আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিন্দু ধর্ম মত আর পথ ০২ ( ঈশ্বরবাদ ও আত্মা)

অযথা ক্যাচাল পছন্দ না, তাই তালগাছবাদীরা দূরে থাকুন

হিন্দু ধর্ম নিয়ে ধারাবাহিক পোষ্টের এর প্রথম পর্ব এখানে হিন্দু ধর্ম বুঝতে হলে প্রথমেই এর ঈশ্বরবাদ বুঝতে হবে, ঈশ্বর কয়জন, একজন নাকি তিনজন নাকি তেত্রিশ কোটি? প্রথমেই এই প্রশ্নের উত্তর জেনে হিন্দু ধর্মে প্রবেশ করতে হবে। কারণ কেউ যদি না জানে যে ঈশ্বর কয়জন ও কি তবে ভক্তি অর্চনা করবে কাকে? আমার নির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত মনে থাকেনা তাই জাকির নায়েকের মত বই পৃষ্ঠা নং কথায় কথায় লিখতে পারবনা, এজন্য সহজ কথায় মূল কথাগুলো বলছি এখানে ব্রক্ষ্ম হচ্ছে সেই ঈশ্বর যে সৃষ্টির আদি হতে অন্ত পর্যন্ত আছে এবং থাকবে সেই প্রকৃত আরাধ্য। ঈশ্বর নিরাকার কিন্তু তিনি চাইলেই যে কোন সাকার রুপ ধারণ করতে পারেন। শ্রীকৃষ্ণকে সেই পরম ব্রক্ষ্মের এক সাকার রুপ ধরা হয় এবং পরমেশ্বর মানা হয়। এখন কেউ যদি বলে শ্রীকৃষ্ণ না শিব ই আমার কাছে পরমেশ্বর তাতেও ভুল নেই কারণ তিনি যাকেই ডাকুক সেই পরেমশ্বর কেই ভজনা করছেন।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে কৃষ্ণ বড় নাকি শিব বড়। ব্রক্ষ্মবৈবর্ত পুরাণের সৃষ্টিখন্ডে ঈশ্বর শিবকে বলছেন " যে তোমার ও আমার মাঝে বিভেদ করবে তার মত পাপী আর পৃথিবীতে নেই"। মূল কথা হচ্ছে ঈশ্বর একজন তিনি নিরাকার বা সাকার, আমরা যাকেই ভক্তি বা পূজা করিনা কেন তা সেই ঈশ্বরকেই করা হয়। আমার বিভিন্ন রুপের মূর্ত্তিকে পুজা করি তা কিন্তু ঈশ্বর থেকে আলাদা মনে করে না, মূর্ত্তির মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকেই পূজা করা হয়। আল্লাহর যেমন ৯৯ টি নাম আছে, তাই বলে কি আল্লাহ ৯৯ জন? না আল্লাহ একজন ই।

তেমনি ঈশ্বরের বিভিন্ন রুপ কল্পনা করে আমরা পূজা করেলেও ঈশ্বর কিন্তু সেই একজনই। অনেকে প্রশ্ন করে ভাত সোজা করে না খেয়ে এত ঘুরিয়ে খাও কেন? গীতায় ঈশ্বর বলেছেন "যে আমাকে যেভাবে ডাকবে আমি তাকে সেভাবেই ফলদান করব"। হিন্দু ধর্ম যে কতটা উদার তার প্রমাণ এখানেই পাওয়া যায়। আমি যেভাবে, যেরুপে তাকে ডাকব তিনি সেভাবেই আসবেন তা সে ৩৩ কোটির যে কোন একটা হোক না কেন। আত্মা ও পরমাত্মা আমাদের দেহে যে আত্মা আছে, তা সকল ধর্মেই বিশ্বাস করে।

ঈশ্বর হচ্ছেন সকল আত্মার উৎস অর্থাৎ পরমাত্মা। আর প্রতিটি জীবের শরীরে যে আত্মা আছে তা হচ্ছে জীবাত্মা। সকল ধর্ম কর্মের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবাত্মা পরমাত্মার সাথে লীন হওয়া অর্থাৎ পৃথিবী থেকে মুক্ত হওয়া। পুরষ্কার অথবা শাস্তির শেষ আছে, মানে ভাল কাজের জন্য স্বর্গভোগ আর খারাপ কাজের জন্য নরকভোগ এর একটা শেষ আছে। কর্ম অনুযায়ী ফল ভোগ করতে হয়, দুইটাকার ভালো করে ১০ টাকার মিষ্টি খাবেন তা হবেনা।

পাকা হিসাব যতটুকু ভাল ততটুকুই মিষ্টি। কিন্তু প্রধান উদ্দেশ্য কিন্তু স্বর্গ নয় সেই পরমাত্মার সাথে বিলীন হয়ে যাওয়া, এর আর কোন শেষ নাই। আত্মার কোন ধ্বংশ বা শেষ নাই। এটা এক দেহ হতে অন্য দেহে গমন করে মাত্র। দেহের পরিবর্তন হয়, শিশু হতে কিশোর আবার কিশোর হতে যুবক, কিন্তু আত্মার পরিবর্তন নাই।

গীতা অনুযায়ী মানুষ যেমন পুরাতন জীর্ণ বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে তেমনি আত্মা ও পুরাতন জীর্ন শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীরে গমন করে। একটু আধুনিক ভাবে বলা যায়, দেহ হচ্ছে প্রোগ্রাম করা কোন যন্ত্র আর আত্মা হচ্ছে এর ব্যাটারী যখন এই দুই একত্রিত হবে তখনই যন্ত্র সচল হবে এখানে ব্যাটারী দিয়ে কথা তা যে যন্ত্র বা শরীরে সেট করা হোক না কেন, এর চালনা শক্তি থাকলেই চলে। এই পর্ব এখানেই শেষ করছি এর পরের পর্বে ধর্মের আর একটু গভীরে প্রবেশ করার চেষ্টা করবো, গীতার প্রধান আলোচ্য বিষয় কর্ম নিয়ে বিস্তারিত একটা পোষ্ট করার ইচ্ছা আছে। ধন্যবাদ সবাইকে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.