বাংলা আমার দেশ
আসল কথা যেভাবেই হোক যুদ্ধ অপরাধীদের বাঁচাতেই হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হবার মধ্য পর্যায়ে হঠাৎই হেফাজতে ইসলাম নামে আরেকটি মৌলবাদী উত্থানের সূচনা। তারা তাদের ভাষায় জমাতে ইসলামের একান্ত বিরোধী। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে তাদের কোন কথাই নেই। তাবলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিও তারা করেননি।
তাদের দাবি তের দফা। সেগুলো কি? দেশের আপামর জনতা তা জেনে গেছে। কিন্তু এসব দাবি তো মুসলমানের স্বার্থে সৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রে ১৯৪৭’র পর পরই আসার কথা ছিল। প্রায় ৭০ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মুহুর্তে এসব দাবি কেন? বাংলাদেশ তো সেই দেশ স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ৯৯% আলেম সম্প্রদায় যে দেশ সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন, পাকিস্তান না থাকলে ইসলাম থাকবেনা। বিগত ৪১ বছরে পাকিস্তানের চেয়ে এখানে ইসলামের কতটুকু কি ক্ষতি হয়েছে মুসলমান সম্প্রদায় ধর্মকর্মে কতটুকু ব্যাঘাত প্রাপ্ত হয়েছে তা না হয় জনগণের বিবেচনায় ছেড়ে দিলাম।
কিন্তু হেফাজতের তান্ডব তো জমাতকেও ম্লান করে দিয়েছে। তারা বলেছেন জমাতের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। এ সম্বন্ধে প্রকৃত তথ্য ও তত্ত্ব রহস্য সবই বের হয়ে এসেছে। আপাত দৃশ্যেও তাদের মিছিল শ্লোগানে জমাতের পরিচিত মুখগুলো এলাকা বা মহল্লা ভিত্তিক কার না চোখে পড়ে? ৫ এপ্রিল ২০১৩’র জনসভায় যারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকা গিয়েছিলেন তাদের একটা বড় অংশই স্থানীয় পরিচয়ে জমাতের নেতা বা কর্মী।
অতপর ৫ তারিখ দিনে ও রাতে ঢাকা শহরে যা যা ঘটেছিল তা হেফাজত, জামাত, বিএনপি ছাড়া, ঢাকার আম জনতাই শুধু নয় বর্তমান সুলভ মিডিয়ার যুগে দেশে-বিদেশে সবাই দেখেছে।
পুলিশি অভিযানে তিন হাজার মানুষ নিহত হবার হাস্যকর কল্পিত উপাখ্যানটিও দেশে-বিদেশে কিভাবে আলোচিত বা সমালোচিত তাও সবারই জানা। অথচ দুঃখ হয় যখন প্রায় ৯৫’র বৃদ্ধ শফি সাহেবও বলেন আমার তিন হাজার লোক নেই। সম্ভবত ধর্মের নামে সব মিথ্যাচারই জায়েজ। তাই তের দফা দাবি কাটছাঁট করে এখন গ্রামের ধর্মভীরু অজ্ঞ, অশিক্ষিত মুসলমানদের নানা কিছু বুঝানো হচ্ছে। আমি বলি ধর্মেও যদি কাটছাঁট করতে হয় তাহলে এর কি প্রয়োজন? এ নিয়ে এত মারদাঙ্গা অবস্থা কেন? দেশে ধর্ম তো এক রকম চলছেই।
সায়েদীকে চাঁদে বসিয়ে যারা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করেছে এখন গ্রামে তারাই মানুষকে বুঝাচ্ছে এটাও নাকি আওয়ামী লীগের কাজ। কদিন আগে পত্রিকার খবর এক ইসলামি গোপন সংগঠনের ক’জন সদস্য ধরা পড়ে। তারা ব্যাংক লুটের পরিকল্পনার কথাও জানায়। ইসলামী আন্দোলনে ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা- তা কি করে হয়? হ্যাঁ হয়। ব্যক্তি স্বার্থে তা হারাম হলেও ইসলামের স্বার্থে জায়েজ।
হ্যাঁ ইসলামের স্বার্থে মানুষ খুন থেকে শুরু করে সবই জায়েজ।
হেফাজতে ইসলাম মুখে মুখে যাই বলুক, বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরায় এখন সব গুমর ফাঁস হয়ে গেছে। জমাত, হেফাজতে ইসলাম সব রসুনের একই মূল। ৫ তারিখ তারা পূর্ব ঘোষিত পরিকল্পনা যা আগেই মানুষের মুখে মুখে রটে গিয়েছিল। অর্থাৎ সরকারকে ফেলে দিয়ে বাবু নগরীর প্রধানমন্ত্রীত্বে নতুন সরকার গঠনের জন্যই ঢাকায় শাপলা চত্বরে সারা দেশ থেকে আলেম সম্প্রদায়কে ডেকে এনে সমাবেশ ঘটিয়েছিল।
এখন পুলিশের কাছে আটক বাবু নগরী যা বলছে তা মানুষের কাছে বিস্ময়কর কিছুই মনে হয়নি। প্রধান বিরোধী দল এবং দলনেতা আগাগোঁড়াই তাদের প্রতি যথাসম্ভব মদদের হাত বাড়িয়েছে। ৫ এপ্রিল রাতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত হেফাজতের মেহমানদের খাবার দাবার প্রদান ও আদর আপ্যায়নের জন্য স্বয়ং বিরোধী দলীয় নেতা তার দল ও ঢাকার জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাহলে আর চিন্তা কি পাকিস্তান সৃষ্টির পর আজ ৬৫ বছর পর্যন্ত যদি এ দেশে ইসলামি শাসন কায়েম সম্ভব না হয়েও থাকে। তাহলে না হয় আরেকবার বিএনপি ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা।
যৎসামান্য সময়ের জন্য দেশে খুনখারাবি, ফ্যাসাদ সৃষ্টির প্রয়োজন কি? আপনা থেকেই তাদের তের দফা পূরণ হয়ে যাবে। যুদ্ধাপরাধীরাও মুক্তি পেয়ে যাবে। যুদ্ধপরাধীদের কথা বলতে পারিনা। তাহলে তের দফার কি হবে? তারা কি এ তের দফা মানবে? অন্তত এ পর্যন্ত তাদের যতটুকু প্রতিক্রিয়া তা নেতিবাচক। মেহমানদারী ভেল্কি মাত্র।
তাঁ এখানেই প্রধান বিরোধী দলের রাজনীতির রহস্য। জমাত, নেজামে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন এবং আরো অনেক ইসলাম নামের লেবাস পরিহিত দলকে ইসলামি দলই বলা যায়। কিন্তু বিএনপিকে ইসলামি নয়, এদেশের এক বৃহদাংশ মুসলমানের দল বলা যায়। ইসলামের নাম ভাঙিয়ে ভারত বিরোধিতা ও এন্টি আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে তাদের রাজনীতির ভিত নির্মিত।
এ কথা এক রকম চোখ মুদে বলা যায়, এ দেশের জনসংখ্যার অন্তত ৪০%ও যদি অমুসলিম হত তাহলে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী এত বড় দল হয়ে ওঠা তাদের পক্ষে সম্ভব হত না।
এ সুযোগটাকে পূর্ণাঙ্গ অর্থে ব্যবহারের জন্যই জমাত সহ বেশকিছু ইসলামী দলকে সঙ্গে নিতে হয়। না হয় আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে হারিয়ে ক্ষমতারোহন দুঃসাধ্য।
ক্ষমতার স্বার্থে দলটির জন্মলগ্ন থেকেই এ ভূমিকা। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে তারাই প্রথম এ দেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী শক্তির বীজ বপন করে। যখন একবার জায়গা পেয়ে যায়, তখন এ শক্তি সময়ের ব্যবধানে বীজ থেকে চারা, চারা থেকে বৃক্ষ, বৃক্ষ থেকে সহস্র ডালপালায় বিস্তৃত বিশাল মহীরূহে পরিণত।
অবশ্য পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে এদেরকে শুধু প্রধান বিরোধী দল নয় বর্তমানে যারা সরকারে তারাও মদদের হাত বাড়িয়েছে। হয়ত তারা বলবে, যেহেতু তারা প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে তখন কারণ বশতই অনেক সময় তাদের সঙ্গে নিতে হয়েছে।
উপসংহারে বলা যায় এ দেশে মৌলবাদী রাজাকার শক্তির উত্থান নতুন নয়। ১৯৭৫’র পর থেকেই এর শুরু। ১৯৭৫-২০১৩ পর্যন্ত তা ক্রমবর্ধিত আঙ্গিকে ও রূপে বিকশিত হলেও দেশের রাজনীতির সঙ্গে সুকৌশল সমন্বয় করে আসছিল।
কিন্তু এবার যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে তা সহস্র অগ্নিলাভায় ভয়াবহ রূপে বিস্ফোরিত হয়। মৌলবাদীদের মুখোশ খসে পড়ে। তারা বুঝিয়ে দেয়, হেফাজত আর জমাত বলে কোন কথা নেই, স্বাধীনতা যুদ্ধের যে কোন ইস্যুতে, তারা বিরুদ্ধপক্ষ। যেমন অতীতে ছিল তেমনি এখনো।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে তাই দেশজুড়ে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদের বিষবাষ্প।
না হয় এ মুহূর্তে এসব কিছুই ঘটতো না।
এখন কেঁচো খুড়তে সাপ। দেখা যাক, সে সাপের বিষ উজায় না নামে? আমার বলা না বলায় কিছু আসে যায় না। সময়ই কথা বলবে। তাবলে সমুদ্রে ঢেউ দেখে তীরে নৌকা ডুবানো যায় না।
আমাদের প্রত্যয়ী তো হতেই হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।