেলেকে ফিরিয়ে দাও খোদা। যে ভাতের জন্য আমার ছেলে আজ বিদেশে- সেই ভাত এখন পাচ্ছে না। তাহাজ্জতের নামাজ পড়ছি। আল্লাহ যেন আমার মানিককে ভালভাবে রাখে।

কেবল মনিরুল, কবির, মিন্টু নন। এই গ্রাম থেকে লিবিয়ায় আরও গিয়েছেন তাইজেল হোসেনের ছেলে দেলোয়ার, আনারুল্লাহর ছেলে নাজিম, শাহজাহানের ছেলে মিজানুর রহমান, আব্দুল মালেকের মেয়েজামাই আব্দুল হক, আমির হোসেনের ছেলে মনিরুল ইসলাম এবং মনিরের ছেলে মামুদ হাসান মিলন। সবার বয়স ২২ থেকে পঁচিশের মধ্যে। এরা কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ রডমিস্ত্রির কাজ করতেন দেশে। আর লিবিয়াতেও তারা কনস্ট্রাকশনের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

তবে, লিবিয়ার কোন শহরে তারা কাজ করেন তা তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জানা সম্ভব হয়নি। এখানে কথা হয় ঝিকরগাছা ইউনয়ন পরিষদের সদস্য শ্রীরামপুরের বাসিন্দা শাহজাহান আলীর সাথে। তিনি জানান, শ্রীরামপুরে ১২শ পরিবারের বসবাস। এখানকার প্রায় চারশ লোক বাইরের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন বেশি।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সরকার কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না। লিবিয়াপ্রবাসী সবার বাবা-মা আর ¯^Rb‡`i একটিই প্রার্থনা, সরকার যেন বাংলাদেশের সব ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনে। ছেলেরা ফিরলে দেশে কাজ-কর্ম করে দেনা শোধ করে দিতে পারবেন।

#

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।