জীবন ,সে তো পদ্ম পাতায় শিশির বিন্দু"
গান শোনার পাশাপাশি সংগ্রহ করা আমার অনেকদিনের নেশা। এই জিনিসটার প্রতি নিত্যদিনের কাজের যতটুকু সময় ব্যয় করি তা বোধ হয় অন্য কোন কাজে করিনা। এ নিয়ে বউ এর সাথে মাঝে মাঝে "মাইল্ড" বাক-বিতন্ডতাও হয়ে যায়। যেমন,বাইরে যাব। বউ হাতে ধরিয়ে দিল সংসারের নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসের একটা ফর্দ।
আমি সবই কিনে আনলাম অথচ আনতে ভুলে গেলাম বাচ্চার ফর্মূলা অথবা ডায়েপার। এর বদলে ঠিকই কেনা হয়েছে আমার খুব পছন্দের একটা সিডি। তখন বউ এর রাগতঃ মুখখানা আর দেখে কে। আবার দৌড় দিতে হয় ফর্মূলা আনার উদ্দেশ্যে। এসব টুকটাক ক্যাচালের মাঝেও "অতঃপর তাহারা আবার সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো" বিধান মেনে আমরাও সুখে শান্তিতে দাম্পত্য জীবন পালন করে চলছি।
যাইহোক,পিচ্চি(মানে আমার ছেলে)দিনে দিনে বড় হচ্ছে। ও যখন ৪ বছরে পা দিলো, তখন একদিন ঘরে ফিরে দেখি, খুব মনোযোগ দিয়ে সে গাইছে " এ নেনেনা কেমুনে সইই....তুমি চারা কেমুনে রইইই.." (এ বেদনা কেমনে সহি , তুমি ছাড়া কেমনে রহি )সতীনাথ মুখার্জীর রাগ দরবারীতে গাওয়া আমার অত্যন্ত প্রিয় একটা গান যা আমি প্রায়ই আমি শুনি। তো,অন্য কোন তো দুরের কথা শুরুতেই একটা রাগপ্রধান গান যে ছেলেকেও আকৃষ্ট করে ফেলেছে এটা আমি প্রথমবারের মত আবিস্কার করলাম। বিস্ময়ভরা চোখে জিজ্ঞেস করলাম বাপধন আর কি গান জানো বলতো ! সে বললো "সোনার ময়লা গাই?" 'সোনার ময়লা?......."ভ্রু কুচকে তাকিয়ে সায় দিয়ে বললাম আচ্ছা গাও। বিজ্ঞ শিল্পীর মত সে গাইতে শুরু করলো
"আমার সোনার ময়লা পাকী
কুন দুষুতে গেলা ময়লারে
দিয়া মুরে পাকীরে আমার সোনার ময়লা পাকী"
কথাগুলো এলোপাথাড়ি হলেওদেখলাম সুর কিন্তু ঠিকই আছে।
গান শুনছি আর ভাবছি 'বাহ ব্যাটা। সোনার ময়না পাখীরে একেবারে ময়লা করে ফেলেছো দেখছি। তবে অসুবিধা নাই, এক সময় সবই ঠিক হয়ে যাবে। 'একটু আত্মপ্রাসাদ লাভ করে ঘুরে বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বউ মুচকি মুচকি করে হাসছে। যেন পু্ত্রের এমন প্রতিভায় সেও যথার্থই মুগ্ধ ।
আর এই ফাঁকে আমি একটা ভাব দেখিয়ে বুঝালাম ফ্যামিলীর মধ্যে এখন আমরাই মেজরিটি। টু ভার্সাস ওয়ান। আমাদের বিরুদ্বে বিদ্রোহ করে কে। এমন বিরল প্রতিভায় বিমোহিত হয়ে পু্ত্রকে তানসেন বানানোর ইচ্ছায় পরের দিনই ছোট্ট একটা গীটারও কিনে দিলাম। যদিও গীটারের 'তার-তোর' ছিড়ে সেটা ঐ দিনই গার্বেজে ফেলে দিতে হয়েছে।
যাইহোক এভাবে আমাদের দিন-কাল কাটছিলো। সেই পিচ্চি ও আর আগের পিচ্চি নাই অনেকখানি বড় হয়েছে সে। থার্ড গ্রেডে পড়ে। সে দিন কি মনে করে জিজ্ঞেস করলাম 'বাবা ! সোনার ময়না পাখী গানটা গাও তো ! উত্তরে সে বললো 'বাংলা গান পঁচা। জাস্টিন বিবারের গান ভাল, বিগ টাইম রাশ ভাল"।
এটা শুনে আমি তো একেবারে থ'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।