আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিজাব পরিধান সময়ের দাবি

একজন ভালো মানুষ হতে চাই।

পৃথিবীতে মানবজাতির আবির্ভাবের পর থেকেই মানুষ নিজেকে আবৃত করার চেষ্টায় নিয়োজিত হয়। কখনও গাছের পাতা, কখনও গাছের ছাল আবার কখনও বা পশুর চামড়া ইত্যাদি নানাবিধ উপায়ে নিজেকে আবৃত করতে করতে এক সময় কাপড় দ্বারা লজ্জা নিবারণ করার পদ্ধতি শেখে মানুষ। লজ্জা নিবারণ ও সৌন্দর্য সাধন এ দুই’ই মূলত পোশাক পরিধানের উদ্দেশ্য। তবে ব্যক্তিত্ব ও রুচি প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম পোশাক।

শেখ সা’দী (রহ) এর বহুল প্রসিদ্ধ পোশাক সংক্রান্ত উপদেশমূলক গল্প এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে। তিনি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে পোশাক মানুষকে বড় করে না, বড় করে তার মহৎ গুণ। কাজেই জাতীয় পোশাক একটি জাতির আইডেনটিটি হলেও ব্যক্তির রুচি-সৌন্দর্য-ব্যক্তিত্ব প্রকাশে অবশ্যই ভদ্রজনোচিত ও মার্জিত পোশাক পরিধান করা জরুরি। এটা সভ্যযুগের সভ্যমানুষের দাবি। নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পোশাক পরলে বিরক্তির উদ্রেক হয়।

ছিন্ন বস্ত্র পরিধান করলে করুণার উদ্রেক হয়, মার্জিত পরিপাটি পোশাক পরলে সম্মান ও প্রীতি জাগ্রত হয়। তদ্রƒপ অশালীন ব্যাকলেস বা স্লিভলেস ড্রেস পরিহিত ব্যক্তি জনসমক্ষে এলে লজ্জাবোধ হয় ও শ্রদ্ধা বিনষ্ট হয়। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব হওয়ার কারণে সমাজের অপরাপর মানুষের পছন্দ-অপছন্দ, সুবিধা-অসুবিধা বুঝে চলতে হয়। বিদেশে কারও আচরণ দ্বারা কোন পথচারী ও প্রতিবেশী যেন কোনক্রমেই কষ্ট না পান সে জন্য রীতিমত আইন পাস করা হয়। আর এজন্যই বিদেশে এত ডিসিপ্লিন্ড্ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়।

এতে সিটি লাইফের আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে বিদেশীদের পোশাক তাদের অভিরুচি, কৃষ্টি ও তাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী হওয়ার এ পর্যায়ে এ সম্পর্কে মন্তব্য করা অপ্রয়োজনীয়। আমাদের দেশের আবহাওয়া, দেশবাসীর অভিরুচি, কৃষ্টি, মূল্যবোধ বিদেশীদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের দেশ খুব ধর্মীয় সদভাবাপন্ন ও শান্তিপ্রিয় বলে বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত। এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও যথাযথভাবে নাগরিক অধিকার ভোগ করে থাকেন।

শুধু সাঁওতাল ও উপজাতি জনগোষ্ঠী ছাড়া এ দেশের হিন্দু ও মুসলমান জনগণের মধ্যে পোশাকের ভিন্নতা খুব চোখে পড়ার মতো নয়। হিন্দুরা শাঁখা-সিঁদুরসহ সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, শার্ট-প্যান্ট, কোট-টাই পরে থাকেন। মুসলমান জনগণ শাঁখা-সিঁদুর বাদ দিয়ে প্রায় একই ধরনের পোশাক পরিধান করে থাকেন। এদিক থেকে তাদের মধ্যে অভিন্নতা বিদ্যমান। এ দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মহিলা এমপিগণ সকলেই শালীন পোশাক পরিহিত এবং আব্রু রক্ষায় বেশ সচেতন।

এ দেশের সামাজিক ও পারিবারিক কালচারে লজ্জাশীল, ধর্মপ্রাণ, সুশিক্ষিত এবং আত্মমর্যাদাশীল নারীদের প্রাধান্যই বেশি। আমাদের ধর্মে শালীন ও মার্জিত পোশাক পরে নারীদের যেকোন মর্যাদাসম্পন্ন পদে বা পেশায় নিয়োজিত হতে কোন বাধা নেই। আবার লক্ষণীয় যে, মাদার তেরেসা, বেনজির ভুট্টো, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন প্রভূত সমাজসেবী, দেশনেত্রী ও সংস্কারকগণ শালীন ও মার্জিত পোশাকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ধর্ম-জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে তাঁরা মার্জিত পোশাক ও ভদ্র জীবনযাপনের প্রতি সচেতন ছিলেন। তাঁদের মার্জিত পোশাক ও হিজাব কখনও তাঁদের উন্নতি ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের অন্তরায় হয়নি।

খ্রিষ্টান নারীগণ, হিন্দু নারীগণ ও মুসলিম নারীগণ প্রত্যেকেই শালীন পোশাক ও মাথা আবৃত করার ব্যাপারে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে আত্মপ্রকাশ করেন। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া নারীগণ শালীন পোশাকের বিপক্ষে কথা বলেন না বা হিজাববিরোধী অবস্থান পছন্দ করেন না। আমাদের নারী অধিকার রক্ষায় নিয়োজিত নারীবাদী সংস্থার সদস্যগণও এ পর্যন্ত শালীন পোশাকের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেননি। বরং ধর্ম-বর্ণ জাতি নির্বিশেষে বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শালীন পোশাকই যে নারীদের মর্যাদা রক্ষায় সহায়ক এবং নগ্ন ও অশালীন পোশাকই যে নারী নিরাপত্তারক্ষা ও মর্যাদা রক্ষার প্রতিবন্ধক তা প্রমাণ করেছে এ কথা সুধীজনের স্বীকার করতে আশা করি কোন বাধা নেই। আমি মনে করি, সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষায় ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে শালীন পোশাকের কোন বিকল্প নেই।

নারী-পুরুষ নির্বেশেষে শালীন ও ভদ্রজনোচিত পোশাক পরিধান করতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, বিচারালয়, সেনাবাহিনী-নৌবাহিনী-বিমান বাহিনী-পুলিশ প্রশাসন প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম, অ্যাপ্রোন, গাউন অর্থাৎ নির্ধারিত আইডেনটিটি বিদ্যমান এবং নির্দিষ্ট পোশাকসমূহই প্রতিটি পেশায় স্বাতন্ত্র্য এনেছে। পোশাক অনুযায়ী তাদের বা বিভিন্ন পেশাজীবীর কার্যপ্রণালী সম্পর্কে আমরা ধারণা লাভ করতে পারি। কাজেই পোশাক যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা উপরিউক্ত আলোচনা থেকে সহজেই অনুমেয়। আবার লক্ষণীয় যে, উল্লিখিত কোন পেশাতেই ড্রেসকোড নির্বাচনে অশালীনতা ও বেআব্রু বা লজ্জাজনক পোশাক চয়ন করা হয়নি।

এ থেকে বিভিন্ন পেশাতে ঊর্ধ্বতন বিবেকবান জনগোষ্ঠীর সমাজ সচেতনতা ও সুচিন্তিত মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্বের কোন কোন গোষ্ঠী বা সংস্থা হিজাবের বিরুদ্ধে নেমেছে। তবে হিজাবের পক্ষেও কেউ অবস্থান নেননি তা নয়। অধুনা হিজাব পরিধান ব্যক্তিস্বাধীনতার সাথে জড়িত বলে কেউ কেউ মত প্রকাশ করেছেন। কাজেই হিজাব পরিধানকে কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না।

কেউ যদি জেনে বুঝে নগ্ন হয়ে জনসমক্ষে বিচরণ করে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চান তবে এ ব্যাপারে সমাজবিজ্ঞানী ও মনস্তাত্ত্বিকগণই সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু কেউ যদি জেনে বুঝে আবৃত হয়ে জনসমাজে আত্মপ্রকাশ করতে চান এবং কাউকে ডিসটার্ব না করেন তবে মনে হয় এক্ষেত্রে বাধা দেয়ার পক্ষে কেউ নয়। যেকোন ভাল বা ভদ্রতা প্রকাশে আমরা বাধা দেবো না। আর যেকোন মন্দ বা অভদ্রতা-অশালীন আচরণ প্রকাশে আমরা বাধা দেবো। নতুবা আমাদেরকে নতুন করে সভ্যসমাজের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে।

সুকান্ত ভট্টাচার্য এই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ শিশুদের জন্য বাসযোগ্য করে রেখে যেতে চেয়েছেন। সম্রাট নেপোলিয়ান একজন ভালো মাতা ও সুশিক্ষিত জাতির স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ধর্মকে দেখেছিলেন একটি বৃন্তে ফোটা দু’টি ফুলের ন্যায়। এরা সবই সুন্দর শালীন শান্তিপ্রিয় সংঘাতবিমুখ সমাজ রচনার পক্ষে ছিলেন। শালীন জীবনযাপন ছাড়া কোনক্রমেই সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব নয়।

আর শালীন ও ভদ্র পোশাক ছাড়া কোন ক্রমেই নারী-পুরুষের পক্ষে ভদ্র জীবনযাপন করা সম্ভন নয়। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু যে সর্বদাই মানুষকেই নগ্নতার দিকে আহবান করে। কারণ শয়তান একটা সচেতন (খারাপ অর্থে) যে নগ্নতা বা পোশাকহীনতা ছাড়া মানবসমাজের বিপর্যয় সম্ভব নয় সেটা যে বুঝেই হিজাবের বিপক্ষে কাজ করে যাচ্ছে সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে, যে কাহিনী আমাদের কারও অজানা নয়। কিন্তু আমরা যেন শয়তানকে সহযোগিতা না করি এটা আমার বিনীত অনুরোধ। ইভটিজিং, নারী ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, পরকীয়ায় আসক্তি, সমকামিতা, তরুণ-তরুণীর অবৈধ যৌনসম্পর্ক, নারী অপহরণ, আত্মহত্যা-গুম, জোরপূর্বক দেহব্যবসায় লিপ্তকরণ ও নারী পাচার প্রভৃতি অপকর্ম ও অসামাজিক কাজকর্মের পেছনে আছে কিছু বিকৃত রুচিসম্পন্ন অশালীন জীবনযাপনে বিশ্বাসী অর্থলোভী নীতিজ্ঞানবিবর্জিত মানুষ।

এ কাজগুলোতে সফলতার জন্য অবশ্যই নগ্নতা নিশ্চিত করতে হয়। আর তাই অর্ধনগ্ন পোশাক তৈরি এবং অশালীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত করা জরুরি। অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ এবং গর্ভপাত, কিশোর-কিশোরীর অজ্ঞানতা ও অশালীন চলচ্চিত্র ও চিত্ররূপের ফল। এর মূলে আছে অশালীন ও নগ্ন পোশাক বললে ভুল হয় না। হিজাবকে উৎসাহিত করা এ সমাজের জন্য ও সুনাগরিক গঠনের জন্য খুবই কল্যাণকর হবে।

আর অশালীন পোশাক পরিধান ও অসামাজিক আচরণ প্রকাশের বিরুদ্ধে নারী-পুরুষ এবং অভিভাবকগণকে এগিয়ে আসতে হবে। একটি সুস্থ পরিশীলিত সমাজ গঠনে দেশব্যাপী সরকার ও জনগণ সবাইকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশীয় ঐতিহ্য ও কালচার রক্ষার মধ্যে দিয়েই বিশ্বাঙ্গনে দেশীয় ভাবমূর্তি সমুন্নত করা সম্ভব হবে। হিজাবপরিহিতা নিরীহ নারীগোষ্ঠী দেশীয় ঐতিহ্য ও কালচারের জন্য সহায়ক এটা বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করতে কোন বাধা নেই। ----নূরিন ইসলাম কালেকটেড//


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.