আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিনদেশী বিনোদিনীদের কাহিনী......

হাউকাউ পার্টি

কিছু দিন আগ পর্যন্তও বিভিন্ন সিনেমা আর ছবিতে সাদা সাদা ভুতের মতোন মেক আপ ওয়ালা জাপানী মেয়েদের দেখে মনে হতো এগুলো কি সাজরে বাবা!! খুবই হাস্যকর লাগতো দেখতে। ধারণা বদলে গেল মেমরিস অফ গেইসা ছবিটি দেখে। জানতে পারলাম সাদা সাদা এইসব হাস্যমুখি মেয়েদের বর্নীল জীবনের পিছনে অনেক কষ্ট আর সংগ্রামের ইতিহাস। এদের পোষাকি নাম হলো গেইসা। গেইসার শব্দটির অক্ষরিক অর্থ হলো " শিল্পের মানুষ"।

খ্রী: ৭ম শতক থেকেই জাপানে গেইসাদের ইতিহাস জানা যায়। এরা অভিজাত এবং সম্ভ্রান্ত লোকেদের জন্য বিভিন্ন ভোজসভা ও চা এর আসরে জাপানের ঐতিহ্যবাহী শিল্পের পরিবেশনা করতেন। সপ্তদশ শতকের শুরু থেকে জাপানের কিয়াটো (Kyoto) তে অবস্থিত কামো নদীর তীরে মঞ্চে তৈরি করে সেখানে অভিনেত্রী আর বারবণিতাদের সমন্বয়ে এক বিশেষ ধরনের সমবেত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রদর্শনের কথা জানা যায়। মেমোরিস অফ গেইসা সিনেমার একটি অংশ। গেইসা মেয়েদের ৪/৫ বছর বয়স থেকেই ট্রেনিং দেয়া হয়।

যেখানে থেকে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হতো তাকে বলে গেইসা হাউস বা ওকিয়া। ওকিয়া থেকেই এদের খাবার দাবার, কিমানো,বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হতো। গেইসা হাউসে এদের তিন ধরণের প্রশিক্ষন দেয়া হতো। এক নম্বরে, ফর্মাল আর্ট মানে নাচ, গান, বাদ্য যন্ত্র শেখা। এগুলো তাদের শেখানো হতো বিশেষ গেইসা স্কুলে।

এরপর দেয়ে হতো বিভিন্ন দিকের প্রশিক্ষন, যেমন কিভাবে বসবে, ঘার ফেরাবে, তাকাবে , হাটবে ইত্যাদি । তৃতীয় শিক্ষা হলো বিভিন্ন জটিল সামাজিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য মানসিক শিক্ষা। গেইসাদের আবাসিক এলাককে বলা হয় হামাঞ্চি। নাচ পরিবেশনার পাশাপাশি এদের কিছু বাদ্যযন্ত্র বাজনো শিখতে হতো বাধ্যতামূলক ভাবে, যেমন shamisen (এটা অনেকটা ব্যঞ্জো টাইপের যন্ত্র), ko-tsuzumi (বাশি জাতীয়)ইত্যাদি। এছাড়া এরা বিয়োগান্তক গান রচনা করতো।

এবার আসা যাক এদের বিখ্যাত মেকআপের বিষয়ে। গেইসা মেকআপের মুল অংশ হলো মুখের পুরু সাদা বেইজ। আগে এই বেইজ লেড বা সিসা দিয়ে তৈরি করা হতো। এটা দীর্ঘক্ষন ত্বকের উপর থাকার মারাত্মক ক করায় পরে এজন্য চালের গুড়োর প্রচলন হয়। প্রথমে মুখে তেল আঠা জাতিয় দ্রব্য (bintsuke-abura, ) মাখা হতো।

এরপর সাদা পাউডার পানিতে মিশিয়ে পেষ্টের মতো করে মুখ, গলা, কাধের কিছু অংশে মাখানো হতো। মেপআপের সময় বিশেষ কায়দায় বুক আর গ্রীবের কিছু সংবেদনশিল অংশে w বা v আকারে প্রলেপ বাদ রাখা হতো মুখে ফাউন্ডশন মাখানোর পরে চারকোল দিয়ে চোখ আর ভ্রু আকা হয়। এরপর ছোট ব্রশের সাহায্যে ঠোট রাঙ্গানো হতো লাল রং দিয়ে। এই রং গুলো স্টিকের মতো, এটাও পানিতে পেস্টের মতো গুলে নেয়া হতো। ঠোটে চিকে চিকে ভাব আনার জন্য ক্রিস্টালাইজড চিনি ব্যবহার করা হতো।

গেইসা মেকআপে যে কোন এক দিকের ঠোট রাঙ্গানো হতো। প্রথম বছর গেইসারা উপরের ঠোটেই শুধু রং করতো। এরপর থেকে উপরের ঠোট পুরো রং করে, নীচের টা ছোট্ট করে ফুলের পাপড়ির আকারে রাঙ্গাতো। প্রশিক্ষনের শেষ দিকে দাতেও কালো রং করতে দেখা যায়। গেইসারা সবসময় দামি এবং ঝকমকে কিমানো পড়তো।

কোন ঋতু চলছে, সেটার উপর ভিত্তু করে কিমানোর রং আর স্টাইল নির্ধারণ করা হতো। গেইসাদের সাজুগুজুর আরেকটা বিশেষ অংশ হলো চুল। তারা কারুকাজ করা চিরুনি, আর চুলের কাটার (kanzashi) সাহায্যে চুল বাধতো, এই রিতী কে বলা হতো shimada। চুলের স্টাইল ঠিক রাখার জন্য এরা জন্য গেইসারা বালিশে ঘুমাতো না, ছোট ছোট চৌকোনা কাঠের উপর এদের ঘুমানোর ট্রেনিং দেয়া হতো। বিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেক পরিবার তাদের শিশু কন্যাকে বিক্রি করতো গেইসা হাউজে।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরিবর্তীত সামাজিক আর অর্থনৈতিক কারণে এই রিতী আস্তে আস্তে বিলিন হয়ে যায় আর গেইসা পেশাজীবি সম্প্রদায়টিও ধিরে ধিরে বিলুপ্ত হতে থাকে। গেইসাদের নিয়ে দারুন একটা সিনেমা হলো রড মার্শালের Memoirs of a Geisha। অনেক গুলো একাদেমি এওয়ার্ড পাওয়া এই ছবিটা দেখার মতো। অনেক খুজেও কোন ডাউনলোডিং লিংক খুজে পেলাম না সংযোজন: নতুন রাজা নিচে লিংক দিয়েছেন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।