আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকার গাছ


লিংক ইট-পাথরের চাপায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকার সবুজ রূপ। প্রতিদিন নতুন নতুন বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হচ্ছে আর কেটে ফেলা হচ্ছে পুরনো বাড়ির চারপাশ দিয়ে থাকা গাছ। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে বৃক্ষতলের শীতল ছায়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি জনপদে জনগণের তিনগুণ গাছ থাকা দরকার। কিন্তু প্রায় দুই কোটি মানুষের এই ঢাকা শহরে গাছ আছে কয়টি? সঠিক সংখ্যা কারো কাছে না থাকলেও তা দুই-তিন লাখের বেশি হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

ঢাকা অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ও গাছপালা মৃত্তিকাবিদদের মতে, ঢাকা শহর ব্রহ্মপুত্রবাহিত পলি অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। মাটি দো-আঁশ ও অম্লাভাবাপন্ন। পিএইচ-৫ থেকে ৬ দশমিক ৮ পর্যন্ত। কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও সিলেটের সমতল, মধুপুর বাদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এবং মধুপুর বাদে ময়মনসিংহের প্রায় ১৬ হাজার বর্গমাইল এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এখানে সাধারণত নারিকেল, আম, জাম, মেহগনি, শিশু, রেইনট্রি, শিমুল, কদম, নিম ও জলপাই গাছের দেখা বেশি পাওয়া যায়।

তবে ঢাকা শহরে বলধা গার্ডেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনাসহ বেশকিছু এলাকায় দুর্লভ কিছু গাছের দেখা মেলে। ঢাকা শহরের নিসর্গ ইতিহাস নিসর্গ শিল্পী অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মার ভাষায়, ‘সূর্যালোকিত মৌসুমী-বিধৌত আমাদের দেশ জীবননন্দনতত্ত্বের অজস্র আকর্ষী উপাদানে সমৃদ্ধ। ’ বাংলাদেশের রূপ মানেই সবুজে ঢাকা তরুপল্লবের এক মহামেলা। ঢাকা শহরও এর ব্যতিক্রম ছিল না। যখন থেকে এ শহর নগরে রূপ নেয়া শুরু করে তখন থেকে এখানে উদ্যানচিন্তার উন্মেষ ঘটা শুরু।

মুঘলরাই এ উপমহাদেশে উদ্যানের ধারণা নিয়ে আসে প্রথম। সম্রাট বাবর নিজেই ছিলেন এর অগ্রপথিক। তিনি বলেন, ‘আমি যে সমস্ত উদ্যান ও প্রাসাদ নির্মাণ করিয়াছি তাহাতে সমতা রক্ষার কোনো ত্রুটি রাখিনাই। প্রত্যেক কোণে সুসামঞ্জস্য উদ্যান তৈরি করিয়াছি এবং তাহাতে নির্ভুল সৌষম্যে গোলাপ ও নার্সিসাস লাগাইয়াছি। ’ মুঘলরা স্বভাবতই তাদের প্রিয় মধ্য এশীয় গাছপালা এদেশে রোপণ করেছেন।

এ সময়ই আজকের রমনা এলাকায় ‘বাগ-এ বাদশাহ’ নামে একটি উদ্যান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। পরে সুবা বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হলে এ অঞ্চলের নিসর্গ পরিণত হয় জঙ্গলে। ইংরেজ আমলে এ অঞ্চল জঙ্গলেই ঢেকে থাকে। পরে ১৮২৫ সালে রমনাকে রেসকোর্স করা হয়। ঢাকা শহরে নিসর্গ প্রতিষ্ঠার মূল কাজ শুরু হয় একটি রাজনৈতিক পটভূমিকায়।

অধ্যাপক শর্মার ভাষায়, ‘১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গ ও আসামের সংযুক্তি পরিকল্পনায় ঢাকায় নতুন প্রদেশের রাজধানী নির্মাণের অসম্পূর্ণ উদ্যাগের ফল রমনা গ্রীন। ঢাকা শহরের নিসর্গ-পরিকল্পনার কাজ শুরু হয় ১৯০৮ সালে লুই প্রাউডলকের হাত ধরে। ’ ঢাকার কোথায় কী পরিমাণ গাছ আছে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার আয়তন ৩০৪ বর্গকিলোমিটার। এই আয়তনের ঠিক কতভাগ গাছ আছে তার কোনো হিসাব নেই বনবিভাগ বা সিটি করপোরেশনে। ঢাকা সামাজিক বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা বলেন, ঢাকা শহরে গাছের কোনো পরিসংখ্যান কখনোই করা হয়নি।

এজন্য বলা যাচ্ছে না ঠিক কতভাগ এলাকায় গাছ আছে। ঢাকা শহরে মূলত বোটানিক্যাল ও বলধা গার্ডেনের পাশাপাশি রমনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কোতোয়ালি থানা, তেজগাঁও, শেরে বাংলানগর অঞ্চলেই গাছের দেখা পাওয়া যায়। ঢাকা মহানগরীর ২১ টি থানার পূর্বতন হিসাব মধ্যে কেবল তেজগাঁও, কোতোয়ালি ও রমনা থানাতে মোট ৯টি উদ্যান আছে। বাকি অঞ্চলে শুধু ইট-পাথরের বাড়ি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। বনবিভাগের সূত্র মতে, মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ৭৫ হাজার ও বলধা গার্ডেনে প্রায় ১৭ হাজার গাছ আছে।

আরবরিকালচারের এক সূত্র মতে, রমনা উদ্যানে ৫০৫০টি ও সোহরাওয়ার্দীতে ৩ হাজার ৫শটি গাছ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরবরিকালচারের হিসাব অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গাছ আছে প্রায় ৫ হাজার। ওসমানী উদ্যানে গাছের কোনো হিসাব নেই সিটি করপোরেশনের কাছে। সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা ধানমন্ডি লেক পাড়ে আছে ৪ হাজার ৮শ ৭০টি গাছ। বঙ্গভবনে ৮ হাজার ৭শ ৮২টি গাছের হিসাব পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি গণভবন, চন্দ্রিমা উদ্যান ও সংসদ ভবন এলাকার গাছের সঠিক হিসাব।

গত ১০ বছরে সামাজিক বন বিভাগ ঢাকার রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগিয়েছে ৪৮ হাজার ৬শটি। এর বাইরে গণপূর্ত বিভাগের আরবরিকালচারের পরিপালনে সচিবালয়, ওসমানী মিলনায়তন, হাইকোর্ট, ধানমন্ডি এলাকার ভিআইপি ভবনগুলো, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন, মিন্টো রোড, ইস্কাটন ও সিদ্ধেশ্বরীর সরকারি বাড়ি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সাভার স্মৃতিসৌধ, পরিকল্পনা কমিশন, সুধা সদনসহ বিভিন্ন সরকারি ভবনে বেশকিছু গাছ আছে। বোটানিক্যাল গার্ডেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও জিনপুল তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৬১ সালে মিরপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেন। ২০৮ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ উদ্যানে সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে করা একটি হিসাব অনুযায়ী ৯৭৭ প্রজাতির প্রায় ৭৫ হাজার গাছ আছে। এর মধ্যে ২৫৫ প্রজাতির ২৮ হাজার ২শ বৃক্ষ, ৩১০ প্রজাতির ৮ হাজার ৪শ গুল্ম ও ৩৮৫ প্রজাতির ১০ হাজার ৪শ বিরুৎ জাতীয় গাছ আছে।

এখানে বেশকিছু দেশি-বিদেশি বিরল প্রজাতির গাছের দেখা পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অ্যানথোনিয়া, আগর, ব্রেড ফ্রুট, পুনর্নভা, আকন্দ, ওল্ডম্যান ক্যাকটাস, কর্পূর, খরগোশ ফার্ন, তমাল, ডামবিয়া, ভূজ্জপত্র, মাধবী, কানাইডিঙ্গা, ট্যাবেব্যুয়া, কালোকেশি, অনন-মূল, সাদা রঙ্গন, বড় চম্পা, কারিলিফ, ছোট মুসান্ডা, রামবুতাম, ক্যান্ডল গাছ প্রভৃতি। বলধা গার্ডেন বলধা গার্ডেন সূত্রে জানা যায় ১৯০৯ সালে বলধা এস্টেটসের তৎকালীন জমিদার, বিশিষ্ট প্রকৃতিপ্রেমিক নরেন্দ্র নারায়ণ রায়চৌধুরী কর্তৃক পুরাতন ঢাকা ওয়ারীতে প্রতিষ্ঠিত বাগানই আজকের ঐতিহ্যবাহী বলধা গার্ডেন। বর্তমানে এটি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের একটি স্যাটেলাইট ইউনিট। ২০০২ সালে করা হিসাব অনুযায়ী এ বাগানে ৬৮৯ প্রজাতির প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার গাছ আছে।

এর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে শঙ্খনদ পুকুর, আমাজান লিলি, ক্যামেলিয়া, স্বর্ণ অশোক, প্যাপিরাস, চামেলি, হাপারমালি, হংসলতা, আফ্রিকান টিউলিপ, লতা গন্ধরাজ, কনকচাঁপা, জহুরিচাঁপা, ক্রিমফ্রুট, কুরচি, মাধবী, হলুদ, নীল, লাল ও সাদা জাতের শাপলা, বিরল প্রজাতির ক্যাকটাস ও অর্কিড, ভূজ্জপত্র। এখানকার উল্লেখযোগ্য বিরল প্রজাতির গাছগুলো আছে বাগানের সাইকি অংশে যেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। সিবলী অংশ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১২টা এবং বিকেল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। রমনা পার্ক ঢাকার ফুসফুস নামে খ্যাত আজকের রমনা পার্ক ৬৮ দশমিক ৫ একর জমি ও ৮ দশমিক ৭৬ একর ঝিল নিয়ে গড়ে ওঠে ১৯৫২ সালে। জানা গেছে, কলকাতার ইডেন গার্ডেনের অন্যতম নির্মাতা প্রয়াত ফজলুল করিমের হাতেই এর সূচনা।

তবে বৃক্ষ-লতা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন ‘তরুপল্লব’-এর সেক্রেটারি মোকারম হোসেন বলেন, ‘যতদূর জানি ফজলুল করিমের হাতে ইডেন গার্ডেন একটি শৈল্পিক সৃষ্টি। নিখুঁত নকশায় সাজিয়েছিলেন তরুশোভা। কিন্তু রমনা পার্কে এখন বৃক্ষ রোপণের যে নৈরাজ্য দেখি তা নিশ্চয়ই ফজলুল করিমের পরিকল্পনার অংশ ছিল না। ’ পার্কের বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সুদীর্ঘ সময়ের ফসল। বৈচিত্র্য থাকায় সারাবছরই কিছু না কিছু ফুল থাকে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫০৫০টি গাছ আছে পার্কে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : পাদাউক, পলাশ, ধারমার, কাউয়াতুতি (বনপারুল), আগর, জ্যাকারান্ডা, তমাল, বাওবাব, গ্লিরিসিডিয়া, কর্পূর, স্কারলেট কর্ডিয়া, জহুরিচাঁপা, ক্যাশিয়া জাভানিকা, মাধবী, মালতী, আফ্রিকান টিউলিপ, কেয়া, অশোক, ট্যাবেবুয়া, পাখি ফুল, কফি, উদয়পদ্ম, সহস্রবেলী, লাঙ্কাস্টারি ফুরুস, গোল্ডেন শাওয়ার, পালাম, কাউফল, ঝুমকো, লতা পারুল, স’লপদ্ম, মহুয়া, কুর্চি, বন আসরা, চন্দন, মাকড়িশাল, দুলিচাঁপা, কনকচাঁপা ইত্যাদি। রমনা পার্কের অতীত বর্তমান ঐতিহাসিক তাইফুর জানিয়েছেন, মূলত মুঘলরাই রমনা নামটির প্রবক্তা। ‘বাগ-ই-বাদশাহ’ নামে তখন একটি বাগান নির্মাণ করা হয়েছিল বর্তমান হাইকোর্ট থেকে সড়ক ভবন পর্যন্ত এলাকা নিয়ে। রমনা পার্কের বোর্ডে লেখা তথ্য থেকে জানা যায়, ১৬৬০ সাল থেকেই এলাকাটি রমনা নামে পরিচিত।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরে বাগানটি ধ্বংস হয়ে যায়। ঢাকা থেকে সুবা-বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হলে এই অঞ্চলটি জঙ্গলে ঢেকে যায়। ইংরেজ আমলে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডস রমনা উদ্ধারে হাত দেন। ১৮২৫ সালে জেলের কয়েদিদের দিয়ে তিনি রমনা পরিষ্কার করে সেখানে রেসকোর্স প্রতিষ্ঠা করেন। পঞ্চাশের দশকের পর এটি আবারো জঙ্গলে ঢেকে যায়।

বঙ্গভঙ্গের সময় ঢাকায় রাজধানী গড়ে তোলার জন্য এ অঞ্চলের সংস্কার শুরু করে। এ সময় আজকের রমনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পুরনো ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়। ১৯০৮ সালের দিকে রমনাসহ ঢাকা শহরের নিসর্গ পরিকল্পনার কাজ শুরু করেন লন্ডনের কিউ বোটানিক গার্ডেনের অন্যতম কর্মী রবার্ট লুই প্রাউডলক। তার তত্ত্বাবধানেই গড়ে ওঠে রমনাকেন্দ্রিক নিসর্গশোভা। তিনি বিশ্বের অন্যান্য উষ্ণম-লীয় অঞ্চলের সুদর্শন বৃক্ষ ঢাকায় এনে রোপণের ব্যবস্থা করেন।

তার এই সদিচ্ছার কারণেই এ অঞ্চলের উদ্ভিদসম্ভার বেশ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। আজকের রমনা পার্কটির প্রতিষ্ঠা হয় আরো পরে ১৯৫২ সালে। নিসর্গপ্রেমিক মোকারম হোসেন পার্কের বর্তমান অবাস্থা দেখে দারুণভাবে হতাশ। তিনি সাপ্তাহিক ২০০০- কে বলেন, প্রয়াত ফজলুল করিম নিশ্চয়ই এভাবে পার্কটি গড়তে চাননি। ক্রমেই খালি জায়গার পরিমাণ কমে আসছে।

যত্রতত্র ইচ্ছামতো লাগানো হচ্ছে গাছপালা। তাতে পার্কের সৌন্দর্যহানি ঘটছে। খোঁড়া যুক্তিতে যখন তখন কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। এ ভাবেই হারিয়ে গেছে শতবর্ষী মালতী লতা ও কনকচাঁপাসহ অনেক গাছ, মৃত্যুর প্রহর গুনছে প্রতি বর্ষায় ফুল ফোটানো কেয়াটি। সঠিক উপস্থাপনার কারণে লেকটিও কেমন বেমানান মনে হয়।

কোথাও কোনো জলজ ফুলের ছিঁটেফোঁটাও চোখে পড়ে না। সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্মৃতিবিজড়িত রেসকোর্স ময়দানই আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। স্বাধীনতার অনেক পরে এ ময়দানকে উদ্যানে রূপ দেওয়া হয় বলে জানা যায়। যদিও এ উদ্যানে অপরিকল্পিতভাবে গাছ লাগানোর অভিযোগ রয়েছে। এখানে ১০৩টি প্রজাতির সর্বমোট ৩ হাজার ৫শটি গাছ আছে বলে জানা গেছে।

এ উদ্যানে উল্লেখযোগ্য গাছ হচ্ছে মিলেশিয়া, নাগলিঙ্গম, বুদ্ধ নারিকেল, পলাশ, সেতু শিমুল, হিজল, কদম, স্বর্ণচাপা, কদবেল, বিলেতি গাব, বড়বেল, আমলকি, হরিতকি, বহেরা, নাগেশ্বরচাঁপা। বঙ্গভবন, গণভবন ও সংসদ ভবন এলাকার গাছ বঙ্গভবনসহ সব সরকারি ভবন ও স্থাপনার গাছ পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করে থাকে গণপূর্ত বিভাগের আরবরিকালচার বিভাগ। ঐতিহ্যবাহী ভবন বঙ্গভবনের গাছও ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী। এ ভবনে মোট ১৫২ প্রজাতির মোট ৮ হাজার ৭শ ৮২টি গাছ আছে। এরমধ্যে ফলজ গাছের সংখ্যা ২,২৪৫, বনজ ৯১৭, শোভাবর্ধনকারী ৫২৪০ এবং ঔষধি গাছ আছে ৩৯০টি।

উল্লেখযোগ্য গাছ হচ্ছে কদবেল, গুলানচি, কাজুবাদাম, বিলিম্বি, মিষ্টি তেঁতুল, কাউফল, নাগেশ্বর, ফাইকাস, কেশিয়া সায়মা, একাশিয়া, রাবার প্লান্ট, শিমুল, বোতলব্রাশ, অপরাজিতা, উইপিং দেবদারু, নীলমনি লতা, নীল কণ্ঠ, মোসেন্ডা, সোনালু, ম্যাগনোলিয়া, কাঞ্চন, হৈমন্তী, সাইকাস পাম। গণভবন, চন্দ্রিমা উদ্যান ও সংসদ ভবন এলাকার গাছের সঠিক কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে আরবরি কালচার শেরেবাংলা সাবডিভিশনের কর্মকর্তা আমিরুল বাহরাইন জানান, চন্দ্রিমা উদ্যানের অধিকাংশ গাছ আকাশি। এ ছাড়া সেখানে জারুল, বোতল ব্রাশ, কৃষ্ণচূড়া, পেয়ারা, খেজুর ও ক্যান্টিয়া পামগাছ আছে। সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায় আছে রানীচূড়া, ইউক্যালিপটাস, মুসুন্ডা, একজোড়া, রঙন, কাঞ্চন, পলাশ।

বোতল ব্রাশ, শিমুল, খেজুর, কামিনী, দেবদারু, সোনালু, বোতল পাম গাছ আছে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। পাশের ফুটপাথে আছে ফিসটেইল পাম ও শিশু গাছ। সিটি করপোরেশনের উদ্যান ও পার্ক ২২ দশমিক ১০ একর জায়গার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ওসমানী উদ্যান ও ধানমন্ডি লেকের দেখভাল করে ঢাকা সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫। নগরভবনে অবসি’ত এ অঞ্চলের অফিসে এ উদ্যান ও লেকের গাছের ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। এর সঙ্গে ৯টি উদ্যানসহ ৫৪টি পার্কের তালিকা সিটি করপোরেশনের তালিকায় থাকলেও এসব পার্ক ও উদ্যানে কোন কোন প্রজাতির কী পরিমাণ গাছ আছে, গাছের সংরক্ষণ কীভাবে হচ্ছে, মাঝে মাঝে গাছ মারা গেলেও তা কেন মারা যাচ্ছে? এসব ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই নগরভবন বা আঞ্চলিক অফিসগুলোতে।

সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, কোথাও গাছ মরে গেলে বা ঝড়ে পড়ে গেলে তা সরিয়ে রাসত্মা বা পার্ক পরিষ্কার করে দেওয়াই সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। আরেক কর্মকর্তা বলেন, আলস্নাহর দেওয়া গাছ… কোনো হিসাব নেই। দায়িত্ব আছে তাই দেখাশোনা করি। সিটি করপোরেশনের অপর এক সূত্র জানিয়েছে, একসময় সিটি করপোরেশনে আরবরি কালচার নামে একটি বিভাগ ছিল যা বর্তমানে নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার গাছ দেখাশোনা করার মতো কোনো বিভাগ নেই।

নেই কোনো উদ্ভিদবিদ বা বনকর্মকর্তা। তবে অঞ্চল-৫ এর কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া ৩ দিন সময় নিয়ে ধানমন্ডি লেকের গাছ গণনা করে জানিয়েছেন সেখানে মোট গাছের সংখ্যা ৪ হাজার ৮শ ৭০টি। বিউটিফিকেশন ও রাস্তার গাছ ঢাকা শহরের রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া আছে ১২৯টি প্রতিষ্ঠানকে। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়েছে। অভিযোগ আছে এসব প্রতিষ্ঠান গাছের যথাযথ পরিচর্যা নেয় না।

অনেক সড়কদ্বীপেই চোখে পড়বে বট, পাকুড়, মেহগনির মতো বৃহৎ গাছের চারা। এসব চারার ভবিষ্যৎ কী কেউ জানে না। ঢাকা সিটি করপোরেশনের সৌন্দর্যবর্ধনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপন কুমার সাহা বলেন, আগে কোনো এক প্রেক্ষাপটে গাছগুলো লাগানো হয়েছিল। এখন তো আর হুট করে গাছগুলো কাটা যাচ্ছে না। বর্তমানে আমরা সচেতন এব্যাপারে।

কোথায় কোন ধরনের গাছ লাগানো হচ্ছে তা আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছি। তবে এভাবে রাস্তার মাঝখান দিয়ে গাছ লাগানোর বিরোধিতা করলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, এভাবে অপ্রশস্ত জায়গায় গাছ লাগিয়ে মূলত ওই গাছকে একটি বেঁচে থাকার যুদ্ধের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা এ ব্যাপারে বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের কোথাও এভাবে রাস্তার মাঝখান দিয়ে গাছ লাগানোর নজির নেই। আমি একদিন এক রিকশাওলাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, সে বলেছিল, ‘স্যার এ গাছগুলো তো মানুষকে ছায়া দেওয়ার জন্য নয়, রাস্তাকে ছায়া দেওয়ার জন্য।

’ তবে তিনি ঢাকার ফুটপাথেও গাছ লাগানো সম্ভব কি না এ প্রশ্নে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘ঢাকার ফুটপাথ তো হকারদের দখলে। হাঁটার জো নেই। কোথায় তুমি গাছ লাগাবে?’ রমনা, তেজগাঁও, কোতোয়ালি, শেরে বাংলানগর থানাসহ শহরের রাস্তার দুপাশ দিয়ে যেসব গাছ আছে সেগুলোর কোনো সঠিক হিসাব নেই ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে। নগরভবন সূত্রে জানা যায়, এসব গাছ মারা গেলে বা ঝড়ে পড়ে গেলেই কেবল তা অপসারণের দায়িত্ব পালন করে সিটি করপোরেশন। সামাজিক বনায়নের হালচাল ঢাকা সামাজিক বন বিভাগ ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন রাস্তা, প্রতিষ্ঠান ও পার্ক বা ব্লক বাগানে মোট গাছের চারা রোপণ করেছে ২৭ হাজার তিনশ ৬৪টি।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে বর্তমানে ৫৫ ভাগ গাছ বেঁচে আছে। ৯৪-৯৫ অর্থবছরে চারা রোপণ করা হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৪টি। এর মধ্যে বর্তমানে বেঁচে আছে প্রায় ৪৪ ভাগ গাছ। এ সময় রোপিত গাছের মধ্যে গোলাপবাগ স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় লাগানো ১৫০০ গাছ, ধানমন্ডি ক্লাব মাঠ এলাকার ২৬০ গাছ, খিলগাঁও মডেল কলেজ মাঠের ৩৭৫ গাছ, খিলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের ১১০ গাছ, আলী আহমদ উচ্চ বিদ্যালয় এলাকার ৪০০ গাছ, বরম্নড়া হাইস্কুলের ৫০০টি গাছ এবং মান্ডা দক্ষিণখান এলাকার ১২৪৫টি গাছের মধ্যে একটিও বেঁচে নেই। ৯৫-৯৬ অর্থবছরে সামাজিক বন বিভাগ ঢাকা শহরে গাছ লাগিয়েছে ৩৯ হাজার ১শ ৮৪টি।

এর মধ্যে বেঁচে আছে ৪১ ভাগ গাছ। ৯৬-৯৭ অর্থবছরে গাছ লাগানো হয়েছে ১৩ হাজার ৩শ ৩২টি। বেঁচে আছে শতকরা ৪৬ ভাগ। এরপর ঢাকা শহরে গাছ লাগানো হয়েছে ২০০১-০২ অর্থবছরে তেজগাঁও থানায় ১০০টি এবং ২০০২-০৩ অর্থবছরে মোট ৪৫ হাজার ৪শ ৫০টি গাছ। এরপর ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় আর কোনো গাছ লাগায়নি বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকা সামাজিক বন বিভাগ ।

ভালো নেই ঢাকার গাছ ঢাকা শহরে এখনো যত গাছ আছে সেগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝে মাঝেই মারা যাচ্ছে এসব গাছ। পার্ক ছাড়াও রাস্তার দুপাশের গাছ মারা যাচ্ছে নানা কারণে। ঢাকা বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সামনে ১টি, হাইকোর্ট এলাকায় ৪-৫টি, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে, নির্বাচন কমিশনের উত্তর দিকের প্রবেশ পথে এবং নির্বাচন কমিশনের রাস্তার পাশে ৯-১০টি, মোহাম্মদপুর হাউজিং-এ ১টি, জুরাইন কবরস্থানে ১টি, উত্তরা বনবীথি কমপ্লেক্সের দক্ষিণ দিকে এবং আবদুল্লাহপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি রেইনট্রি গাছ সম্প্রতি মারা গেছে। অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা এ ব্যাপারে বলেন, ঢাকার বাতাস, পানি ও মাটি দূষিত হয়ে গেছে।

রাস্তা-ঘাট সব কংক্রিটে ঢেকে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি ঢুকতে পারছে না মাটিতে। অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে মাটিতে। অধ্যাপক শর্মার কথার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় রাস্তায় নামলেই। রাস্তার ফুটপাথে যে দুই একটা গাছ আছে সেগুলোর চারপাশ ইট সিমেন্টে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এসব গাছের চারপাশে কমপক্ষে এক মিটার জায়গা রাখা উচিৎ ছিল বলে তিনি জানান।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হাদিউজ্জামান বলেন, রেইনট্রি গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ বার্ধক্য। হারিয়ে যাওয়া গাছ ঢাকা শহরে বেশকিছু গাছ ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অসচেতনতার ফলেই দুর্লভ গাছগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন নিসর্গপ্রেমী অধ্যাপক দ্বীজেন শর্মা। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া গাছগুলোর মধ্যে আছে লিয়্যুইয়া। নিসর্গপ্রেমী মোকারম হোসেন জানান, রেলওয়ে হাসপাতালের সামনের ত্রিভুজপার্ক ও গণভবনের সামনে দুটি লিয়্যুইয়া গাছ ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের বাসার সামনে পৃথিবীর সর্বশেষ প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া তালিপামটি মারা যায় ২০০৮ সালে। ৮০ বছর বয়সে একবার ফুল ফোটার মাধ্যমে গাছটির জীবনাবসান ঘটে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরবরি কালচারের টেকনিক্যাল কর্মকর্তা ফেকুলাল ঘোষ কমল জানান, গাছটির ২শ চারা তৈরি করে বন বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রদান করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও রোপণ করা হয়েছে কয়েকটি চারা। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অপর একটি গাছের নাম করিফা ইলাটা।

বলধা গার্ডেনে একটি করিফা ইলাটা ছিল। ঢাকার দুর্লভ গাছ রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর বাগানে এখনো টিকে আছে বেশকিছু দুর্লভ গাছ। জানা যায়, কনকচাঁপা ফুলের মাত্র তিনটি গাছ এখন পর্যন্ত টিকে আছে এই শহরে। গাছ তিনটি আছে বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক ও শিশু একাডেমীর বাগানে একটি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, রমনা পার্ক এবং বঙ্গভবনের প্রাচীরঘেঁষে দিলকুশায় কয়েকটি বুদ্ধ নারকেল গাছ আছে।

পাদাউক গাছের দেখা মেলে একমাত্র রমনা পার্কের লাগোয়া হেয়ার রোডে কয়েকটি। জানা যায়, এসব গাছ লাগিয়েছিলেন ব্রিটিশ বৃক্ষপ্রেমীক লুই প্রাউডলক। কুরচি গাছ অল্প কয়েকটি এখনো আছে বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, কার্জন হল, শিশু একাডেমীর বাগানসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায়। দুই-তিনটি পীত পাটনা গাছ আছে রমনা পার্কে। হাতেগোনা কয়েকটি আকাশনিম বা হিমঝুরি গাছের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের প্রবেশপথে, বলধা গার্ডেনের পাশে খ্রিস্টান কবরস্থানে এবং শিশু একাডেমীর বাগানে কয়েকটির দেখা পাওয়া যায়।

পাখিফুলের দেখা মেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের সামনে, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও শিশু একাডেমীর বাগানে একটি করে। এছাড়া শহরের আর কোথাও এ গাছের দেখা পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। বনপারুলের দেখা বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর বাগান ছাড়া আর কোথাও চোখে পড়ে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সামনে সবচেয়ে বয়সী সিলভার ওক গাছের অবস্থান। মাধবীলতাকে কেউ কেউ ভুল করে মাধবী বললেও মাধবী নামে আলাদা এক ধরনের গাছ আছে।

রমনা পার্ক, শিশু একাডেমী, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বলধা গার্ডেনে এ গাছের দেখা মিলবে বলে জানা গেছে। কানাইডিঙ্গা নামের এক বিরল গাছের অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে, ঢাবি বোটানিক্যাল গার্ডেনে এবং মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদতাত্ত্বিক বাগানে। মাত্র তিনটি জহুরিচাঁপা গাছ আছে রমনা ও বলধা গার্ডেনে। ক্রিমফ্রুট নামটি ফলদ গাছের মতো শোনালেও আসলে এটি কোনো ফল গাছ নয়। এই প্রজাতির মাত্র ২টি গাছ আছে বলধা ও রমনায় একটি করে।

ব্লাকবি নামেমাত্র একটি গাছ ঢাকায় আছে বলে জানা গেছে। গাছটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার উত্তর পাশের সীমানায় অবস্থিত। ধানমন্ডি ৩/এ রোডে একটি এবং বলধা গার্ডেনে একটি করে ট্যাবেব্যুইয়া গাছের দেখা পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি বাওবাব গাছ ছিল। আবাসিক ভবন নির্মাণের সময় এটি কেটে ফেলা হয়।

বলধা গার্ডেনে একটি ছিল বলে জানা গেছে। বর্তমানে রমনা ও ধানমন্ডি লেকে একটি করে দুটি বাওবাব গাছ আছে। এছাড়া আরো যেসব গাছ দুর্লভ সেগুলো হচ্ছে বেরিয়া, রুদ্র পলাশ, স্কারলেট কর্ডিয়া, রাজ অশোক, মিলেশিয়া, মুচকুন্দ, জাকায়ান্ডা, গ্লিরিসিডিয়া প্রভৃতি। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছ পরিবেশবিদদের মতে, গাছ মানেই উপকারী। কিন্তু কখনো কখনো এলাকাভেদে কিছু গাছ পরিবেশের ক্ষতি করে থাকে।

এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউক্যালিপটাস ও একাশিয়ার একাধিক প্রজাতি। এসব গাছের ব্যাপক চাষ মাটি থেকে অতিরিক্ত পানি শোষণ করে মরুময়তার সৃষ্টি করে বলে জানান অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা। তবে তিনি বলেন বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও দুইএকটি গাছ লাগানো থাকলে তা তেমন কোনো ক্ষতির কারণ হয় না। এজন্য সেগুলো কাটার প্রয়োজন নেই। অনেক সময় অ্যালার্জির কথা বলে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয় এটা ঠিক নয়।

ছাতিম গাছের ফুলের গন্ধ অনেকের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। এজন্য গাছ কেটে ফেলতে হবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। কারণ ব্যক্তিভেদে যেকোনো জিনিস অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। গণপূর্ত বিভাগের আরবরিকালচার বিভাগ থেকে জানা যায় চন্দ্রিমা উদ্যানের শতকরা ৮০ ভাগ গাছ একাশিয়া। এব্যাপারে অধ্যাপক শর্মা বলেন, আসলে ঢাকা শহরের কোনো উদ্যানই সুপরিকল্পিত নয়।

অপরিকল্পিত নগরায়ণে কাটা হচ্ছে গাছ ১৯৬৫ সালে অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা তার লেখা ‘শ্যামলী নিসর্গ’ বইয়ের প্রাক-কথনে পূর্বপাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘দ্বিতীয় রাজধানী ও শিল্পাঞ্চলসহ এ শহর একদিন মহানগরীতে উন্নীত হবে। এর নিসর্গ সেদিন কী রূপ নেবে আজই বলা কঠিন। আমরা অবশ্যই আশা করব আমাদের স’পতিরা বিভিন্ন দেশের শেষতম অভিজ্ঞতার সুযোগ গ্রহণে কার্পণ্য করবেন না। ’ আজ এ শহর মহানগরীতে রূপ নিয়েছে। স’পতিরা কি সে সুযোগ গ্রহণ করেছেন? অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মার কাছ থেকেই জানা যাক।

‘উত্তরায় যখন প্রথম বাড়ি তৈরি করা শুরু হলো তখন সবাই একতলা বাড়ি নির্মাণ করলেন। বাড়ির চারপাশে, রাস্তার দুপাশে লাগানো হলো গাছ। এর কিছুদিন পরই বাড়িগুলো আবার ছয়তলা করার অনুমতি দেওয়া হলে কেটে ফেলা হলো বাড়ির চারপাশের গাছ। ৮-১০ বছর পরে ড্রেন করতে গিয়ে কেটে ফেলা হলো রাস্তার দুপাশের গাছ। এ ড্রেন তৈরি করতে হবে এটা কি জানতেন না স্থপতিরা, তাহলে কেন গাছগুলো ওভাবে লাগানো হয়েছিল?’ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, যশোর রোডে ব্রিটিশরা মাস্টারপ্লান অনুযায়ী গাছ লাগিয়েছিল বলেই আজ বড় বড় গাছ আমরা ওখানে দেখতে পাচ্ছি।

ঢাকা শহরেও প্রাউডলক এ রকম প্লান করেছিলেন। কিন্তু পরে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে ঢাকা শহরে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। এ কাজে মিরপুর এলাকায় স্টেডিয়াম সংলগ্ন রাস্তা, প্রশিকা ভবন থেকে যে রাস্তা চিড়িয়াখানার দিকে চলে গেছে সেই হাজি রোডের দুপাশের কয়েকশ গাছ সমপ্রতি কেটে ফেলা হয়েছে রাস্তার উন্নয়ন কাজে। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে সেনাসদরের সামনে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ২০৭টি গাছ প্রায় ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।

বনানী রেলক্রসিংসহ বিশ্বরোড থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেললাইনের দুপাশের প্রায় তিনশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার কথা বলে। বোটানিস্ট ছাড়াই চলছে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বলধা গার্ডেন উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বলধা গার্ডেন প্রতিষ্ঠিত হলেও উদ্যান দুটির একটিতেও নেই কোনো বোটানিস্ট বা উদ্ভিদ গবেষক। কোনো ছাত্র বা গবেষক উদ্যানে অবসি’ত গাছ সম্পর্কে জানতে উদ্যান অফিসে গিয়ে কোনো সহযোগিতা পান না বলে জানা গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরিফুর রহমান জানান, তিনি মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের অফিসে গিয়েছিলেন গাছ সম্পর্কে জানতে। অফিসের কেউ তাকে সহযোগিতা না করে এ টেবিল থেকে ও টেবিলে পাঠিয়ে দিয়ে অবশেষে ১৯৯২ সালে প্রকাশিত একটি ব্রুশিয়ার ধরিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেয়।

অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামসুল হক নামে এক বোটানিস্ট গত বছর জুন পর্যন্ত ওখানে কর্মরত ছিলেন। তিনিই মূলত গাছ সম্পর্কে মানুষকে জানানোর কাজ এবং গাছ নিয়ে গবেষণা করতেন। বর্তমানে তিনি এলপিআর-এ আছেন। বলধা গার্ডেন বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটা উইং স্যাটেলাইট উদ্যান হওয়ায় সেখানেও গবেষণা কাজ চালাতেন শামসুল হক। বর্তমানে সেখানেও কোনো গবেষক বোটানিস্ট নেই বলে জানা গেছে।

আসাদ জোবায়ের স্টাফ রিপোর্টার সাপ্তাহিক ২০০০
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।