হিজাব শব্দটি বর্তমান বিশ্বের প্রায় সমস্ত মানুষের মুখে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। ফ্রান্স সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিগত কয়েক বছরে হিজাব নিয়ে কতই না ঘটনা ঘটে গেল। ফ্রান্স তাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। আজকে এই হিজাব নিয়ে কিছু কথা লেখার জন্য কলম ধরলাম। আসুন! আমরা হিজাব সম্বন্ধে কিছু জানতে চেষ্টা করি/
হিজাব কি?
হিজাব আরবী শব্দ।
আভিধানিক অর্থে উদ্দিষ্ট জিনিস বা বিষয়কে যে ঢাকার বস্তু। যে অপর কোন জিনিসকে ঢেকে ফেলে তাই হিজাব।
পারিভাষিক অর্থে যা চেহারা ও হাতের কব্জি ছাড়া নারীর সমস্ত দেহকে ঢেকে দেয় তাই হিজাব। হোক তা যে কোন ধরণের পোষাক।
হিজাব সম্বন্ধে রাসুল (সাঃ) হযরত আসমা (রাঃ) কে বলেছিলেন: হে আসমা! নারীরা যখন প্রাপ্তবয়স্কা হয় তখন তার কোন কিছুই দেখা বৈধ নয় এটা ছাড়া (এসময় রাসুল সাঃ নিজের চেহারা ও দুই হাতের তালুর দিকে ইংগিত করলেন)।
(আবু দাউদ শরীফ)
আমরা হিজাব বলতে বোরকা বা বড় চাদর ধরতে পারি যা সমস্ত দেহকে ঢেকে ফেলে।
হিজাব কখন ফরজ হয়?
কোন বিষয় কারো উপর হঠাৎ চাপিয়ে দিলে তা পালন করা মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। কিন্তু,পর্যায়ক্রমে চাপিয়ে দিলে আর সেটাকে কষ্টকর মনে হয় না। সেজন্যই ইসলাম বেশ কিছু বিধি বিধানকে পর্যায়ক্রমে ফরজ বা আবশ্যক করে দিয়েছে। মানুষের সমস্যা ও কষ্টের কথা চিন্তা করেই একবারে তা ফরজ করে দেয়নি।
তন্মধ্যে হিজাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে হিজাবের প্রথম আয়াত পঞ্চম হিজরীতে খন্দকের যুদ্ধের সময় নাযিল হয়েছে। একবারে হিজাবকে ফরজ করা হয়নি; বরং, ধাপে ধাপে তা ফরজ হয়েছে। প্রথমে মানুষকে হিজাবের অভ্যাস করানোর জন্য সুরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াত নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“হে আমার নবী! আপনার স্ত্রী,কন্যা ও মুসলমান মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন তাদের চাদরের অংশবিশেষ নিজেদের উপর টেনে নেয়।
“ (আহযাব: ৫৯)
এর পর ধাপে ধাপে তা ফরজ হয়। চুড়ান্তভাবে সুরা নুরের আয়াত দ্বারাই ফরজ হয়। আল্লাহ বলেন:
“হে নবী! মুমিন মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন নিজেদের চক্ষুকে নিম্নগামী করে এবং তাদের গোপনাঙ্গকে (অশ্লীল কাজ থেকে) হেফাজত করে। আর তারা যেন যা আপনাআপনি প্রকাশ হয়ে যায় তা ব্যতিত নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের ঘোমটা বুকের উপর টেনে নেয় এবং নিজেদের সৌন্দর্যকে নিজ স্বামী,পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত ক্রীতদাসী, জৈবিক কামনামুক্ত পুরুষ, মহিলাদের গোপনাংগ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্য কারো সামনে প্রকাশ না করে।
তারা যেন নিজেদের গোপণ সাজ-সজ্জ্বা প্রকাশের জন্য জোরে পদচারনা না করে। হে মুমিনেরা! তোমরা আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে আস যাতে সফলকাম হতে পার”। (সুরা নুর:৩১)
ইসলামের দৃষ্টিতে হিজাব
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বেশ কিছু আয়াতে হিজাবের ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে তেমনি কিছু আয়াত উল্লেখ করা হল।
আল্লাহ বলেন: হে নবী! মুমিন মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন নিজেদের চক্ষুকে নিম্নগামী করে এবং তাদের গোপনাঙ্গকে (অশ্লীল কাজ থেকে) হেফাজত করে।
আর তারা যেন যা আপনাআপনি প্রকাশ হয়ে যায় তা ব্যতিত নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের ঘোমটা বুকের উপর টেনে নেয় এবং নিজেদের সৌন্দর্যকে নিজ স্বামী,পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত ক্রীতদাসী, জৈবিক কামনামুক্ত পুরুষ, মহিলাদের গোপনাংগ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্য কারো সামনে প্রকাশ না করে। তারা যেন নিজেদের গোপণ সাজ-সজ্জ্বা প্রকাশের জন্য জোরে পদচারনা না করে। হে মুমিনেরা! তোমরা আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে আস যাতে সফলকাম হতে পার। (সুরা নুর:৩১)
অন্যত্র এসেছে- তোমরা মুর্খতা যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করো না।
(সুরা আহযাব: ৩৩)
আল্লাহ আরও বলেন: হে আমার নবী! আপনার স্ত্রী,কন্যা ও মুসলমান মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন তাদের চাদরের অংশবিশেষ নিজেদের উপর টেনে নেয়। (আহযাব: ৫৯)
যখন তোমরা তাদের নিকটে কোন কিছু চাও তখন পর্দার আড়াল থেকে চাও। এটা তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য পবিত্রতা স্বরুপ। (সুরা আহযাব: ৫৩)
হাদীস শরীফেও হিজাব সম্বন্ধে বেশ কিছু স্থানে আলোচনা করা হয়েছে। তেমনি কিছু হাদীস এখানে উপস্থাপন করা হল।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন কোন মহিলাকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দিতে ইচ্ছা করে তবে, যখনই সম্ভব উক্ত মহিলার দিকে দৃষ্টিপাত করাতে কোন দোষ নেই (যদিও মহিলা দৃষ্টিপাতের বিষয়টা না জানুক)। (মুসনাদে আহমদ)
রাসুল (সাঃ) যখন মুসলিম মহিলাদেরকে ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন তখন মহিলারা বললেন: “হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আমাদের অনেকের নিজস্ব চাদর নেই। ” রাসুল (সাঃ) বললেন: সে তার অন্য মুসলিম বোনের চাদর পরিধান করবে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
রাসুল (সাঃ) যখন বললেন: যে ব্যক্তি অহংকারভরে তার পরিধেয় কাপড়কে গোড়ালী পর্যন্ত (গোড়ালী ঢেকে রাখা) টেনে দেয় কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার দিকে তাকাবেন না। উম্মে সালমা (রাঃ) বললেন: মহিলারা তাদের আচল কি করবে? রাসুল (সাঃ) বললেন: তারা তাকে এক বিঘত ঝুলিয়ে দেবে।
উম্মে সালমা (রাঃ) পুণরায় বললেন: তাহলে তাদের পা অনাবৃত থাকবে? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ (না) তাহলে, তারা একহাত পরিমাণ ঝুলিয়ে দেবে;এর বেশী নয়।
আয়েশা (রাঃ) বলেন: ইহরাম অবস্থায় আমাদের পাশ দিয়ে যখন কোন লোক অতিক্রম করত, তখন আমরা মাথা থেকে চেহারার উপর কাপড় টেনে দিতাম। আর যখন তারা আমাদের কাছ থেকে দূরে চলে যেত তখন আমরা তা চেহারা থেকে সরিয়ে ফেলতাম।
বিভিন্ন ধর্মে হিজাব
আজকের পশ্চিমা বিশ্ব ইসলাম কর্তৃক নারীদের উপর কঠোরতার প্রমানস্বরূপ পর্দা বা হিজাব নিয়ে আপত্তি তুলে থাকে; অথচ, শুধু ইসলাম ধর্মই নয় ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মেও হিজাবের বিধান রয়েছে। প্রমাণ স্বরূপ কয়েকটি উদ্ধৃতি নিম্নে উপস্থাপন করা হল।
ইহুদী ধর্মে হিজাব:
ইয়েশিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের "বাইবেল শিক্ষা" বিভাগের প্রফেসর ড. মিনাখিম এম. ব্রায়ার তার " The Jewish Woman in Rabbinic Literature: A Psychosocial Perspective” নামক গ্রন্থের ২৩৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন: "ইহুদী মহিলারা মাথা ঢেকে বাইরে যেতেন। কখনো তা একটি চক্ষু ছাড়া পুর্ণ চেহারাকে আবৃত করে ফেলতেন"। তিনি তার কথার প্রমাণ হিসেবে পুর্ববর্তী ইহুদী পন্ডিতদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- "ইয়াকুব(আঃ) এর কন্যাগণ মাথা খোলা রেখে রাস্তায় বের হতেন না"। “ওই পুরুষের উপর লা'নত(অভিশাপ) যে তার স্ত্রীকে খোলা মাথায় রাস্তায় ছেড়ে দেয়।
কোন মহিলার সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্যে মাথার চুল ছেড়ে দেয়া দারিদ্রতার কারণ হয়"। ইহুদী পন্ডিতদের আইন অনুযায়ী বিবাহিত মহিলার উপস্থিতিতে (যে তার চুল অনাবৃত রেখে দিয়েছে) নামাজের ভিতরে বা বাইরে ধর্মগ্রন্থ আবৃত্তি করা নিষিদ্ধ। মাথা অনাবৃত রাখাকে উলংগ হিসেবে গণ্য করা হয়। (Ibid: ৩১৬-৩১৭ পৃষ্ঠা )
প্রফেসর ড.মিনাখিম এম. ব্রায়ার আরো বলেন: " টান্নাইটিক যুগে যে সমস্ত ইহুদী মহিলা মাথা অনাবৃত রাখত তাদেরকে বেহায়া হিসেবে গণ্য করে প্রত্যেককে ৪০০ দিরহাম করে জরিমানা করা হত"। তিনি আরো বলেনঃ ইহুদীদের এই হিজাব শুধুমাত্র তাদের ভদ্রতারই পরিচায়ক হত না বরং,তা বিলাসিতা ও সতী –অসতীর মধ্যকার পার্থক্যকারী হিসেবে বিবেচিত হত।
হিজাব পরলে বুঝা যেত যে,মহিলা ভদ্র,উচ্চ বংশীয়। স্বামীর অধিকারভুক্ত পণ্য বা ক্রীতদাসী নয়। (Ibid: ১৩৯ পৃষ্ঠা)
হিজাব মহিলার সামাজিক মর্যাদারই পরিচয় বহন করে এবং মর্যাদাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। সে সমাজের নিম্ন শ্রেণীর মহিলারাও হিজাব পরত যেন তাদেরকে উচ্চ বংশীয়দের মতই দেখায়। হিজাব ভদ্রতার পরিচায়ক হওয়ার কারণে পুরাতন ইহুদী সমাজে ব্যভিচারী মহিলাদের হিজাব পরিধানের অনুমতি ছিল না।
তাই,নিজেদেরকে সতী প্রমান করতে তারা বিশেষ ধরণের স্কার্ফ ব্যবহার করত। (Jewish and Female: ২৩৭ পৃষ্ঠা)
ইউরোপের ইহুদী মেয়েরা উনবিংশ শতাব্দীতে তাদের জীবন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সাথে মিশে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পর্দা মেনে চলত। ইউরোপের সমাজব্যবস্থা অনেককে পর্দা খুলতে বাধ্য করেছে। অনেক ইহুদী নারী তাদের মাথায় পরচুলা লাগিয়ে মাথাকে সুন্দরভাবে প্রদর্শন করার চেয়ে পর্দা বিধান পালন করাকে উত্তম মনে করেন। কিন্তু,এখন অধিক ধার্মিকা ইহুদী নারীরা তাদের উপাসনালয় ছাড়া অন্য কোথাও চুল ঢেকে রাখেন না।
(Ibid: ২৩৮-২৩৯ পৃষ্ঠা)
খৃষ্টান ধর্মে হিজাব
এবার আসুন! দেখি খৃষ্টান ধর্মে হিজাব সম্বন্ধে কি বলা হয়েছে? একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে,ক্যাথলিক খৃষ্টান যাজক মহিলাগন শত শত বছর ধরে হিজাবের বিধান মেনে চলছেন।
নতুন নিয়মে (new testament) পোল বলেছিলেন: " আমি চাই- তোমাদের জেনে রাখা উচিত,প্রত্যেক পুরুষের মাথা যীশু, প্রত্যেক মহিলার মাথা পুরুষ এবং যীশুর মাথা যেন স্রষ্টা। কোন পুরুষ ইবাদত বন্দেগী করা অবস্থায় তার মাথায় কিছু থাকলে তার মাথাকে অপদস্থ করা হবে। পক্ষান্তরে,কোন মহিলা খালি মাথায় ইবাদত বন্দেগী করলে তার মাথাকে অপদস্থ করা হবে। মাথাকে অপদস্থ করা মানে মাথার চুল কামিয়ে দেয়া।
অতএব,কোন মহিলা মাথা ঢেকে না রাখলে তার মাথার চুল কামিয়ে দিতে হবে। যদি কোন মহিলার জন্য তার মাথার চুল কামিয়ে ফেলা অপমানজনক মনে হয়;তাহলে সে যেন তার মাথাকে ঢেকে রাখে। আর পুরুষের মাথা স্রষ্ঠার প্রতিচ্ছবি হওয়ার কারণে মাথা ঢেকে রাখা উচিত নয়। মহিলারা স্বামীর সন্মানের প্রতিচ্ছবি। কারণ,পুরুষ মহিলা থেকে নয় বরং, মহিলা পুরুষ থেকে।
পুরুষ মহিলার জন্য সৃজিত হয় নাই বরং,মহিলা পুরুষের জন্য সৃজিত হয়েছে। তাই,ফেরেশতার খাতিরেই তার মাথার উপরে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। (১,করিন্থিয়ান্স:১১/৩-১০)
বিশিষ্ট ধর্ম যাজক টারটোলিয়ান তার বিখ্যাত গ্রন্থ " নারীর পর্দা" তে লিখেছেন: নারীদের উচিত রাস্তাঘাট,গীর্জা,নিজ ভাতৃবর্গ ও বেগানা পুরুষদের সামনে হিজাব পরিধান করা। বর্তমানেও ক্যাথলিক খৃষ্টানদের নিয়ম রয়েছে- মহিলাগন গীর্জার ভিতরে অবশ্যই তাদের মাথা ঢেকে রাখবে। (Cannon Law and the Battle of the Sexes, ২৭২ পৃষ্ঠা)
আমিশ, মিনোনাইট প্রমুখ খৃষ্টানগণ আজও হিজাব পরিধান করে থাকেন।
হিজাব সম্বন্ধে গীর্জার পাদ্রীগণ বলে থাকেন-"হিজাব হল নারীর স্বামীর প্রতি আনুগত্য ও স্রষ্টার আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ। এ কথাটা নতুন নিয়মে (new testament) পোল নিজেই বলে গেছেন। (The riddle of the Amish Culture ৫৬ পৃষ্ঠা)
হিজাবের বৈশিষ্ট্য
হিজাব পরতে হয় সমাজের কলুষতা থেকে নিজেকে দূরে রেখে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার নিমিত্তে।
সে জন্যই, উলামায়ে কেরামগণ হিজাবের কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। বৈশিষ্টগুলোর অবর্তমানে হিজাবের আসল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হতে পারে।
মুসলিম মহিলাগণ যে হিজাব তথা চাদর বা বোরকা পরিধান করবেন তাতে নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
১. পোশাক ঢিলেঢালা হবে যেন তার দৈহিক গঠন প্রকাশিত না হয়ে যায়।
২. কিছু কিছু উলামায়ে কেরামের মতে পোশাক যেন বেশী আকর্ষণীয় না হয় যার দিকে মানুষ সহজেই আকৃষ্ট হয়ে যায়। বরং, তা সাদাসিধা হবে।
৩. পোশাক সুগন্ধিযুক্ত হবে না।
৪. পোশাকটি পুরুষের পোশাকের মত সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না।
৫. এমন পোশাক হবে না যা দ্বারা মানুষের সামনে তার অহংকার প্রকাশ পায়।
কেন হিজাব পরতে হবে?
কাউকে কোন কাজ করতে বললে স্বভাবতইঃ প্রশ্ন আসে কেন সে কাজটি করবে? কাজটার ভিতরে কি উপকারীতা আছে? ইত্যাদি। হিজাবের ব্যাপারটাও ভিন্ন নয়। সে জন্যেই আসুন! আমরা দেখি কেন মহিলারা হিজাব পরিধান করবে? তার কারণ ও উদ্দেশ্যই বা কি?
প্রথমত: এটা আল্লাহ তায়ালার স্পষ্ট নির্দেশ।
আল্লাহ বলেন: হে নবী! মুমিন মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন নিজেদের চক্ষুকে নিম্নগামী করে এবং তাদের গোপনাঙ্গকে (অশ্লীল কাজ থেকে) হেফাজত করে। আর তারা যেন যা আপনাআপনি প্রকাশ হয়ে যায় তা ব্যতিত নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। (সুরা নুর:৩১)
আল্লাহর বাণী-তোমরা মুর্খতা যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করো না। (সুরা আহযাব: ৩৩)
আল্লাহ আরও বলেন: হে আমার নবী! আপনার স্ত্রী,কন্যা ও মুসলমান মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন তাদের চাদরের অংশবিশেষ নিজেদের উপর টেনে নেয়। (আহযাব: ৫৯)
দ্বিতীয়ত: হিজাব পরিধান করা আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুলের আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ।
আর আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করা বাধ্যতামুলক।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: আল্লাহ তায়ালা বা তার রাসুল (সাঃ) যখন কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন তখন কোন মুমিন পুরুষ বা মহিলার তাতে কোন ইখতেয়ার (পছন্দ-অপছন্দ) শোভনীয় নয়। (সুরা আহযাব:৩৬)
এছাড়া কুরআন ও হাদীসের নির্দেশানুসারে হিজাব প্রত্যেক বালেগা (প্রাপ্তপ বয়স্কা) মহিলার জন্য ফরজ।
সর্বোপরি, এটাকে কুরআনে বর্ণিত প্রতিদান প্রাপ্তির উপকরণ বলা যেতে পারে।
আল্লাহ বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) এর আনুগত্য করবে তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে যার নিচ দিয়ে নদীসমুহ প্রবাহমান থাকবে।
এটাই মহা পুরস্কার। (সুরা নিসা:১৩)
অন্যত্র বলা হয়েছে-আর যারা আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে তারা নবীগণ, সত্যবাদী, শহীদ ও নেককারদের সাথে থাকবে। তারা কতই না উত্তম সংগী। (নিসা: ৬৯)
আল্লাহ তায়ালা বলেন: যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে এবং আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে তারাই সফল। (নূর:৫২)
আল্লাহ তায়ালার বাণী: যে আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করল সে মহা কল্যাণ অর্জন করল।
(আহযাব:৭১)
আল্লাহ বলেন: আর যে আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে যার নিচ দিয়ে নদীসমুহ প্রবাহিত থাকবে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেবে তাকে আল্লাহ তায়ালা যন্ত্রণাদায়ক আযাবের স্বাদ আস্বাদন করাবেন। (সুরা আল ফাতহ: ১৭)
তৃতীয়ত: ঈমানের সাথে সম্পৃক্ততা:
হিজাবকে ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত রাখা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হিজাবের নির্দেশ দিতে গিয়ে “মুমিন মহিলাদেরকে বলে দিন” বলেছেন। এটা দ্বারা বুঝা যায় যে, মু’মিনা মহিলাগণ ঈমানের দাবি হিসেবে হিজাব পরিধান করবেন।
চতুর্থত: সতীদেরকে অন্যদের থেকে পৃথককারী:
হিজাবের কারণে সতী নারীদেরকে অন্যদের থেকে পৃথক করা যায়। সে সংকীর্ণাবস্থা, বখাটেদের অত্যাচার-নির্যাতন ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: হে আমার নবী! আপনার স্ত্রী,কন্যা ও মুসলমান মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন তাদের চাদরের অংশবিশেষ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে, তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।
আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আহযাব: ৫৯)
পঞ্চমত: হিজাব লজ্জা ও সতর রক্ষার উপাদান
আল্লাহ তায়ালা লজ্জাশীল তিনি লজ্জাকে ভালোবাসেন এবং গোপণকারী(দোষ ইত্যাদি) গোপণীয়তাকে ভালোবাসেন। লজ্জা সম্বন্ধে রাসুল (সাঃ) বলেন: প্রত্যেক ধর্মের একটি নীতি আছে। আর ইসলামের নীতি হল “লজ্জা”। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক) তিনি আরও বলেন: লজ্জা ঈমানের অংগ আর ঈমানের প্রতিদান জান্নাত।
(বুখারী শরীফ) অন্যত্র রাসুল (সাঃ) বলেন: লজ্জার পুরাটাতেই কল্যাণ রয়েছে। (মুসলিম শরীফ)
ষষ্ঠত: মহিলার শরীর আমানত:
মহিলার শরীর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রদত্ত আমানত। সেটাকে যথাযথভাবে রক্ষা করা ঈমানী দায়িত্ব। যে আমানত রক্ষা করে না সে মু’মিন হতে পারে না।
সপ্তমত: হিজাব সম্মানের প্রতীক
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিভিন্ন সৃষ্টির উপর মর্যাদা দিয়েছেন বিভিন্ন কারণে।
তন্মধ্যে গোপণাংগ ঢেকে রাখা অন্যতম। হোক সে জীবিত বা মৃত। মহিলার হিজাব তার গোপণাংগকে ঢেকে রাখে। অতএব, সে এর দ্বারা হেয় প্রতিপন্ন হয়না। এটা তার সম্মানের কারণ হয়।
অষ্টমত: হিজাব পবিত্রতার প্রতীক:
হিজাব মানুষের পবিত্রতার প্রতীক। আল্লাহ তায়ালা বলেন: যখন তোমরা তাদের নিকটে কোন কিছু চাও তখন পর্দার আড়াল থেকে চাও। এটা তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য পবিত্রতা স্বরুপ। (সুরা আহযাব: ৫৩)
এ আয়াতে হয়তবা মু’মিনদের অন্তরের পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে। কেননা, কোন কিছুকে চোখে না দেখলে অন্তর সেদিকে ঝুকে পড়ে না।
আর না দেখার কারনে অন্তর পবিত্র থাকে। হিজাব দ্বারা নারী নিজেকে ঢেকে রাখলে এবং তাকে না দেখলে ফিতনা ফাসাদের কোন আশংকা থাকে না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর তবে, পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভংগিতে কথা বলো না, ফলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে কুবাসনা করে বসে। তোমরা সংগত ভাষায় কথা বলবে। (সুরা আহযাব:৩২)
হিজাব কি নারী স্বাধীনতার অন্তরায়?
হিজাবের কথা বললেই প্রশ্ন ওঠে নারীদের কি স্বাধীনতা বলতে কিছুই থাকবে না? তারা স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবে না বা তারা কি রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে দায়িত্ব পালন করবে না?
উত্তর হচ্ছে- হা, অবশ্যই তাদের স্বাধীনতা আছে।
নারীরা তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ কর্ম করবে, পড়াশুনা করবে, সমাজ গঠনে অবদান রাখবে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে দায়িত্ব পালন করবে। তবে, একটি শর্তে; পুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেশা থেকে দূরে থাকবে। তারা স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে দায়িত্ব পালন করবে হিজাবের দিকে লক্ষ্য রেখে এবং পরপুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশা থেকে দূরে থেকে। কেননা, সমাজে নারীরা যত ধরণের অত্যাচারিত, নির্যাতিত, নিগৃহীত হন তার আসল কারণটাই হল এই অভিশপ্ত নারীপুরুষের অবাধ মেলেমেশা।
সমাজে নারীরা অপমানিত ও লাঞ্চিত হন তারও আসল কারণ এই অবাধ মেলামেশা।
কথায় আছে-
প্রথমে চোখাচোখি
তারপর সালাম আদান প্রদান
এরপর কথাবার্তা বলা
তারপরে কথা দেয়া
এরপর সাক্ষাত করা।
এতগুলো ধাপ পেরিয়ে এসেই স্বাধারণত তারা লাঞ্চিতা, অপমানিতা ও নির্যাতিতা হয়ে থাকেন। কারণ, কোন মহিলাকে যদি কেউ একেবারেই না দেখে তাহলে, তার প্রতি উক্ত ব্যক্তির মনে আকর্ষণ জাগতেই পারে না। বরং, প্রথম প্রথম কথাবার্তা আলাপ আলোচনা করে তারা অন্তরংগ হয়ে যায়। এরপর একজনের প্রস্তাব আরেকজন প্রত্যাখ্যান করলেই শুরু হয় এধরণের সমস্যা।
ইসলাম চায় মহিলারা যেন সমাজে এভাবে অপমানিতা, নিগৃহিতা ও লাঞ্চিতা না হয়। আর সে জন্যই তাদের অবাধ মেলামেশায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছে ইসলাম। সারা বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই- যারা সাধারণত সঠিকভাবে হিজাব পরিধান করে চলাফেরা করেন সমাজে তারা সম্মানের আসনেই থাকেন। তাদেরকে সমাজে অত্যাচারিত নির্যাতিত হতে হয় না। তাদেরকে মানুষেরা সমীহ করে থাকে।
নারীরা ডাক্তার হতে পারবেন। নারীদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোককে অবশ্যই ডাক্তার হওয়া উচিত। কেননা, সমাজের মানুষের অর্ধেকই নারী তাদেরকে সুচিকিৎসা দেয়ার জন্য সমাজের সর্বত্র পর্যাপ্ত মহিলা ডাক্তার আবশ্যক। ইসলাম এতে নিষেধ করে না বরং উৎসাহিত করে থাকে।
আমরা ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই, যুদ্ধের ময়দানে কিছু কিছু মহিলা সাহাবী থাকতেন, তারা আহত সৈন্যদেরকে চিকিৎসা দিতেন।
এ ছাড়া মহীয়সী সাহাবী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) প্রচুর সংখ্যক সাহাবীদেরকে শিক্ষাদান করেছেন। আমাদের সমাজেও মেয়েদেরকে শিক্ষাদীক্ষা দেয়া অত্যন্ত জরুরী। তারা যেন অশিক্ষিত ও মুর্খ না থাকে। কেননা, আমরা জানি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। একজন নারীকে শিক্ষিত করে গড়ে না তুললে সেই জাতি কখনও উন্নত জাতিতে পরিণত হতে পারে না।
তাদের সন্তান-সন্ততিও সঠিকভাবে শিক্ষা দীক্ষা লাভ করতে পারে না।
অন্ততঃপক্ষে,জাতির কল্যাণের দিকে লক্ষ্য করে জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই নারীকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা উচিত।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন: জ্ঞান আহরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। আমরা জানি কুরআন শরীফের নাযিলকৃত সর্বপ্রথম আয়াত হচ্ছে “ইক্করা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক” অর্থাৎ, পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। ইসলামের প্রথম নির্দেশই জ্ঞান আহরণ।
অতএব, হিজাব পরিধানের সাথে সাথে শিক্ষাগ্রহণ করাও নারীর আবশ্যক দায়িত্ব।
এ ছাড়া সমাজে শান্তি শৃংখলা রক্ষার স্বার্থে মহিলা পুলিশ থাকা প্রয়োজন। তারা নারীদের ভিতর দায়িত্ব পালন করবে।
মোটকথা, নারীরা প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজ করতে পারবে পুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেশা থেকে দূরে থেকে।
মহিলারা কেন পুরুষদের থেকে দূরে থাকবে?
প্রশ্ন হতে পারে কেন পুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেশা থেকে নারীকে ইসলাম নিষেধ করে? জবাব হচ্ছে- নারীদের সামাজিক সমস্ত অকল্যাণ, তাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন ও লাঞ্চনা-বঞ্চনা এ অবাধ মেলামেশারই ফল।
অনেকে বলতে পারেন কথাটা যুক্তিবিরোধী কিংবা প্রমাণিত নয়। তাহলে, দেখুন এ সম্বন্ধে পশ্চিমা চিন্তাবিদরা কি বলে?
ইংরেজ লেখিকা “লেডি কোক” বলেছেন: তোমাদের মেয়েদেরকে পুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেশা থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দাও। তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তার জন্য গোপণ বিপদ আড়ালে ওৎ পেতে আছে।
সামুয়েল স্মাইলস বলেন: বিভিন্ন স্থানে নারীদের কাজ করার কারণে দেশের উন্নতি সাধিত হলেও এর দ্বারা বরং, পরিবারের ভিত্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর দ্বারা পরিবারের শৃংখলা ব্যবস্থা ভেংগে পড়ে সামাজিক সম্পর্ক ছিন্নিভিন্ন হয়ে যায়।
স্বামী এবং সন্তান-সন্ততি থেকে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ফলে, সমাজে অশান্তি ছাড়া শান্তির আশা করা যায় না।
ডক্টর ইডাইলিন(মহিলা) বলেন: আমেরিকায় বিশ্বমন্দা ও সমাজে অনাচার বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হল পারিবারিক আয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নারীদের বাড়ীর বাইরে কর্মস্থলে যাওয়া। এর ফলে তাদের আয় বাড়ে ঠিকই কিন্তু; তাদের চরিত্র ধ্বংস হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে- এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের একমাত্র উপায় হল নারীকে তাদের ঘরে পৌছিয়ে দেয়া।
আমেরিকার সাবেক একজন কংগ্রেস ম্যান বলেছেন: মহিলারা তাদের পরিবারের ভিতরে থেকেই রাষ্ট্রের সেবা করতে পারে।
অন্য এক কংগ্রেস সদস্য বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা যখন নারীদেরকে সন্তান ধারণের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন, তখন তাদেরকে সন্তান ছেড়ে বাইরে যেতে বলেননি। বরং তাদেরকে গুরুত্ব- পুর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন বাড়ীতে থেকে সন্তানদেরকে দেখাশোনা করার জন্য।
পশ্চিমা চিন্তাবিদদের এ সমস্ত বক্তব্য উল্লেখ করার পর এ কথা বলা যায় যে, বাড়ীতে থেকে পারিবারিক কাজকর্ম ও সন্তান সন্ততি লালন পালন করাই নারীর জন্য এবং সমাজের জন্য কল্যাণকর। এটা নারীর স্বভাব ও স্টাটাসের জন্য মানানসই। তবে, যদি নারী অন্য কোন বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয় তাহলে, নারীদের মাঝে শিক্ষাদান ও চিকিৎসা ইত্যাদিতে অবদান রাখবে।
যেমনটি করেছিলেন রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীগণ। যা পুর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীগণ উম্মতদেরকে শিক্ষাদান করেছেন। আজও দেখা যায় অনেক মুসলমান নারী একইভাবে হিজাব ও ইসলামী বিধি-বিধান মেনে সমাজে নানাভাবে অবদান রেখে চলেছেন।
নিজস্ব বা পারিবারিক প্রয়োজনে মহিলা সাহাবীগণ বাড়ীর বাইরে বের হয়েছেন রাসুল (সাঃ) এর বেশ কিছু হাদীসে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
মহিলা সাহাবীগণ কৃষিকাজ করতে খেত-খামারে, শিক্ষা গ্রহণ করতে, কিংবা তাদের উপযোগী বিভিন্ন কাজ করে উপার্জন করার জন্য বাইরে বের হয়েছেন। কখনো আবার সামাজিক প্রয়োজন যেমন যুদ্ধের ময়দানে গিয়েছেন।
যুদ্ধের ময়দানে তারা আহতদের চিকিৎসা করা, তৃষ্ণার্তদেরকে পানি পান করানো কিংবা খাবার রান্নাবান্না করার দায়িত্ব পালন করতেন। এমনকি যুদ্ধেও ভুমিকা রাখতেন। বুখারী শরীফে “মহিলাদের যুদ্ধ” নামে একটি অধ্যায় রয়েছে।
রাসুল (সাঃ) ইবাদাতের সময়েও নারী পুরুষের জন্যে আলাদা আলাদা স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নামাজে মহিলাদের কাতার থাকত একেবারে পিছনের দিকে। মসজিদে নববীতে তিনি মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা দরজার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি পুরুষদেরকে নির্দেশ দিতেন মহিলারা বের না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন নিজ নিজ স্থানে বসে থাকে। রাসুল (সাঃ) শুধুমাত্র মহিলাদেরকে দ্বীনশিক্ষা দেয়ার জন্য কিছু দিন নির্দিষ্ট করেছিলেন।
ঐ দিনগুলোতে মহিলাদের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ করে যেগুলো পুরুষের উপস্থিতিতে বলতে তারা ইতস্ততঃ করে থাকেন সেগুলো শিক্ষা দিতেন।
ইবাদাত তথা দ্বীনী বিষয়ে রাসুল (সাঃ) যখন তাদেরকে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করে থাকেন, তখন সাধারণ কাজের ক্ষেত্রে অবশ্যই আলাদা থাকতে হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশে দেশে হিজাব ও নাস্তিকদের হিজাবভীতি
বিভিন্ন দেশে নাকি হিজাবের ব্যবহার ক্রমাগত ও আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশে বোরকার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ইন্টারনেটের বিভিন্ন বাংলা ফোরামে আলোচনা করতে দেখা যায়।
এসব ফোরামে অনেককে বলতে দেখা যায় অল্প কয়েকবছর আগে আমাদের দেশে নাকি বোরকা পরা মহিলা দেখা যেত খুবই কম।
আর যারা বোরকা পরত তাদের অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলের মহিলা। শহরে খুব কমই দেখা যেত। কিন্তু, এখন শহরে বোরকাধারী মহিলার সংখ্যা অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশের স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাদের বোরকা পরার পরিমাণও নাকি বৃদ্ধি পেয়েছে।
যদি তাদের কথাই সত্য হয় তাহলে, নিশ্চিতভাবেই এটা নাস্তিকদেরকে ভাবিয়ে তুলছে তাই, তারা এ দেশে বোরকা নিষিদ্ধ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
তারা তাদের মিশন সাকসেসফুল করার জন্য যা করার তা করতে কুন্ঠিত হচ্ছে না।
অত্যন্ত আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের দেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার জনাব শওকত আলী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও বোরকার বৃদ্ধিতে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে আবোল তাবল বলতে শুরু করেছে।
কয়েকবছর আগে সজিব ওয়াজেদ জয় আমেরিকায় একটা থিসিস লিখেছে। সেখানে বলেছে: চার দলীয় জোট সরকারের সময় বাংলাদেশে আগের তুলনায় ৫০০ গুন বেশী বোরকা বিক্রি হয়েছে। তাই, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনে বোরকা বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
যা আমার দেশ সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
এছাড়া গত কয়েকদিন আগে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেছেন যারা বোরকা পরে তারা তাদের বিশ্রি চেহারা ঢাকতে বোরকা পরিধান করে। যা বাংলাদেশের ইসলাম প্রিয় জনতার অন্তরে আঘাত দিয়েছে। তার এ বক্তব্যের কারণে তাকে ধিক্কার জানিয়েছে ইসলাম প্রিয় কোটি কোটি মুসলিম জনতা।
শুধু এখানেই শেষ নয়।
গত কয়েকদিন আগে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের হাইকোর্ট থেকে বলা হল- কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদেরকে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না। অথচ, তাদের উচিত ছিল বখাটেদের উৎপাত থেকে নারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে শুধুমাত্র মুসলিম নারীদের মধ্যে বোরকা তথা হিজাবকে বাধ্যতামুলক করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়া। তাহলে, আমাদের সমাজ থেকে ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপ সহ সমস্ত প্রকার অশ্লীলতা দুরীভুত হত। সমাজে নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার হিসেবে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করতে পারত।
হিজাব বা বোরকা বিরোধীরা অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে যাচ্ছে।
তাদের অন্তরে চিন্তা ঢুকে গেছে- আস্তে আস্তে এ দেশের সমস্ত মহিলা যদি বোরকা পরা শুরু করে দেয় তাহলে, সমাজের বিশৃংখলা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে, তাদের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। সবাই যদি ভালো হয়ে যায় তাহলে, তাদের চিন্তা কারা লালন করবে? এটা তাদেরকে অত্যন্ত চিন্তান্বিত করে তুলেছে। তাই, যে করেই হোক বোরকা বন্ধ করে দিতে হবে; এ লক্ষ্যে তারা টার্গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
যাকে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যই বলতে হয়।
হিজাব কেন বিতর্কিত
বেশ কিছু কারণে হিজাব কতিপয় মানুষের কাছে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে বলে শোনা যায়। তাদের বক্তব্য হল- বোরকা পরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বা চুরি ডাকাতি করছে কিংবা পুরুষ মানুষ বোরকা পরে অন্যায় কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। তাই, বোরকাকে তারা দুই চোখে দেখতেই পারে না।
অনেক নাস্তিককে এমনও বলতে শোনা যায় যে, বোরকা পরা মহিলা দেখলেই নাকি তার মনে হয় এটা কোন জংগী বা সন্ত্রাসী।
এভাবে তারা মানুষকে বোরকা তথা হিজাব থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে থাকে। মানুষকে বোরকা তথা হিজাব থেকে দুরে রাখার জন্য এটা তাদের কৌশল। অথচ, আমরা দেখি এ ধরণের ঘটনা সমাজে খুব কমই ঘটে থাকে।
আমি বলব কারো শরীরের কোন একটি অংগ যদি আক্রান্ত হয় এবং তা কেটে না ফেললে অন্য অংগে তা সংক্রমিত হতে পারে এমন আশংকা থাকে তাহলে, শুধুমাত্র উক্ত অংগ না কেটে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হত্যা করা কি যুক্তি সংগত হবে? তা কখনোই উচিত হবে না। বরং, উচিত হবে শুধুমাত্র আক্রান্ত অংগটি কেটে ফেলে সংক্রমন থেকে অন্যান্য অংগকে রক্ষা করা।
ঠিক তেমনি প্রশাসনের উচিত যারা বোরকার আড়ালে এমন সব কর্ম করে থাকে তাদেরকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা; পুরো বোরকা সিস্টেমকে নিষিদ্ধ করে দেয়া উচিত নয়; এবং তা সুবিবেচকের কাজ হবে না।
হিজাব সম্বন্ধে বিভিন্ন সংশয় নিরসন
১.অভিযোগ: অনেক মহিলা বলে থাকেন- তিনি যতক্ষন শিষ্টাচারীতা অবলম্বন করবেন এবং নিয়্যাত ঠিক থাকবে ততক্ষন কোন সমস্যা নেই। ঈমান হল মনের ব্যাপার।
জবাব: জি, আসলে ঈমান অন্তরের বিষয় সেটা ঠিক আছে। তবে, এটা ছাড়াও আপনার অন্তরের বিশ্বাসের সাথে সাথে তা মুখে প্রকাশ করা ও বাস্তবে তা বাস্তবায়ন করাও কিন্তু ঈমানের দাবি।
অন্তরে যখন তা বর্তমান থাকে তার সাথে সাথে বাস্তবে তার আছর থাকা উচিত।
২.অভিযোগ: অনেকের দাবী- হিজাব পরিধান করলে নাকি চুল বড় হয় না।
জবাব: এ দাবী সঠিক নয়; এটা খোড়া যুক্তি বলা যেতে পারে। কেননা, অনেক মহিলা হিজাব পরিধান করেন অথচ, তাদের চুল অনেক বড়,মজবুত ও সুন্দর। তারা বাড়ীতেই চুলের যত্ন নিয়ে থাকেন।
৩.অভিযোগ: হিজাব পরিধান নারীর স্বাধীনতায় বাধা দেয়। অপরদিকে বেপর্দায় থাকা তার জন্য সহজ হয়; কষ্টের কারণ হয় না। এছাড়া ইসলামই তো সকল বিষয়ে সহজতার নির্দেশ দিয়েছে।
জবাব: ইসলাম সহজতার নির্দেশ দেয় এ কথা নিঃসন্দেহে সত্য। তবে, হিজাব নারীর জন্য পবিত্রতার গ্যারান্টি ও হেফাজতকারী।
এটা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা থেকে নারীকে মুক্তি দেয়।
৪.অভিযোগ: পুরুষদেরকে চক্ষু নিম্নগামী করতে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। তাহলে, মহিলাদের আবার হিজাব পরিধান করতে হবে কেন? তাদের চেহারা ও শরীর ঢাকাই যদি থাকবে তাহলে, পুরুষদেরকে কি থেকে চক্ষু নিম্নগামী করতে বলা হয়েছে?
জবাব: সমাজে সব ধর্মের লোক বসবাস করে থাকে। সেখানে বাস করে মুসলমান, ইহুদী, খৃষ্টান বা অন্য যে কোন ধর্মের লোক। তাদের মহিলারা হিজাব পরিধান করে না।
কিংবা কোন দুর্ঘটনা বশত: মুসলিম মহিলার কোন অংগ খুলে যেতে পারে সেগুলো থেকে তাদেরকে দৃষ্টি নিম্নগামী করতে বলা হয়েছে।
৫.অভিযোগ: পিতামাতার অনুগত থাকা আবশ্যক। তারা যদি হিজাব পরিধানে বাধা দেন তাহলে আমার করণীয় কি?
জবাব: মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে- তারা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করবে। তার আনুগত্যের পথে অন্য কারো নিষেধাজ্ঞা মানবে না। আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ পালন করার পরই অন্য কোন লোকের আদেশ মান্য করবে।
আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ উপেক্ষা করে অন্য কারো আনুগত্য করা উচিত নয়। কেননা, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তায়ালার রোষানল থেকে কেউ আপনাকে বা আমাকে বাচাতে পারবে না।
হিজাব শব্দটি বর্তমান বিশ্বের প্রায় সমস্ত মানুষের মুখে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। ফ্রান্।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।